Ajker Patrika

চট্টগ্রামে জাল সনদ ও পৃথক জন্মনিবন্ধনে চাকরির অভিযোগ তদন্তে কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৯ মে ২০২৩, ১৮: ৩৪
চট্টগ্রামে জাল সনদ ও পৃথক জন্মনিবন্ধনে চাকরির অভিযোগ তদন্তে কমিটি

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার জাল সনদ ও দুটি জন্মনিবন্ধন দিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৪ মে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালক তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

কমিটির সভাপতি হলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আব্দুল মান্নান, অপর দুই সদস্য হলেন কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজিয়া বিনতে আলম এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হানিফ। তদন্ত কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মরিচ্যা পালং গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করে সুজন বড়ুয়া ওই উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারীর চাকরি নেন। এই ঠিকানা দিয়েই তিনি রাজশাহীর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি থেকে তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স (এসআইটি) সম্পন্ন করেন। তিনিই আবার ২০১২ সালে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি নেন রাঙামাটি জেলা পরিষদের অধীনে থাকা স্বাস্থ্য বিভাগের রাজস্থলী উপজেলায়। কিন্তু এবার ঠিকানা দেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির উত্তর ঘুমধুমের বালুখালী গ্রাম।

মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামে ওই স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে—এমন বাধ্যবাধকতা থাকায় সুজন অনিয়মের আশ্রয় নেন। রাঙামাটিতে সুজন বড়ুয়ার ভুয়া ঠিকানা দেখিয়ে চাকরি নেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি দ্রুত বদলি হয়ে সটকে পড়েন বান্দরবানে। এতে অনেকটা আড়ালে পড়ে যায় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহারের বিষয়টি। সেখানে যোগ দেওয়ার অল্প দিনেই তিনি জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পান।

তাতে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সুজন। ২০১৪ সালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক নারী সহকর্মীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান তিনি। এ ছাড়া ওই নারী সহকর্মীকে আরও নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। এ অভিযোগে সুজন বড়ুয়াকে তখন বরখাস্ত করার পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এরই মধ্যে বান্দরবান জেলা পরিষদকে পাশ কাটিয়ে গোপনে ফেনীতে বদলি হয়ে চলে যান তিনি। এরপর নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির বিষয়টিও আড়ালে চলে যায়।

একাধিক অভিযোগ ওঠা এই সুজন বড়ুয়াকে শাস্তির বদলে উল্টো আরেক দফা পদোন্নতি দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে সুজন ফেনী থেকে বদলি হয়ে জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক পদে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যোগ দেন। এরপর শুরু হয় সুজনের নতুন করে উত্থান। স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন সুজন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে যাওয়া কর্মকর্তাদের বদলিসহ শায়েস্তা করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

সুজনের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার ওই নারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুজন বড়ুয়া খুবই ধূর্ত। ২০১৪ সালে ঢাকায় এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় দেশের অন্যান্য জেলার মতো বান্দরবান জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর সুজন বড়ুয়া ও উপজাতি নারী স্যানিটারি ইন্সপেক্টর অংশ নেন। তখন এক রাতে আমার কক্ষে এসে গল্প করার সুযোগ নেন সুজন বড়ুয়া। দীর্ঘ সময় গল্প করার একপর্যায়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালান।’

ওই নারী আরও বলেন, ‘অফিসে ডেকে নিয়ে সামনে বসিয়ে রেখে প্রতিনিয়ত যৌন উত্ত্যক্ত করাসহ মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকেন সুজন। তখন লোকলজ্জায় চুপ ছিলাম। একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে পূর্বাপর সবকিছু উল্লেখ করে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত দরখাস্ত করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁর কোনো শাস্তি হয়নি।’

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম কাউছার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, একজন সরকারি চাকরিজীবীর দুই ঠিকানা দিয়ে চাকরি করার সুযোগ নেই। বিষয়টি প্রমাণিত হলে চাকরিচ্যুত করার নিয়ম আছে। পার্বত্য জেলা থেকে বদলি হলে অবশ্যই তাঁকে জেলা পরিষদ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে।

তদন্ত কমিটির সভাপতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার জাল সনদ ও দুটি জন্মনিবন্ধন দিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ নিরপেক্ষ তদন্ত করার চেষ্টা করব।’

দুই ঠিকানা ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে সুজন বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জায়গা কিনে আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিকত্ব নিয়েছি।’ যৌন হয়রানির বিষয়টি অস্বীকার করে সুজন বলেন, ‘আমার কিছু সহকর্মী ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত