Ajker Patrika

অনেক কিছুতেই বঞ্চিত তাঁরা

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২১, ১১: ১৪
অনেক কিছুতেই বঞ্চিত তাঁরা

২০১৯ সালে স্বতন্ত্র পরিচয়ে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীকে ভোটাধিকার দেয় সরকার। এর আগে ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি তাঁদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছিল। এর পরও জন্মসনদ, বাবা-মায়ের নাম ব্যবহার করা নিয়ে জটিলতার কারণে এখনো তাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে পারছেন না। ফলে করোনাভাইরাসের টিকাও নিতে পারছেন না এঁদের বিপুল একটি অংশ। এ ছাড়া নানা নাগরিক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত তাঁরা। পাসপোর্ট করতে না পারায় বিভিন্ন এনজিওতে কাজ করা অনেক ট্রান্সজেন্ডার বিদেশেও যেতে পারছেন না।

নগরীর অক্সিজেন নয়াহাট এলাকার হিজড়াপল্লিতে থাকেন অনামিকা চৌধুরী (৩২)। ২০১৩ সালে রংপুর থেকে এখানে আসেন তিনি। ওই বছরই গাজীপুর থেকে আসেন সুপ্তা রানী (২৮)। একইভাবে নগরীর সদরঘাট থেকে আসেন রিপন (৩০)। তাঁরা প্রত্যেকেই বহুবার চেষ্টা করেও জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি। শুধু অনামিকা, সুপ্তা কিংবা রিপন নন; চট্টগ্রাম নগর ও উপজেলা মিলিয়ে ৯৫ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই।

অনামিকা চৌধুরী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিলের কপি, মা-বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র, না হয় জমির দলিল, জন্মসনদ আর কমিশনার সার্টিফিকেট—এত কিছু কীভাবে জোগাড় করব? আমরা তো ছোটকালেই ঘর ছেড়ে চলে এসেছি বা বের করে দিয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও আমরা নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি না।’

পথচলা ফাউন্ডেশনের সিইও মানিষা মিম নিপুণও একজন ট্রান্সজেন্ডার। তিনি এই জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করছেন ১০ বছরের বেশি সময় ধরে। নামের জটিলতার কারণে তাঁরও পাসপোর্ট করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি কীভাবে তিনি পাসপোর্ট পেতে পারেন—এ বিষয়ে তথ্যসহায়তা চেয়ে একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্টও দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

নিপুণ বলেন, ছেলে হিসেবে জন্ম তাঁর। তখন মা-বাবা তাঁর নাম রাখেন জাহিদুল ইসলাম আল আজাদ। ১৩ বছর বয়সের পর শারীরিক পরিবর্তন বুঝতে পারেন। তখন থেকে নিজেকে মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। নিজের নাম বদলে রাখেন মানিষা মিম নিপুণ। কিন্তু এই নামে পাসপোর্ট করতে গেলে পাসপোর্ট অফিস থেকে তাঁকে জানানো হয়, জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম জাহিদুল ইসলাম আল আজাদ। তাঁকে ওই নামেই পাসপোর্ট করতে হবে।

মানিষা মিম নিপুণ আরও বলেন, ‘জেন্ডার সচেতনতায় কাজ করায় আন্তর্জাতিক এনজিও থেকে বিভিন্ন কর্মশালায় অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ পেলেও পাসপোর্ট না থাকায় সেগুলোতে অংশ নিতে পারি না। আমি এ জন্য কিছুদিন আগে পাসপোর্ট করতে গেলে তাঁরা জাহিদুল ইসলাম আল আজাদ নামেই পাসপোর্ট করতে বলেছেন। কিন্তু আমি মেয়ে হিসেবে মানিষা মিম নিপুণ নামে করতে চাই।’

তৃতীয় লিঙ্গের এই জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করা পথচলা ফাউন্ডেশনের কিছু তথ্য তুলে ধরেন তিনি। শুধু তাঁদের ফাউন্ডেশনের আওতায় রয়েছেন ১ হাজার ২০০ ট্রান্সজেন্ডার। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকা মিলে প্রায় ৫ হাজার ট্রান্সজেন্ডার রয়েছেন। এর মধ্যে ৩০-৫০ বছর বয়সী ৬০ শতাংশ, ১৮-৩০ বছর বয়সী ২০ শতাংশ। বাকিদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। এদের ৯৫ ভাগের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তাই করোনার টিকা নিতে পারেননি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডারদের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি আমরা। তবে ন্যূনতম ভোটার হতে একজন ব্যক্তির জন্মসনদ, মা-বাবার পরিচয়পত্র, চেয়ারম্যান অথবা কমিশনারের সনদের প্রয়োজন হয়। তাঁদের ক্ষেত্রেও সেগুলো লাগবে। এগুলো ছাড়া কাউকে ভোটার করতে পারি না।’

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র এম রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এস এম হুমায়ুন কবীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ট্রান্সজেন্ডারদের করোনার টিকা নিতে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে না। আমরা তাঁদের নিবন্ধন করে খুব শিগগিরই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত