Ajker Patrika

তামান্না নুরা হাঁটতে পারবেন, আশা চিকিৎসকদের

ঢামেক প্রতিনিধি
তামান্না নুরা হাঁটতে পারবেন, আশা চিকিৎসকদের

জন্মগতভাবেই দুই হাত এক পা নেই তামান্না আক্তার নুরার। যশোরের ঝিকড়গাছা উপজেলার এই অদম্য তরুণী এইচএসসি পর্যন্ত সবকটি পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে চমক দেখিয়েছেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন তাঁর খোঁজখবর নিচ্ছেন। 

সেই তামান্না নুরাকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে যশোর থেকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়। আজ মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তামান্নার ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন চিকিৎসকেরা। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন, পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম, হাঙ্গেরির ডা. পাটাকি, জার্মানির ডা. কৃষ্ণা ও বার্ন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসান ইমাম ইমু। 

সংবাদ সম্মেলনে ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘যশোরের তামান্না আজ আমাদের হাসপাতালে এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি তামান্নার বিষয়টি খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং চিকিৎসার সব ব্যবস্থা নিতে বলেন।’ 

ডা. সেন বলেন, ‘দুজন বিদেশি চিকিৎসকসহ আমরা তামান্নাকে দেখেছি। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে। তবে কতটুকু আমরা সফল হতে পারব এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব না।’ 

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডা. আর আর কৈরী বলেন, ‘তামান্নার এক্স-রেসহ অনেক পরীক্ষা করতে হবে। আগে দেখতে হবে যে বাঁ পা ঠিক আছে কি না। ওই পায়ে ভর দিয়ে যদি দাঁড়ানোর ক্ষমতা থাকে, তাহলে আর্টিফিশিয়াল পা লাগানো যাবে। আবার দেখতে হবে হাতের জয়েন্ট ঠিক আছে কি না! এসব বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে এখনই কিছু বলা সম্ভব হবে না।’ 

সংবাদ সম্মেলন শেষে তামান্না আক্তার নুরা বলেন, ‘আমি অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। আমি ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য সম্ভব হয়নি। আজ ৮ মার্চ নারী দিবস। এই দিবসটি একটি দিনে সীমাবদ্ধ না রেখে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কোনো বিষয়েই নারীরা আজ পিছিয়ে নেই। নারীরা আজ বিমান চালাচ্ছে।’ 

কৃত্রিম পা লাগাতে পারলে নিজের পায়ে হাঁটতে পারবেন তামান্নাতামান্না নুরা বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশেও আজ নারীরা অনেক এগিয়ে গেছে। আজ আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, শিক্ষামন্ত্রী নারী। কোনো ক্ষেত্রেই নারীরা আজ পিছিয়ে নেই। আজ অনেক নারী পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছে। আমার জীবনও পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার মতো। অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। এখনো অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে। তাই এখন স্বপ্ন দেখছি সরকারি কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হব। আমি খুবই আশাবাদী হই স্টিফেন হকিংকে দেখে। তাঁর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও তিনি একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী হয়েছেন।’ 

তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন দম্পতির সন্তান। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ ৫ পান তিনি। 

তামান্নার বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার (নন–এমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। তিন ভাইবোনের মধ্যে তামান্না সবার বড়। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণিতে। 

বাবা রওশন আলী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আজ প্রধানমন্ত্রী, ওনার বোন শেখ রেহানা ও শিক্ষামন্ত্রী আমার মেয়েকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ওনাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আমার মেয়ে তামান্নার হাত, পা লাগানোর বিষয়ে হাসপাতালে এসেছি। চিকিৎসকেরা আমার মেয়ের প্রতি যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, তা দেখে আমি অভিভূত হয়ে গেছি।’ 

তামান্নার মা খাদিজা বেগম বলেন, ‘২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তামান্নার জন্ম। ওর জন্মের পর কষ্ট পেয়েছিলাম। ছয় বছর বয়সে ওর পায়ে কাঠি দিয়ে লেখানোর চেষ্টা করলাম। কলম দিলাম। কাজ হলো না। এরপর মুখে কলম দিলাম, তাতেও কাজ হলো না। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, ওকে পা দিয়েই লেখাতে হবে। এরপর বাঁকড়া আজমাইন এডাস স্কুলে ভর্তি করালাম। মাত্র দুই মাসের মাথায় ও পা দিয়ে লিখতে শুরু করল। এরপর ছবি আঁকা শুরু করল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত