Ajker Patrika

চবিতে একযোগে ১৬ জনের পদত্যাগ নিয়ে মুখ খুললেন উপাচার্য 

মিনহাজ তুহিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৩, ১১: ০১
চবিতে একযোগে ১৬ জনের পদত্যাগ নিয়ে মুখ খুললেন উপাচার্য 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রশাসন থেকে প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর, বিভিন্ন হলের আবাসিক শিক্ষকসহ ১৮ পদে থাকা ১৬ জন একযোগে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের কারণ হিসেবে সবাই ব্যক্তিগত ব্যস্ততা উল্লেখ করলেও নেপথ্যের কারণ নিয়ে মুখ খুলেছেন উপাচার্য ও পদত্যাগকারীরা। 

মূলত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণেই তাঁরা পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে উপাচার্য বলছেন, ‘ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়ন না করায় তাঁরা পদত্যাগ করেছেন।’ 

রোববার দুপুরে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রক্টরের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে নতুন প্রক্টর ও দুজন সহকারী নিয়োগ দেয়। 

একযোগে পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে পদত্যাগকারী প্রক্টরিয়াল বডির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে তাঁরা উপাচার্যের সঙ্গে কাজ করেছেন। নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট চেয়েছেন, কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর এসব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। তাই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তাঁরা পদত্যাগ করেছেন। 

একযোগে ১৬ জনের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওরা যা বলছে (পদত্যাগীরা), সব মিথ্যা কথা। রবি (সাবেক প্রক্টর) ও শহীদ (সাবেক সহকারী প্রক্টর) আমার কথায় ৯ মার্চ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছে। ওরা বলছে আমাদের ১৫ তারিখ পর্যন্ত সময় দেন, আমাদের কিছু কাজ বাকি আছে। আমি বলেছি, তোমরা উল্টাপাল্টা করবে কিনা? তারা বলছে করবে না। তারা সময় নিয়ে এটা করল। এটা আমি তিন মাস ধরে জানি। তবে বিশ্বাস ছিল রবি এমন করবে না। রবি জাপানে যাওয়ার আগে নিজেই বিকল্প খুঁজতে বলেছিল।’ 

শিরীণ আখতার বলেন, ‘আমি বিকল্প তখনই খুঁজে নিয়েছি। আর আবাসিক শিক্ষকরাসহ যে পদত্যাগ করবে এটা আমি জানতাম। এটা আমাকে অনেক জায়গা থেকে বলেছে। তারা তিন মাস ধরে ডেমুনেস্ট্রেশন করতে চাইছে। তারা সবাই এক, ভিসি থাকুক না থাকুক তারা ঐক্যবদ্ধ। কোনো কোনো সহকারী প্রক্টর বলেছে, তারা রবি স্যারকে ওউন করে। এতই যদি ক্ষমতাবান হয়ে যায়, তাহলে তো অন্য চিন্তা করতে হয়। না হলে বিশ্ববিদ্যালয় চলবে কীভাবে? আমি তখন তাদের বলেছি, তোমরা তো ব্যস্ত হয়ে গেছ, তোমরা সিনিয়র হয়ে গেছ, তোমাদের গবেষণা করতে হয়, জাপানে যেতে হয়, তোমরা প্রক্টরিয়াল বডির পদটা ছেড়ে দাও, আমি নতুন করে গঠন করি। তারা রাজি হয়েছে।’ 

উপাচার্য আরও বলেন, ‘আর তারা যেসব কথা বলছে সব ভোগাস। ওরা কোনো দিন কোনো সমস্যার কথা বলে নাই। তারা নিজেদের কিছু এজেন্ডা নিয়ে এসেছে। আমরা কিছু করেছি, কিছু করতে পারিনি। এগুলো সামগ্রিক এজেন্ডা নয়। এগুলো নিয়ে আমি এখন কিছু বলব না। কোথাও কোনো দুর্নীতি হয়নি। আমাদের প্রশাসনে কোনো দুর্নীতি করতে দেওয়া হয়নি।’ 

উপাচার্যের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রবিউল হাসান ভূঁইয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব ছাড়ার আগমুহূর্ত পর্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি। উপাচার্য বিভিন্ন সময়ে এটা বলেছেনও। আমি আমার জায়গা থেকে প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি করোনার সময় বেশ কিছু কাজ (গবেষণা) করেছি। সিটি করপোরেশনের মশক নিধনসহ আরও অনেক কাজ করেছি। দায়িত্ব পালন করার কারণে আমার গবেষণার কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। আমি জাপানে যাওয়ার আগেও দায়িত্ব ছাড়তে চেয়েছি। এর আগেও একবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলাম।’ 

তবে স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে একযোগে পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যাঁরা পদত্যাগ করেছেন, বিশেষ করে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা, তাঁরা উপাচার্যের সাড়ে তিন বছরের সব দুষ্কর্মের অংশীদার। তাঁরা বর্তমানে উপাচার্যের সঙ্গে তাঁদের স্বার্থের সংঘাতের কারণেই পদত্যাগ করেছেন। এই উপাচার্যের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এর থেকে বেশি কিছু আশা করতে পারে না।’ 

হেলাল উদ্দিন নিজামী আরও বলেন, ‘যাঁকে নতুন প্রক্টর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তিনি সম্প্রতি মেরিন সায়েন্স ও ফিশারিজ বিভাগে একসঙ্গে চারটি বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে ১৩ জন শিক্ষক নিয়োগের নেপথ্যে লিয়াজুকারী হিসেবে কাজ করেছেন। সুতরাং এর পুরস্কারস্বরূপ প্রক্টরের পদত্যাগের আধা ঘণ্টার মাথায় তাঁঁকে প্রক্টর করা হয়েছে বলে অনুমান করা যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত