Ajker Patrika

আমেরিকায় পুলিশসহ সবকিছু মেয়রের নিয়ন্ত্রণে, বাংলাদেশে এমন নয়: রেহমান সোবহান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১৪: ৫৬
আমেরিকায় পুলিশসহ সবকিছু মেয়রের নিয়ন্ত্রণে, বাংলাদেশে এমন নয়: রেহমান সোবহান

আমেরিকায় মেয়ররা পুলিশ, পানি, যোগাযোগসহ অন্যান্য প্রশাসনিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করেন। বাংলাদেশে এমন হয় না। কাজের ক্ষেত্রে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রদের ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির মেয়রের থেকে কম। তাদের কোনো কিছু পরিবর্তনের ক্ষমতা নেই। এমনটাই মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান। 

আজ শনিবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) কর্তৃক আয়োজিত ‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ণ: সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি নজরুল ইসলাম। 

বাপার সহসভাপতি স্থপতি ইকবাল হাবিবের সঞ্চালনায় রেহমান সোবহান বলেন, ‘নিউইয়র্ক শহরে মেয়র সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। তিনি শহরের যানবাহনব্যবস্থা থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আমেরিকায় মেয়র তাঁর শহরে পুলিশ থেকে শুরু করে পানি ও অন্যান্য প্রশাসনিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করেন। বাংলাদেশে এমন হয় না।’ 

অধ্যাপক রেহমান সোবহান জানান, ১৯৯১ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তখন ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের মেয়র ছিলেন মোহাম্মদ হানিফ ও এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরী। মেয়র হানিফের সঙ্গে তিনি শহর পরিকল্পনার কথা বলেন, তবে সেটি হয়নি। পরে সিপিডি একটি ডায়ালগ আয়োজন করে। সেখানে তখনকার স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও চার শহরের মেয়রকে আমন্ত্রণ করা হয়। সেখানে তাঁদের স্থানীয় পৌরসভাভিত্তিক যেসব উন্নয়নকাজ করা দরকার, সেগুলো ভাগ করার বিষয়টি উপস্থাপন করেন। তবে তিনি (রেহমান সোবহান) বুঝতে পারেন, মেয়রদের আসলে কোনো ক্ষমতা নেই কিছু পরিবর্তন করার। সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। 

সিপিডির চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঢাকা শহরের ব্যবস্থাপনা মূলত আমলাতান্ত্রিক বিশৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ। এর কারণ, এখানে সীমানা নির্ধারণে জটিল অধিক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এখানে স্থানীয় সরকারের অধীনে সব। এমনকি স্থানীয় সরকার চাইলে তাদের (মেয়র) বাদও দিতে পারে। তাই প্রকৃত দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতা ব্যবহার করার ক্ষেত্র ঢাকা শহরের মেয়রদের হাতে নেই।’ 

রেহমান সোবহান বলেন, এই অনুষ্ঠানে তাঁকে প্রধান অতিথি হিসেবে মনোনীত করার চেয়ে নতুন সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া সাবের হোসেন চৌধুরীকে আনলে ভালো হতো। মন্ত্রী এসব বিষয় শুনে ব্যবস্থা নিতে পারতেন। 

রেহমান সোবহান আরও বলেন, ‘এখন মন্ত্রীদের এসইউভি গাড়ি দেওয়া হচ্ছে। তার মানে এখন এটি এসইউভি দেশ। যখন বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন তাঁর একটি ১৩০০ সিসির টয়োটা প্রাইভেট কার ছিল। আপনার প্রাসঙ্গিক অগ্রাধিকার ও আপনার সামাজিক প্রতিশ্রুতির দর্শন সাধারণত পরিমাপ করা হয় আপনি কীভাবে পরিবহন ব্যবহার করছেন বাস্তবে, তার পরিপ্রেক্ষিতে। 

ঢাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা এখানকার সব জলাশয় ভরাট করা উল্লেখ করে রেহমান সোবহান বলেন, ‘এর কারণে এত সব সমস্যা তৈরি হচ্ছে ড্রেনেজ ব্যবস্থায়। এখন ৬০ ভাগ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। আমি জানি না, এর মধ্যে কতজন আবাসন উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত।’ 

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে ১৯৭৪ সালে নগরায়ণের হার ছিল ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। কিন্তু ২০২৩ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৭১ শতাংশে, যা ৫ গুণের বেশি। নগরায়ণ সবচেয়ে বেশি হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। এখানে নগরায়ণের হার ৩৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এই হার সবচেয়ে কম সিলেটে—১২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এতে বোঝা যায়, দেশে নগরায়ণের হার অনেক বেশি। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় বাংলাদেশকে নগরকেন্দ্রিক দেশ বলা হবে। 

প্রবন্ধে আরও বলা হয়, ১৯৭৪ থেকে ২০১৭ সময়ে গোটা দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল বার্ষিক আনুমানিক ১ দশমিক ২ শতাংশ। সে সময় ঢাকা শহরে তা ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ, সারা দেশ থেকে মানুষ ঢাকা শহরে এসে জড়ো হয়েছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের শহুরে জনসংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। এর প্রায় এক-তৃতীয়াংশই ঢাকা শহরের বাসিন্দা। 

আন্তর্জাতিক তুলনায় দেখা যায়, দেশের মোট শহুরে জনসংখ্যার কত শতাংশ বড় বড় শহরে বসবাস করে সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ শীর্ষ দেশগুলোর একটি। বাংলাদেশে এই অনুপাত প্রায় ৩২ শতাংশ, যেখানে চীনে মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ বড় বড় শহরে বাস করে। ভারতে এই হার ৬ শতাংশ এবং ভিয়েতনামে ২৩ দশমিক ২ শতাংশ। 

মোট জনসংখ্যার কত শতাংশ দেশের সবচেয়ে বড় শহরটিতে বাস করে, সেই বিবেচনায়ও বাংলাদেশ শীর্ষ দেশের একটি। যেখানে চীনে এই অনুপাত মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ, ভারতে ২ শতাংশ এবং ভিয়েতনামে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে তা ১১ দশমিক ২ শতাংশ। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই যে ৩৬ জন মন্ত্রী হলেন, এর মধ্যে নগর উন্নয়নের দায়িত্বে কে? আরবান শব্দটাই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নেই। আছে স্থানীয় সরকার। মন্ত্রী আগেরজনই। আর আছে রুরাল ডেভেলপমেন্ট। আর আছে গণপূর্ত। এটা কার? গণপূর্ত তো গ্রামেও হয়, শহরেও হয়। এত যে নগরায়ণ হচ্ছে, সেখানে আরবান কে দেখে?’ 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন প্রমুখ। দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মসূচি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি বাজারে পুড়ল ২০ দোকান

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি বাজারে আগুনে পুড়েছে অন্তত ২০টি দোকান। ছবি: আজকের পত্রিকা
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি বাজারে আগুনে পুড়েছে অন্তত ২০টি দোকান। ছবি: আজকের পত্রিকা

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২০টি দোকান পুড়ে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, বজ্রপাত থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহালছড়িতে ফায়ার সার্ভিস না থাকায় সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। পরে খাগড়াছড়ি থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। এ সময় আগুনে রফিক স্টোর, ফরিদ স্টোর, প্রতিভা লাইব্রেরিসহ ২০টি দোকান পুড়ে যায়। দোকানগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ মুদি ও কাপড়ের দোকান। এর মধ্যে দুটি চায়ের দোকান ও একটি স্বর্ণালংকারের দোকানও রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা।

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি বাজারে আগুনে পুড়েছে অন্তত ২০টি দোকান। ছবি: আজকের পত্রিকা
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি বাজারে আগুনে পুড়েছে অন্তত ২০টি দোকান। ছবি: আজকের পত্রিকা

অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে আজ বুধবার সকালে মহালছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রায়হান ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শন করেন এবং ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন।

খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক জাকের হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মুষলধারে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারণে বাজারে বিদ্যুৎ-সরবরাহ বন্ধ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, বজ্রপাত থেকে আগুন লাগতে পারে। তিনি জানান, আশপাশে পানির উৎস না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। সব কটি দোকান আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা তদন্ত করে জানা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাদারীপুর-১ আসন: মনোনয়ন পুনর্বহালের দাবিতে জামান মোল্লার সমর্থকদের সড়ক অবরোধ

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
শিবচর পৌর এলাকার ৭১ সড়কে কামাল জামান মোল্লার সমর্থক নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিবচর পৌর এলাকার ৭১ সড়কে কামাল জামান মোল্লার সমর্থক নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত রাখার ঘটনায় তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ করছেন। মনোনয়ন পুনর্বহালের দাবিতে আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে শিবচর পৌর এলাকার ৭১ সড়কে অবস্থান নেন কামাল জামান মোল্লার সমর্থকেরা।

জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সারা দেশের ২৩৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। এর মধ্যে মাদারীপুর-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয় কামাল জামান মোল্লার নাম। এর প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়ক অবরোধ করেন মনোনয়ন না পাওয়া সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলুর সমর্থকেরা। পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলীয় দপ্তর থেকে জানানো হয়, অনিবার্য কারণে মাদারীপুর-১ (শিবচর উপজেলা) আসনের মনোনয়ন স্থগিত রাখা হয়েছে। বিএনপির দপ্তর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

শিবচর পৌর এলাকার ৭১ সড়কে কামাল জামান মোল্লার সমর্থক নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিবচর পৌর এলাকার ৭১ সড়কে কামাল জামান মোল্লার সমর্থক নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে মনোনয়ন স্থগিত করার প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার সকাল থেকে শিবচর সদরের ৭১ সড়কে বিক্ষোভ করছেন কামাল জামান মোল্লার সমর্থকেরা। তাঁরা মনোনয়ন পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। এ সময় বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মনোনয়ন স্থগিতের প্রতিবাদ জানান তাঁরা। প্রতিবাদে নারী-পুরুষসহ অসংখ্য সমর্থক অংশ নিয়েছে।

জামান মোল্লার সমর্থিত একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, ‘জামান মোল্লা একজন জননন্দিত নেতা। শিবচরে তাঁর প্রচুর সমর্থক রয়েছে। তিনি বিএনপিকে টিকিয়ে রেখেছেন। তাঁর মনোনয়ন স্থগিত মেনে নেওয়া হবে না। মনোনয়ন পুনর্বহাল করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনে নামতে চায়: আলতাফ হোসেন চৌধুরী

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
জনসভায় বক্তব্য দেন এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা
জনসভায় বক্তব্য দেন এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় পার্টি এখন চার ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন একটি অংশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। এমনকি তাদের মধ্যে টাকাপয়সার লেনদেনও হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে পটুয়াখালী সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধরান্দী আবাসন মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। শুনেছি, ইতিমধ্যে টাকাপয়সার লেনদেনও হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। তার ওপর পার্শ্ববর্তী দেশগুলো আওয়ামী লীগকে নিয়ে নির্বাচন করার জন্য চাপ দিচ্ছে।’

বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘এই নির্বাচন যতটা সহজ মনে হচ্ছে, বাস্তবে ততটা সহজ নয়। জনাব তারেক রহমানও একাধিকবার বলেছেন—এই নির্বাচনের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন চাপ, পার্শ্ববর্তী দেশের, আওয়ামী লীগের, জাতীয় পার্টির এমনকি গোপনে গোয়েন্দা সংস্থারও।’

দলীয় কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এখন শুধু মঞ্চে বক্তৃতা দিয়ে হবে না, ঘরে ঘরে যেতে হবে। মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে—কেন ভোট হবে, কাকে ভোট দেবে, কেন দেবে, তা জনগণকে বোঝাতে হবে।

ভোটের পরিবেশ নিয়ে আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছি, যেখানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট প্রায় ইতিহাস হয়ে গেছে। গত ১৫ বছরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। রাতে ভোট হয়েছে, দিনের ভোট কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রকৃত নির্বাচন না হয়ে ‘সিলেকশন’ হয়েছে। এতে অযোগ্য ও অদক্ষ লোক সংসদে গেছে, পবিত্র সংসদকে অপবিত্র করা হয়েছে।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আহমেদ বায়জিদ পান্না। সভাপতিত্ব করেন কমলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মৃধা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাংনীতে সাপের কামড়ে যুবকের মৃত্যু

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি 
সাপের কামড়ে মৃত্যুর খবরে স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাপের কামড়ে মৃত্যুর খবরে স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেরপুরের গাংনীতে বিষধর সাপের কামড়ে শামীম হোসেন (১৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত শামীম হোসেন তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের মাঠপাড়া করমদি গ্রামের মিজানুর রহমান হারানের ছেলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সাপে কামড় দেওয়ার পর দ্রুত হাসপাতালে না নিয়ে ওঝা বা কবিরাজের কাছে যাওয়াই এই মৃত্যুর কারণ।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার রাতে শামীম হোসেন নিজের কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁকে বিষধর সাপে কামড় দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে বাড়ির লোকজন তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে না নিয়ে কয়েকজন কবিরাজ বা ওঝার কাছে নিয়ে যায়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আজ বুধবার সকালে তাঁকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ চিকিৎসার পর তাঁর মৃত্যু হয়।

রোহান আহমেদ নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সকালে আমি খেলার উদ্দেশ্যে বের হয়ে দেখি একজনকে সাপে কেটেছে। দ্রুত লোকজন নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তাঁর অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে নিতে আমাদের অনেক দেরি হয়ে যায়।’

আকাশ আহমেদ জানান, তাঁরা সকালে ঘর খুঁড়ে অত্যন্ত বিষধর মনে হওয়া সাপটিকে পান এবং সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলেন।

নিহত শামীম হোসেনের বাবা মিজানুর রহমান হারান বলেন, ‘যখন জানতে পারি আমার ছেলেকে সাপে কেটেছে, তখনই আমরা কয়েক জায়গায় (কবিরাজের কাছে) নিয়ে যাই। কিন্তু অবস্থা খুবই খারাপ হতে থাকে। বুক বন্ধ হয়ে আসছিল। তখন কয়েকজনকে নিয়ে আজ সকালে গাংনী উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর আমার ছেলে মারা যায়। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ যে কত বেদনার, তা কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব না।’

স্থানীয় বাসিন্দা সবুজ আহমেদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘সাপে কামড়ালে মানুষ কেন যে ওঝা বা কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়, তা বুঝি না। সাপের অ্যান্টিভেনম হাসপাতালে পাওয়া যায়। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে রোগী অনেকটা সুস্থ হয়ে যায়। আমাদের পাড়ায় আজ একজন মারা গেল। কারণ, হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনেক দেরি করে ফেলেছিল।’

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আজিজ এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘সাপে কাটা রোগীকে আমাদের কাছে সকাল সাড়ে ৭টার সময় আনা হয়। তাঁকে আমাদের কাছে শেষ মুহূর্তে আনা হয়েছিল। তাঁর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।’ তিনি বলেন, রোগীকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এক ঘণ্টা পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

আব্দুল্লাহ আল আজিজ আরও বলেন, ‘আমরা জানতে পারি সাপে কামড় দেওয়ার পর তাঁকে ওঝা বা কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আসলে মানুষের উচিত যখন কাউকে সাপে কাটবে, তখন অতি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা। আমাদের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনম মজুত রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত