Ajker Patrika

দুর্গম পাহাড়ে সুপেয় পানি

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
দুর্গম পাহাড়ে সুপেয় পানি

খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলজিএসপি প্রকল্পের আওতায় জেলার দুর্গম ৭ গ্রামের বাসিন্দারা ভূগর্ভস্থ এই সুপেয় পানি পাচ্ছেন । বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি এমন দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এ ধরনের প্রকল্প বাড়ানোর দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

খাগড়াছড়ির দুর্গম এলাকায় গভীর বা অগভীর নলকূপ না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের নির্ভর করতে ভূপৃষ্ঠের পানির ওপর। শুষ্ক মৌসুমে সুপেয় পানির উৎস শুকিয়ে গেলে অনেকে দূষিত পানি পান করতে হয়। অথবা কেউ ২ -৪ কিলোমিটার দূরে গিয়ে খাবার পানি সংগ্রহ করে।  পাহাড়ের পথ ডিঙিয়ে খাবার জল সংগ্রহ করা দুরূহ কাজ। এই দুর্গম এলাকায় সুপেয় জলের সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের(এলজিএসপি) প্রকল্পের আওতায় এভাবে খাগড়াছড়ি ৭ টি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন দুর্গম গ্রামে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৫ লাখ টাকা। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হচ্ছে। এদিকে উঁচু পাহাড়ের পাড়াগুলোতে দোরগোড়ায় পানি পাওয়ায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা।

খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে জনপদ পানছড়ি। উপজেলা সদর থেকে অন্তত ১০ কিলোমিটার দূরে পায়ুং কার্বারি পাড়া । বন্ধুর পথ পেরিয়ে যেতে হয় সেখানে। পাহাড়ের ওপরে এ গ্রামে ৫৫ পরিবারের বাস। 
এখানকার প্রধান সমস্যা ছিল সুপেয় পানি। সমস্যা দূর করতে পাড়ার মাঝখানে বসানো হয়ে ৫ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতার ট্যাংক। ১২ শ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে মাটির সাড়ে ৪শ ফুট গভীর থেকে পানি তোলা হচ্ছে। ট্যাংক থেকে পানি সংগ্রহ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গ্রামের বাসিন্দা ললিজয় ত্রিপুরা, গৌড়ি ত্রিপুরা ও মনিকা ত্রিপুরা বলেন, আমাদের গ্রামে আগে পানির ব্যবস্থা ছিল না। দূরে ছড়া বা ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করতে হত। এখন সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ট্যাংকে পানি তোলা হয়। এসব ট্যাংক থেকে গ্রামের মানুষ পানি সংগ্রহ করছে। পানির কষ্ট দূর হয়েছে।

পানছড়ির মোল্লাপাড়া এলাকার বাসিন্দা জাহেদা বেগম , রেনুকা আক্তার বলেন, আগে পাহাড়ের ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করতাম। এখানে বিদ্যুৎ না থাকায় পানির পাম্পও বসাতে পারিনি। এখন তো সোলার প্যানেলের মাধ্যমে পাম্প চালিয়ে পানি তোলা হচ্ছে। গ্রামের ১ শ পরিবার এখন থেকে খাওয়ার ও রান্নার পানি সংগ্রহ করে।

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে, জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। উল্টাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিজয় চাকমা বলেন, ‘আমরা এলাকা অত্যন্ত দুর্গম।

যেসব এলাকায় পানির কষ্ট বেশি সেখানে আমরা এলজিএসপির প্রকল্পের মাধ্যমে সোলার প্যানেল স্থাপন করে ভূগর্ভস্থ পানির তোলা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় এলাকার মানুষের পানির কষ্ট দূর হয়েছে। পানির সমস্যা নেই এখন। আমার ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া, পায়ুং কাবারি পাড়া, কুঞ্জরাম পাড়া ও ললিন্দ্র পাড়ায় চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে অন্তত দুই হাজার মানুষের পানির কষ্ট দূর হয়েছে।

ভবিষ্যতে নবায়নযোগ্য সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে পাহাড়ি এলাকায় পানির সংকট নিরসনের এমন আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

লোকাল গভর্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্টের (এলজিএসপি) প্রকল্পের জেলা ফ্যাসিলিটেটর অরুণদর্শী চাকমা বলেন পাহাড়ের অন্যতম প্রধান সমস্যা সুপেয় পানি। দুর্গম এলাকায় পানির সংকট দুর করতে নবায়নযোগ্য সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে পানির সংকট নিরসন হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্প আরও বাড়ানো হবে।

উল্টাছড়ির পায়ুং কার্বারি পাড়ায় সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে তোলা পানি সংগ্রহ করছেন নারীরা।

উল্টাছড়ির মোল্লাপাড়ায় সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে তোলা পানি সংগ্রহ করছেন নারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল

ধর্ষণে মেয়ে গর্ভবতী, বাবার আমৃত্যু কারাদণ্ড

ভারতসহ একসঙ্গে তিন দেশ সামলাবেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, দিল্লিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ভোলায় শ্রমিক দল নেতাকে হত্যার চেষ্টা, ছাত্রদল-যুবদলের ৫ জনের নামে মামলা

নারীর সঙ্গে ঝগড়ার পর রূপসা সেতু থেকে নিচে লাফ দেন সাংবাদিক বুলু: কোস্ট গার্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত