Ajker Patrika

ফুল-আলোয় প্রস্তুত ক্যাম্পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও চবি সংবাদদাতা 
সমাবর্তীদের পদচারণে মুখর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। কালো গাউন, মাথায় টুপি পরে বিভিন্ন বিভাগ, হল, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে চলছে ছবি তোলার হিড়িক। ছবি: আজকের পত্রিকা
সমাবর্তীদের পদচারণে মুখর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। কালো গাউন, মাথায় টুপি পরে বিভিন্ন বিভাগ, হল, একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে চলছে ছবি তোলার হিড়িক। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফুটে আছে জারুল, কৃষ্ণচূড়া, হিজল, সোনালু, বন বেলি। দিনে ক্যাম্পাসজুড়ে এমন ফুল চোখে পড়ছে। আর রাতে আলোর রোশনাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে আলোর ঝলকানি। প্রতিটি ভবনে করা হয়েছে লাল-নীল রঙের আলোকসজ্জা। এই চিত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি)।

আগামীকাল বুধবার সেখানে সমাবর্তন। এ উপলক্ষে চলছে নানা আয়োজন।

৯ বছরের বেশি সময় পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হচ্ছে। এবার সমাবর্তনে অংশ নেবেন ২০১১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৯টি অনুষদের ২২ হাজার ৫৯৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২২ জনকে পিএইচডি ও ১৭ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হবে। সমাবর্তনে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সমাবর্তনে তাঁকে ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) ডিগ্রি দেওয়া হবে।

সমাবর্তন ঘিরে ১৯টি উপকমিটি দিনরাত তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানস্থল কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে তৈরি করা হয়েছে তিনটি প্যান্ডেল। সমাবর্তনের উপহারসামগ্রী পৌঁছে গেছে বিভাগে বিভাগে। বিশাল এ আয়োজনে খরচ হবে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। শিক্ষার্থীদের থেকে এসেছে সাড়ে ৬ কোটি, বাকি অর্থ এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি ও স্পনসরদের মাধ্যমে।

৯ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটু বাড়তি উচ্ছ্বাস। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী উম্মে সালমা নিঝুম বলেন, ‘একাডেমিক জীবনের একটি সুন্দর সমাপ্তি সমাবর্তন। দীর্ঘ ৯ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন হচ্ছে। আমি একজন সমাবর্তী হিসেবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। আজ যখন পেছন ফিরে দেখি, তখন মনে হয় একদম প্রথম দিনের সেই অচেনা ক্যাম্পাস, নতুন বন্ধুদের সাথে প্রথম পরিচয়, সেই উদ্ভূত উত্তেজনা—সবই যেন এক সুন্দর স্মৃতি হয়ে গেছে। কল্পনায় বহুবার দেখা সেই দিনটা অবশেষে সত্যি বাস্তবে এসে ধরা দিতে যাচ্ছে।’

রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তামিম আহমেদ বলেন, ‘সমাবর্তনে আরও ভালো লাগছে ড. ইউনূসের মতো একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের কথা শুনতে পারব সরাসরি। এটি পরবর্তী জীবনে উৎসাহিত করবে।’

যত নিয়ম সমাবর্তীদের জন্য

সমাবর্তনে শেষ কিছু নির্দেশনা মানতে হবে সমাবর্তীদের। ১৪ মে বেলা ১টার পরে কোনো সমাবর্তীকে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে দেবে না এসএসএফ। অনুষ্ঠানস্থল থেকে কেউ বের হতে বা প্রবেশ করতে পারবেন না। বৃদ্ধ, নবজাতক ও শিশুদের না আনার অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। মোবাইল ছাড়া আর কিছু সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানস্থল প্রবেশ করা যাবে না। এমনকি নবজাতক শিশুর জিনিসপত্রও না।

সমাবর্তনের দিন শাটল ট্রেনের পাশাপাশি সকাল ৬টা থেকে শহরের নির্দিষ্ট পয়েন্ট থেকে ১০০টি বাস সমাবর্তীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আসবে। সমাবর্তন শেষে এগুলো আবার শহরে ফিরে যাবে। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের ১ নম্বর গেট এলাকা থেকে শাটল বাস সার্ভিস রাখা হবে। এর বাইরে কোনো গাড়ি সেদিন ওই রুটে চলাচল করতে পারবে না। শাটল বাসে অভিভাবকেরাও চড়তে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য শহীদ মিনার, জারুলতলা, সায়েন্স ফ্যাকাল্টিসহ ৫টি পয়েন্টে এলইডি স্ক্রিনে অনুষ্ঠান দেখানো হবে। সমাবর্তন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াহইয়া আখতার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৯ বছরে সমাবর্তন হয়েছে মাত্র ৪টি। আমরা উদ্যোগটা নেওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকদের মনোভাব পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি যে সবাই এটা চায়। সে জন্যই আমরা এই সাহসী উদ্যোগটা নিয়েছি। আর এখন থেকে চেষ্টা করব নিয়মিত এই অনুষ্ঠান আয়োজন করার।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৪ সালে প্রথম সমাবর্তন, ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয়, ২০০৮ সালে তৃতীয় এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবারের সমাবর্তন নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।

আসবেন লাখো মানুষ

সমাবর্তন নিয়ে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন এ-সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক ও উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। তিনি জানান, বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি লিট উপাধি দেওয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে অন্য অতিথিদের মধ্যে থাকবেন শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, বিদ্যুৎ ও খনিজ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম।

উপাচার্য জানান, সমাবর্তন অনুষ্ঠান ঘিরে সমাবর্তীসহ প্রায় ১ লাখ মানুষের সমাগম হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্যসচিব ও চবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণক (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এনায়েত উল্যা পাটোয়ারী, সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও ফটোগ্রাফি শাখার প্রশাসক মো. শহীদুল হক প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তোরা যারা রাজাকার, সময় থাকতে বাংলা ছাড়: ফেসবুকে বাকের মজুমদার

যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতায় এক দিনে ১০০ ডলার কমল সোনার দাম

যুদ্ধ বলিউডের সিনেমা নয়: ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান

কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি, স্থায়ী বসবাসের আবেদনে অপেক্ষা ১০ বছর

টাকা চুরি করতে দেখে ফেলায় দুই খালাকে হত্যা করে কিশোর: ডিবি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত