Ajker Patrika

কুমিল্লায় যুবলীগ নেতা হত্যা: আওয়ামী লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩

কুমিল্লা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ মে ২০২৩, ১৬: ০১
কুমিল্লায় যুবলীগ নেতা হত্যা: আওয়ামী লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৩

কুমিল্লার গৌরীপুর বাজারে যুবলীগের নেতা জামাল হোসেন হত্যা মামলায় তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গতকাল শনিবার রাতে র‍্যাব-১১-এর একটি দল তাঁদের ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করে। 

আজ রোববার দুপুরে নগরীর শাকতলা র‍্যাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা। 

র‍্যাব জানায়, গত ৩০ এপ্রিল কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর পশ্চিম বাজারে তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেনকে বোরকা পরিহিত অস্ত্রধারীরা গুলি করে খুন করে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে নয়জনের নাম উল্লেখ এবং সাত-আটজন অজ্ঞাতনামা আসামি করে দাউদকান্দি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। গতকাল শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, ঢাকার রায়েরবাগ, কালশী ও মিরপুর এলাকা থেকে যুবলীগের নেতা জামাল হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি মনাইরকান্দি এলাকার মো. আক্তার হোসেন শিকদারের ছেলে তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীনুল ইসলাম সোহেল শিকদার (৪০), ৩ নম্বর আসামি তিতাস জিয়ারকান্দি এলাকার খুরশিদ মিয়ার ছেলে মো. ইসমাইল (৩৬) ও ৭ নম্বর আসামি গোপচর এলাকার মৃত বজলুর রহমানের ছেলে শাহ আলমকে (৩৬) গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় হত্যাকারীদের ব্যবহৃত বোরকাগুলো ও কয়েকটি মোবাইল ফোনসেট উদ্ধার করা হয়। 

র‍্যাব আরও জানায়, গত ৩০ এপ্রিল রাতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থানাধীন গৌরীপুর পশ্চিম বাজারসংলগ্ন মসজিদের সামনে তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল হোসেন (৪৫) খুন হন। ওই দিন রাত ৮টার দিকে তিনজন বোরকা পরিহিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানাধীন গৌরীপুর পশ্চিম বাজারসংলগ্ন মসজিদের পাশে একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় জামাল হোসেনের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় বোরকা পরিহিত হামলাকারীরা জামালের ওপর এলোপাতাড়িভাবে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে জামাল গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আহত জামালকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই র‍্যাব-১১ ও র‍্যাব সদর দপ্তরের একাধিক গোয়েন্দা দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং আসামিদের শনাক্তকরণের কাজ শুরু হয়। 

ঘটনাস্থল ও ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা যায়, বোরকা পরিহিত তিনজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী স্বাভাবিক পথচারীর বেশে ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় যুবলীগের নেতা জামাল মামলার আসামি মো. ইসমাইল (৩৬) এবং এলাকার পূর্বপরিচিত কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে একটি দোকানের সামনে অবস্থান করছিলেন। বোরকা পরিহিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে জামালকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় ভিকটিম জামালের সঙ্গে বোরকা পরিহিত একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর ধস্তাধস্তি হয় এবং জামাল তাঁকে ঝাপটে ধরে ফেলে। তখন সঙ্গে থাকা বোরকা পরিহিত অপর একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী জামালকে লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় এবং বোরকা পরিহিত অপর ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে থাকা পিস্তল দিয়ে ভিকটিম জামালকে খুব কাছ থেকে মাথায় ও বুকে গুলি করে দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। 

হত্যাকারীদের ব্যবহৃত বোরকা ও কয়েকটি মোবাইল ফোনসেট উদ্ধার করা হয়। ছবি: সংগৃহীতএ ঘটনায় অন্য আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আসামিরা দৌড়ে পালানোর সময় একজনের বোরকার মুখের আবরণ খুলে যায় এবং একজনের সঙ্গে আরেকজনের ধাক্কা লেগে একজন আসামির হাত থেকে তার সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রটি মাটিতে পড়ে যায়। পরে অস্ত্র কুড়িয়ে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। আসার জন্য যে রাস্তা আসামিরা ব্যবহার করেছে, ঘটনাস্থল ত্যাগের সময় সামান্য পরিবর্তন করে। পরবর্তী সময়ে ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত তিনটি বোরকা উদ্ধার করা হয়। 

বোরকা উদ্ধারের নিকটবর্তী একটি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিন ব্যক্তির মুখমণ্ডল দেখা না গেলেও অবয়ব দেখে বোঝা যায় তারা দ্রুতগতিতে হেঁটে চলে যাচ্ছে। ভিডিও ফুটেজ, গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় কিলিং মিশনে অংশগ্রহণকারী বোরকা পরিহিত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়। 

র‍্যাব জানায়, মামলার তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে। 

র‍্যাব আরও জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। গ্রেপ্তার মো. ইসমাইলের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা মামলাসহ তিনটি মামলা, শাহীনুল ইসলাম সোহেল শিকদারের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলাসহ ৯টি মামলা এবং মো. শাহ আলমের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ মোট ১০টি মামলা রয়েছে। 

মামলার অপর ছয় আসামির মধ্যে পাঁচজন নেপাল, সৌদি আরব, ভারত ও বাংলাদেশে পলাতক রয়েছে। র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে আটক আসামিদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়। আটক আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত