Ajker Patrika

শিক্ষকের এমন নিষ্ঠুর বয়ানে আমরা হতবাক: চুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীদের বিবৃতি

রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
শিক্ষকের এমন নিষ্ঠুর বয়ানে আমরা হতবাক: চুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীদের বিবৃতি

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে একটি বাসের বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের দুই ছাত্র নিহত হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছেন। 

চুয়েটের মানবিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (হিসাববিজ্ঞান) ড. সুমন দে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ২য় বর্ষের (২১ ব্যাচ) পানি কৌশল বিভাগের ক্লাস প্রতিনিধি শিক্ষককে মুঠোফোনে ক্লাস বর্জনের বিষয়টি অবগত করলে তিনি (ড. সুমন দে) বলেন, ‘সিভিলের পোলা মরসে, তোমরা কেন ক্লাস করবা না? নিজের সন্তানতুল্য ছাত্রদের মৃত্যুতে একজন শিক্ষকের এমন নিষ্ঠুর বয়ানে আমরা (চুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী) হতবাক। 

চুয়েটের সাবেক ১৩৭ জন শিক্ষার্থী এক যৌথ বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বলেন, ভুলে গেলে চলবে না যে একেকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর পেছনে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক এবং পারিবারিক বিনিয়োগই শুধু জড়িত নয় বরং অনেক মানুষের স্বপ্ন পূরণের দায়ভার নিয়েই শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসে। 

এই কাঠামোগত হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে শুধু কিছু সম্ভাবনাময় প্রাণ ঝরে গেল তা নয় বরং একটি পরিবারের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তারও মৃত্যু ঘটল। এই সামষ্টিক ক্ষতির পরিমাণ কোনো অর্থমূল্যেই নিরূপণ করা সম্ভব নয়। 

দুইজন শিক্ষার্থীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে রাস্তায় নেমে এলে একজন শিক্ষকের বিতর্কিত মন্তব্যে যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে তা প্রশমনের দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে। নিজের সন্তানতুল্য ছাত্রদের মৃত্যুতে একজন সম্মানিত শিক্ষকের এমন নিষ্ঠুর বয়ানে আমরা হতবাক! আমরা অবিলম্বে তার প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থনার দৃষ্টান্ত দেখতে চাই। 

এর আগেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাসবাণী শোনানো হয়েছিল কিন্তু দাবি শতভাগ কখনোই পূরণ হয়নি। চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আমরা কোনো আশ্বাসকে আর বিশ্বাস করি না। 

এইবারের যে সংগ্রাম, সেটি হোক শতভাগ দাবি আদায়ের সংগ্রাম। আমরা, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবর্তের সাবেক শিক্ষার্থীরা বর্তমান শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন পূর্ণ সংহতি জানাই এবং পাশাপাশি দেশবাসীকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে মাঠে নেমে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাই। 
  
আজ বুধবার পাঠানো বিবৃতিতে তারা বলেন, বাংলাদেশের সড়কগুলোয় মৃত্যুর দীর্ঘ মিছিল দেখে এখন আর এগুলোকে দুর্ঘটনা বলার কোনো সুযোগ নেই। আমরা এসব মৃত্যুকে ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’ বলে মনে করি। 

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই আঞ্চলিক মহাসড়কটি হাটহাজারি, দক্ষিণ রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এবং কাপ্তাই উপজেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষের দৈনন্দিন যাতায়াত এবং অর্থনীতি ও পর্যটনের লাইফলাইন হলেও এই সড়কটি সব সময়ই প্রশাসনের সুদৃষ্টি থেকে বঞ্চিত। দেশের শীর্ষস্থানীয় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ-সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎকেন্দ্র এবং রাউজান তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের মত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এই অঞ্চলে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও এই সড়কটির দুরবস্থা এবং নৈরাজ্য আমাদের বঞ্চিত, ব্যথিত ও হতাশ করে তোলে। 

এর আগেও ২০১৬ সালে ১০ আবর্তের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাইমিন সিয়াম, ১৫ আবর্তের শিক্ষার্থী তাহমিদ এর মৃত্যু হয় এই সড়কে। সিয়ামের মৃত্যুর পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ৮ দফা দাবিনামা উত্থাপন করে আন্দোলন সংঘটিত করে এবং বেশ কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়। যদিও সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায় নি। কিছুদিন পরেই নৈরাজ্য ফিরে আসে এবং ক্রমাগত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে থাকে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীই নয় বরং অনেক এলাকাবাসীও এই হত্যাকাণ্ডের শিকার। এই নৈরাজ্যের পেছনে মূল অনুঘটক হচ্ছে সরু রাস্তা, ফিটনেস এবং লাইসেন্সবিহীন যানবাহন, সড়কে রাজনৈতিক চাঁদাবাজি এবং পরিবহনসংকট। 

বিবৃতিদানকারী সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে- জোবায়ের জ্যোতি, অটল ভৌমিক, সোহানুর রহমান সৈকত, সুজিত রঞ্জন দাশ, অনিরুদ্ধ দাশ, মনীষী রায়, মিনহাজুল ইসলাম রিয়াম, ওমর ফারুক, শেখ নাহিয়ান, মাহবুব সোবহান চৌধুরী, মাউল কাজিম আখতার, কৌশিক চন্দ্র, আহসান হাবিব আকাশ, মীর তাইমুর জুবায়ের, মুয়িদ উদ্দীন চৌধুরী, মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম, শিশির কুমার দাস, সুনান মাশরুর মিকদাত, রাহাত ইকবাল, ফাতেমা ইসলাম তানিয়া, সৌরেন পাল, মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, মিঠুন চন্দ্র নাথ, অনিন্দ্য নন্দী, আশেকুল ইসলাম, পিয়াল দাশ গুপ্ত, এস এ সুজন, সেলিম আহমেদ, সঞ্জয় হালদার, আসিফ ইফতি, ফাহমিদা লিজা পিয়া, তুর্জয় ধর দীপ্ত, সিরাজুল ইসলাম সৈকত, আতিকুজ্জামান উল্লাস, 

পাভেল আহমেদ, কেফায়েত ইসলাম, মোহাম্মদ জাহেদ মুরাদ সানি, মোহাম্মদ ফাহিম শাহরিয়ার সাকিব, শহীদুল ইসলাম, সীমান্ত পাল, মোহাম্মদ আহসানুল ইউসূফ ইমন, শিবলি নোমান, মাহির ফয়সাল রাহাত, সুদীপ্ত ভৌমিক, পারিজাত দেবনাথ, মোহাম্মদ ওয়াসাফ সাদাত, আল আমীন, শারাহ মেহজাবীন, প্রবাল সিংহ, নাওমি সুবায়ের, মিনহাজুল আবেদীন, মো. আরিফুল ইসলাম, সালেহা ফাতেমা, রাফিউল্লাহ আরিফিন, অঙ্কুর দাশ অভি, রিকু মোহরের, প্রীতক কুণ্ডু, রিয়াদ হাসান লিখন, ঐশি সরকার দিবা,

দীপ্তনীল রায়, আরিফুল ইসলাম, মো. মোস্তাকিম মুকিত, ইমরান কবির, মো. কামরুল আনাম জয়, জাহিন দিয়ান কাব্য, জেড এম মাহিন, এস এম রিয়াজুল আলম, রাকিবুল ইসলাম, মৃত্যুঞ্জয় কর পিয়াল, মোহাম্মদ সাঈদ আনোয়ার, মির্জা আসিফ হায়দার, অংথাইচিং মারমা, আরিফ মাহমুদ শিকদার, আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল উদয়, আননূর আফসীন সিদ্দিকী, এস এম রাকিবুল ইসলাম, জয়ন্ত দাশ, রিজভী আহমেদ, মাহবুব সানি, তাসনিম আলম নিশাত, পীযূষ বিশ্বাস, সুবির সরকার, মুহতাসীন রিয়াসাদ, মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ, মঞ্জুরুল আলম প্রান্ত, আবিদ উর রহমান, ঋত্বিক চৌধুরী, মো. রাফিউল হোসেন, ইফতিখার আজিম, মো. ফারহান শাহরিয়ার, রায়হান আল মারুফ চৌধুরী, 

মো. রিফাত আমীন, দেবজ্যোতি দাস, নয়ন চৌধুরী, মো. তৌহিদুল ইসলাম নাঈম, নাজমুল হাসান হৃদয়, মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, মো. আব্দুল্লাহ শিকদার, তানভীর মাহমুদ, তৌহিদ ধ্রুব, জনি নাথ, মো. আরিফুল হক, আকিব বিন নাসিম, মো. বায়েজিদ-বিন-ইসলাম, মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, দীপন মুখার্জি, অপু দেবনাথ, মোহাইমিন শোভন, অর্ঘ্য বিশ্বাস, সাদমান সৌমিক ইভান, সাজিদ উজ্জামান জিশান, ফাইরুজ হুমায়রা ফারিন, শারদ চৌধুরী, রেদোয়ান হোসেন, মো. সাজ্জাদ উল ইসলাম, মো. আসিফ ইকবাল, ফাহাদ বিন ফারুক, মুহাইমিনুল ইসলাম সার্থক, রোমান শেখ, মোহাম্মদ আশিকুল আলম, রাফাত হোসেন, রাতুল ইসলাম, জেবিন ফৌজিয়া, মঈনুদ্দীন শিপন, শেখ ফারাহ আদৃতা, আবরার আহমেদ চৌধুরী, তানজিদ নাহিয়ান, হাসিবুল হাসান, দাউদ ইব্রাহীম, জিসান হায়াত, ধ্রুব নাগ, জামিলুর রেজা মজুমদার, কিশোর রায়, মঈন উদ্দীন আহমেদ বাবর, জারীন তাসনিম বিদিতা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গজারিয়ায় থেমে থাকা ট্রাকে দুর্বৃত্তদের আগুন

গজারিয়া (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি 
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আনারপুরা এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে আজ ভোরে আগুন দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আনারপুরা এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে আজ ভোরে আগুন দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় থেমে থাকা একটি মালবাহী ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রাকের ভেতরে থাকা মালপত্রের একটি বড় অংশ পুড়ে গেছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ভোর পৌনে ৪টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আনারপুরা এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

গজারিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মো. ফিরোজ মিয়া জানান, ভোর পৌনে ৪টার দিকে ট্রাকটিতে আগুন লাগে। ট্রাকটি পেপার তৈরির সরঞ্জাম বহন করছিল। এতে ট্রাকের কিছু অংশ ও তাতে থাকা মালপত্র পুড়ে যায়।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, আগুনে প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে তাদের তৎপরতায় প্রায় ১৪ লাখ টাকার মালপত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, এটি উচ্ছৃঙ্খল জনতার আগুন লাগানোর ঘটনা হতে পারে।

ঘটনার পরপরই গজারিয়া ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফরিদপুরে মহাসড়কে আ.লীগের অবরোধ, শিশুদের হাতেও দেওয়া হয়েছে অস্ত্র

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৫২
ভাঙ্গা উপজেলার শুয়াদি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। এ সময় শিশুদের হাতে লাঠিসোঁটা ও রামদা দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত
ভাঙ্গা উপজেলার শুয়াদি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়। এ সময় শিশুদের হাতে লাঠিসোঁটা ও রামদা দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত

কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের ঢাকা লকডাউন কর্মসূচির অংশ হিসেবে ফরিদপুরে দেশীয় অস্ত্র হাতে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এ সময় মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। অবরোধ চলাকালে শিশুদেরও দেশীয় অস্ত্র রামদাসহ লাঠিসোঁটা হাতে সড়কে অবস্থান করতে দেখা যায়।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ইউনিয়নের শুয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই অবরোধ করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল ৯টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত ছিল।

জেলা যুবলীগ নেতা দেবাশীষ নয়নকে তাঁর ফেসবুকে লাইভ করতে দেখা যায়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওই লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, মহাসড়কটির ওপর গাছের গুঁড়ি ফেলে রেখে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এতে শতাধিক স্থানীয় নেতা-কর্মী দেশীয় অস্ত্র রামদা, ঢাল-সরকি হাতে মহাসড়কে অবস্থান করছেন। এ সময় নারীদের পাশাপাশি অন্ততপক্ষে ১০ জন শিশু হেলমেট মাথায় ও লাঠিসোঁটা হাতে সড়কে অবস্থান করে, তাঁদের মধ্যে একটি শিশুর হাতে রামদা নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়।

এ সময়ে ঢাকামুখী যানবাহনসহ সড়কের দুই পাশে বেশ কিছু গাড়ি আটকা পড়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা থেকে গোপালগঞ্জমুখী ওই এলাকা আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত। লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণার আগে থেকে ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকার নেতা-কর্মীরা ওই এলাকায় অবস্থান করেন। ভোর থেকে কয়েকজন নেতা-কর্মী লকডাউনের সমর্থনে সড়কে অবস্থান নেন এবং পরে অন্যরা যোগ দিয়ে পুরো রাস্তা অবরোধ করেন। এতে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সকাল সোয়া ৯টার দিকে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফ হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলে তিনি কেটে দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মোবাইলে কল দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাধবপুরে অবরোধকারীরা অবরোধ করতে পারেনি। তবে ভাঙ্গার পুলিয়া এলাকায় অবরোধ করা হলেও সেটি এক ঘণ্টার মধ্যেই অপসারণ করা হয়েছে। পুলিশ অবরোধ সরিয়ে নিতে নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

এদিকে ফরিদপুর বাসমালিক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত তারা সকল পথে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন।

গোল্ডেন লাইন বাস কাউন্টারের ম্যানেজার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, সকাল ৬টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর বাসমালিক গ্রুপের নেতা কামরুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা বাস চালাতে চাই, তবে যাত্রী না পেলে তো বাস চালানো সম্ভব নয়। খালি বাস নিয়ে তো আর পথে নামা যায় না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা: ১৭ হাজার পুলিশ মোতায়েন, মোড়ে মোড়ে তল্লাশিচৌকি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৫০
রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, সরকারি স্থাপনা ও প্রবেশপথে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তাব্যবস্থা। মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে বিজিবির সাঁজোয়া যান অবস্থান নিয়েছে। শাহবাগ, ফার্মগেট, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, মহাখালী, গাবতলী, মিরপুরসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও সেনাসদস্যদের সতর্ক টহল অব্যাহত রয়েছে।

ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রায়ের তারিখ ঘোষণা ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের নাশকতা বা সহিংসতা প্রতিরোধে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ১৭ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তাঁদের সহায়তায় সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশের বিশেষ ইউনিটের সদস্যরাও মাঠে রয়েছেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার রাত থেকেই রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে ঢাকায় প্রবেশপথগুলোয় তল্লাশি কার্যক্রম শুরু হয়। গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, সাইনবোর্ড ও আব্দুল্লাহপুরে স্থাপন করা হয় বিশেষ চেকপোস্ট। সেখানে গণপরিবহন ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হয়। পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউস ও মেসে অভিযান চালিয়ে রাতভর তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ।

আজ বৃহস্পতিবার সকালেও সেই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সকাল ৭টার পর থেকে হাইকোর্ট এলাকায় আসার পথে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। বিমানবন্দরে প্রবেশ করা গাড়িগুলোতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। শুধু বিমানযাত্রীদেরই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে অন্যদের গাড়ি থেকে নামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

সকালে ঢাকার সড়কে যান চলাচল ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা কম। তবু প্রয়োজনীয় যানবাহন ও কর্মস্থলগামী মানুষ চলাফেরা করছিলেন। বাংলামোটর মোড়, শাহবাগ, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজারে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের যৌথ টহল চোখে পড়ে। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে পুলিশ চেকপোস্ট স্থাপন করেছে।

প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’ অভিমুখে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে; সেই পথে যেতে চাওয়া গাড়িগুলোকে শাহবাগের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রামপুরায় বিটিভি ভবন ও সবুজবাগ এলাকায়ও চেকপোস্ট কার্যক্রম চলছে।

অন্যদিকে রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে সীমিত আকারে দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে। অনেক পরিবহন মালিক নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। সায়েদাবাদ ও গাবতলী টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, যাত্রীরা গন্তব্যে যাওয়ার বাসের অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছেন।

পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা জানান, সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর তাঁরা আতঙ্কিত। এক পরিবহনের মালিক বলেন, ‘এত টাকার গাড়ি রাস্তায় নামিয়ে যদি পুড়িয়ে দেয়, আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব। তা ছাড়া গাড়িতে যাত্রী থাকলে ক্ষয়ক্ষতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই সকাল থেকে অনেকেই গাড়ি চালাচ্ছেন না; পরিস্থিতি বুঝে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) মুখপাত্র তালেবুর রহমান বলেন, ‘রাজধানীতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। নগরবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্রতিটি এলাকা, প্রবেশপথ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমাদের সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছেন।’ তিনি আরও জানান, যেকোনো গুজব বা উসকানিমূলক কার্যক্রম কঠোরভাবে দমন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং জনগণকে সহযোগিতামূলক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছবিতে সকালে ঢাকার রাস্তার পরিস্থিতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা রয়েছে কম। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা রয়েছে কম। ছবি: আজকের পত্রিকা

কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা কম দেখা গেছে। সকাল থেকে ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কে বাসের সংখ্যা ছিল স্বাভাবিক সময়ের অর্ধেকেরও কম। এতে অফিসগামী সাধারণ যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।

‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা রয়েছে কম। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা রয়েছে কম। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দেখা গেছে—বাস স্টপেজে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের। নির্ধারিত গন্তব্যের পর্যাপ্ত গাড়ি পাচ্ছেন না, ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে বিকল্প পরিবহন হিসেবে ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল বা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ব্যবহার করেন। এতে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাঁদের।

‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা রয়েছে কম। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা রয়েছে কম। ছবি: আজকের পত্রিকা

কর্মজীবী নারী সাদিয়া রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকাল ৯টায় অফিসের উদ্দেশে বের হয়েছি, কিন্তু বাস পাচ্ছিলাম না। প্রায় ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে শেষে রিকশায় উঠতে হয়েছে। সাধারণত ৫০ টাকা ভাড়ায় যাই, আজ দিতে হলো ১০০ টাকা।’

‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা রয়েছে কম। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা রয়েছে কম। ছবি: আজকের পত্রিকা

মতিঝিলগামী যাত্রী শাহিনুর ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজকে বাস খুব কম। যে দু-একটা আসে, তাতেও জায়গা পাওয়া যায় না। সবাই ঠেলাঠেলি করছে, কেউ কেউ রাস্তায় ঝুলে যাচ্ছে। তা ছাড়া হঠাৎ বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে। এতে বাসে চড়াও বেশ ঝুঁকি। যত ভোগান্তি আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকদের।’

‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা রয়েছে কম। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা রয়েছে কম। ছবি: আজকের পত্রিকা

যাত্রাবাড়ী-টঙ্গী রুটে চলা তুরাগ পরিবহনের চালক মো. বিল্লাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পেটের দায়ে ঝুঁকি নিয়ে বাস নিয়ে বের হয়েছি। বাস না চালানোর কোনো নির্দেশনা আমাদের নেই। অনেক বাস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেই আতঙ্কে অনেক মালিক গাড়ি বের করছেন না। যার ফলে সড়কে গণপরিবহন কিছুটা কম।’

‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা রয়েছে কম। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রভাবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনের সংখ্যা রয়েছে কম। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা থেকে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল করছে। তবে বাস তুলনামূলক কম চলছে। এর সঙ্গে দূরপাল্লার রুটে রয়েছে কিছুটা যাত্রী সংকট। মালিকেরা অবস্থা বুঝে দু-একটি করে গাড়ি বিভিন্ন রুটে ছাড়ছেন।

এদিকে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস হিসেবে আজ রাজধানীতে মানুষের চলাফেরা তুলনামূলকভাবে অনেক কম দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে সাধারণ মানুষ বলছেন—রাজনৈতিক কর্মসূচি, বাসে আগুন দেওয়া, যেখানে সেখানে পেট্রল বোমা ছোড়া। এতে মানুষের মধ্যে কিছুটা ভীতি তৈরি হয়েছে। ফলে প্রয়োজন ছাড়া বের হতে চাচ্ছেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত