Ajker Patrika

জিয়াউর রহমানের কবর অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ২৭
জিয়াউর রহমানের কবর অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন

১৯৭৭ সালে দ্বিতীয় সিপাহি বিপ্লবের নামে যেসব বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা ও সৈনিকদের মারা হয়েছিল, তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে জিয়াউর রহমানের কবর অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। ‘১৯৭৭ সালে খুনি জিয়ার গুম ষড়যন্ত্রে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারবর্গ’ ব্যানারে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এই মানববন্ধন থেকে সাত দফা দাবিও তোলা হয়। 

আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে আয়োজিত এই মানববন্ধনে ‘ষড়যন্ত্রমূলক সামরিক অভ্যুত্থানে’ প্রাণ হারানো ও গুম হওয়া বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা ও সৈনিকদের পরিবারের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তৎকালীন সামরিক আদালতে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়ে সাজাভোগ করা বিমান কর্মকর্তা ও সৈনিকেরাও উপস্থিত ছিলেন। 

এমন একজন সাবেক বিমানবাহিনীর সার্জেন্ট গোলাম মোস্তফা কামাল পাশা। তিনি বলেন, ২ অক্টোবরের ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়; আমি ছিলাম চিটাগাংয়ে। কীভাবে কী হয়েছে তার কিছুই আমার জানা ছিল না। অথচ একদিন হুট করে আমাকে ডেকে নিয়ে বন্দী করা হয়, সামরিক আদালতে আমার দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়। আমার অনেক ব্যাচমেট ও সহকর্মীকে খুন করে গুম করে ফেলা হয়। এর সবকিছুই হয়েছে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে। তাঁর মরণোত্তর ফাঁসি চাই। সংসদ ভবনের মতো পবিত্র এলাকায় তাঁর প্রতীকী কবর থাকবে এটা হতে পারে না। 

বক্তারা বলেন, জিয়াউর রহমান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি মনে-প্রাণে পাকিস্তানের হয়ে কাজ করেছেন। তাঁর মাধ্যমে পাকিস্তানপ্রেমীরা পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় বসেছে বলে দাবি করা হয় এই মানববন্ধন থেকে। তৎকালীন বিমানবাহিনীর অ্যাসোসিয়েট ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার অব অ্যারোনটিকস কর্মকর্তা হাফিজ আহমেদ মজুমদার বলেন, পয়লা অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাতে আর্মিরা সিক্সটনে করে গিয়ে আমাদের ব্যারাকে স্লোগান দিয়ে বলেছে, দ্বিতীয় সিপাহি বিপ্লব শুরু হয়েছে। তোমরা বের হয়ে আসো, অন্যথায় গুলি করে মারা হবে। আমাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হলো, আমরা ক্যানটিনের সামনে প্রতিদিন ফোলিংয়ে সমবেত হতাম। সেখান থেকে অনেককেই ধরে নিয়ে টর্চার করা হতো। টর্চারের শিকার যারা, তারা ভয়ে অনেকের নাম বলে দিত। এমন একজনের থেকে শুনে আমাকে ধরে নিয়ে যায় এবং টর্চার করে। আমি কারও নাম বলি নাই। একপর্যায়ে আমাকে বিমানবাহিনীর কোর্টে নিয়ে হাজির করা হয়। সেখান থেকে আমাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এরও তিন দিন পর আমি জানতে পারি আমার দুই বছরের জেল হয়েছে। ওরা আমার বন্ধু, আতাউর, গফুর ও আজিজদের খুন করে গুম করে ফেলেছে। তাঁদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। 

নীলফামারীর ডোমার থেকে এসেছেন সেলিনা রহমান, তাঁর বাবা সেই সময় বিমানবাহিনীর সার্জেন্ট ছিলেন। ২ অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে তাঁর বাবাকে আর কোনো দিন দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ‘আমার বাবার কবরটা অন্তত আমরা দেখতে চাই। আমার মা দীর্ঘ ৪৫ বছর বাবার অপেক্ষায় আছেন। আমার বাবার সঙ্গে যার নির্দেশে এমন হয়েছে, সেই জিয়াউর রহমানের শাস্তি চাই। তার কবর যেন এখান থেকে সরানো হয়।’ 

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন অর রশিদ, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন আহমেদ মানিকসহ অনেকেই।

জিয়াউর রহমানের কবর অপসারণের দাবিতে মানববন্ধনমানববন্ধনে সাত দফা দাবি তোলা হয়। দফাগুলো হচ্ছে—

১) ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমানবাহিনীর যে সদস্যরা খুনি জিয়ার সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাঁদের নির্দোষ ঘোষণা করা।

২) ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর যাঁরা ‘খুনি জিয়ার’ সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন; তাঁদের প্রত্যেককে নিজ নিজ পদে সর্বোচ্চ র‍্যাংকে পদোন্নতি দেখিয়ে বর্তমান স্কেলে বেতন-ভাতা ও পেনশনসহ সরকারি সব ধরেনর সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা। 

৩) ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবরখুনি জিয়ার সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শহিদ ঘোষণা করা এবং কবরস্থান চিহ্নিত করে কবরস্থানে নাম সহ-স্মৃতি স্তম্ভ তৈরি করা। 

৪) ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর যাঁরা ‘খুনি জিয়ার’ সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন, সেই সব সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে তাঁদের পোষ্যদের যোগ্যতা অনুসারে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রদান করা। 

৫) ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর যারা ‘খুনি জিয়ার’ সামরিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্য যারা অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত হয়েছেন তাঁদের তালিকা
প্রকাশ করা।

৬) অন্যায়ভাবে ফাঁসি, কারাদণ্ড ও চাকরিচ্যুত করার অপরাধে ‘খুনি’ জেনারেল জিয়ার মরণোত্তর বিচার। 

৭) ‘ষড়যন্ত্রকারী খুনি জিয়ার’ তথাকথিত কবর জাতীয় সংসদ এলাকা থেকে অপসারণ করতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত