Ajker Patrika

পিটুনিতে মারা যান ড্যাফোডিলের ছাত্র অন্তর

আশরাফ-উল-আলম, ঢাকা
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৯: ৫৬
পিটুনিতে মারা যান ড্যাফোডিলের ছাত্র অন্তর

ঢাকার সাভারের বিরুলিয়ায় অবস্থিত ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র মো. হাবিবুল হাসান অন্তর দুর্বৃত্তদের বেদম পিটুনিতে মারা যান। আর এই পিটুনিতে অংশ নেন স্থানীয় ছয় যুবক। 

অন্তর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার রাহাত সরকার তাঁর স্বীকারোক্তিতে এই তথ্য জানান। গত ৩ নভেম্বর ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুলহাস উদ্দিনের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রাহাত। আগের দিন রাহাত গ্রেপ্তার হন। 

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী মো. মাইনুদ্দিন আজকের পত্রিকাকে আসামি রাহাতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

জানা গেছে, রাহাত স্বীকারোক্তিতে নিজে অন্তরকে পিটিয়েছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন। তিনি অন্য যাঁদের নাম বলেছেন, তাঁরা হলেন স্থানীয় মনছুর, আশিক, সিফাত, ইমন ও টুটুল। 

জবানবন্দিতে আসামি রাহাত বলেন, তিনি খাগান এলাকায় ছায়াকুঞ্জ হাউসিংয়ে আট হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। ছায়াকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় একটি বাড়িতে থাকেন। পাঁচ-ছয় মাস আগে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রায় ৬০-৭০ জন ছেলে ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে তাঁকে মারধর করেন। 

এতে রাহাতের হাত ভেঙে যায়। মনছুর নামে এক ছেলেকেও মারধর করেন। মনছুরও ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ছাত্র। 

এর জের ধরে এলাকার মনছুর, আশিক, সিফাত ও ইমন গত ২৭ অক্টোবর অন্তরকে খাগান লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে ধরে নিয়ে বউবাজারের পাশে একটি বাগানে নিয়ে যান। এ সময় এলাকার টুটুল ও রাহাত সেখানে যান। 

রাহাত জবানবন্দিতে আরও বলেন, বাগানে যেখানে ইউনিভার্সিটি ছাত্র অন্তরকে নেওয়া হয় সেখানে পৌঁছেই রাহাত অন্তরকে দুইটা থাপ্পড় দেন এবং পিঠে লাঠি দিয়ে দুইটা বাড়ি দেন। টুটুল, আশিক, সিফাত, ইমন ও মনছুর সবাই একসঙ্গে লাঠি দিয়ে বেদম মারতে থাকেন। অন্তরকে মারধর করার সময় বাড়ি থেকে ফোন পেয়ে রাহাত চলে যান। 

রাহাত জবানবন্দিতে বলেন, তিনি পরে শুনতে পান অন্তর মারা গেছে। বেদম মারধরের ফলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। 

গত বছর ২ নভেম্বর ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সহকারী অধ্যাপক ও ডেপুটি প্রক্টর মো. বদরুজ্জামান বাদী হয়ে সাভার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

এই মামলায় স্থানীয় রাহাত সরকার, মনছুর, আশিক, শাহিন, টুটুল ও সিফাত এবং সাত-আটজন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করা হয়। 

মামলায় বলা হয়, গত বছর ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার দিকে সাভারের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পাশে খাগান বাজারের লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে ড্যাফোডিলের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র হাসিবুল হাসান অন্তরকে স্থানীয় দুর্বৃত্তরা ধরে নিয়ে যায়। খাগান গ্রামের বউবাজারের পাশে একটি বাগানে নিয়ে তাঁর হাত-পা বেঁধে লোহার রড ও লাঠিসোঁটা দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। 

অন্তরকে মারাত্মক আহত অবস্থায় বাগানের মধ্যে ফেলে দুর্বৃত্তরা চলে যায়। স্থানীয়রা অন্তরকে উদ্ধার করে প্রথমে পাশের রাজু হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। গ্রাম থেকে অন্তরের অভিভাবকেরা এসে তাঁকে ২ নভেম্বর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই দিন বেলা ৩টার সময় অন্তর মারা যান।

উল্লেখ্য, অন্তরের মৃত্যুর খবর ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটিতে পৌঁছানোর পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ করে। ওই বিক্ষোভে ব্যাপক ভাঙচুর হয় ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আশপাশে সংঘর্ষ হয়। এক সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। 

রাহাত সরকারকে মামলা দায়েরের দিন গ্রেপ্তার করা হয়। আসামি টুটুল গত ২৭ ডিসেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২ জানুয়ারি আসামি শাহীনুর, মনছুর ও আশিক ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন আবেদন করলে তাঁদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোদিজি—বিহারে কোনো বাংলাদেশি নেই, তবে দিল্লিতে আপনার বোন বসে আছেন: ওয়াইসি

অধ্যক্ষকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে বের করে দেওয়া হলো কলেজ থেকে

বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, বৃষ্টি কবে— জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর

পাঁচ দিন পর উদ্ধার বৈষম্যবিরোধী নেতা মামুন, হাসপাতালে ভর্তি

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হবে তুরস্ক, চুক্তি স্বাক্ষর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত