Ajker Patrika

ফেনীতে বন্যা: কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদে ক্ষতি ১০ কোটি ছাড়িয়েছে

ফেনী প্রতিনিধি
ফেনীতে বন্যায় বহু খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ফেনীতে বন্যায় বহু খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফেনীতে এবারের বন্যায় কৃষক, মাছচাষি ও গবাদিপশু পালনকারীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। বন্যার পানি পুরোপুরি নামলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার বন্যায় আউশ ধানের ৮৪৫ হেক্টর জমি, গ্রীষ্মকালীন সবজির ৫৩৭ হেক্টর জমি, মরিচ, আদা, হলুদ ও টমেটো মিলিয়ে প্রায় ২৫ হেক্টর জমি এবং আমন ধানের ৬৮৯ হেক্টর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার পানিতে নষ্ট হওয়া বস্তায় সংরক্ষিত আদা ৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমির ফসল হিসেবে ধরা হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৬৫ হেক্টর।

ফুলগাজীর দরবারপুর ইউনিয়নের কৃষক কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমার তিন বিঘা জমির আমন বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রতিবছর এমন হয়। সরকার যদি কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেয়, কৃষকের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।’ পরশুরামের ধনীকুণ্ডা এলাকার কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘পাঁচ বিঘা জমির শাকসবজি এক রাতের পানিতে ডুবে গেছে। বছর না ঘুরতেই আবারও এমন ক্ষতির মুখে পড়লাম।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ বলেন, ‘বন্যার পানি এখনো অনেক জায়গায় রয়েছে। পানি নামার পরই প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পাওয়া যাবে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করছি, সরকারকে প্রণোদনার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হবে।’

জেলা মৎস্য অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৬টি উপজেলায় ২ হাজার ৩৩০টি পুকুর, দিঘি ও মাছের খামার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ভেসে গেছে ২৭৬ টন মাছ এবং ১২৮ টন পোনা মাছ। মাছ ও পোনার আর্থিক ক্ষতির মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

ফুলগাজীর শ্রীপুর গ্রামের মাছচাষি আলমগীর বলেন, তিন বিঘা পুকুরের সব মাছ চলে গেছে। প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পরশুরামের মাছচাষি হাসিবুর রহমান বলেন, ‘পুকুরের চারপাশে নেট দিয়েছিলাম, কিন্তু বাঁধ ভেঙে পানির তীব্র স্রোতে সব ভেসে গেল। গতবারের বন্যার পরও কোনো সহায়তা পাইনি।’ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পর্যায়ে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সরকারকে দেওয়া হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবারের বন্যায় ১০ হাজার ৬০০টি মুরগি, ২৩৫টি হাঁস,৩টি ছাগল,১টি ভেড়া ও ৪টি গরু মারা গেছে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গবাদিপশুর খাদ্যও। নষ্ট হয়েছে ৭ টন দানাদার খাদ্য, ৩০ টন খড় ও ১৬০ টন ঘাস। সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬৫ লাখ টাকা।

ফুলগাজীর কমুয়া চানপুর গ্রামের খামারি রাসেল বলেন, ‘আমার একটি গরু ডুবে মরে গেছে। আয়রোজগারের প্রধান উৎস ছিল এটি। এখন নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’

বিসমিল্লাহ পোলট্রি খামারের মালিক হাসান বলেন, ‘দেড় হাজার মুরগি মরে গেছে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছি।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোজাম্মেল হক বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। সরকারিভাবে বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়া হবে।

সম্প্রতি টানা বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে যায় ফেনী। জেলার মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত বাঁধ ভেঙেছে অন্তত ৪১টি স্থানে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, প্রতিবছর বর্ষা এলেই একই দুর্দশা। তাঁরা একটি স্থায়ী ও টেকসই বাঁধ নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুলিশের তিন পদে অতিরিক্ত: তিনজনে একজন বাড়তি

ট্রেনের কেবিনের বালিশ, চাদর, কম্বলের ভাড়া দ্বিগুণ করার চিন্তা

ভারতে পোশাকের অর্ডার স্থগিত করছে মার্কিন ক্রেতারা, বাংলাদেশ-ভিয়েতনামে কারখানা স্থানান্তরের পরামর্শ

মোবাইল-টাকা ছিনতাইয়ের পর দুই তরুণীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেপ্তার ৩

ডোপ টেস্টে পজিটিভ, চবিতে শিক্ষকতা থেকে বাদ দুই প্রার্থী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত