Ajker Patrika

আমতলী বাইদকে ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’ ঘোষণায় বিক্ষুব্ধ গারোরা

মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
আমতলী বাইদকে ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’ ঘোষণায় বিক্ষুব্ধ গারোরা

মধুপুর বনাঞ্চলের আমতলী বাইদে ‘সংরক্ষিত বনাঞ্চল’ সাইনবোর্ড দেওয়ায় প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছে গারো সম্প্রদায়ের মানুষেরা। গতকাল সোমবার দুপুরে মধুপুর বনাঞ্চলের দোখলা চোরাস্তা মোড়ে সম্মিলিত আদিবাসী জনতার ব্যানারে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।

সকাল ১১টার দিকে ভুটিয়া গ্রামে তাঁরা সমবেত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। ওই মিছিলটি দোখলা জাতীয় উদ্যানের চৌরাস্তা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। সেখানেই তাঁরা সমাবেশে মিলিত হয়।

জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, মধুপুর বনাঞ্চলের দোখলা ও চুনিয়া গ্রাম ভেদ করে যাওয়া নিম্নাঞ্চলের নাম ‘আমতলী বাইদ’। এই বাইদের দুই ধারেই শাল গজারীর বন। মাঝের ওই বাইদে জমির পরিমাণ ৪৫ বিঘা। এই জমি বংশ পরম্পরায় চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ১৩টি গারো পরিবার। তাদের চাষবাসের ওই জমিতে বন বিভাগ ৪ একর জমি নিয়ে লেক খননের উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি বন বিভাগের কর্মচারীরা ওই জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছে। সাইন বোর্ডে লেখা হয়েছে, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ, উন্নয়নকাজ চলমান, আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ।’

এই সাইনবোর্ড লাগানোর পর থেকে গারোদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। তারা তাদের আবাদি ধানি জমিতে লেক খননে আপত্তি প্রকাশ করেন। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকে কোনো সুরাহা আসেনি। এর মধ্যে সাইনবোর্ড লাগানোতে ক্ষুব্ধ গারো সম্প্রদায়ের লোকজন আন্দোলনে নামে।

এদিকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ আদিবাসী পরিষদের সভাপতি অজয় এ মৃ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু গারো আদিবাসীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম পোষণ করেন। তিনি বলেন, ভূমি জটিলতার বিষয় নিয়ে আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করব। যারা এই বিষয় নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে তাদের রুখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণাও দেন তিনি।

ভূমির ভোগদখলে থাকা মুকুল দারুসহ বক্তারা বলেন, ‘গারোদের চাষবাসের জমিতে কোনোক্রমেই বন বিভাগকে লেক খনন করতে দেওয়া হবে না।’

গারো ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক লিয়াং রিছিল বলেন, ‘কোনো প্রকার অর্থপূর্ণ আলোচনা ছাড়াই বন বিভাগ গারো আদিবাসীদের আবাদকৃত জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।’ 

অপরদিকে দোখলা রেঞ্জের কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘গারোরা জমি দীর্ঘদিন ধরে চাষবাস করছে এটাই সত্য। কিন্তু জমির মালিক বন বিভাগ এটাও সঠিক। বন বিভাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে লেক খননের। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্যই সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।’ 

এ বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গারো ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক লিয়াং রিছিল, গারো ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অনিক মৃ, বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি মেসিও চিরান, আমতলী বাইদের জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখলকারি মুকুল দারু, শাওন রোগা প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত