Ajker Patrika

ঢাকায় গাড়ি থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার, জাকিরের পরিবারের দাবি পরিকল্পিত হত্যা

নোয়াখালী প্রতিনিধিনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জাকির হোসেন ও মিজানুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
জাকির হোসেন ও মিজানুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মালিবাগে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের পার্কিংয়ে প্রাইভেট কার থেকে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার জাকির হোসেন (৩০) ও মিজানুর রহমানের (৪০) লাশ উদ্ধার নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। জাকিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবারের অভিযোগ। এদিকে মিজানের পরিবারের লোকজনের কোনো অভিযোগ না থাকলেও তাঁরা ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

বুধবার (১২ আগস্ট) সকালে নিহত ব্যক্তিদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে।

জাকির হোসেন নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের লটপটিয়া গ্রামের খামার বাড়ির আবু তাহেরের ছেলে এবং মিজানুর রহমান একই উপজেলার রামনারায়ণপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গোমাতলী গ্রামের দলিতার বাড়ির আবদুল হাকিমের ছেলে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জাকির ও মিজানের মৃত্যুর খবর এলাকা ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। এলাকার নিরীহ দুই যুবকের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। একই সঙ্গে দুই বন্ধুর এমন মৃত্যু নিয়ে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে এলাকার লোকজনের মধ্যে।

স্থানীয়রা জানান, মিজান ও জাকির খুবই ভালো মনের মানুষ ছিলেন। এলাকায় কোনো ধরনের খারাপ আড্ডায় তাঁদের দেখা যেত না। মানুষের বিপদে আপদে তাঁরা এগিয়ে আসতেন। মিজানের সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না। তিনি গাড়ি চালাতেন। কিন্তু জাকির বিদেশ যাওয়ার জন্য আদমব্যাপারীদের কিছু টাকা দিয়েছিলেন। তা নিয়ে জাকিরে সঙ্গে ওই দালালদের বিরোধ ছিল।

শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় রামনারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোবারক মেম্বারের সঙ্গে বসে চা খাওয়ার পর তাঁরা দুজন গাড়ি নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে বের হন। রোববার থেকে তাঁদের সঙ্গে কেউ মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারেননি। সোমবার দুপুরে গাড়ির ভেতর থেকে তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে পুলিশ মিজান ও জাকিরের মৃতদেহ তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

রামনারায়ণপুর ইউপি সদস্য মোবারক বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যায় তারা দুজন আমার সঙ্গে বসে চা খায়। এরপরই তারা ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। পরে সোমবার দুপুরের পর পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারলাম তারা মারা গেছে। মিজান আমার খুব কাছের বন্ধু ছিল।’

জাকির হোসেনের বড় ভাই শাহাদৎ হোসেনের অভিযোগ, বছরখানেক আগে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের বজলু ও ফেনীর সুমনসহ ৮ জনকে আমেরিকা যাওয়ার জন্য ১৯ লাখ টাকা দেয় জাকির। কথা ছিল ব্রাজিল হয়ে আমেরিকা নেওয়া হবে জাকিরকে। কিন্তু কাগজপত্র দেওয়ার পর অনেক সময় চলে গেলেও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ওই লোকদের সঙ্গে জাকিরের বিরোধ দেখা দেয়। এসব বিষয় নিয়ে ওই ৮ জনের সঙ্গে বিভিন্ন সময় জাকিরের মোবাইলে তর্কবিতর্ক হয়। তাঁরা অভিযোগ করেন, চন্দ্রগঞ্জের বজলুর সঙ্গে জাকিরের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছিল। শেষ পর্যন্ত টাকা ফেরত চেয়েছিল জাকির। কিন্তু টাকা ফেরত না দিয়ে জাকিরকে ওই চক্র হত্যার হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ শাহাদাতের। তাঁদের অভিযোগ ওই আদমব্যাপারীরা তাঁর ভাই জাকিরকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ ছাড়া জাকিরের কোনো শত্রু নেই।

মিজানের বোন নিলুপা জানান, মিজান এলাকার লোকজনের বিপদে-আপদে এগিয়ে আসতেন। যত রাতই হোক এলাকার কেউ অসুস্থ হলে তিনি গাড়িতে করে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যেতেন। তাঁকে কেউ মেরে ফেলবে, এটা তাঁরা ভাবতে পারছেন না। তবে মিজান ও জাকিরের মৃত্যুর বিষয়টি সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান নিলুপা।

জাকিরের বাবা মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমার ছেলে দুই বছর আগে আমেরিকা যাওয়ার জন্য এলাকার এক দালালকে টাকা দিয়েছিল। সেই দালাল তাদের নিয়ে এসেছিল ঢাকায় পল্টনে এক ট্র্যাভেল এজেন্সির ফজলু নামের এক ব্যক্তির কাছে। সব মিলিয়ে তখন প্রায় ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। এরপর জাকিরকে শ্রীলঙ্কা নিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে অবৈধ পথে আমেরিকা পাঠানোর কথা ছিল। তবে পারেনি। এরপর আরও কিছু টাকা দিয়ে তাকে আমরাই দেশে ফেরত আনি।’

মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ঢাকার রমনা থানা-পুলিশ। প্রতিবেদনে উপপরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন উল্লেখ করেন, তাঁদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ফোলা ও ফোসকা পড়া। এ ছাড়া মুখ লালচে, ফোলা ও রক্তমাখা। প্রাথমিকভাবে তাঁদের মৃত্যুর কোনো কারণ উল্লেখ নেই প্রতিবেদনে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত