Ajker Patrika

ভুলে ভরা নদী রক্ষা কমিশনের নদ-নদীর তালিকা, প্রত্যাহারের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভুলে ভরা নদী রক্ষা কমিশনের নদ-নদীর তালিকা, প্রত্যাহারের দাবি

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের নদ-নদী সংজ্ঞা ও সংখ্যা’ বইয়ে দেওয়া তথ্য নিয়ে আপত্তি তুলেছেন পরিবেশ ও নদী রক্ষায় আন্দোলনকারীরা। তাঁরা বলছেন, বইটিতে তত্ত্বগত ভুলের পাশাপাশি নদ-নদীর সংখ্যা নিয়েও ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। পাঁচশোর বেশি ভুল ও অসংগতির সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। অবিলম্বে এই বই প্রত্যাহার এবং কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে ফেলা নদীর অবৈধ দখলদার ৬০ হাজার জনের নাম ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ ও নদী রক্ষায় আন্দোলনকারীরা। 

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে পরিবেশবাদী সংগঠন নোঙর বাংলাদেশ ট্রাস্ট আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব দাবি করেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ‘প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে’র সংগঠক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নদী গবেষক বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলনের সহসভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন থেকে প্রকাশিত হয় ‘বাংলাদেশের নদ-নদী সংজ্ঞা ও সংখ্যা’ বইটি। বইটি বিশ্লেষণ করে তিনি দেখিয়েছেন এতে পাঁচ শতাধিক ভুল বা তথ্যের অসংগতি রয়েছে। দীর্ঘ নদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ইছামতীর নাম। এই নদীর দৈর্ঘ্য দেখানো হয়েছে ৪৬৩ কিলোমিটার। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশ অংশে ৪৬৩ কিলোমিটারের একক বৃহত্তম নদী হলো করতোয়া। এ ছাড়া ভারতীয় অংশেও করতোয়ার ৮০ কিলোমিটার রয়েছে। এ ছাড়া ২৭টি বদ্ধ জলাশয়কে নদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলোর দৈর্ঘ্য উল্লেখ করা হয়েছে একর হিসেবে পরিমাপ করে।

মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, এই বইয়ে দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ১ হাজার ৮টি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ সংখ্যাটি আরও বেশি। যদিও দেশে নদ-নদীর কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা নেই। তবু নদী ও পানিবিশেষজ্ঞ, গবেষক, প্রকাশিত বই ও সরেজমিন অনুসন্ধানের তথ্য থেকে দেখা গেছে, নদ-নদীর সংখ্যা দুই হাজারর বেশি। এর মধ্য সুনির্দিষ্টভাবে ১ হাজার ৯০৮টি নদ-নদীর নাম পাওয়া গেছে। কমিশন সুন্দরবনের ১৭৯টি নদ-নদীর নাম তালিকাভুক্ত করেছে, কিন্তু সুন্দরবনে নদ-নদী ২২৭ টি। বইটিতে চট্টগ্রাম বিভাগের খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার তথ্য নেওয়া হয়নি। 

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘নদ-নদী রক্ষা করতে সরকারের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমাদের নদ-নদীগুলো তিনটি করণে মারা যাচ্ছে। প্রথম অভিন্ন নদ-নদীগুলো নিয়ে ভারতের পরিকল্পনা। দ্বিতীয়ত, পরিবেশের বিপর্যয় বিবেচনা না করে সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ। তৃতীয় কারণ, বেসরকারি শিল্পকারখানার দূষণ ও দখল।’ 

সেমিনারে নোঙর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুমন শামস বলেন, ‘কমিশন নদী দখলদারদের তালিকার ওপর যে বইটি প্রকাশ করা হয়েছিল সেটিকে ভুলে ভরা তালিকা বলে মুছে ফেলা হয়েছিল। পরবর্তীতে নদী কমিশনের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী ভুলে ভরা এই তালিকা সংশোধন করে আপলোড করার কথা বলেছিলেন। তিনি দায়িত্ব নিয়ে ৪৮টি নদীকে নিয়ে সমীক্ষা করলেন সেই প্রকল্পের ফলফল আমরা এখনও জানতে পারিনি। সার্ভার থেকে সেই তালিকা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।’ 

অনুষ্ঠানে আরও আলোচনায় অংশ নেন নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রকৌশলী আলাউদ্দিন হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সায়েদুর রহমান, বিআইডব্লিউটিএর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মো. ইজাজ, ইনিশিয়েটিভ ফর পিসের চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত