Ajker Patrika

বাবুল আক্তারসহ ৭ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দিল পিবিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০: ১১
বাবুল আক্তারসহ ৭ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দিল পিবিআই

চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলার বাদী তাঁর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ সাতজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে মামলাটির তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। 

আজ মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম সিএমএম আদালতে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল হাসানের কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগপত্র হস্তান্তর করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক। এ সময় পিবিআই মহানগর পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন। 

 ২০১৬ সালে ৫ জুন মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় যে মামলা করেছিলেন সেই মামলায়ই তাঁকে আসামি করে এই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (প্রসিকিউশন) কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখনও কেস ডকেট পুরোপুরি দেখতে পারিনি। এটা অনেক বড় একটা কেস ডকেট। শুধু এটুকু বলতে পারি যে, বাবুল আক্তারসহ সাতজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র আমাদের কাছে জমা হয়েছে। এখন আইন অনুযায়ী আমরা সেটা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠাব। সংশ্লিষ্ট আদালত এটা দেখবেন। আগামী ১০ অক্টোবর এ মামলার ধার্য দিন আছে।’

অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর নাইমা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিতু হত্যা মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে আমরা অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে এই মামলাটি তদন্ত করেছি। তদন্তে আমরা বাবুল আক্তারকে আসামি হিসেবে পেয়েছি। এই মামলায় বাবুল আক্তারকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।’

নাইমা সুলতানা আরও বলেন, ‘২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা মামলাটির তদন্তভার পেয়েছিলাম। আড়াই বছরের তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে সব রকমের তথ্যপ্রমাণ আমরা পেয়েছি তাঁদের আসামি করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।’

বাকি আসামিদের নাম জানতে চাইলে নাঈমা সুলতানা বলেন, ‘তদন্ত করে যাকে আসামি পেয়েছি, তাদেরই অভিযুক্ত করেছি। বিচার প্রক্রিয়ায় গেলে বিস্তারিত জানতে পারবেন। নো মোর কমেন্টস।’

এদিকে অভিযোগপত্রের বিষয়ে তদন্ত সংস্থা পিবিআই এখনই বিস্তারিত কিছু বলছে না। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কিছু অংশে বলা হয়েছে, বাবুল আক্তারই মিতু খুনের পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা। তাঁর পরিকল্পনা ও নির্দেশে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে মিতুকে খুন করা হয়। গায়ত্রী নামে এক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ানোর জেরে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। 

বাবুল আক্তারের সোর্স কামরুল ইসলাম সিকদার মুসার বিরুদ্ধে মিতু হত্যায় সরাসরি জড়িত ও নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এই মামলায় বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে মামলায় গায়ত্রীকে আসামি করা হয়নি। অভিযোগপত্রে গায়ত্রীর খোঁজ না পাওয়া এবং মুসা ও কালুকে পলাতক দেখানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাবুল আক্তার কক্সবাজারে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিদেশি এনজিও সংস্থার কর্মী গায়ত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত বাবুল আক্তার সুদানে থাকাকালে গায়ত্রীর পাঠানো ‘তালিবান’ ও ‘বেস্ট কিপ্ট সিক্রেট’ নামে এ দুটো বইয়ের খোঁজ পেয়েছিলেন মিতু। বইয়ের কয়েকটি পৃষ্ঠায় তারিখসহ গায়ত্রীর সঙ্গে প্রথম পরিচয় থেকে শুরু করে বিবাহবহির্ভূত বিভিন্ন সম্পর্কের নিয়ে নোট ছিল। যা বাবুল আক্তারের লেখা বলে পরে সিআইডি বিশেষজ্ঞ কর্তৃক প্রমাণিত হয়। 

বাবুলের সঙ্গে মিতুর দাম্পত্য কলহ শুরুর পর মিতুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে বাবুলের বিরুদ্ধে। বাবুল আক্তার তাঁর স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ৩ লাখ টাকায় ‘খুনি’ ভাড়া করেন। নিজেকে আড়ালে রাখতে প্রচার করেন, জঙ্গিরাই মিতুকে খুন করেছে। হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার মুসাকে ফোনে গা ঢাকা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। 

তদন্ত প্রতিবেদনে মিতু খুনের সঙ্গে বাবুল আক্তারসহ নয়জন আসামির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ২০১৬ সালে জুলাই মাসে নুরুন্নবী ও রাশেদ পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাঁদের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বাকি আসামিরা হলেন— মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ ভোলো, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু ও শাহজাহান মিয়া। 

এ ছাড়া এই মামলায় পূর্বে অভিযুক্ত সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু, মো. শাহ জামান প্রকাশ রবিন (৩৩) ও গুইন্নাকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। 

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার কাছেই গুলি ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি শুরুতে তদন্ত করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর, ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। 

২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলাটির তদন্তভার পিবিআইয়ের হাতে আসে। ২০২১ সালে ১১ মে মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে এনে তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পিবিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়। পরদিন ১২ মে পিবিআই প্রধান সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বাবুল নিজেই তাঁর স্ত্রী হত্যার সঙ্গে জড়িত। 

বাবুলের করা মামলাটিতে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলাটির তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। একই দিন বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন পাঁচলাইশ থানায় বাবুলকে প্রধান আসামি করে আটজনের নামে নতুন একটি হত্যা মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তারের পর বাবুল কারাগারে রয়েছেন। 

গত বছরের ৩ নভেম্বর বাবুলের করা মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালত গ্রহণ না করে মামলাটির অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই মামলায় আজ মঙ্গলবার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হলো। 

এর আগে বাবুলের শ্বশুরের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন গত ৬ মার্চ আদালত গ্রহণ করেন।

বাবুল আক্তার সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত