Ajker Patrika

যখন উদ্বাস্তু গাছ-পাখিদের সংসার

ফজলুল কবির, ঢাকা
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩: ৪৮
যখন উদ্বাস্তু গাছ-পাখিদের সংসার

উদ্বাস্তু নদীর এই নগরে পাখিদের থাকতে মানা। উচ্ছেদে উচ্ছেদে সেই কবেই তো লন্ডভন্ড হয়েছে গাছেদের সংসার। এই তো কয়েক দিন আগে শিক্ষার্থীশূন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও একটু জেগে উঠল এক গাছ হত্যার খবরে। প্রশাসন বলছে পোকায় খেয়েছে, তাই কেটে ফেলা হবে। সেই কাজও শুরু করে তারা। পরে প্রতিবাদের মুখে রাশ টানা হয় এই হত্যাযজ্ঞে। 

এ শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্প নয়। এমনকি শুধু ঢাকার গল্পও নয়। এ গোটা দেশের গল্প। রাস্তা যাবে, গাছ কাটো। ভবন হবে, গাছ কাটো। হাসপাতাল হবে, গাছ কাটো। যেকোনো উন্নয়ন বা অন্য কোনো কাজে যেন প্রথম বাধাটি দিচ্ছে গাছই। ফলে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবাহী যশোর রোডের দুপাশের শতবর্ষী গাছ কাটতেও আমাদের হাত একবারও কাঁপেনি। অথচ এই আমরাই কী অনায়াসে চা খেতে খেতে পাখিদের নিয়ে হাহাকার করি! যদিও তার আবাস মুছে দিতে সব সময়ই উদ্ধত থাকে আমাদের ইরেজার। গাছেদের এই উদ্বাস্তু হওয়ার গল্পই উঠে এল শিল্পী মিল্টন মোমেনের করা ইনস্টলেশনে। 

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালায় চলছে ২৪তম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনী। বরাবরের মতোই চিত্রশালার দ্বিতীয় তলার গ্যালারি-১-এর বাইরে একটি ইনস্টলেশন অভিবাদন জানাল। ভেতরে হাতছানি দিয়ে তখন ডাকছে আরও শত কাজ। সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকতেই একটু ধন্ধে পড়ে যেতে হলো। মনে হলো কেমন অগোছালো। গেটে থাকা একজনের সঙ্গে কথা বলে খুঁজে খুঁজে দেখা গেল পুরো গ্যালারিতে একটি মাত্র ভিডিও-আর্ট। এই প্রদর্শনীর আওতাধীন আর কোনো শিল্পকর্ম গ্যালারিটিতে নেই। এবিষয়ক কোনো নোটিশও সেখানে নেই। ঠিক বোঝা গেল না, এই দুটিমাত্র কাজকে কেন এমন বিচ্ছিন্ন করা হলো? 

তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা মিলল বহু কাজের। বেশ কিছুতে এই সময়ের বাস্তবতা করোনা বাস্তব হয়ে আছে। দেখা মিলল সাগরপাড়ের জেলেজীবনের বয়ান নিয়ে এক সাম্পানের। দেয়ালে আঁকা এই সাম্পানের প্রতিটি খাঁজে উঁকি মারছে সাগরপাড়ের জীবনের নানা ছবি। কিছু শিল্পকর্ম যেমন মুগ্ধ করেছে, তেমনি কিছু আবার প্রশ্ন জাগিয়েছে মনে—এখানে কেন? আবার কিছু শিল্পকর্মকে এমন অবহেলায় ঠাঁই দেওয়া হয়েছে যে, মনে হয় যেন করুণা করা হয়েছে। তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে হয়, যদি এই কাজগুলো এভাবেই জায়গা করে দেওয়া হবে, তবে নির্বাচন না করলেই তো হতো। সে ক্ষেত্রে আরও জায়গা নিয়ে প্রদর্শন করতে পারতেন শিল্পীরা। এমন ঠাসাঠাসি ভাবটা অন্তত থাকত না। প্রতিবারই জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে গেলে এই ঠাসাঠাসি বিষয়টিই সবার আগে মাথায় আসে। মনে হয়, নিশ্চয় কোনো একটা সংখ্যার সীমা থেকে থাকবে। না হলে এমন তো হওয়ার কথা নয়। 

সে যাক, এই ঘুরে ঘুরে যখন গ্যালারি-৫ এর সামনে, তখন দেখা মিলল আউয়াল হোসেনের সঙ্গে। গ্যালারি-৫ ও ৬-এর নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বে থাকা আউয়ালকে দেখা গেল একটি ছবির সামনে বেশ আগ্রহ নিয়ে থাকতে। দেয়ালে ঝোলানো সেই জলরঙের আঁকা ছবি এমনিতে বোঝা যায় না। নানা রঙের অনুভূমিক টানে আঁকা ছবিটি কি জাদু করল আউয়ালকে। কৌতূহল হলো, আর সে থেকেই কথার শুরু। জানা গেল, আগে ছিলেন পঙ্গু হাসপাতালে। শুনে কৌতূহল বাড়ল বেশ। চোখ দেখেই হয়তো বুঝলেন। বললেন, ‘এখানে ভালো লাগে। ওখানে তো অসুখ।’ বোঝা গেল শিল্পকলা নতুন দায়িত্ব ক্ষেত্র হওয়ায় তিনি কিছুটা নতুন জীবন পেয়েছেন। ছবিটি দেখিয়ে বললাম, ‘ভালো লাগল এই কাজ?’ মাথা নাড়লেন। 

একটু অন্তরঙ্গ হয়ে আলাপ বাড়াতেই ব্যাখ্যা শুরু করলেন, ‘এটা আসলে গ্রামের ছবি। এই ছবিতে নদী আছে।’ ‘নদী আছে! কোথায়?’ প্রশ্ন করতেই এগিয়ে দেখিয়ে দিলেন রুপার মতো দেখতে তুলির টান। ‘এগুলা ঢেউ, নদীর। আর এই হলো বালু’, সাদা রেখা দেখিয়ে। তারপর আকাশ ও আরও কত কী? বোঝা গেল গ্রামের গন্ধ মাখা এই শহরের নাগরিকদের একজন এই আউয়াল হোসেনেরও মন কেমন করছে হয়তো। 

আলাপে আলাপে জানালেন, বাড়িতে মা-বাবা আছে। আছে স্ত্রী। আর ছোট এক সন্তান। চোখটা চকচক করে উঠল তাঁর এসব বলতে বলতে। আলাপে আলাপে দেখা গেল, সময় যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। কিন্তু যেতে তো হবে। প্রদর্শন কক্ষে বেশিক্ষণ থাকার তো নিয়ম নেই। এ তো পরিব্রাজকের জায়গা। চলে আসতে চাইলেও আউয়ালের চোখে আরও আলাপের আহ্বান। কিন্তু সেই আহ্বান উপেক্ষা করে সরে পড়তে হলো। ঘুরে ঘুরে অন্য গ্যালারিগুলো দেখার জন্য পা বাড়াতে হলো। কিন্তু এই পা বাড়িয়েও তাঁর সঙ্গে দেখা হলো আরও অন্তত চারবার। বোঝা গেল তিনি বেশ অনেকক্ষণ ধরেই আশপাশে আছেন। তাঁর চোখে কি হাজারটা কথা জমা? কিন্তু ফিরতে তো হবে। 

ফেরার সময়ই দেখা হলো কাঁটাতারের জালিতে আটকে পড়া পাখিদের সঙ্গে। সেখানে লক্ষ্মীপ্যাঁচার সঙ্গে চোখাচোখি এড়িয়ে চোখ পড়ে গিয়ে বকের ওপর, সেখান থেকে সরালে চোখ যায় চড়ুইর ডানায়। পাশ থেকে শালিক ডেকে বলছে যেন, ‘আমায় দেখ।’ সবাই যেন একবাক্যে একই কথা বলছে—দেখ কী করে, কাদের তাড়িয়েছ তোমরা।’ থমকে যেতে হলো। মনে হলো তাই তো। মনে হলো গাছ-বিগত এই নগরে পাখিদের আবাস আমরা কী নিষ্ঠুরতায়ই না ধ্বংস করেছি। মনটা কেমন করে উঠল। উড়তে চাওয়া পাখিদের ডানা যেন আড়ষ্ট হয়ে আছে। মনে হলো এই ইট-কাঠের শহরের বাসিন্দা হিসেবে এই ডানা-ছাঁটা লোকের দলে তো আমরা সবাই-ই আছি। এমন ভাবনা নিয়ে বেরিয়ে আসতে গিয়ে ফের ভাবনা এল মাথায়—গাছ-নদী-পাখিদের সংসার উজাড়কে তির্যকভাবে দেখে যে শিল্পকর্মের জন্ম, তার পাখিগুলো কেন তবে কাঠেরই তৈরি? 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ওসমান হাদির চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড আজ রোববার বিকেলে বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ সমন্বয়ক এবং জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. জাফর ইকবাল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আজ আবার তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত ও বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। এদিন তাঁর হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদ্‌যন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে অ্যাসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।

মেডিকেল বোর্ড আরও বলেছে, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাঁকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাঁকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

ওসমান হাদির প্রথম অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ আজ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল শনিবারের মতো আজও মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। রোগীর কেস সামারি প্রস্তুত করে ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুদান হামলা: সন্তান ভূমিষ্ঠের আগেই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো শান্তিরক্ষী শান্তকে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
শান্ত মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত
শান্ত মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত

সুদান থেকে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কলে যখন কথা বলতেন, তখন অনাগত সন্তান নিয়ে কত শত স্বপ্ন বুনতেন শান্তিরক্ষী শান্ত মণ্ডল। সন্তান যেন একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ পায়, সে জন্য পরিবারের সবাইকে ছেড়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকার কষ্ট হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই সন্তানের মুখ দেখার আশা তাঁর আর পূরণ হলো না। সন্তান ভূমিষ্ঠের আগেই এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো তাঁকে।

গতকাল শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের একজন কুড়িগ্রামের শান্ত মণ্ডল (২৬)। তাঁর বাড়ি রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাটমাধাই ডারারপাড় গ্রামে। তাঁর বাবা সাবেক সেনাসদস্য (মৃত) নূর ইসলাম মণ্ডল এবং মা সাহেরা বেগম। শান্তর বড় ভাই সোহাগ মণ্ডল সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তিনি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে ল্যান্স করপোরাল পদে রয়েছেন।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) নিহত শান্তর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তাঁর মা সাহেরা বেগম শোকে স্তব্ধ হয়ে বিছানায় বসে রয়েছেন। বড় ভাই সোহাগ মণ্ডলের চোখ কান্নায় লাল হয়ে আছে। স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাড়িতে গিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করছেন।

সোহাগ মণ্ডল বলেন, শান্ত ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগদান করেন। তিনি সর্বশেষ বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে সৈনিক পদে ছিলেন। গত ৭ নভেম্বর তিনি শান্তিরক্ষী মিশনে সুদানে যান। সোহাগ মণ্ডল আরও বলেন, ‘মাত্র এক বছর আগে শান্ত বিয়ে করেছে। তার স্ত্রী বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সে তার বাবার বাড়িতে আছে। সেও খবর পেয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় শান্ত ভিডিও কলে বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলেছে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে খবর পাই, ওদের ক্যাম্পে হামলা হয়েছে। হামলায় শান্ত মারা গেছে। হামলার সময় সে অস্ত্র পরিষ্কার করতে ছিল। তার এমন মৃত্যুতে আমরা দিশেহারা। আমরা এখন তার লাশের অপেক্ষায় আছি। বাড়িতে বাবার কবরের পাশে তাকে কবর দিতে চাই।’

পরিবার থেকে জানানো হয়, স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিতই কথা হতো শান্তর। গতকাল শান্তর মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শোকে বিহ্বল হয়ে গেছেন। কারও সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থায় এখন তিনি নেই।

শান্তর বাল্যবন্ধু সুমন বলেন, ‘শান্তর মৃত্যুর খবরে এলাকার মানুষ শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে। নামের মতোই সে শান্ত ছিল। কোনো দিন কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ বা কটু কথা বলেনি। এমন বন্ধুর মৃত্যুতে আমরা অত্যন্ত ব্যথিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে আইনজীবী ছাড়া প্রবেশ সীমিত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

নিরাপত্তার স্বার্থে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট—উভয় বিভাগের এজলাস কক্ষে আইনজীবী ছাড়া বিচারপ্রার্থী বা অন্য কোনো অপ্রত্যাশিত ব্যক্তির প্রবেশাধিকার সীমিত করা হয়েছে। আজ রোববার প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এ বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট দেশের বিচার অঙ্গনের সর্বোচ্চ স্থান এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত। প্রধান বিচারপতি ও উভয় বিভাগের বিচারপতিরা এখানে বিচারকার্য পরিচালনা করেন, তাই সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।

সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে যে, আদালতে আগত কিছু বিচারপ্রার্থী, মামলাসংশ্লিষ্ট ও অপ্রত্যাশিত ব্যক্তি এজলাসে প্রবেশ করছেন, যা আদালতের নিরাপত্তা, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও বিচারকার্য পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

নিরাপত্তাজনিত কারণে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের আইনজীবী বাদে বিচারপ্রার্থী কিংবা অপ্রত্যাশিত যেকোনো ব্যক্তির এজলাস কক্ষে প্রবেশাধিকার সীমিত অথবা নিয়ন্ত্রিত থাকবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে যেকোনো সমাবেশ ও মিছিল, বৈধ ও অবৈধ যেকোনো প্রকার অস্ত্র, মারণাস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদকদ্রব্য বহন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হলো। এই আদেশ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘কুকুরের বাচ্চা হত্যার বিচার হয় অথচ নিষ্পাপ শিশু হত্যার বিচার নেই’

উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা) প্রতিনিধি 
‘বিমান দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারের পক্ষ থেকে সরকার কর্তৃক ঘোষিত ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান’ শীর্ষক মানববন্ধনে অভিভাবকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘বিমান দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারের পক্ষ থেকে সরকার কর্তৃক ঘোষিত ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান’ শীর্ষক মানববন্ধনে অভিভাবকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে কুকুরের বাচ্চা হত্যার বিচার হয়, অথচ ফুলের মতো এতগুলো নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যু এত দিনেও বিচার পায় না। মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির প্রায় পাঁচ মাস পর নিহত ও আহত শিক্ষার্থীর পরিবারগুলো এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ক্ষতিপূরণও প্রত্যাখ্যান করেছে।

আজ রোববার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে গোলচত্বরে ‘বিমান দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারের পক্ষ থেকে সরকার কর্তৃক ঘোষিত ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান’ শীর্ষক মানববন্ধনে অভিভাবকেরা এই ক্ষোভ ব্যক্ত করেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অভিভাবকেরা বলেন, তাঁদের বাচ্চার জীবনের মূল্য কি ২০ লাখ টাকা? আহতদের ভবিষ্যতের মূল্য কি পাঁচ লাখ টাকা? এ দেশে একটি কুকুরের বাচ্চা হত্যার বিচার হয়, অথচ ফুলের মতো বাচ্চাদের জীবনের মূল্য নেই। তাঁরা অভিযোগ করেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজখবর নেওয়া হয়নি।

১২ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নিহতদের পরিবারকে ২০ লাখ এবং আহতদের পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেন। এ সময় আহতদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথাও বলা হয়।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ক্ষতিপূরণ প্রত্যাখ্যান করেছে নিহত ও আহত শিক্ষার্থীর পরিবারগুলো।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিল বিমান দুর্ঘটনায় আহত সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম নাবিল রোহান। দুই মাস চিকিৎসা নিয়ে সে এখন মোটামুটি সুস্থ। রোহানের বাবা নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘উপদেষ্টা বা সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমাদের ৩৬টা বাচ্চা মারা গেছে, ৫০-৬০ জন আহত হয়েছে। আমরা চাই বিচার। ৫ লাখ টাকা দিয়ে কী হবে? আমরা চাই, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক।’

নিহত সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জারিফ ফারহানের মা রাশিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘বর্তমান সরকার আমাদের খোঁজখবর নেয়নি। আমরা আমাদের দাবি জানাতে এখানে দাঁড়িয়েছি। ক্ষতিপূরণের ঘোষণা আমাদের কাছে অসম্মানজনক।’

আহত ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আহনাফ হোসেন নিলয়ের মা আইভি হোসেন নিঝুম জানান, তাঁর সন্তান ২৫ শতাংশ দগ্ধ। আরও তিনটি অপারেশন বাকি। বুক থেকে হাড় নিয়ে কান বানাতে হবে। হাত শক্ত হয়ে যাচ্ছে। নতুন চামড়া লাগাতে হবে। তিনি ক্ষতিপূরণ হিসেবে সরকারের ৫ লাখ টাকা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি দাবি করেন, হতাহতদের সারা জীবনের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য কার্ড ও নিহতদের পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণসহ শহীদের মর্যাদা দেওয়া হোক।

মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলেন ঢাকা-১৮ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘জীবনের মূল্য পাঁচ কোটি টাকাও না, ৫০০ কোটিও টাকাও না। জীবন, জীবনই। জীবনের মূল্য ২০ লাখ টাকা হয়, এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা এবং সরকারের আগের ঘোষণার সমন্বয় করে সরকার একটি নতুন ঘোষণা দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত