Ajker Patrika

যেভাবে দুই শিশুকে বাঁচিয়ে চলে গেলেন মা

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৮ জুন ২০২২, ২০: ৪০
যেভাবে দুই শিশুকে বাঁচিয়ে চলে গেলেন মা

শুক্রবার মধ্যরাত। শাহীনুর বেগম তাঁর সাত মাস বয়সী যমজ শিশুদের বুকে নিয়ে তখন গভীর ঘুমে। হঠাৎ পাহাড়ধসে ঘুম ভাঙে শিশুদের নানা ফয়জুল হকের। শাহীনুরকে ডাকতে ডাকতেই বাসায় আঁচড়ে পড়ে মাটির স্তূপ। শাহীনুর বিপদ বুঝতে পেরে বুকের নিচে রাখেন যমজ শিশুদের। পিঠের ওপর বাসার লোহার লম্বা পাত পড়েছে, টিন ভেঙে পড়েছে। এমনকি একপর্যায়ে মাটিতেও চাপা পড়েন তিনি। কিন্তু সবকিছু সহ্য করেছেন তিনি। পুরো শরীর অসাড় হওয়ার আগপর্যন্ত আগলে রেখেছিলেন সন্তানদের। দুই শিশু বেঁচে গেলেও না ফেরার দেশে চলে যান মা শাহীনুর। 

শাহীনুরকে উদ্ধার করেন পাশের বাসার মো. সোহেল। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, শাহীনুরের ওপর থেকে প্রথমে মাটি সরান, তারপর সরানো হয় একটি টিন। শাহীনুর ছিলেন ইউ আকৃতির মতো করে। বুকের নিচে ছিল তাঁর যমজ শিশুরা। শাহীনুরের নিথর দেহটি যখন উদ্ধার করা হয় তখন শিশু তাসকিয়া ইসলাম তানহা ও তাকিয়া ইয়াসমিন তিন্নি ঘুমে ছিল। 

সোহেলের বোন শাহনাজ বলেন, ‘আমরা কোলে নেওয়ার পর শিশু দুটির ঘুম ভাঙে। কিছুক্ষণ পর কান্নাকাটি করে। পরে আমার বোন তিন্নি এসে বুকের দুধ খাওয়ান।’ 

শাহীনুরের ঘর ঘেঁষা বিশাল একটি পাহাড়ের নিচে ছিল তাঁদের ঘর। ছবি: হেলাল শিকদারজানা যায়, শাহীনুরের সঙ্গে ওই বাসায় তাঁর বাবা ফয়জুল হক ছাড়াও মা মোবাশ্বেরা বেগম ও আরেক বোন মাইনুর আক্তারও থাকতেন। তিনিও পাহাড়ধসের ঘটনায় মারা যান। মাইনুর আক্তার পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। ফয়জুল হক ও মোবাশ্বেরা বেগম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

তাঁদের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। পাঁচ-ছয় বছর আগে নগরের আকবরশাহ থানার ১ নম্বর ঝিল বরিশালঘোনায় এলাকায় ঘরটি তৈরি করেন। শাহীনুরের স্বামী জয়নাল আবেদীন ঘটনার দিন ওই বাসায় ছিলেন না। তিনি তাঁর আরেক সন্তান তরিফুল ইসলাম তানিমকে (৮) নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে নিজ বাসায় ছিলেন। 

আজ শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, শাহীনুরের ঘর ঘেঁষা বিশাল একটি পাহাড়। নিচে ছিল তাঁদের ঘরটি। ওই ঘরের মাঝখানে ছিল একটি লম্বা নারকেলগাছ। সেটি এখনো অক্ষত আছে। ওপর থেকে ধসে আসা মাটিতে টিনশেডের ঘরটির অর্ধেক মাটির নিচে। একটি প্লাস্টিকের চেয়ার ও মশা মারার ইলেকট্রিক ব্যাটও অক্ষত অবস্থায় দেখা গেছে। 

পাহাড় ধসের ঘটনায় নিহতের পরিবারের আহাজারি। ছবি: আজকের পত্রিকাশাহীনুরের তিন সন্তান এখন দাদির বাড়িতে। দাদি সখিনা খাতুন তাদের নিয়ে অঝোরে কান্না করছেন। পাশে খেলা করছিল যমজ ওই দুই শিশু। সখিনা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন তাদের দেখবে কে? আমার নাতি-নাতিনগুলা তো একা হয়ে গেল।’ 

শিশুদের চাচি তানিয়া আখতার বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে অন্যজনের বুকের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। যত দিন আমরা বেঁচে আছি, ওদের মানুষের মতো মানুষ করব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত