Ajker Patrika

‘ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো’ শিবচরের শারমীন

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৩, ১৫: ৫৫
‘ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো’ শিবচরের শারমীন

পদ্মার করাল গ্রাসে তিন বছর আগে হারিয়েছে বসতভিটা। গৃহহীন হয়ে চরম বিপাকে পড়ে পরিবারটি। ওই বছরই নদীগর্ভে হারিয়ে যায় বিদ্যাপীঠও। পদ্মার গর্জন আর চোখ রাঙানিতে দিশাহীন তখন শারমীনদের মতো অসংখ্য পরিবার। 

শারমীনের দিনমজুর দরিদ্র বাবা আব্দুল কুদ্দুস তখন নিঃস্ব। সন্তান-পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টামাত্র পরিবারটির। স্কুল ভেঙে যাওয়ায় লেখাপড়ায় ছন্দপতন ঘটে শারমীনের। তবে অদম্য ইচ্ছাশক্তি কোনোভাবেই দমাতে পারেনি শারমীনকে। চলতি বছর মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার পদ্মা নদীর ভাঙনকবলিত বন্দরখোলা ইউনিয়নের নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ অর্জন করে তাক লাগিয়ে দেয় চরাঞ্চলে। 

গত শুক্রবার এসএসসির ফলাফল ঘোষণার পর আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায় মেধাবী শারমীন। মেয়ের আনন্দ ছুঁয়ে যায় দরিদ্র বাবা-মাকেও। আবেগে কাঁদতে থাকেন তাঁরা। মেধাবী শারমীন যেন তাঁদের ‘ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো’। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের বন্যায় পদ্মার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারান আব্দুল কুদ্দুস মিয়া। ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। বছরে পাঁচ হাজার টাকা খাজনায় নতুন করে ঘর তোলেন অন্যের জমিতে। সংসারের খরচ জোগাতে ভ্যান চালান এবং দিনমজুরি খাটেন তিনি। দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তাঁর সংসার। অভাব-অনটনের মধ্যেও লেখাপড়া থামেনি শারমীনের। 

বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে হতো। সকাল-বিকেল টিউশনিও করতে হয়েছে মেধাবী শারমীনের। নিজের আয়ে চলতে থাকে লেখাপড়ার খরচ। 

শারমীনের বাবা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। মেয়েটা লেখাপড়ায় ভালো। তাই লেখাপড়া বন্ধ করিনি। চর এলাকায় রোদ, ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়া স্কুলে যাইতো। শুক্রবার রেজাল্ট দিলে শুনি অনেক ভালো রেজাল্ট করছে। সবাই বলে ভালো কলেজে পড়াইতে। মাইয়ার ইচ্ছা ডাক্তার হইবে। কিন্তু ভালো কলেজে পড়ানোর টাকা-পয়সা আমাগো নাই। পরের জায়গায় খাজনা কইরা থাকি। মাইয়ার স্বপ্ন অনেক বড়, কিন্তু আমরা তো গরিব!’ 

শারমীন বলে, ‘আমার ইচ্ছা ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার। কিন্তু ভালো কলেজে পড়ার মতো আর্থিক সচ্ছলতা নেই আমাদের। পরিবারের ভরণপোষণ মেটাতে গিয়ে আমার বাবা পরিশ্রম করতে করতে অসুস্থপ্রায়। জানি না ভবিষ্যতে কী আছে। ডাক্তার হবার স্বপ্ন মনের মধ্যে পুষে রেখেছি। তবে আর্থিক সংগতি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে!’ 

নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, শারমীন দুর্দান্ত মেধাবী। জিপিএ-৫ পেয়েছে এবার। তবে পরিবারটি হতদরিদ্র। ভালো কলেজে পড়ানোর খরচ চালানো সম্ভব নয় ওদের পরিবারের। শারমীনের মতো মেয়েরা যদি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা পায়, তবে ভালো কিছু করতে পারবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত