Ajker Patrika

এন্ড্রু কিশোরের প্রতিলিপি রবি কিশোর

প্রতিনিধি, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)
এন্ড্রু কিশোরের প্রতিলিপি রবি কিশোর

বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর এক বছরের বেশি সময় আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তিনি মারা গেলেও তাঁর গানের ভক্ত ও শ্রোতার হৃদয়ে তাঁর জায়গা বিন্দু পরিমাণও নড়চড় হয়নি। এন্ড্রু কিশোরের শেষ স্টেজ শো ছিল ভূঞাপুরের ইব্রাহীম খাঁ কলেজ মাঠে। এখানে রবি কিশোরকে নিজের উত্তরসূরি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সেদিন দুজনে একসঙ্গে গানও গিয়েছিলেন। তাঁর ভক্ত রবি কিশোরেরও স্বপ্ন গানের মাধ্যমে শ্রোতার মনে নিজের জায়গা করে নেওয়া। এন্ড্রু কিশোর নিজেই রবি কিশোরের এই নাম দিয়েছিলেন। এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে রবি কিশোরের চেহারা ও কণ্ঠেও অনেকটা মিল রয়েছে। 

জানা যায়, টাঙ্গাইলের মাইন্দা গ্রামে স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা নিয়ে রবি কিশোরের সংসার। ২০০৮ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি। কিন্তু পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে আর পড়ালেখা করতে পারেননি। ভূঞাপুর শিল্পকলা একাডেমিতে ২০০১ সাল থেকে তাঁর সংগীত চর্চা শুরু হয়। ২০০৪ সালে প্রথমবার এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। এরপর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ করেন তিনি। এন্ড্রু কিশোরের কাছ থেকে পেয়েছেন গান চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা। তবে সংগীত চর্চায় বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁর দারিদ্র্য। সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে তাঁকে বারবার বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। শত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও তিনি গেয়ে গেছেন।

এন্ড্রু কিশোর একটি রিয়্যালিটি শো'তে প্রথম রবি কিশোরের গান শুনে মুগ্ধ হন। এরপর খুশি হয়ে রবি কিশোরকে তাঁর অটোগ্রাফসহ মগ উপহার দিয়েছিলেন। এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুর খবর শুনে ছুটে গিয়েছিলেন রবি। নিজ কাঁধে বহন করেছেন এন্ড্রু কিশোরের কফিন।

রবি কিশোরের সঙ্গে কথা হলে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, আমি দাদার অন্ধভক্ত। তাঁর গাওয়া গানগুলো আমি গেয়ে ভক্তদের মাঝে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। আপনারা যদি একটু সহযোগিতা করেন তাহলেই হয়তো আমার স্বপ্নটা বাস্তব হতে পারে। ছোটবেলা থেকেই আমি নিজেকে দাদার জন্য সঁপে দিয়েছি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দাদার জন্য নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করব। 

রবি কিশোরের স্ত্রী রাবেয়া বলেন, রবির গান শুনলে মনে হয় যেন এন্ড্রু কিশোর নিজেই গান গাইছে। শুধু গান গেয়ে তো সংসার চলবে না। গানের পেছনে ঘুরে রবি অনেক টাকা খরচ করেছে। এখন আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। 

রবি কিশোরের বাবা শরবেশ আলী বলেন, প্রথমদিকে আমি রবির গানের প্রতি আগ্রহ দেখে বিরক্ত হই। এই গানের জন্য কতবার রবিকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি সেটা বলে শেষ করতে পারব না। কিন্তু ছেলেকে গানের জায়গা থেকে বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ কমাতে পারিনি। 

শরবেশ আলী আরও বলেন, রবি সংসারের কোনো কাজকাম করে না। গান ছাড়া অন্য কিছুর প্রতি মনোযোগই নাই তাঁর। এখন আমি ওরে এন্ড্রু কিশোরের জন্যই সঁপে দিছি। ছেলেটা বড় শিল্পী হোক। ওর মাধ্যমে এন্ড্রু কিশোর ভক্তদের মনে বেঁচে থাকুক এটাই আশা আমার। 

রবি কিশোরের বন্ধু মনির বলেন, রবি আমার ছোট বেলার বন্ধু। রবি বাল্যকাল থেকেই এন্ড্রু কিশোরের ভক্ত। রবির গান চোখ বন্ধ করে শুনলে মনে হয় এন্ড্রু কিশোরই গাইছে। এত ভালো গান গাওয়ার পরও ছেলেটা আগাতে পারল না। মিডিয়া যদি তাঁকে একটু তুলে ধরত তাহলে খুব ভালো হতো। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত