Ajker Patrika

জমি-বাড়িপ্রীতি পুলিশ কর্মকর্তাদের স্বজনদের

  • পুলিশ কর্মকর্তাদের স্ত্রীসহ স্বজনেরা কিনেছেন জমি, করেছেন বাড়ি।
  • সাভার ও আশুলিয়ায় ওসি থাকাকালে সাভারে ফ্ল্যাট কিনেছেন এক কর্মকর্তা।
  • বাধ্যবাধকতা থাকলেও কেনার আগে নেওয়া হয়নি অনুমোদন।
অরূপ রায়, সাভার (ঢাকা) 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ার কাইচাবাড়িতে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ডিইপিজেড) পেছনের প্রাচীর ঘেঁষে বেশ কিছু বহুতল ভবন। এগুলোর মধ্যে তিনতলা একটি ভবনের মালিক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা এস এম বদরুল আলমের স্ত্রী মাসুমা খানম। ৬ শতাংশ জমির ওপর এই বাড়ি নির্মিত হয়েছে ২০১৪ সালে। জমি কেনা হয় ২০১৩ সালে। এস এম বদরুল আলম তখন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন।

শুধু এস এম বদরুল আলম নন, সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানায় কর্মকালীন বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী ও স্বজনদের নামে সাভার, আশুলিয়া এবং ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় জমি ও ফ্ল্যাট কেনা হয়। কারও কারও কেনা জমিতে বাড়িও উঠেছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে কেনা জমি ও বাড়ির তথ্য নিশ্চিত হতে তথ্য অধিকার আইন ব্যবহারের পাশাপাশি সাভার ও আশুলিয়া সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে দলিল সংগ্রহ করা হয়।

প্রাপ্ত তথ্য ও দলিল পর্যালোচনায় দেখা যায়, এস এম বদরুল আলমের স্ত্রী মাসুমা খানমের নামে ২০১২ সালের মার্চে আশুলিয়ার পাথালিয়া ইউনিয়নের উত্তর রামেন্দ্রপুর মৌজায় ৩৩ শতাংশ, ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ধামসোনা ইউনিয়নের গণকবাড়ি মৌজায় ৬ শতাংশ এবং একই বছরের ডিসেম্বরে ধামসোনার বাইপাইল মৌজায় সাড়ে ১৬ শতাংশ জমি কেনা হয়। দলিলগুলোতে ওই সাড়ে ৫৫ শতাংশ জমির ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে ৩০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তবে ওই সময়ের বাজারদর অনুযায়ী দাম প্রায় ৩ কোটি টাকা।

মাসুমা খানমের ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে গণকবাড়ি মৌজার ৬ শতাংশ জমিতে। স্থানীয় জানান, তখন ওই জমির বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৩০ লাখ টাকা। বাড়ি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে অন্তত ৩০ লাখ টাকা।

বাড়িটি দেখভাল করা মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘স্যার ও স্যারের স্ত্রী অনেক দিন ধরে দেশের বাইরে আছেন। আমি তাঁদের অবর্তমানে জমি ও বাড়ি দেখাশোনা করি। ভাড়া তুলে স্যারের কাছে পাঠাই।’

বিদেশে থাকায় এসব বিষয়ে মাসুমা খানম বা তাঁর স্বামীর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

পুলিশ কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামালের স্ত্রী খন্দকার শামীমা হাসানের নামে ২০১৩ সালে গণকবাড়ি মৌজায় ৭ শতাংশ, একই বছর পাথালিয়া ইউনিয়নের শকরান মৌজায় ৫ শতাংশ এবং ২০১২ সালে স্কুলপড়ুয়া ছেলে মাহিম মুরসালিমের নামে সাভার পৌর এলাকার ছোট বলিমেহের মৌজায় আড়াই শতাংশ এবং ২০১১ সালে একই মৌজায় বাবা আবু জাফর মিয়া ও ভাই তানভীর আহমেদের নামে ৫ শতাংশ জমি কেনা হয়। মোস্তফা কামাল তখন সাভার ও আশুলিয়া থানার ওসি ছিলেন। দলিলে এসব জমির ক্রয় মূল্য দেখানো হয়েছে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। স্থানীয়দের মতে, তখন প্রকৃত বাজারদর ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা।

গত বছরের ৫ আগস্টের আগে মোস্তফা কামাল কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় কর্মরত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয়। তবে তাঁর বর্তমান কর্মস্থল জানা যায়নি। তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরও বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ৫ আগস্টের পর মোস্তফা কামালের নামে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন। এ কারণে হয়তোবা তিনি সাবধানতা অবলম্বন করছেন। তাই তাঁকে মোবাইলে বা সরাসরি না পাওয়ারই কথা।

সাভার পৌর এলাকার পার্বতীনগরে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশের একটি ভবনের নয়তলার ‘ডি’ নম্বর ফ্ল্যাটের মালিক পুলিশ পরিদর্শক এ এফ এম সায়েদ। সাভার ও আশুলিয়া থানার ওসি থাকাকালে ফ্ল্যাটটি কিনেছিলেন। জানা গেছে, এমন ফ্ল্যাটের দাম প্রায় কোটি টাকা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে হত্যার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। তিনি তখন আশুলিয়া থানার ওসি ছিলেন। তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

ওই ভবনের বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশ পরিদর্শক এ এফ এম সায়েদ স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফ্ল্যাটে তালা ঝুলিয়ে তাঁরা অন্যত্র চলে গেছেন।

ধামরাই পৌরসভার ধানসিঁড়ি আবাসিক এলাকায় ১৩ নম্বর হোল্ডিংয়ের আটতলা বাড়ির মালিক পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ভজন রায়ের স্ত্রী মনিকা সরকার। ওই জমি কিনে বাড়ি করার সময় ভজন রায় ধামরাই থানায় কর্মরত ছিলেন।

তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে ২০২২ সালে ধামরাই পৌরসভায় করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর এক পত্রে মনিকা সরকারের নামে ধানসিঁড়ি আবাসিক এলাকায় আটতলা বাড়ি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০২৪ সালে আজকের পত্রিকাকে দেওয়া এক পত্রে জানানো হয়, মনিকা ধামরাইয়ে জমি কেনার এবং আটতলা বাড়ি নির্মাণের আগে তাঁর স্বামী সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী কোনো অনুমতি নেননি।

স্থানীয়রা জানান, জমি কেনাসহ এমন একটি বাড়ি নির্মাণে প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ হয়।

জানতে চাইলে ভজন রায় বলেন, ‘কিছু টাকা ঋণ করে আর কিছু টাকা বাবার (ভজন রায়ের শ্বশুর) কাছ থেকে নিয়ে আমার স্ত্রী জমি কিনে বাড়িটি নির্মাণ করেন। মোট খরচ আমার জানা নেই। তবে বাড়ি বা জমির পেছনে আমার কোনো টাকা খরচ হয়নি।’

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাভার শাখার সহসভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী, চাকরিকালে কোনো সরকারি কর্মচারী বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া আড়াই লাখ টাকার ওপরে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন না। তাঁর ধারণা, পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে এসব স্থাবর সম্পত্তি কেনার আগে বিধিমালা অনুযায়ী অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এখন তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

যোগাযোগ করা হলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঢাকা জেলা কার্যালয়-২-এর সহকারী পরিচালক আরিফ আহমেদ বলেন, ‘সাভার, ধামরাই ও আশুলিয়া থানায় কর্মরত অবস্থায় পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের নামে কোনো জমি, বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনেছেন কি না, তা আমাদের জানা নেই। আমার জানামতে, কোনো অভিযোগও করেননি কেউ। তবে অভিযোগ পাওয়া গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অবসরের এক যুগ পর কাস্টমস কর্মকর্তা ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
অবসরের এক যুগ পর কাস্টমস কর্মকর্তা ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা

চট্টগ্রামে অবসরে যাওয়ার প্রায় এক যুগ পর কাস্টমসের সাবেক এক সহকারী কমিশনার ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) চট্টগ্রামের দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলা দুটি দায়ের করা হয়। দুটি মামলারই বাদী হলেন কার্যালয়টির সহকারী পরিচালক সায়েদ আলম।

দুর্নীতিতে অভিযুক্তরা হলেন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ের সাবেক সহকারী কমিশনার আহসান হাবিব ও তাঁর স্ত্রী আসমা সুলতানা।

আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার ৭৮৪ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫৯ লাখ ১০ হাজার ৪১১ টাকার সম্পদ অর্জন এবং তা ভোগদখলের অভিযোগ আনে দুদক। অন্যদিকে আসমা সুলতানার বিরুদ্ধে ৩২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ৬৬ লাখ ২৪ হাজার ২৫০ টাকার সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলের অভিযোগ আনা হয়েছে।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার বাসিন্দা আহসান হাবিব ১৯৮০ সালে কাস্টমসের একজন পরিদর্শক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। ২০১২ সালে তিনি সহকারী কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০১৪ সালে তিনি ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার হিসেবে অবসরে যান। তিনি চট্টগ্রামেও কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সালে চট্টগ্রামের দুদক কার্যালয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদ বিবরণী দাখিল করা হয়।

দুদক চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, একটি মামলায় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কার্যালয়ের সাবেক সহকারী কমিশনারকে আসামি করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদক আইনের একই ধারায় আরেকটি মামলা হয়েছে সাবেক ওই কর্মকর্তার স্ত্রী আসমা সুলতানার বিরুদ্ধে। ওই মামলায় সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অর্থাৎ অভিযুক্ত কাস্টমস কর্মকর্তা চাকরিরত অবস্থায় অসাধু উপায়ে অর্জিত টাকায় তাঁর স্ত্রীর নামে সম্পদ অর্জন ও তা ভোগদখলে রাখতে সহযোগিতা করেছেন।

সম্পদ বিবরণীতে আহসান হাবিব নিজ নামে মাত্র ৯ লাখ ২৯ হাজার ৬১২ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ৫০ হাজার টাকা অস্থাবর সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। আর আসমা সুলতানা তাঁর নিজের নামে ২০ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ থাকার কথা উল্লেখ করলেও কোনো অস্থাবর সম্পদ নেই বলে সম্পদ বিবরণীতে ঘোষণা দেন। তিনি নিজেকে ব্যবসায়ী উল্লেখ করলেও দুদকের অনুসন্ধানে তাঁর ব্যবসার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মা-বাবার বিরোধ, ১০ বছরের শিশুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

ফরিদপুর প্রতিনিধি
নিবির মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত
নিবির মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুর সদর উপজেলার নিবির মণ্ডলের বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। এ বয়সে খেলাধুলা, মা-বাবার আদরে বড় হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু গত রোববার তার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। শিশুটির স্বজনদের দাবি, মা-বাবার বিরোধের জেরে অভিমানে আত্মহত্যা করেছে নিবির।

মৃত নিবির উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মোস্তফাডাঙ্গি গ্রামের মুরাদ মণ্ডলের (৪০) ছেলে। সে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। গত রোববার বসতঘরের আড়া থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ।

শিশুটির চাচা আজম মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে জানান, আট বছর আগে প্রবাসে পাড়ি জমান তার বাবা মুরাদ মণ্ডল। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে মালদ্বীপ থেকে ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে দেখেন, তার টাকাপয়সা কিছুই নেই। এ নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কলহ বাধে মুরাদের। পরে নিবিরসহ তিন সন্তানকে নিয়ে পাশের আদমপুর এলাকায় বাপের বাড়ি চলে যান তাঁর স্ত্রী।

আজম মণ্ডল জানান, দুই মাস আগে নিবির আবার তার বাবার কাছে চলে আসে। এরপর থেকে সে বাড়িতে বাবার সঙ্গেই থাকত। গত রোববার দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে এসে নিবির দেখে, ঘরে খাবার নেই, ওর বাবাও মাঠে ছিল। পরে আরেক চাচাতো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নানাবাড়িতে যায়। সেই ভাতিজার বরাতে আজম মণ্ডল জানান, শিশুটি তার নানাবাড়িতে গিয়ে মায়ের কাছে খাবার চেয়েছিল। সেখানে তার মা তাকে বকাবকি করে। পরে বিকেলে ঘরে ফিরে নিবিরের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান তার বাবা। ছেলের মৃত্যুতে অচেতন হয়ে পড়া বাবা মুরাদ মণ্ডলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান আজম মণ্ডল।

শিশুটির পরিবার ও প্রতিবেশীরা জানান, কোতোয়ালি থানা-পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সোমবার দুপুরে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। বিকেলে দাফনের জন্য বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ছনেরটেক গোরস্তানে কবর খুঁড়তে যান প্রতিবেশীরা। এ কবরস্থানেই মোস্তফাডাঙ্গির মৃত বাসিন্দাদের দাফন করা হয়ে থাকে। তবে সেখানে গেলে কবর খুঁড়তে বাধা দেন ওই ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম।

প্রতিবেশী বাবুল মণ্ডল বলেন, ‘আমরা যখন খুঁড়তে যাই, তখন রফিক এসে বলে, এই কবরস্থানে গলায় দড়ি দেওয়া কোনো লাশ দাফন করা যাবে না, যার যার বাড়িতে গিয়ে কবর দাও। এসব বলে আমাদের অপমান করে পাঠায় দেয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির নেতা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই কবরস্থানে আজ পর্যন্ত কোনো গলায় দড়ি দেওয়া লাশ কবর দেওয়া হয়নি। এজন্য তাঁদের আমি বলছিলাম, কবরস্থানের সভাপতির সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাচ্ছি, কবর দিতে নিষেধ করি নাই। কিন্তু উনারা রাগ করে চলে গিয়ে অন্য জায়গা কবর দিছে।’

কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আব্দুল্লাহ বিশ্বাস বলেন, ‘শিশুটির মা-বাবার বিভাজনের কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। মা-বাবা একসঙ্গে থাকলে এমনটি নাও হতে পারত। তবে লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার বিষয়টি আমাদের কাছে কেউ জানায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নীলফামারীতে হচ্ছে চীনা সরকারের উপহার ১০০০ শয্যার হাসপাতাল

নীলফামারী প্রতিনিধি
চীনা হাসপাতালের নকশা। ছবি: সংগৃহীত
চীনা হাসপাতালের নকশা। ছবি: সংগৃহীত

অবশেষে নীলফামারীতেই হচ্ছে চীন সরকারের উপহারের ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল। গত ৩০ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারি করা নোটিশে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপসচিব ফাতিমা তুজ জোহরা ঠাকুর স্বাক্ষরিত ওই নোটিশ ‘অতীব জরুরি’ হিসেবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের নোটিশের সূত্রমতে, নীলফামারী সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের দারোয়ানী টেক্সটাইল মাঠে সাড়ে ২৫ একর জায়গার ওপর নির্মিত হবে চীনা হাসপাতাল। হাসপাতাল স্থাপনে ইতিমধ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও বিভিন্ন স্থাপনার ব্যয় প্রাক্কলন তৈরি করতে বলা হয়েছে।

চীন সরকারের হাসপাতাল স্থাপনে নীলফামারী জেলাকে নির্বাচিত করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ এইচ এম সাইফুল্লাহ রুবেল ও জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার। তাঁদের মতে, হাসপাতালটির ফলে এলাকার স্বাস্থ্যসেবার মান যেমন বাড়বে, তেমনি অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে দাঁড়াবে এই জেলা। উন্নত চিকিৎসা নিতে এখন আর দেশের বাইরে যেতে হবে না।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি সোহেল পারভেজ বলেন, ‘চীন সরকারের হাসপাতাল স্থাপন নিয়ে সরকারের সিলেকশন যথাযথ। দারোয়ানী মাঠ সব দিক থেকে এগিয়ে অন্যান্য জায়গাগুলোর চেয়ে। সব সুযোগ-সুবিধা পাবে হাসপাতালটি স্থাপনের ক্ষেত্রে। ব্যবসায়িকভাবে আরও সমৃদ্ধ হলো আমাদের জেলা।’

এ ব্যাপারে নীলফামারীর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাকিউজ্জামান বলেন, ‘চিঠিটি আমরা পেয়েছি। ১ হাজার শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন বিষয়ে আমরা ডিজিটাল সার্ভে শুরু করেছি। গণপূর্ত বিভাগ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে।’

নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান জানান, দারোয়ানী টেক্সটাইল এলাকায় ৬০ একরের বেশি সরকারি জায়গা রয়েছে। চীন সরকারের এক হাজার শয্যার হাসপাতাল স্থাপনে ২৫ একর জায়গা প্রয়োজন। ২৫ একর জায়গা হাসপাতালের জন্য দিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে হাসপাতাল স্থাপনে ব্যয় এবং ডিজাইনের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, নীলফামারীতে হচ্ছে হাসপাতালটি।

প্রসঙ্গত, নিজ এলাকায় এই হাসপাতাল চেয়ে আন্দোলন হয়েছে রংপুরসহ কয়েকটি জেলায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
জেসমিন আরা রুমা। ছবি: সংগৃহীত
জেসমিন আরা রুমা। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহসভাপতি জেসমিন আরা রুমাকে (২৭) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার (৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা দিকে নগরীর মালগুদাম এলাকার নিজ বাস থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তার রুমা নগরীর মালগুদাম এলাকার অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মচারী আবু তাহেলের মেয়ে। তাঁর স্বামী সুলতান মাহমুদ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বলে জানা গেছে।

আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, জেসমিন আরা রুমা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধে গত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সশস্ত্র হামলার অভিযোগ রয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী মামলায় আদালতের নির্দেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সাকিবের পোস্টার স্টেডিয়ামে ঢুকবে কি না, বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি দেখবে’

আন্তর্জাতিক সালিসের দ্বারস্থ হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ-আদানি

দলীয় মনোনয়ন পছন্দ না হওয়ায় বিশৃঙ্খলা, বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

জোটেই ভোট করবে জামায়াত, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা শিগগির

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত