Ajker Patrika

অষ্টগ্রামের সুস্বাদু পনির

ফরিদ রায়হান, অষ্টগ্রাম
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২১, ০৮: ১৯
অষ্টগ্রামের সুস্বাদু পনির

ভোজনরসিক বাঙালির পছন্দের তালিকায় রয়েছে অনেক রসালো খাবার। এর মধ্যে কিছু খাবার রীতিমতো ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এমন একটি খাবার হচ্ছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের সুস্বাদু পনির। মুঘল আমল থেকেই দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়িয়ে আসছে অষ্টগ্রামের পনির। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইতিমধ্যে এই পনির উপহার হিসেবে যাচ্ছে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

দুধের তৈরি সুস্বাদু খাবার পনির উৎপাদন হয় মূলত দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে। বাংলাদেশে দুই রকম পনির তৈরি হয়–সাদা ও মজরোলা। অষ্টগ্রামে তৈরি হয় সাদা পনির। প্রায় ৩০০ বছর আগে অষ্টগ্রামে প্রথম পনির তৈরি শুরু হয়। কে প্রথম তৈরি করেন–এ নিয়ে বহু মত থাকলেও দুটি মত অধিক গ্রহণযোগ্য।

প্রথমটি হলো, মুঘল আমলে পাঠান এবং মুঘলেরা কাস্তুল এসে ছাউনি গড়েন। পরে কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় বাস শুরু করেন তাঁরা। অষ্টগ্রামের বড় হাওরে কৃষকেরা গরু-মহিষ চরাতেন। দুধের উৎপাদন ছিল চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি। মুঘল ও পাঠানরা এক দিন হাওরে ঘুরতে গিয়ে দুধ দিয়ে ছানা তৈরি করতে দেখে শখ করে এ কাজে সহযোগিতা করেন। পরে এ ছানা দিয়ে সুস্বাদু নতুন খাবার তৈরি করেন তাঁরা। নাম দেন ‘পনির’। অন্য মতে, তৎকালীন অভিজাত শ্রেণির দত্ত বংশীয়দের এই জনপদে আগমনের সঙ্গে পনির সৃষ্টি ও উৎপাদন-ইতিহাস জড়িত।

গত শতাব্দীর শেষ দশকেও অষ্টগ্রামে ৪৫-৫০টি পরিবার পনির উৎপাদন ও বিক্রির কাজে জড়িত ছিল। তখন অষ্টগ্রামের পনির নিতে ভিড় করত উজান এলাকার পাইকাররা। এখন হাওরে বোরো ধান চাষ হওয়া ঘাসের পরিমাণ ও গরু-মহিষ পালন কমে গেছে। এতে দুধ উৎপাদন আগের তুলনায় কম হয়। তবে পনির তৈরি ও স্বাদের কোনো কমতি হয়নি। কিশোরগঞ্জ জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য অষ্টগ্রামের পনিরের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বঙ্গভবন ও গণভবনে পনিরের কদর ব্যাপক।

পনির তৈরির জন্য প্রথমে কাঁচা দুধ সংগ্রহ করে বড় পাত্রে ‘মাওয়া’ (বিশেষ পানি বা বীজ) দিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে দেওয়া হয়। মাঝে একবার বাঁশের কাঠি দিয়ে পরীক্ষা করে নেওয়া হয় দুধ জমাট হচ্ছে কি না। দুধ জমে (ছানা) উঠলে, জমানো দুধ থেকে পানি ফেলে দিয়ে, ছানা বাঁশের তৈরি টুকরি বা ফর্মায় (ডাইস) রেখে পনির তৈরি করা হয়। পনির থেকে পানি ঝরে গেলে পরবর্তী সময়ে সংরক্ষণের জন্য ৩টি ছিদ্র করা হয়, যাতে লবণ সরে যায়। প্রতি ১০ কেজি দুধে এক কেজি পনির তৈরি হয়। দুধের ঘনত্বের ওপর নির্ভর করে পনির উৎপাদনের পরিমাণ।

কারিগর সেলিম রেজা বলেন, ‘পৈতৃকভাবে আমি পনির তৈরি শিখেছি। আমার দাদাও এ পনির বানাতেন। তখন দুধের কোনো ঘাটতি ছিল না। কিন্তু এখন দুধ কমে গেছে। দুধের দাম বাড়লে পনির বিক্রি কম হয়। তখন সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আমাদের সুদ ছাড়া ঋণ দিলে খেয়ে বেঁচে থাকতে পারব।’ অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পনির শিল্পকে বাঁচাতে উপজেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে কিছু প্রস্তাবনা বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত