Ajker Patrika

দখল-দূষণে মৃতপ্রায় চিংড়ি খাল উদ্ধার চায় স্থানীয়রা

রাতুল মণ্ডল, (শ্রীপুর) গাজীপুর
আপডেট : ৩০ মে ২০২৫, ০৯: ৩১
শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ও মাওনা ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত ছিল স্বচ্ছ জলের খাল ‘চিংড়ি’। চার কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালের বেশির ভাগ অংশ এখন ফসলের জমি। ছবি: আজকের পত্রিকা
শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ও মাওনা ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত ছিল স্বচ্ছ জলের খাল ‘চিংড়ি’। চার কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালের বেশির ভাগ অংশ এখন ফসলের জমি। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ও মাওনা ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত ছিল স্বচ্ছ জলের খাল ‘চিংড়ি’। চার কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের অস্তিত্ব এখন শুধুই ইতিহাসের পাতায়। একসময় চিংড়ি মাছের প্রাচুর্যের কারণে পরিচিতি পাওয়া এই খালের দৃশ্যমান অংশ এখন মাত্র ৫০০ মিটার। বাকি অংশ দখল ও ভরাট করে রূপান্তর করা হয়েছে ফসলি জমিতে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গাজীপুর ইউনিয়নের কপাটিয়াপাড়া, নিজমাওনা, আক্তাপাড়া ও মাওনা ইউনিয়নের বদনীভাঙ্গা গ্রামের বুকচিরে প্রবাহিত খালটি সালদহ নদীতে গিয়ে মিশেছে। তবে বর্তমানে শুধু চিংড়ি ব্রিজ-সংলগ্ন ৫০০ মিটার অংশই খালের আকারে রয়ে গেছে। বাকি অংশে যত দূর চোখ যায়, শুধুই সবুজ ফসলের মাঠ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে খালটি দখল করে আসছে। দখলের কারণে একদিকে যেমন পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে, তেমনি কৃষি উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

নিজমাওনা গ্রামের বৃদ্ধ সরাফত আলী বলেন, ‘ছেলেবেলায় বাবার সঙ্গে চিংড়ি খালে মাছ ধরতে যেতাম। খালের পানি এতটাই স্বচ্ছ ছিল যে, অনেকে তা পান করত। এখন খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।’

আরেক বাসিন্দা আইনুদ্দিন ফকির জানান, ‘১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে প্রভাবশালীরা দখল শুরু করে চিংড়ি খাল। এখন খাল নেই, মাছ নেই, বর্ষায় জলাবদ্ধতা হয়।’

শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ও মাওনা ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত ছিল স্বচ্ছ জলের খাল ‘চিংড়ি’। চার কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালের বেশির ভাগ অংশ এখন ফসলের জমি। ছবি: আজকের পত্রিকা
শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ও মাওনা ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষে প্রবাহিত ছিল স্বচ্ছ জলের খাল ‘চিংড়ি’। চার কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালের বেশির ভাগ অংশ এখন ফসলের জমি। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্থানীয় নারী রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘আমার বাবা খাল থেকে মাছ ধরে আনতেন, আমাকেও সঙ্গে নিতেন। ছোটবেলায় আমরা খালেই গোসল করতাম। এখনো যেটুকু অংশ আছে, সেখানে পানি এখনো স্বচ্ছ।’

জলাবদ্ধতার বিষয়টি নিশ্চিত করেন খালপাড়ের বাসিন্দা জসিমউদ্দিনও। তিনি বলেন, ‘খাল ভরাটের কারণে অতিবৃষ্টিতে বসতবাড়ি তলিয়ে যায়। প্রশাসনের উচিত দ্রুত খাল উদ্ধার করা।’

নানিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, ‘দুই বছর আগে মাপজোখ করে লাল নিশান টানানো হয়েছিল। তখন আশা জেগেছিল। কিন্তু অগ্রগতি থেমে আছে। খাল উদ্ধার হলে কৃষিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ত।’

‘নদী পরিব্রাজক দল’ শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘চিংড়ি খাল একসময় ছিল স্বচ্ছ ধারার জলাধার। এখানকার কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনের অন্যতম উৎস ছিল এটি। দখল-দূষণ প্রতিহত করে খালটি রক্ষা করতে হবে। দ্রুত দখল উচ্ছেদের দাবি জানাচ্ছি।’

শ্রীপুর উপজেলা ভূমি সার্ভেয়ার মো. মামুনুর রশীদ জানান, ‘চিংড়ি খালের মোট আয়তন ১১ একর ২ শতাংশ। এর বেশির ভাগ অংশ জবরদখল করে ফসলি জমি বানানো হয়েছে। তবে দুই বছর আগে সীমানা নির্ধারণ করে লাল নিশান টানানো হয়েছে।’

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজীব আহমেদ বলেন, ‘নদী ও খাল উদ্ধার নিয়ে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। চিংড়ি খাল দখলদারদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। তালিকা প্রকাশ করে উদ্ধার অভিযান শুরু হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাশিয়া-পাকিস্তান চুক্তি: দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতার ভারসাম্যে নতুন মোড়ের ইঙ্গিত

নগদের ১৫০ কোটি টাকা বেহাতের অভিযোগ নিয়ে যা বললেন নাহিদের সাবেক পিএ আতিক

আরাকান আর্মির হাতে মিয়ানমারের জেনারেল নিহত, চীনা টার্মিনালের কাছে চলছে লড়াই

সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধই সেনাবাহিনীর চেতনার উৎস: সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার

বগুড়ায় ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ৩ পুলিশ ও আনসার সদস্য কারাগারে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত