Ajker Patrika

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের আন্দোলনে পুলিশের লাঠিপেটা, আটক ২৮, পরে মুক্ত

কক্সবাজার প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ১৯
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লার্নিং সেন্টারের চাকরিচ্যুত শিক্ষকেরা আজ বুধবার বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লার্নিং সেন্টারের চাকরিচ্যুত শিক্ষকেরা আজ বুধবার বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প) লার্নিং সেন্টারের (শিক্ষাকেন্দ্র) চাকরিচ্যুত শিক্ষকেরা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে আজ বুধবার সকাল থেকে আবারও বিক্ষোভ করেছেন।

উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কয়েকটি প্রবেশমুখে চাকরিচ্যুত শিক্ষকেরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। সকালের দিকে আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত করতে পুলিশ লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে ঘটনাস্থল থেকে শিক্ষক, ছাত্র প্রতিনিধিসহ অন্তত ২৮ জনকে আটক করা হয়।

এদিকে বিক্ষোভকারী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে ২০ জন আটকের তথ্য পাওয়া গেলেও পুলিশ জানিয়েছে, তাঁরা ঘটনাস্থল থেকে মোট ২৮ জনকে আটক করেছিল। বিকেল ৫টার দিকে সবাইকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানে একটি সর্বদলীয় কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করবেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৮টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা উপজেলা সদরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রবেশমুখে অবস্থান নিয়ে বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) যানবাহন প্রবেশে বাধা দেন। এ সময় পুলিশ লাঠিপেটা করলে নারীসহ তিন শিক্ষক গুরুতর আহত হন। আটক করা হয় আন্দোলনের মুখপাত্র সাইদুল ইসলাম শামীমসহ অন্তত সাতজনকে। এরপর বেলা ১১টার দিকে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহত ব্যক্তিদের দেখতে যাওয়া আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ।

আন্দোলনে সংহতি জানানো গণ-অভ্যুত্থানে কক্সবাজারের ছাত্র প্রতিনিধি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেত্রী জিনিয়া শারমিন রিয়াসহ অন্তত ১৩ জনকে দ্বিতীয় দফায় পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আটক করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে আটকের সময় জিনিয়াকে পুলিশের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘আমি অধিকারের জন্য কথা বলছি; আমি কি ছাত্রলীগ?’

আটকের খবর ছড়িয়ে পড়লে উখিয়া থানার প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক আন্দোলনকারী। এ সময় তাঁরা আটক ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে থানা ঘেরাও করে রাখেন। পাশাপাশি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফ হোছাইনের অপসারণ দাবি করে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখা হয়।

বিক্ষোভ থেকে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে আজ বুধবার উখিয়া থানার সামনে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিক্ষোভ থেকে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে আজ বুধবার উখিয়া থানার সামনে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বেলা দেড়টার দিকে থানায় প্রবেশ করে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সুজা উদ্দিনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল।

থানায় প্রবেশের আগে জিনিয়াসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে এস এম সুজা উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু সমাধানের জন্য এসেছি। উখিয়া কোনো আলাদা দেশ নয় যে এখানে আন্দোলন করা যাবে না। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং সম্মানের সাথে তাঁদের ছেড়ে দিতে হবে।’

এনসিপি নেতাদের উপস্থিতির পর আলোচনায় অংশ নিতে থানায় প্রবেশ করে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরোয়ার জাহান চৌধুরীসহ একটি প্রতিনিধিদল। বেলা পৌনে ৩টার দিকে থানা সড়কে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিকেল ৪টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিএনপি ও এনসিপির নেতারা থানায় অবস্থান করছিলেন।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা বলেন, ইউনিসেফের লার্নিং সেন্টারগুলো পরিচালনায় তহবিল-সংকটের অজুহাতে স্থানীয় শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এর ফলে অনেকের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত জুলাইয়ে প্রায় দেড় হাজার স্থানীয় শিক্ষককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষকেরা ধারাবাহিকভাবে আন্দোলনে নামেন। চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের দাবি, প্রশাসন সমাধানের আশ্বাস দিলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে তাঁরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।

একই দাবিতে গত সোমবার সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাঁরা কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় উভয় পাশে কয়েক শ যানবাহন আটকা পড়ে। এতে যাত্রী ও চালকেরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৪ লাখ। এসব আশ্রয়শিবিরে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষাকেন্দ্রে আড়াই লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরকে পাঠদান করা হয়। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আশ্রয়শিবিরে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি শিক্ষাকেন্দ্র চালু রয়েছে। এসব লার্নিং সেন্টারে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার শিশু পড়াশোনা করে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া কর্মকর্তা) মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমাতে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা সেখানে কয়েকজনকে হেফাজতে নিয়েছি। তাঁদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গতকাল মঙ্গলবার চাকরিচ্যুতদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দাম্পত্যকলহের গুঞ্জন, মুখ খুললেন জাহিদ হাসান

গভর্নর আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার কে: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুল

ছাত্রীকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ, গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে বিয়ে

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের যৌন সহিংসতার প্রসঙ্গ জাতিসংঘে তুললেন ভারতীয় দূত

কেশবপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বর্ণের কারিগরসহ দুই ব্যক্তি নিহত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত