Ajker Patrika

ঢাকায় চাঁদাবাজি চরমে

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২৫, ০৯: ০৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের নানা অঙ্গীকার এবং তৎপরতার পরও রাজধানীতে অপরাধের মাত্রা কমাতে দৃশ্যমান প্রভাব নেই; বিশেষ করে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য চরমে উঠেছে। চাঁদাবাজেরা এমনই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে আতঙ্ক ছড়াতে গুলি করে তার ভিডিও ধারণ করার ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। পুলিশের কর্মর্কতারা বলছেন, পরিবর্তিত রাজনৈতিক আবহে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা এলাকায় এলাকায় প্রভাব বিস্তারে মরিয়া হয়ে ওঠায় চাঁদাবাজির মতো অপরাধ বেড়েছে। সমস্যার সমাধানে ‘রাজনৈতিক সহায়তা’ দরকার বলে মত দিয়েছেন তাঁরা।

চাঁদাবাজদের গুলি করে ভিডিও ধারণের ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের টাউন হল এলাকায়। চাঁদা চেয়ে না পেয়ে মনির আহমেদ নামের এক আবাসন ব্যবসায়ীর অফিসে ঢুকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। একজন গুলি করার সময় তার ভিডিও করছিল সঙ্গের একজন। তৃতীয় আরেকজন মোটরসাইকেলে বসে অপেক্ষা করছিল। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ বলেছে, জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

অপহরণের হুমকি দিয়ে আগেই চাঁদা চাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। স্কুলশিক্ষকের মতো মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষও এর শিকার হয়েছেন। ১৭ মার্চ রাজধানীর গুলশানের একটি স্কুলের শিক্ষিকাকে ফোন করে চাঁদা চাওয়া হয়। অন্যথায় তাঁর সন্তানকে অপহরণের হুমকি দেন ফোন করা ব্যক্তি। ভুক্তভোগী নারী জানান, ফোনে তাঁকে বলা হয় থানা, পুলিশ, র‍্যাব করে কোনো কাজ হবে না। তাঁর ছেলে বা মেয়েকে তুলে নেওয়া হবে। তা এড়াতে চাইলে এখনই বলতে হবে কত দেওয়া হবে। টাকা না দিলে ছেলের লাশ পাওয়া যাবে। ছেলেপেলে বাসায় গিয়ে পাঁচটি করে গুলি করবে।

সন্ত্রাসীর নির্মম ভাষার হুমকিতে আতঙ্কিত হয়ে ওই শিক্ষিকা একপর্যায়ে ফোন রেখে দেন। তবে আবারও ফোন করে হুমকি দেওয়া হতে থাকে। দাবি করা হয় একটি মোটা অঙ্কের চাঁদা। ওই নারী এখনো আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

পুলিশের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যে ফোন নম্বর থেকে ওই নারীকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তা গোপালগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের এক নারীর নামে নিবন্ধিত। তবে চাঁদা দাবি করা সন্ত্রাসী ফোন করেছিল মাদারীপুরে বসে। এখনো তাঁকে ধরতে পারেনি পুলিশ। এদিকে ওই শিক্ষিকা তাঁর সন্তানদের নিয়ে রয়েছেন আতঙ্কে।

এভাবেই রাজধানীতে নানা কায়দায় চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। কখনো ফোনে, কখনো সামনাসামনি ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বাড়ির মালিক, উচ্চ বেতনের চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না দিলেই দেওয়া হয় অপহরণ বা হত্যার হুমকি। কখনো কখনো সত্যি সত্যিই হত্যার ঘটনাও ঘটছে।

ডিএমপির সদর দপ্তরের অপরাধ বিশ্লেষণ বিভাগের (ক্রাইম অ্যানালাইসিস ডিভিশন) তথ্য বলছে, হুমকি দিয়ে পুরোনো কায়দায়ই চাঁদাবাজি চলছে। তবে হুমকির ধরনে পরিবর্তন এসেছে। কাকে কী বলে হুমকি দিলে কাজ হবে, দৃশ্যত সেটা নিয়ে ভেবেচিন্তে কাজ করছে সন্ত্রাসীরা। আর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হচ্ছে নির্মাণাধীন ভবন ও বাণিজ্যিক আবাসন প্রকল্পগুলোতে। শিল্পকারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও চাঁদাবাজির বড় শিকার।

ডিএমপির হিসাব বলছে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত ৪৭ দিনে ঢাকা মহানগর পুলিশের ৮টি ক্রাইম বিভাগের ৫০টি থানায় ১১৩টি চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রমনা বিভাগে ১১টি, লালবাগে ১১টি, মতিঝিলে ২২টি, তেজগাঁওয়ে ২০টি, মিরপুরে ১৭টি, গুলশানে ১৭টি, উত্তরা ৬টি এবং ওয়ারীতে ৮টি। একই সময়ে এসব মামলায় ১২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া র‍্যাব গ্রেপ্তার করেছে ২০ জনকে। সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে মতিঝিল, তেজগাঁও এবং গুলশানে।

রাজধানীর উল্লিখিত তিন এলাকায় চাঁদাবাজি বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ডিএমপির সদর দপ্তরের অপরাধ বিশ্লেষণ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব এলাকায় ব্যাংক-বিমা, শিল্পকারখানাসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং বিত্তবান মানুষের বসবাস—দুটোই বেশি। অপরাধীরা এ জন্যই এসব এলাকাকে টার্গেট করে বেশি।

মোহাম্মদপুরের বছিলা এবং এর আশপাশের এলাকায় অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসন প্রকল্প গড়ে উঠছে। এসব স্থানে প্রায়ই চাঁদাবাজি করার অভিযোগ আসছে। পুলিশ জানায়, গত ২১ মার্চ বিকেলে বছিলার সিটি হাউজিংয়ে স্টকলট ব্যবসায়ী নাজিম খান অন্তরের কাছে গিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ফারুক হোসেন নামের এক সন্ত্রাসী। তাঁর সঙ্গে ওই এলাকার বড় সোহান, পিন্টুসহ সাত-আটজন ছিল। ভুক্তভোগী নাজিম খান সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীকে খবর দিলে সেনাসদস্যরা গিয়ে ফারুককে গ্রেপ্তার করেন।

চাঁদাবাজির ঘটনা বর্ণনা করে নাজিম খান বলেন, চাঁদা চেয়ে না পেয়ে সন্ত্রাসীরা তাঁকে পথে আটকে মারধর করে। বিষয়টি সেনাবাহিনীকে জানালে সেনাসদস্যরা ফারুককে গ্রেপ্তার করেন। পুলিশ জানিয়েছে, ফারুকের বিরুদ্ধে থানায় আরও দুটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের রূপনগরের দুয়ারীপাড়ার একটি নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে শ্রমিকদের মারধর করে সন্ত্রাসীরা। চাঁদা না পেয়ে রাজমিস্ত্রি নিজাম উদ্দিনকে মারধর করে তারা। এই ঘটনায় রূপনগর থানায় স্থানীয় শফিকসহ ১০ ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত শফিক রূপনগর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নম্বর আঞ্চলিক ওয়ার্ডের সেক্রেটারি। শফিকের বক্তব্যের জন্য কয়েকবার ফোন করা হলেও তাঁর নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

ডিএমপির সূত্রই বলেছে, কাজ এগিয়ে নেওয়া নির্বিঘ্ন রাখতে নির্মাণাধীন ভবনের চাঁদাবাজির ঘটনায় ভুক্তভোগীরা সাধারণত থানায় অভিযোগ করেন না। অপরাধীদের সঙ্গে আপস করার চেষ্টা করেন। অল্পসংখ্যক লোক সাহস নিয়ে মামলা করেন।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চাঁদাবাজদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের একই ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনার পর ঢাকার ব্যবসাক্ষেত্রে আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। নির্মাণ খাতের অনেক ঠিকাদার হুমকির মুখে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যান্য খাতের ব্যবসায়ীদের অপহরণ বা হামলার শিকার হতে হচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তা এবং ভুক্তভোগীরা বলছেন, গত বছরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কিছুসংখ্যক শীর্ষ অপরাধীর মুক্তিও চাঁদাবাজির মাত্রা বাড়িয়ে তোলার জন্য দায়ী। ডিএমপির একটি সূত্র জানিয়েছে, ক্ষমতার হাতবদলের পর চাঁদাবাজদের মুখ পরিবর্তন হয়েছে মাত্র, চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। গত জানুয়ারিতে এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজদের একটি তালিকা করে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। তবে তাতে আশানুরূপ ফল আসেনি। চাঁদাবাজেরা রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গত এক সপ্তাহে চাঁদাবাজির অভিযোগে একাধিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলের নেতাও রয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা দাবি করছেন, ক্ষমতার পালাবদলের পরের অনিশ্চয়তা এবং অস্থিরতার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তাও চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যের জন্য দায়ী। পুলিশ চিহ্নিত অপরাধীদের যথেষ্ট সংখ্যায় গ্রেপ্তার করছে না। অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে বের হয়ে লাপাত্তা রয়েছে। তাদের নামেও চাঁদা দাবি করা হচ্ছে।

তবে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। ডিএমপি দাবি করেছে, পুলিশ ও র‍্যাব চাঁদাবাজি মোকাবিলায় জোরদার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ডিএমপির জনসংযোগ শাখার উপকমিশনার মো. তালেবুর রহমান বলেন, ‘চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি। ঈদ সামনে রেখে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় কার্যক্রম বৃদ্ধিসহ টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে।’

পুলিশের একটি সূত্র দাবি করেছে, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকলেও রাজনৈতিক সহায়তা ছাড়া এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রম রোধ করা কঠিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সীতাকুণ্ডে পানবোঝাই পিকআপ খাদে উল্টে দুজন নিহত, আহত ১

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৬
খাদে উল্টে পড়ে যাওয়া পানবোঝাই পিকআপ ভ্যান। ছবি: আজকের পত্রিকা
খাদে উল্টে পড়ে যাওয়া পানবোঝাই পিকআপ ভ্যান। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে খাদে উল্টে পড়ে পানবোঝাই একটি পিকআপ ভ্যান। এতে দুই পান ব্যবসায়ী নিহত ও একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর বাঁশবাড়িয়া এলাকায়।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন পটিয়া থানার হাইদগাঁও এলাকার কমল চৌধুরী (৫৩) ও হাটহাজারী থানার পশ্চিম দেওয়াননগর পূর্বপাড়া এলাকার সমীর চৌধুরী (৫৪)। আহত ব্যক্তির নাম উজ্জ্বল চৌধুরী (৪৯)।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, তারা রাতে পটিয়া থেকে মিরসরাইয়ের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। মহাসড়কের উত্তর বাঁশবাড়িয়া এলাকায় ভ্যানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে উল্টে গেলে ভেতরে থাকা তিন ব্যবসায়ী গুরুতরভাবে আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর কমল চৌধুরী ও সমীর চৌধুরীকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আহত উজ্জ্বল চৌধুরী বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মোমিন জানান, দুর্ঘটনার পর চালক পালিয়ে গেছেন। তবে সড়ক পরিবহন আইনে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত দুই ব্যবসায়ীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সোনারগাঁয়ে অনুমতি ছাড়াই বসানো হয়েছে মেলা, অবৈধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর বালুর মাঠে অবৈধ বিজয় মেলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর বালুর মাঠে অবৈধ বিজয় মেলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর বালুর মাঠে অনুমোদন ছাড়া একটি মেলার আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মেলার আয়োজন করেছেন কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সেলিম হক রুমির ছোট ভাই সুমন হক ও তাঁর ভাতিজা আকাশ হক। তাঁদের অভিযোগ, মেলার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাদক কারবার, জুয়া, অশ্লীল নৃত্যসহ বেআইনি কর্মকাণ্ড। এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড দিয়ে মেলা থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।

গত শুক্রবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া মেলায় জুয়াড়ি, মাদক কারবারি ও মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়েছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মেলা আয়োজনের অনুমতিপত্র না থাকলেও মেলার আয়োজক বিএনপি নেতার ভাই সুমন হক দাবি করেন, ইউএনও অফিসে আবেদন করে থানা-পুলিশকে জানিয়ে এই মেলা বসিয়েছেন তিনি। তবে জেলা প্রশাসনের কোনো অনুমতি নেই।

জানা যায়, কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সেলিম হক রুমির ছোট ভাই সুমন হক ও ভাতিজা আকাশ হক ও মিঠু মিয়া কাঁচপুর ওমর আলী উচ্চবিদ্যালয়ের বিপরীত পাশে বালুর মাঠে এই মেলার আয়োজন করেন। বিজয় মেলার নামে মাসব্যাপী মেলা গতকাল শুক্রবার থেকে শুরু হয়। মেলায় নাগরদোলা, ইলেকট্রিক নৌকা, পুতুলনাচ, খেলনার দোকান, কসমেটিকসের দোকান, মুড়ি-মুড়কি, ফুচকার দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের শতাধিক দোকান বসেছে।

মেলায় বসানো খেলনা, কসমেটিকসের দোকান ও ফুচকার দোকান থেকে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এ ছাড়া ইলেকট্রিক নৌকা ও নাগরদোলা থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। মেলার ভেতরে বসানো হয়েছে লটারির নামে জুয়া ও মাদকের আসর।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিদিন উচ্চ স্বরে মাইক বাজিয়ে আশপাশে শব্দদূষণ করা হচ্ছে। প্রশাসনও তাঁদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এই অবৈধ মেলা দ্রুত উচ্ছেদ করার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেছেন তাঁরা।

মেলার ব্যবস্থাপক মিঠু মিয়া বলেন, তিনি বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে দোকানগুলো নিয়ে এসেছেন। মেলা বসানোর জায়গা না দিলে মেলা করা সম্ভব না। তবে এই মেলার জায়গা দিয়েছেন সুমন ও তাঁর ভাতিজা আকাশ।

মেলার আয়োজক সুমন হক বলেন, ‘মেলার অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আবেদনের কপিটি থানায় জমা দিয়ে অবগত করা হয়েছে। এখনো জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেলার অনুমতি পাইনি।’ অনুমতি ছাড়া মেলা কীভাবে হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি দেখা করতে অনুরোধ করেন।

কাঁচপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সেলিম হক রুমি বলেন, ‘এই অবৈধ মেলা বন্ধ করতে আমি নিজেই ইউএনও কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছি। আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই মেলা বন্ধ হওয়া উচিত।’

সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল হাসান খান বলেন, মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। আয়োজকদের ডেকে মেলা বসানোর বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছে। মেলা বসানোর চেষ্টা করা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আল জিনাত বলেন, ‘মেলা বসানোর বিষয়ে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো প্রকার জমায়েত করার সুযোগ নেই। অবৈধ মেলা উচ্ছেদ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০১
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় শরিফ ওসমান হাদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় শরিফ ওসমান হাদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার এখনো দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি বলে জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা।

এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, তাঁর মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’ এবং ক্লিনিক্যালি তিনি আগের মতোই অত্যন্ত আশঙ্কাজনক পর্যায়ে রয়েছেন। এই অবস্থায় তাঁকে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনাও চলছে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের এক সদস্য।

আজ রোববার সকালে মেডিকেল বোর্ডের জরুরি বৈঠক শেষে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডের এক চিকিৎসক এসব তথ্য জানান।

ওই চিকিৎসক বলেন, ‘ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে একটি কেস সামারি প্রস্তুত করে দেওয়া হয়েছে। বিদেশের কোনো হাসপাতাল সেই কেস সামারি পর্যালোচনা করে রোগীকে গ্রহণ করলে তবেই বিদেশে নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আসবে।’

হাদির চিকিৎসায় যুক্ত ওই চিকিৎসক আরও জানান, ‘আজ সকালে মেডিকেল বোর্ডের বৈঠকের আগেই হাদির সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। পুনরায় সিটি স্ক্যানে মস্তিষ্কে ব্যাপক ইডেমা (পানি জমা) ও অক্সিজেনের ঘাটতির প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা ব্রেনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মস্তিষ্কের কিছু অংশে ছিটেফোঁটা রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণও পাওয়া গেছে। সর্বশেষ সিটি স্ক্যান অনুযায়ী হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা জটিল। ফুসফুসের অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। বর্তমানে লাইফ সাপোর্টের মাধ্যমে হাদির শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখা হয়েছে। তবে তাঁর কিডনির কার্যকারিতা স্বাভাবিক রয়েছে। দিনে প্রায় ৪ লিটার ইউরিন আউটপুটের ভিত্তিতে ফ্লুইড ব্যালেন্স করা হচ্ছে।’

এর আগে রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণের ভারসাম্যহীনতা থেকে যে ডিসেমিনেটেড ইনট্রাভাসকুলার কোয়াগুলেশন (ডিআইসি) দেখা দিয়েছিল, সেটির অবস্থাও বর্তমানে অপরিবর্তিত রয়েছে এবং নতুন করে কোনো সংকট তৈরি হয়নি বলে জানান চিকিৎসক।

তাঁর মতে, বড় উদ্বেগ মস্তিষ্ক নিয়ে। ব্রেন স্টেম ইনজুরি এখনো গুরুতর অবস্থায় রয়েছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর সন্ধ্যার দিকে হাদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বুড়িগঙ্গা নদীতে যাত্রীবাহী লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে গেছে বাল্কহেড

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ সকালে যাত্রীবাহী লঞ্চের ধাক্কায় বাল্কহেডটি ডুবে গেছে। ছবি: সংগৃহীত
আজ সকালে যাত্রীবাহী লঞ্চের ধাক্কায় বাল্কহেডটি ডুবে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

ফতুল্লার বুড়িগঙ্গা নদীতে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় যাত্রীবাহী লঞ্চের ধাক্কায় একটি বাল্কহেড ডুবে গেছে। নৌ পুলিশ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, যাত্রীবাহী লঞ্চের সঙ্গে বাল্কহেডের সংঘর্ষ হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে বাল্কহেডটি নদীতে ডুবে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, বাল্কহেডে থাকা স্টাফরা নদীতে লাফ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছেন।

নৌ পুলিশের উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সদরঘাট থেকে ভোলাগামী ‘বোগদাদীয়া-১৩’ লঞ্চটি ফতুল্লার বুড়িগঙ্গা অংশে পৌঁছালে একটি বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে বাল্কহেডটি ডুবে যায়। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ধাক্কা দেওয়া লঞ্চটিকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

প্রতক্ষ্যদর্শী শেখ সাদ্দাম বলেন, ‘নদীপারাপারের সময় দুর্ঘটনাটি দেখেছি। সঙ্গে সঙ্গে আমার মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত