Ajker Patrika

পরকীয়ার জেরে সাবেক স্ত্রীর হাতে প্রাণ যায় জিনের বাদশার: পিবিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
পরকীয়ার জেরে সাবেক স্ত্রীর হাতে প্রাণ যায় জিনের বাদশার: পিবিআই

মধ্যরাতে মোবাইল ফোনে জিনের বাদশা পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আয় করতেন ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার জাকির হোসেন বাচ্চু। মানুষ ঠকানো এই টাকা দিয়ে বিভিন্ন নারীদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনসহ নানাভাবে টাকা খরচ করতেন। বাচ্চুর এমন কর্মকাণ্ডের ক্ষুব্ধ হয়ে সাবেক দ্বিতীয় স্ত্রী তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৯ জুলাই বাচ্চু ভোলায় যাওয়ার পথে লঞ্চের কেবিনে কৌশলে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন সাবেক স্ত্রী আরজু আক্তার। 

স্বামীকে হত্যার পরে কেবিনের খাটের নিচে লাশ লুকিয়ে রেখে ভোলা থেকে বরিশাল হয়ে ঢাকায় ফেরার পথে সাভার নবীনগর এলাকা থেকে আরজুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের বিশেষ শাখা পিবিআই। এ সময় আরজুর কাছ থেকে নিহত বাচ্চুর মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। 

বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআইয়ের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার বিশেষ পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম। 

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার খোরশেদ আলম বলেন, ‘গত ২৯ তারিখ রাতে এমভি গ্রিন লাইন-৩ লঞ্চের তৃতীয় তলার মাস্টার ব্রিজের স্টাফ কেবিন থেকে নিহত জাকির হোসেন (৩৮) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ–পুলিশের সদরঘাট থানা-পুলিশ। নিহত বাচ্চু বোরহানউদ্দিন থানার পূর্ব রাজিবাড়ির মো. সিদ্দিক ফরাজি ছেলে। আরজু একই উপজেলার ভারটিকটা গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের মেয়ে। মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় নিহত জাকিরের প্রথম স্ত্রী সুরমা আক্তার বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে আরজুকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।’ 

গ্রেপ্তারকৃত আরজুর বরাত দিয়ে খোরশেদ আলম জানান, ‘২০২০ সালে জিনের বাদশা পরিচয়ে বাচ্চু দুই বছর আগে আরজু আক্তারকে ফোন দিয়েছিলেন। আরজুকে কথার জাদুতে প্রতারণার জন্য ফাঁদ পাতলেও পরিস্থিতি বদলে যায় ভিন্ন দিকে। জিনের বাদশা পরিচয় থেকে শুরু হয় প্রেম। এরপর বিয়ে। জিনের বাদশার স্ত্রী হওয়ার পর আরজু জানতে পারেন তিনি বাচ্চুর দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী থাকেন ভোলার গ্রামের বাড়িতে। পরবর্তীতে আরজুও হয়ে ওঠেন কথিত জিনের বাদশা। স্বামীর সঙ্গে মিলে শুরু করেন প্রতারণা। তবে বিপত্তি বাধায় বাচ্চুর নারীর নেশা। প্রতারণার মাধ্যমে আয়ের একটি বড় অংশ বিভিন্ন নারীদের সঙ্গে অনৈতিক কাজে খরচ করা নিয়ে আরজুর সঙ্গে বাচ্চুর মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। মনোমালিন্যের সূত্র ধরে পাঁচ মাস আগে আরজুকে তালাক দেয় বাচ্চু। আরজুকে তালাক দিলেও শেষ হয়নি সম্পর্ক। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পরও একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কের ধরা পরে আরজুর হাতে।। এতে আরজু আক্তার আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়। আর এই ক্ষোভ থেকেই সাবেক স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে।’ 

পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার বলেন, ‘গত ২৮ জুলাই ঘটনার আগের দিন রাতে জাকির হোসেন বাচ্চু তাঁর এক পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে রাত্রি যাপন করে। বিষয়টি আরজু আক্তার বুঝতে পারেন। এ ছাড়া, আরজু জাকির হোসেনের ২৯ জুলাই শুক্রবার ঢাকা থেকে লঞ্চে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কথাও জানতে পারে। আরজু আর জাকির হোসেন বাচ্চুকে লঞ্চের একটি কেবিনে করে তাঁকেও বাড়ি নিয়ে যেতে বলে। জাকির ও আরজুর বাড়ি পাশাপাশি গ্রামে হওয়ায় জাকির হোসেন ঢাকা থেকে ভোলাগামী এমভি গ্রিন লাইন-৩ লঞ্চের একটি স্টাফ কেবিন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ভাড়া করেন। তবে কেবিন ভাড়া নেওয়ার সময় লঞ্চের কর্মচারীরা তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য রাখেনি। আর লঞ্চের ওঠা থেকে নামা পর্যন্ত আরজু আক্তারের মুখ ঢাকা ছিল।’ 

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী আরজু দুধের সঙ্গে পাঁচটি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে লঞ্চে ওঠেন। জাকির হোসেন এক বাটি রসমালাই কিনে লঞ্চে ওঠে। কেবিনে ওঠার পরে দুজনে ঘনিষ্ঠ সময় কাটায়। পরে আরজু কৌশলে ঘুমের ওষুধ মেশানো দুধ বাচ্চুকে খাইয়ে দেয়। দুধ খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে জাকির অচেতন হয়ে গেলে আরজুর সঙ্গে থাকা ওড়নার এক অংশ দিয়ে বাচ্চুর হাত-পা বেঁধে ফেলে। অপর অংশ দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর জাকির হোসেনের মরদেহ কেবিনের স্টিলের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে। লঞ্চটি ভোলার ইলিশা ঘাটে পৌঁছালে আরজু নেমে যায়। ওই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে লঞ্চটি ইলিশা থেকে যাত্রী নিয়ে আবারও ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। লঞ্চের কর্মচারীরা ওই কেবিনটি তিনজন বাচ্চা সহ দুই নারীর কাছে ভাড়া দেয়। লঞ্চটি ছেড়ে আসার পরে পথে নারীদের সঙ্গে থাকা একটি শিশু খাটের নিচে প্রবেশ করলে শিশুকে বের করতে গিয়ে খাটের নিচে মরদেহ নজরে আসে।’ 

পরে নিহত বাচ্চুর প্রথম স্ত্রীর মামলা তদন্ত করতে গিয়ে সাভারের নবীনগর থেকে আরজুকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আরজুকে আদালতে হাজির করা হলে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। বর্তমানে আরজু কারাগারে আছেন বলে জানান পিবিআইয়ের এ কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অপারেশন সিন্দুর ঘিরে আলোচিত কে এই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি

কাশ্মীরে বিধ্বস্ত বিমানের অংশবিশেষ ফরাসি কোম্পানির তৈরি, হতে পারে রাফাল

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

নিজ কার্যালয়ে র‍্যাব কর্মকর্তার গুলিবিদ্ধ লাশ, পাশে চিরকুট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত