Ajker Patrika

ট্রেনে একসঙ্গে এত দৃশ্য দেখা দেশের আর কোথাও নেই

জমির উদ্দিন, নিজস্ব প্রতিবেদক
ট্রেনে একসঙ্গে এত দৃশ্য দেখা দেশের আর কোথাও নেই

চট্টগ্রামের দুপাশে সারি সারি গর্জন বন। দেখা মিলতে পারে হাতি, বানরসহ অন্য বন্যপ্রাণীও। হঠাৎ আবার দুইদিকে পাহাড়, মধ্যে খানে এঁকেবেঁকে চলে যাচ্ছে ট্রেন। পাহাড়ি ছড়া থেকে রাবার ড্যাম, কিংবা নদ-নদীর অপরূপ সৌন্দর্য; এসব দৃশ্য দেখে দেখে কখন যে আড়াই ঘণ্টার ভ্রমণ শেষ, তা টেরও পাবেন না যাত্রীরা। 

আগামী ১২ নভেম্বর উদ্বোধন হওয়ার পর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ট্রেনে যাওয়ার পথে এসব দৃশ্য দেখবেন ভ্রমণপিপাসুরা। কক্সবাজার যাওয়ার পথে ডানে-বাঁয়ে চোখ ফেরালে ধরা দেবে দোহাজারী থেকে সাতকানিয়ার নয়নাভিরাম গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্য। লোহাগাড়া পার হওয়ার পর আসতে আসতে পাল্টে যাবে দৃশ্যপট। এবার দেখা মিলবে সবুজ-শ্যামল মাখা আবছা আলোর প্রকৃতি। 

বন্য-প্রাণী অভয়ারণ্য চুনতি যাওয়ার পথে আবারও দুপাশে বন, সারি সারি গাছ। হারবাং থেকে চকরিয়া আগ পর্যন্ত দেখা মিলবে এসব। চকরিয়া সদরে ঢোকার পর কিছু দূর সমতল। তারপর ফাঁসিয়াখালী থেকে ডুলাহাজারা পর্যন্ত আবারও সবুজ বন। ডুলাহাজারা সাফারি পার্কও সামনে পড়বে যাওয়ার পথে। এ ছাড়া মালুমঘাট খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালের মাঝখান দিয়েও যাবে ট্রেন। 

ঈদগাঁও রাবার ড্যামের পাশ ঘেঁষে যাবে ট্রেন। সেই অপরূপ সৌন্দর্যটি উপভোগ করতে করতে সামনে চলে আসবে রামুর রাবার বাগানও। এই এলাকায় সরকারি বনের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা সবুজ বনও দেখবেন ভ্রমণকারীরা। এভাবে দেখতে দেখতে কক্সবাজার পৌঁছে যাবেন তারা। 

রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চুনতি, ফাঁসিয়াখালী, মেধাকচ্ছপিয়ার মতো সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে ট্রেন যাবে। এসব এলাকা বন্য-প্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে স্বীকৃত। এ ছাড়া নদ-নদীর মধ্যে লোহাগাড়ায় টঙ্কাবতী খাল ও চকরিয়ার মাতামুহুরির কিছু অংশ দেখতে পাবেন যাত্রীরা। এ ছাড়া দোহাজারী অংশে দেখতে পাবে সাঙ্গু নদী। 

হিমশীতল, স্বচ্ছ-নীল জলরাশি আর দুই তীরে বারোমাসি ফসলের সমারোহ যার বুকে গড়ে উঠে, সেই বাঁকখালী নদীর পাশ ঘেঁষেও যাবে ট্রেন। এঁকে বেঁকে যাওয়া কক্সবাজার-রামুর হৃৎপিণ্ড হিসেবে খ্যাত এ নদীর সৌন্দর্য বিমোহিত করে সবাইকে। সেই বাঁকখালী নদীর অনেকাংশ এবং ওই নদী অতিক্রম করে ট্রেন যাবে কক্সবাজার। 

ট্রেন থেকে নামার পর কক্সবাজার বাস টার্মিনালের অপরপাশে চৌধুরীপাড়ায় অবস্থিত নান্দনিক রেলওয়ে স্টেশন দেখে অনেকে বিস্মিত হবেন। কারণ বিশাল ঝিনুক আকৃতির স্টেশনে। এই ঝিনুকের ভেতরেই হবে প্ল্যাটফর্ম ও যাত্রী আসা-যাওয়া ও বসার লাউঞ্জ। 

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে ৯টি নয়নাভিরাম জায়গা দেখে যাত্রীরা তো বিস্মিত হবেনই। কারণ এক রুটে এমন নদ-নদী, উঁচু নিচু টিলা, বনভূমি ও সমতল সবুজ প্রান্তর পেরিয়ে যাত্রীরা যে চলে যাবেন সমুদ্রতীরের একেবারে কাছেই। 

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. মফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে সেই কথাই বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এক সঙ্গে এমন প্রাকৃতিক দৃশ্য দেশে আর অন্য কোথাও নেই। ঝিনুকের আদলে রেল স্টেশন-তো এই উপমহাদেশেই নেই।’ 

এই কর্মকর্তা জানান, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুমধুম পর্যন্ত রেললাইন প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের ১৮ মার্চ পর্যন্ত ৫১ শতাংশ শেষ হয়েছে। এটি চালু হলে দেশে যুগান্তকারী একটি পরিবর্তন আসবে। পর্যটন খাত তো আছে, অর্থনৈতিকভাবেও দেশ সমৃদ্ধিশালী হতে সাহায্য করবে। 

প্রস্তাবনায় ৭ জোড়া ট্রেন যেসব ট্রেন

কক্সবাজার রুট পুরোদমে চালু হলে ৭ জোড়া ট্রেনের প্রস্তাবনা দিয়েছে রেলওয়ে। প্রস্তাবনা অনুযায়ী কক্সবাজার রুটে ঢাকা থেকে সরাসরি তিনটি ট্রেন যাবে কক্সবাজার। ট্রেন শুধু চট্টগ্রাম থামবে। তারপর আর কোথাও না থেমে চলে যাবে কক্সবাজার। তিনটি ট্রেনের মধ্যে একটি মহানগর প্রভাতী, আরেকটি স্পেশাল টুরিস্ট ট্রেন এবং আরেকটি আন্তনগর ট্রেন। স্পেশাল টুরিস্ট ট্রেনটি শুধু পর্যটকের জন্য। ট্রেনটি ঢাকা থেকে সকাল ১০টায় ছাড়বে, কক্সবাজার পৌঁছাবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। মহানগর প্রভাতী ঢাকা থেকে ছাড়বে সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে, কক্সবাজার পৌঁছাবে বিকেল ৪টায়। আন্তনগর ট্রেনটি রাত ১১টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে কক্সবাজার পৌঁছাবে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে। 

কক্সবাজার থেকে স্পেশাল টুরিস্ট ট্রেনটি রাত ১০টায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে সকাল ৭টায়। আন্তনগর ট্রেন বেলা ১টায় ছেড়ে, ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ৯টায় এবং মহানগর প্রভাতী ট্রেনটি তূর্ণা এক্সপ্রেস হয়ে কক্সবাজার থেকে ছাড়বে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। এটি ঢাকায় পৌঁছাবে ভোর ৬টায়। 

চট্টগ্রাম থেকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩টি ট্রেন কক্সবাজার যাবে। এগুলো শুধু চকরিয়া স্টেশনে থামবে। সাড়ে ৩ ঘণ্টায় কক্সবাজার পৌঁছাবে এই তিনটি ট্রেন। প্রস্তাবনা অনুযায়ী নতুন আন্তনগর ট্রেন সকাল সাড়ে ৬টায় কক্সবাজার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। কক্সবাজার কমিউটার নামে ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে সকাল সাড়ে ৯টায় কক্সবাজার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। নতুন আন্তনগর ট্রেন (নাম এখনো ঠিক হয়নি) বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এ ছাড়া একটি লোকাল ট্রেন দোহাজারী কমিউটার নামে চট্টগ্রাম ছাড়বে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। 

এ ছাড়া আরও কিছু লোকাল ট্রেন চলবে। এসব ট্রেন দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাহ, রামু পর্যন্ত থামবে। আপাতত এমন প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে। 
 
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারের এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের করিডরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ের নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা। পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন করা। সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, রাবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষি পণ্য পরিবহন করা। 

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও দেশীয় তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও দেশীয় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এই প্রকল্পের কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত