Ajker Patrika

টং দোকানের ভেতর ভয়ে রাত কাটে চন্দনের, এ যাত্রায় টিকবে তো?

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
টং দোকানের ভেতর ভয়ে রাত কাটে চন্দনের, এ যাত্রায় টিকবে তো?

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নান্দিয়া সাঙ্গুন জেলেপাড়ায় টং দোকানে চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন চন্দন বর্মণ। বাবার রেখে যাওয়া পেশা মাছ শিকার পরিবর্তন করেছেন বছর কয়েক আগে। জীবন সায়াহ্নে এসে গত কয়েক বছর যাবৎ এই কাজ করছেন তিনি। ভালোই চলছে তাঁর সংসার। কিন্তু তাঁর মধ্যে সব সময় নদী ভাঙনে ফলে দোকানটি হারানোর ভয় কাজ করে। তাঁর এখন একটাই ভাবনা ভাঙনের মুখে টিকবে তো তাঁর একমাত্র অবলম্বন? 

সুতিয়া নদীর ভাঙনের ফলে রাস্তা বিলীন হয়ে একেবারে চন্দনের দোকানের সামনে এসে গেছে। একটি ভারী বৃষ্টি হলে তাঁর জীবিকার একমাত্র উৎস টং দোকানটি নদী গর্ভে চলে যেতে পারে। শুধু চন্দন বর্মণ নয় এই সড়কটি ব্যবহার করে জেলে পাড়ার শতাধিক পরিবার। 

শুক্রবার সকালে কথা হয় চন্দন বর্মণের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘বাবার রেখে যাওয়া পেশা নৌকা–জাল দিয়ে মাছ শিকার করে বহু বছর জীবন–জীবিকা নির্বাহ করেছি। বর্তমানে নদীতে মাছের খুবই অভাব, মাছ না থাকায় চার বছর আগে পেশা পরিবর্তন করে একটি টং দোকান দাঁড় করিয়ে চা বিক্রি শুরু করেছি। সারা দিন চা বিক্রি করে যে টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে কোনোমতে চলছে সংসার। কিন্তু গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে আমার দোকানের পাশের মাটি ভেঙে নদী বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে যেকোনো সময় আমার একমাত্র সম্বল দোকানটি বিলীন হয়ে যাবে। প্রতিরাতে ভয়ে ভয়ে দোকানের ভেতর কাটে রাত। ভগবানের কাছে টং দোকান রক্ষার জন্য প্রতিনিয়ত প্রার্থনা করি। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি রাস্তা টেকাতে।’ 

চন্দনের মহল্লার আরেক বাসিন্দা রাজিব বর্মণ বলেন, ‘সারা দেশে এত উন্নয়ন হচ্ছে। অথচ আমাদের জেলে পাড়ার রাস্তা রয়েছে ঝুঁকিতে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাটি–বালির বস্তা ফেলে রক্ষা করা হচ্ছে রাস্তা। যেকোনো সময় ভারী বৃষ্টিতে পুরো রাস্তা বিলীন হয়ে সুতিয়া নদীতে চলে যাবে।’ 

একই গ্রামের শাহীন সুলতানা বলেন, ‘এই মহল্লায় হিন্দু–মুসলিমসহ শতাধিক পরিবার বসবাস করে। তাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। এরই মধ্যে রাস্তার বেশির ভাগ অংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশ যেকোনো সময় বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা।’ দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি উদ্যোগে রাস্তা রক্ষার দাবি জানান তিনি। 

কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য দাদন মীর বলেন, ‘ভাঙনের বিষয়টি স্থানীয়রা আমাকে জানিয়েছে। এ বিষয়ে আমি চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছি। তিনি জানিয়েছেন বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করবেন।’ 

কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজিজুল হক আজিজ বলেন, ‘জেলে পাড়ার এই রাস্তা রক্ষায় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আসলে রাস্তাটি রক্ষার জন্য বড় ধরনের বরাদ্দ প্রয়োজন। এ জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বড় ধরনের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া মাত্রই কাজ শুরু হবে।’ 

শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী রাকিবুল আহসান বলেন, ‘এ বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ–খবর নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ 

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকৌশলীকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হবে। আশা করি রাস্তার রক্ষার কাজ শুরু হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরানো হলো দুই কেবিন ক্রু

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়ানোর সহজ উপায় জানালেন বিজ্ঞানীরা

প্রাথমিকে আবার চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয়নি: মাহমুদুর রহমান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত