Ajker Patrika

চট্টগ্রামে জাল সনদ ও পৃথক জন্মনিবন্ধনে চাকরির অভিযোগ তদন্তে কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৯ মে ২০২৩, ১৮: ৩৪
চট্টগ্রামে জাল সনদ ও পৃথক জন্মনিবন্ধনে চাকরির অভিযোগ তদন্তে কমিটি

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার জাল সনদ ও দুটি জন্মনিবন্ধন দিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৪ মে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য পরিচালক তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

কমিটির সভাপতি হলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আব্দুল মান্নান, অপর দুই সদস্য হলেন কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজিয়া বিনতে আলম এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. হানিফ। তদন্ত কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মরিচ্যা পালং গ্রামের ঠিকানা ব্যবহার করে সুজন বড়ুয়া ওই উপজেলার স্বাস্থ্য সহকারীর চাকরি নেন। এই ঠিকানা দিয়েই তিনি রাজশাহীর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি থেকে তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স (এসআইটি) সম্পন্ন করেন। তিনিই আবার ২০১২ সালে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি নেন রাঙামাটি জেলা পরিষদের অধীনে থাকা স্বাস্থ্য বিভাগের রাজস্থলী উপজেলায়। কিন্তু এবার ঠিকানা দেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির উত্তর ঘুমধুমের বালুখালী গ্রাম।

মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামে ওই স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে—এমন বাধ্যবাধকতা থাকায় সুজন অনিয়মের আশ্রয় নেন। রাঙামাটিতে সুজন বড়ুয়ার ভুয়া ঠিকানা দেখিয়ে চাকরি নেওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি দ্রুত বদলি হয়ে সটকে পড়েন বান্দরবানে। এতে অনেকটা আড়ালে পড়ে যায় ভুয়া ঠিকানা ব্যবহারের বিষয়টি। সেখানে যোগ দেওয়ার অল্প দিনেই তিনি জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পান।

তাতে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সুজন। ২০১৪ সালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক নারী সহকর্মীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান তিনি। এ ছাড়া ওই নারী সহকর্মীকে আরও নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। এ অভিযোগে সুজন বড়ুয়াকে তখন বরখাস্ত করার পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এরই মধ্যে বান্দরবান জেলা পরিষদকে পাশ কাটিয়ে গোপনে ফেনীতে বদলি হয়ে চলে যান তিনি। এরপর নারী সহকর্মীকে যৌন হয়রানির বিষয়টিও আড়ালে চলে যায়।

একাধিক অভিযোগ ওঠা এই সুজন বড়ুয়াকে শাস্তির বদলে উল্টো আরেক দফা পদোন্নতি দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে সুজন ফেনী থেকে বদলি হয়ে জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক পদে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ে যোগ দেন। এরপর শুরু হয় সুজনের নতুন করে উত্থান। স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন সুজন। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে যাওয়া কর্মকর্তাদের বদলিসহ শায়েস্তা করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

সুজনের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার ওই নারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সুজন বড়ুয়া খুবই ধূর্ত। ২০১৪ সালে ঢাকায় এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় দেশের অন্যান্য জেলার মতো বান্দরবান জেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর সুজন বড়ুয়া ও উপজাতি নারী স্যানিটারি ইন্সপেক্টর অংশ নেন। তখন এক রাতে আমার কক্ষে এসে গল্প করার সুযোগ নেন সুজন বড়ুয়া। দীর্ঘ সময় গল্প করার একপর্যায়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালান।’

ওই নারী আরও বলেন, ‘অফিসে ডেকে নিয়ে সামনে বসিয়ে রেখে প্রতিনিয়ত যৌন উত্ত্যক্ত করাসহ মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকেন সুজন। তখন লোকলজ্জায় চুপ ছিলাম। একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে পূর্বাপর সবকিছু উল্লেখ করে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত দরখাস্ত করি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁর কোনো শাস্তি হয়নি।’

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম কাউছার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, একজন সরকারি চাকরিজীবীর দুই ঠিকানা দিয়ে চাকরি করার সুযোগ নেই। বিষয়টি প্রমাণিত হলে চাকরিচ্যুত করার নিয়ম আছে। পার্বত্য জেলা থেকে বদলি হলে অবশ্যই তাঁকে জেলা পরিষদ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে।

তদন্ত কমিটির সভাপতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়ার জাল সনদ ও দুটি জন্মনিবন্ধন দিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ নিরপেক্ষ তদন্ত করার চেষ্টা করব।’

দুই ঠিকানা ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে সুজন বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জায়গা কিনে আমি পার্বত্য চট্টগ্রামের নাগরিকত্ব নিয়েছি।’ যৌন হয়রানির বিষয়টি অস্বীকার করে সুজন বলেন, ‘আমার কিছু সহকর্মী ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোনা চোরাচালান: অপহৃত পাঁচজন ২৩ দিন পর উদ্ধার, একজনের ৪ আঙুল কাটা

ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সোনা চোরাচালানকে কেন্দ্র করে অপহরণের ২৩ দিন পর পাঁচ ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আজ বুধবার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার একটি নির্জন খামারবাড়ি থেকে তাঁদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা জেলা-পুলিশ। পাঁচজনের শরীরেই নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। এমনকি একজনের হাতের চারটি আঙুল কেটে দেওয়া হয়েছে।

অভিযানে অপহরণ চক্রে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল ও পুলিশ সুপারের বিশেষ টিমের সমন্বয়ে এই অভিযান চালানো হয়। এর আগে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

আজ সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ জানায়, আজ সকাল ৭টায় ঝিকরগাছার হাজিরবাগ ইউনিয়নের কুল্লা গ্রামের রেজাউল ইসলামের খামারবাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। এই খামারবাড়ির গুদামেই অপহৃত ব্যক্তিদের আটক রাখা হয়েছিল। অভিযানের সময় ভিকটিমদের পাহারারত অবস্থায় থাকা মো. বিল্লাল হোসেন (৪০) ও তাঁর স্ত্রী মোছা. সাগরিকা খাতুনকে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া অপহৃত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়া পল্লিচিকিৎসক বিকাশ দেবনাথকেও (৩০) পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে খামারবাড়ির মালিক রেজাউল ইসলাম ও আব্দুল গফ্ফার অভিযানের আগেই পালিয়ে যান। 

পুলিশ জানায়, মূলত সোনা চোরাচালান ও ৫০ পিস সোনার বার খোয়া যাওয়াকে কেন্দ্র করে এই অপহরণের ঘটনা। অপহৃত ব্যক্তিদের অমানসিক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। সবচেয়ে নির্মম বিষয়টি হলো, সোনা পাচারকারী ও অপহৃত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন মো. শফিকুল ইসলামের চারটি আঙুল কেটে দেওয়া হয়েছে। সোনার বার উদ্ধারের জন্যই মালিকপক্ষের নির্দেশে এই নির্যাতন চালানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল আল নাসের বলেন, গত ১২ ও ১৩ অক্টোবর গোয়ালপাড়া (মাঠপাড়া) গ্রামের শফিকুল ইসলাম শফি (৩৫), আনারুল ইসলাম (৫০), হাসান মিয়া (২৬), আবুল হোসেন (২৭) ও স্বপন ইসলাম (৪৪)—এই পাঁচজনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় ভিকটিম হাসান মিয়ার বাবা শওকত আলী বাদী হয়ে আবদুল মজিদ, মিজানুর রহমান রুবেল, লালন মণ্ডল, আবদুস সামাদ, বিপ্লব হোসেন ও শাহীনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজনের বিরুদ্ধে জীবননগর থানায় অপহরণ মামলা করেন।

মামলায় আসামি করা হয় স্থানীয় আবদুল হাকিম ফকিরের তিন ছেলে আবদুল মজিদ (৪০), আবদুস সামাদ (৪৫) ও বিপ্লব হোসেন (৫০); মনসুর আলীর ছেলে লালন মণ্ডল (৪২); বাবলুর ছেলে শাহিন (৩২) এবং মো. বারির ছেলে রুবেলকে (৩০)। 

বিস্তারিত বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল আল নাসের বলেন, তদন্তের স্বার্থে এখনই সব তথ্য বলা সম্ভব হচ্ছে না। এই মামলার মূল আসামিরা এখনো পলাতক। উদ্ধার করা ভিকটিমদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। এই অপহরণ ও নৃশংস নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইটনায় সরকারি চাল আত্মসাতের মামলায় যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

অষ্টগ্রাম প্রতিনিধি
যুবদল নেতা দেলোয়ার। ছবি: সংগৃীত
যুবদল নেতা দেলোয়ার। ছবি: সংগৃীত

কিশোরগঞ্জের ইটনায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাতের মামলায় যুবদল নেতা দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বুধবার (৫ নভেম্বর) বেলা ৩টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে থেকে দেলোয়ার হোসেনকে (৩২) গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ইটনা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলার মৃগা ইউনিয়নের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার জানু মিয়ার ছেলে।

থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে একটি ট্রলারে করে তাড়াইল উপজেলায় নেওয়ার সময় ৭২ বস্তা চালসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।

পরে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. বাবুল আকরাম বাদী হয়ে ইটনা থানায় ডিলার জানু মিয়া ও তাঁর ছেলেসহ ৮ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

এ বিষয়ে ইটনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনিছুর রহমান বলেন, ‘মামলার পর থেকে দেলোয়ার হোসেন পলাতক ছিলেন। আজ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই মামলায় ৮ আসামির মধ্যে ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রাথমিকে শারীরিক শিক্ষা ও সংগীত শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

এ সময় প্রাথমিক শিক্ষাকে সাম্প্রদায়িক শিক্ষায় পরিণত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। সমাবেশ শেষে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে একটি প্রতিবাদী মিছিল নিয়ে রাজধানীর পল্টন ঘুরে এসে শেষ করেন বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘একদিকে বেকারত্ব বেড়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে শারীরিক শিক্ষা ও সংগীত শিক্ষকের পদ বাতিলের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রাথমিকে শিক্ষক কমানোর জন্য যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল, তা সাম্প্রদায়িকতার কারণে উপদেষ্টারা বাতিল করেছে। এ ধরনের বৈষম্য থেকে বেরিয়ে আলাদা করে ওই বিষয়ের ওপর শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক। এমনকি চারুকলার জন্যও শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া গ্রহণ করা উচিত।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা মহানগরের সভাপতি সালমান রাহাত বলেন, কর্মসংস্থানের জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা, সেখানে বৈষম্য সৃষ্টি করে তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এক বছর পার হওয়ার পরও নতুন অবস্থায় এসে বৈষম্য থাকবে, এটা দুঃখজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত ও চারুকলার ওপরে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। তাদের যে কর্মসংস্থান করার কথা ছিল, সেটি আপনারা (সরকার) বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রাথমিকে এই সাবজেক্টগুলো যদি না থাকে, তাহলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব সাবজেক্টের শিক্ষার্থীদের কথা না ভেবে আপনারা নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন বলে মনে করি।’

সালমান রাহাত একটি দলের উদ্দেশে বলেন, ‘কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভোট চায়, অথচ সেখানে কি ভোট আছে? অনেকে আবার জান্নাতের টিকিট বিক্রি করছে এই বলে যে—ভোট না দিলে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এভাবে প্রচার করে আপনারা শিক্ষাব্যবস্থাকে পায়ের তলায় নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা মনে করি, এসব না করে শিশুদের বিকাশে এসব বিষয়ের ওপর শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া দরকার। প্রয়োজনে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে এসব সাবজেক্ট খুলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে।’ বড় বড় অবকাঠামো বা দালান না করে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য মনোযোগ দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। ছবি: আজকের পত্রিকা

সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ঢাকা মহানগরের সহসভাপতি বিমল মজুমদার বলেন, ‘দেশে যেকোনো সংকট দেখা দিলেই উদীচীরা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ আমরা শিক্ষকদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার দাবিদাওয়া দেখতে পাচ্ছি। আজ তাঁরা রাস্তায় থাকলে শিশুদের পড়াবে কে? বিতর্কিত সিদ্ধান্ত একের পর এক নিচ্ছে এই সরকার। শারীরিক শিক্ষা ও সংগীতের মও শিক্ষক নিয়োগের এই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত থাকলেও তাঁরা কার্যকর করছেন না। শরীরচর্চা করলে শিশুদের বিকাশ ঘটে, চিত্রাঙ্কন করে, গান শুনে শিশুদের মানসিকতা উন্নতি হয় ও উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে ওঠে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেটি বাতিলের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সরকার, তাতে আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

বিমল মজুমদার জানান, এই সরকারের সময়ে বিভিন্ন জায়গায় সারা দেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। ফরিদপুরে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। এসবের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এনজিও চালানো আর দেশ চালানো এক জিনিস নয়। আপনারা সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান, তাতে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক, মানুষের অধিকার ফিরে পাক।’

ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক প্রিজম ফকিরের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগরের ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজ খান আদর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হবিগঞ্জে হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় জমিসংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে একটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় এক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় অপর ১০ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিশেষ জজ (জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক) সৈয়দা মিনহাজ উম মুনীরা এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালতের পেশকার ফজলু মিয়া জানান, নবীগঞ্জ উপজেলার কসবা গ্রামের বাসিন্দা মজই উল্লার পুত্র আনকার উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। খালাসপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন নবীগঞ্জ উপজেলার কসবা গ্রামের ইলাক উদ্দিন, আনছার উদ্দিন, নুরুল হক, জসিম উদ্দিন, মো. আব্দুস ছোবহান, মো. আব্দুস ছোবহানের স্ত্রী সাহিদা বেগম, সেগুন বিবি, সাইরুন বেগম, সাহিনা বেগম ও মো. মঈন উদ্দিন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৭টার দিকে নবীগঞ্জ উপজেলার কসবা গ্রামে রিফা বেগমের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী উল্লিখিত আসামিদের জমির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ হয়। এ সময় আসামি আনকার উদ্দিনের আঘাতে রিফার পিতা ছুফি মিয়া গুরুতর আহত হন। পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন সেলিম। তিনি বলেন, ‘এই রায়ে আমি সন্তোষ প্রকাশ করছি। এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত