Ajker Patrika

চকরিয়ায় থানাহাজতে যুবকের মৃত্যু: তিন পুলিশ প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি গঠন

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
হাজতে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় আজ শুক্রবার কক্সবাজারের চকরিয়া থানার সামনে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাজতে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় আজ শুক্রবার কক্সবাজারের চকরিয়া থানার সামনে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজারের চকরিয়া থানার হাজত থেকে যুবক দুর্জয় চৌধুরীর (২৫) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ। আজ শুক্রবার ভোরে দুর্জয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, দুর্জয় থানাহাজতের ভেতর জানালার গ্রিলের সঙ্গে শার্ট পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

দুর্জয় চৌধুরী চকরিয়া পৌরসভার ভরামুহুরী হিন্দুপাড়ার কমল চৌধুরীর ছেলে। তিনি চকরিয়া সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন। বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক তাঁকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে থানায় দেন।

চকরিয়া থানা থেকে প্রত্যাহার করা তিন পুলিশ সদস্য হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হানিফ মিয়া, কনস্টেবল ইশরাক হোসেন ও মহিউদ্দিন। তাঁদের জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ ঘটনায় জেলা পুলিশ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এতে কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দীন চৌধুরীকে প্রধান করা হয়। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) অভিজিৎ দাস ও চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পুলিশের পরিদর্শক আনোয়ার উল ইসলাম।

এদিকে থানার ভেতর আটক যুবকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে চকরিয়া পৌরসভার ভরামুহুরী হিন্দুপাড়ার কয়েক শ নারী-পুরুষ বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভ মিছিলটি চকরিয়া থানার সামনে এলে সেখানে স্থানীয় লোকজন যুক্ত হন। এরপর পৌর শহরের সিস্টেম কমপ্লেক্সের সামনে সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। এতে সড়কের দুই পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়।

কক্সবাজারের চকরিয়া থানার হাজতে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা সড়ক অবরোধ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজারের চকরিয়া থানার হাজতে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দারা সড়ক অবরোধ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিক্ষোভকালে চকরিয়া ইমাম সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, থানার হাজতখানায় কীভাবে মানুষ মারা যায়। আসামি রাখার একটা জায়গা আছে। তাঁকে মারধর করা হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা দরকার। তিনি আত্মহত্যা করলেন কীভাবে? নাকি তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে? এসব প্রশ্নের উত্তর চকরিয়া মানুষ জানতে চান। এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।

জানা গেছে, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গতকাল চকরিয়া সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবিয়া খানম থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করে দুর্জয়কে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। দুর্জয়ের বিরুদ্ধে স্কুলের ২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলেন তিনি। রাতে তাঁকে থানার হাজতে রাখা হয়।

এ বিষয়ে দুপুর ১২টার দিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবিয়া খানমের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর ঘটনা প্রথম আপনার কাছ থেকে শুনলাম। তিনি মারা গেছেন, আমার কী যায়-আসে। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

রাবিয়া খানম বলেন, ‘স্কুলের একাধিক হিসাবের (অ্যাকাউন্ট) ২১টি চেক দুর্জয় সরিয়ে ফেলেছেন। আমার স্বাক্ষর জাল করে ২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা সরিয়ে ফেলেছেন তিনি। গতকাল ফোন করে তাঁকে স্কুলে ডেকে আনা হয়। পরে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূপায়ণ দেবের কাছে যাই। তিনি আইনের আশ্রয় নিতে বলেন। পরে চকরিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে ওসি বলেন, “এ রকম ঘটনায় এখানে জিডি হয় না।” একপর্যায়ে লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় গিয়ে তাঁকে (দুর্জয়) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি।’

দুর্জয় চৌধুরীর বাবা কমল চৌধুরী বলেন, ‘দেড় বছর আগে আমার ছেলে স্কুলটিতে চাকরি পায়। রাবিয়া খানম আমাকেও স্কুলে ডেকেছিলেন। চুরির ঘটনা আমাকে জানালে আমরা সমাধানের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা চাপ প্রয়োগ ও ক্ষমতা দেখিয়ে থানায় গিয়ে আমার ছেলেকে পুলিশে দেন। এখন আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। আমি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।’

দুর্জয়ের মা বেবি চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছেলেকে গতকাল রাতে রাবিয়া খানম পুলিশের কাছে তুলে দেন। আমি আমার ছেলেকে বলেছিলাম, “সকালে তোকে ছাড়িয়ে আনব।’’ কিন্তু সকালে ছেলে ফিরল ঠিকই, তবে লাশ হয়ে। এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করা হোক। দুর্জয়ের মৃত্যুতে যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।’

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিয়মানুযায়ী চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূপায়ণ দেব লাশের সুরতহাল করেছেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশের তিন সদস্যকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

জসিম উদ্দীন আরও বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনা উদ্‌ঘাটনের জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান আমি নিজেই। যদি তদন্তে পুলিশের কোনো গাফিলতি পাওয়া যায়, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূপায়ণ দেব বলেন, থানায় গিয়ে হাজতের একটি কক্ষের গ্রিলের সঙ্গে পরনের শার্ট প্যাঁচানো অবস্থায় ওই যুবকের লাশ পাওয়া যায়। শার্ট দিয়ে গলায় ফাঁস দেওয়ায় গলায় কালচে দাগ রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত