Ajker Patrika

খাল-বিল দখল করে যাঁরা ঘুমাচ্ছেন, তাঁদের ঘুমানোর সময় শেষ: ডিএনসিসি প্রশাসক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৮: ০৩
হাইক্কার খালে (কাটাসুর) অবৈধভাবে গড়ে তোলা একটি দোতলা ভবন সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ডিএনসিসি। ছবি: সংগৃহীত
হাইক্কার খালে (কাটাসুর) অবৈধভাবে গড়ে তোলা একটি দোতলা ভবন সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ডিএনসিসি। ছবি: সংগৃহীত

সরকারি খাল-বিল দখল করে যাঁরা নিশ্চিন্তে ‘ঘুমাচ্ছেন’, তাঁদের সেই ঘুমানোর সময় শেষ হয়ে এসেছে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। অবৈধ দখলদারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে দখল করা সরকারি জায়গা ছেড়ে দেওয়ার।

আজ বুধবার সকালে মোহাম্মদপুরের হাইক্কার খালে (কাটাসুর) অবৈধ ভবন উচ্ছেদে অভিযান পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ডিএনসিসির প্রশাসক এসব কথা বলেন।

অভিযান পরিচালনা করেন ডিএনসিসির অঞ্চল-০৫-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ডিএনসিসির সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা খানম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহীদুল ইসলাম।

এই অভিযানের অংশ হিসেবে হাইক্কার খালে (কাটাসুর) অবৈধভাবে গড়ে তোলা একটি দোতলা ভবন সম্পূর্ণ এবং একটি তিনতলা ভবনের আংশিক গুঁড়িয়ে দিয়েছে ডিএনসিসি। এ ছাড়া খালের সীমানায় থাকা পাঁচটি টিনের ঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টায় এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে।

অভিযান শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও একসময় বঙ্গবন্ধুর নামে ক্লাব—এগুলো ব্যবহার করেই কিন্তু ঢাকা শহরের খাল, জলাধার ও পাবলিক প্লেসগুলো দখল করা হয়েছিল। আমি ঢাকাবাসীকে স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, যাঁরা এখনো সরকারি খাল-বিল দখল করে নাকে তেল দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন, তাঁদের ঘুমানোর সময় শেষ। যাঁরা সরকারি জমি, খাসজমি দখল করে স্থাপনা বানিয়ে ভোগদখল করছেন, তাঁদের বলে দিচ্ছি, ঘুম থেকে জেগে দখল করা জায়গাটা অবিলম্বে ছেড়ে দিতে হবে।’

অভিযান শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিএনসিসি প্রশাসক। ছবি: সংগৃহীত
অভিযান শুরুর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিএনসিসি প্রশাসক। ছবি: সংগৃহীত

মোহাম্মদ এজাজ হাইক্কার খালের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আজকের উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনারা নিজ দায়িত্বে এগুলো সরিয়ে নিন। না হলে বিপদ হবে। আমরা আসব, অবৈধ দখলদারদের কোনো নোটিশ দেব না। সরাসরি উচ্ছেদ করা হবে।’

ডিএনসিসির প্রশাসক আরও জানান, অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান তাঁদের একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাঁরা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় মাঠ দখলমুক্ত করছেন, ফুটপাত থেকে অবৈধ দোকান ও হকার উচ্ছেদ করছেন এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধে অভিযান শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাড়ি তিনতলা হোক বা দশতলা হোক, আমরা সব ভেঙে দেব একটা একটা করে। আমাদের লোকবল কম, তাই ধারাবাহিকভাবে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হবে।’ তিনি জানান, আজকের অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী, আর্মি ও ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে এবং কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।

এই খালের (হাইক্কার খাল) অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালটি খনন করে লাউতলা খালের সঙ্গে সংযোগ করে দেওয়া হবে বলে প্রশাসক জানান। ডিএনসিসির কবরস্থানের দেয়ালও ভেঙে দিয়ে খালের পানির স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। এর ফলে বৃষ্টির ও বন্যার পানি সহজে খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তুরাগে গিয়ে পড়বে, যা নগরীর জলাবদ্ধতা কমাতে সহায়ক হবে।

ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরেই মোহাম্মদপুরের এই খাল পরিদর্শনে এসে দেখি, খালে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। খালের ভেতরে অনেকগুলো স্থাপনা হয়ে গেছে। আমি তাৎক্ষণিক অবৈধ ভবনগুলো ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিলে ভবনের মালিকেরা আমাকে জানান যে এগুলো খালের সীমানায় পড়েনি এবং তাঁরা বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করেন। পরে আমাদের সার্ভেয়ার ও তাঁদের সার্ভেয়ার যৌথভাবে সার্ভে করে। যৌথ সার্ভেতে দেখা যায়, একটি দোতলা বাড়ি, একটি তিনতলা বাড়ির, মসজিদের একটি অংশসহ বেশ কয়েকটি টিনের ঘর খালের সীমানায় পড়েছে। কিন্তু তাঁরা নিজেরা এই স্থাপনাগুলো ভেঙে নেননি। তাই আজকে ডিএনসিসি থেকে আমরা অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ভবন ও স্থাপনা উচ্ছেদ করছি।’

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসি প্রশাসক শহরের অন্যান্য সমস্যা নিয়েও কথা বলেন। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাস্তার ওপর ট্রাকের পার্কিং বন্ধে স্থায়ী সমাধানের জন্য তাঁরা কাজ করছেন এবং আশা করছেন, আগামী কোরবানির ঈদের আগে এটি সমাধান করতে পারবেন। মিরপুর-১০ ও ফার্মগেট ইন্দিরা রোড এলাকা সম্পূর্ণরূপে ফুটপাতের হকার ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশামুক্ত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে রাতে ও দিনে অভিযান চালানো হচ্ছে।

আসন্ন বর্ষায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের প্রস্তুতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তাঁদের টিম সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে। গতকালও ডিএনসিসি এলাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সভা করেছেন। ডেঙ্গু মোকাবিলা করার জন্য মশা নিধন কার্যক্রম চলছে এবং মশার ওষুধ ঠিকমতো ছিটানোর কাজটি মনিটরিং করার জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এ ছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তাৎক্ষণিক সঠিক চিকিৎসা যেন নিশ্চিত করা হয়, সে প্রস্তুতি নিয়ে হাসপাতালগুলোর সঙ্গে কাজ করছেন বলেও তিনি জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত