Ajker Patrika

চাঁদপুর

দালালের আখড়া বিআরটিএ

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, চাঁদপুর
মো. শহীদ, মো. শাহজাহান, মো. মানিক , মোহাম্মদ আলী। ছবি: সংগৃহীত
মো. শহীদ, মো. শাহজাহান, মো. মানিক , মোহাম্মদ আলী। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চাঁদপুর কার্যালয় পরিণত হয়েছে দালালের আখড়ায়। তাঁদের তৎপরতা দেখে মনে হবে, তাঁরা যেন এই কার্যালয়ে চাকরি করেন। আর তাঁদের ও কার্যালয়ের অসাধু কর্মীদের কারণে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবা নিতে আসা গ্রাহকেরা। এই অনিয়মের চিত্র দীর্ঘদিনের হলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, তা পর্যায়ক্রমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

চাঁদপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে সরকারি কর্মী আছেন তিনজন। তাঁরা হলেন একজন মোটরযান পরিদর্শক এবং একজন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার)। এ ছাড়া দৈনিক হাজিরাভিত্তিক একজন কর্মচারী কাজ করেন।

কয়েক দিন কার্যালয় ঘুরে ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে রীতিমতো সরকারি চেয়ার-টেবিল ব্যবহার করে দালালি করার অভিযোগ রয়েছে মো. শহীদ, মো. শাহজাহান, মো. মানিক ও মোহাম্মদ আলী নামের চারজনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া দালালি করার জন্য আসেন অটোরিকশাচালক শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা রিপন এবং ট্রাক, লরি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মন্টু। দৈনিক হাজিরাভিত্তিক কর্মচারী জিয়া হক তাঁদের সঙ্গে সমন্বয় করেন বলে অভিযোগ আছে।

ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আঙুলের ছাপ দিতে গত মঙ্গলবার ভোরে কার্যালয়ে আসেন দুই শতাধিক সেবাগ্রহীতা। তাঁদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি জানান, লাইসেন্সের জন্য সরকারি ফি পরিশোধ করার পরও নানা রকম ভুল দেখিয়ে ভোগান্তিতে ফেলা হয়। কিন্তু দালালদের মাধ্যমে টাকা দিলে খুব সহজেই কাজ হয়ে যায়। আঙুলের ছাপ দিতে লোকজনকে প্রতি সপ্তাহের নির্ধারিত দিনে এই কার্যালয়ে আসতে হয়। তখন সেখানে একাধিক দালাল থাকেন।

দালালির সময় সাংবাদিক টের পেয়ে নিজের জায়গা ছেড়ে চলে যান শহীদ। তিনি বলেন, ‘ভাই, আমার বিষয়ে কিছু লেইখেন না।’ আরেক দালাল শাহজাহান ক্ষমতাধর আত্মীয়স্বজনের পরিচয় দেন। অন্যদিকে মানিক বলেন, ‘আমি এখন কাজ করি না। চিকিৎসার জন্য আসছি। এমনিতে অফিসের সামনে বসে আছি।’ এ ছাড়া মোহাম্মদ আলীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এলোমেলো উত্তর দিয়ে কেটে পড়েন।

পাশাপাশি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো অফিসের পিয়ন এবায়েদুল হক আঙুলের ছাপ দিতে আসা লোকদের কোনো ঝামেলা ছাড়া কাজ শেষ করে দিতে সাহায্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমি সকাল ৬টায় আসি। এখানে যাঁরা আসেন, তাঁদের কাজ করে দিলে ২০০ টাকা করে পাই।’

সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, মোটরসাইকেল বিক্রির কেন্দ্রগুলোর বিক্রয়কর্মী কিংবা ম্যানেজারও এই দপ্তরের দালাল হিসেবে কাজ করেন। তাঁরা মোটরসাইকেল নিবন্ধনে অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা নিয়ে বিআরটিএ দপ্তরকে দেন।

ফরিদগঞ্জ থেকে আসা একজন জানান, চাঁদপুরের সুমাইয়া মোটরসের মাধ্যমে তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য ১২ হাজার টাকা দিয়েছেন। তাঁর লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে সব কাজ ওই প্রতিষ্ঠানটি করে দেবে।

এদিকে বিআরটিএ কার্যালয়ে তথ্য নেওয়ার সময় দৈনিক হাজিরার কর্মচারী জিয়া বারবার এই প্রতিবেদককে বাধা দেন। তিনি আরেক সাংবাদিককে দিয়ে ফোন করান, কেন দপ্তরে যাওয়া হয়েছে, সেখানে সাংবাদিকের কাজ কী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই কার্যালয়ের অনিয়মের অভিযোগ জানতে গেলে সাংবাদিকদের হাত করার চেষ্টা করেন জিয়া। তাঁর সঙ্গে কয়েকজন কথিত সাংবাদিকের সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা কিছু নিবন্ধনহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও গাড়ি পরিচালনা করেন। জিয়া বলেন, ‘আমি কোনো অনিয়মে নাই। আমি সবার সঙ্গে খুব ভালো আচরণ করি।’

এই ব্যাপারে কথা হলে বিআরটিএ চাঁদপুর কার্যালয়ের মোটরযান পরিদর্শক আলা উদ্দিন বলেন, ‘আমি গত পাঁচ মাস আগে এই কার্যালয়ে যোগ দিয়েছি। অনিয়ম থাকতে পারে। তবে আমার চোখে পড়ে না।’

যোগাযোগ করা হলে কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি দুই জেলার দায়িত্বে। লক্ষ্মীপুর জেলায় কাজ করতে হয়। আবার চাঁদপুর কার্যালয়ে আসি। এই কার্যালয়ের যেসব অনিয়মের কথা জানতে পেরেছি, খোঁজখবর নিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত