Ajker Patrika

ডাকাতির সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া গুলিতে নিজেদের লোকই নিহত

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গভীররাতে প্রাইভেটকার আটকে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দায়িত্বরত টহল পুলিশ এগিয়ে ডাকাত দল তাদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। তবে ডাকাত দলের ছোড়া গুলিতে তাদেরই এক সদস্য নিহত হয়েছেন।

গতকাল রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পন্থিছিলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আজ সোমবার আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান।

নিহতের নাম মো. রাশেদ (২৬)। তিনি সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মধ্যম সোনাইছড়ি এলাকার বাদশা আলমের ছেলে।

পুলিশ বলছে, মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান (৩৩) বাদী হয়ে অজ্ঞাত ডাকাত দলের বিরুদ্ধে সোমবার সকালে সীতাকুণ্ড থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পাশাপাশি গুলিতে নিহত ডাকাত রাশেদের বাবা বাদশা আলম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ডাকাত দলের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান ও থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রোববার রাতে ভুক্তভোগী নুরুজ্জামান বন্ধু জয়নালকে নিয়ে এক্সকেভেটরের পার্টস কিনতে প্রাইভেটকারে করে টাঙ্গাইল থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা। দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার সময় তাদের প্রাইভেটকারটি সীতাকুণ্ডের পন্থিছিলা এলাকা অতিক্রমের সময় ৭-৮ জন ব্যক্তি তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে লোহার পাইপ ছুড়ে মারে। বিকট শব্দ শুনে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না তা দেখতে কিছু দূর এগিয়ে গাড়িটি থামান তারা।

তৎক্ষণাৎ সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন। পরে তাদের তিনজনের হাতে থাকা মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় তাঁদের চিৎকার শুনে মহাসড়কে দায়িত্বরত টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। ডাকাত দল পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়।

তবে পালিয়ে যাওয়ার সময় ডাকাতদলের ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়ে এক ডাকাত আহত হন। পরে তাকে সঙ্গে পালানোর চেষ্টা করেন ডাকাত দল। পরে পুলিশসহ সকলে পিছু ধাওয়া করলে আহত সদস্যকে ফেলে পালিয়ে যায় ডাকাতদল। পরে তাঁকে আহত অবস্থায় পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান বলেন, ‘মহাসড়কে ডাকাতিতে অংশ নেওয়া সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সবাই মুখে মাস্ক পরা ছিল। তারা সবাই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও বিভিন্ন ভাষায় কথা বলছিল। শার্ট ও প্যান্ট পরিহিত ডাকাতদলের সব সদস্যের বয়স ২০ থেকে ৪৫ এর মধ্যে।’

এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ডাকাত দলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডাকাতির সময় টহল পুলিশ ছুটে গেলে ডাকাতেরা তাদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ডাকাতের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন রাশেদ নামের এক ডাকাত। ডাকাতেরা গুলিবিদ্ধ রাশেদকে উঠিয়ে জমি দিয়ে নেওয়ার সময় পুলিশ পিছু ধাওয়া করে। তখন তাঁকে ফেলে পালিয়ে যায় বাকি সদস্যরা। পরে জমি থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করা হয় ওই সদস্যকে।

তিনি আরও বলেন, ‘মহাসড়কে ডাকাতদলের ফেলে যাওয়া দুটি রাম দা ও একটি লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে গুলিবিদ্ধ ডাকাত রাশেদকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় সেখান থেকে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে (চমেকে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ (সোমবার) সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।’

ওসি মজিবুর রহমান বলেন, ‘নিহত ডাকাতের প্যান্টের পকেটে চারটি মোবাইল ফোন ও কিছু নগদ টাকা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ডাকাতির কবলে পড়া ব্যবসায়ী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ডাকাতির মামলা দায়ের করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া নিহত ডাকাত রাশেদের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাত ডাকাত দলের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে নিহতের মরদেহ তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে গাছ ফেলে ব্যারিকেডের চেষ্টা, শিবচর বিএনপির নেতৃত্বে অপসারণ

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
শিবচর উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা মহাসড়ক থেকে গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন। ছবি সংগৃহীত
শিবচর উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা মহাসড়ক থেকে গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন। ছবি সংগৃহীত

মাদারীপুর জেলার শিবচরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সূর্যনগর-সংলগ্ন স্থানে গাছ ফেলে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করেছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে এই ঘটনা ঘটে। তবে খবর পেয়ে শিবচর উপজেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে গাছ সরিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন।

শিবচর হাইওয়ে থানা-পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে শিবচরের সূর্যনগর-সংলগ্ন শিবচর-ভাঙ্গা সীমানা এলাকা ও কুতুবপুরের শিবচর-শরীয়তপুর সীমানায় এই ব্যারিকেড দেওয়া হয়।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের লকডাউনকে কেন্দ্র করে ভোরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের শিবচর উপজেলার সূর্যনগর-সংলগ্ন ভাঙ্গা উপজেলার অংশে মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করেন কার্যক্রম নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে রাতে মাদারীপুর-বরিশাল মহাসড়কের মোস্তফাপুর এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।

শিবচর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন খান বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। আমাদের নেতা-কর্মীরা গাছ সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেছে। এখন মহাসড়কে কোনো সমস্যা নেই। এ ছাড়া আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি।’

শিবচর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি যে ভোরে মহাসড়কের দুটি স্থানে সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করেছি। আমাদের হাইওয়ে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে আগুন, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন যাত্রীরা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি 
ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কের বাঐখোলা এলাকায় চলন্ত বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কের বাঐখোলা এলাকায় চলন্ত বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

টাঙ্গাইলের বাসাইলে মহাসড়কে একটি চলন্ত বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কের উপজেলার বাঐখোলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, ‘বাংলা স্টার’ নামের একটি যাত্রীবাহী বাস ঢাকা থেকে পাবনার উদ্দেশে যাচ্ছিল। পথে দুর্বৃত্তরা চলন্ত অবস্থায় বাসটিতে আগুন দেয়। এ সময় যাত্রীরা দ্রুত বাস থেকে নেমে প্রাণে রক্ষা পান। স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার এস এম হুমায়ূন কার্ণায়েন বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। কোনো হতাহত নেই।’

বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ চলন্ত বাসটিতে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এ সময় যাত্রীরা দ্রুত বাস থেকে নেমে পড়ে। এই ঘটনায় কোনো হতাহত নেই। বাসটি গোড়াই হাইওয়ে থানায় নেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৪৯তম বিসিএস: মধ্যনগরের গর্ব খাদিজা সর্বকনিষ্ঠ ও অলি উল্লাহ গণিতে ক্যাডার

মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
খাদিজা আক্তার ও মো. অলি উল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত
খাদিজা আক্তার ও মো. অলি উল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

৪৯তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার দুই তরুণ-তরুণী নিজেদের মেধা ও অধ্যবসায়ে অর্জন করেছেন অনন্য সাফল্য। এই অর্জনে পুরো এলাকায় নেমেছে আনন্দের জোয়ার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে অভিনন্দনের বন্যা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার হয়েছেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ ক্যাডার। অনার্সের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগেই বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। খাদিজা মধ্যনগর গ্রামের মরহুম আব্দুল আজিজ ও হাজেরা বেগম দম্পতির একমাত্র কন্যা। তিনি মধ্যনগর বিশ্বেশ্বরী পাবলিক উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

অন্যদিকে মধ্যনগরের আরেক কৃতী সন্তান মো. অলি উল্লাহ দেশের গণিত ক্যাডারে প্রথম স্থান অর্জন করে এলাকাকে গর্বিত করেছেন। তিনি উপজেলার বংশীকুন্ডা গ্রামের মো. আব্দুল হেকিম ও হাজেরা খাতুন দম্পতির একমাত্র ছেলে। বংশীকুন্ডা মমিন উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও সিলেট এমসি কলেজ থেকে এইচএসসি শেষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন তিনি।

খাদিজা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি খুবই খুশি। বোঝানোর মতো না। আমি আল্লাহর রহমত ও মায়ের দোয়ায় এ পর্যন্ত এসেছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’

মো. অলি উল্লাহ বলেন, ‘অনুভূতি বলে শেষ করা যাবে না। আমার ফ্যামিলি ও আমি খুব খুশি। আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া। এলাকাবাসীর কাছে দোয়া চাই।’

দুই মেধাবীর এই অনন্য সাফল্যে শিক্ষক, শুভাকাঙ্ক্ষী ও এলাকাবাসী উচ্ছ্বসিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অমর কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের ১৭৮তম জন্মবার্ষিকী আজ

বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩৪
কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও মিলনায়তন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি পাঠাগার ও মিলনায়তন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলা সাহিত্যের অমর কথাসাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেনের আজ ১৭৮তম জন্মবার্ষিকী। ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়ার কুমারখালীর লাহিনীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন মীর মশাররফ হোসেন। তাঁর বাবার নাম সৈয়দ মীর মুয়াজ্জম হোসেন ও মায়ের নাম দৌলতন নেছা।  

মীর মশাররফ হোসেনের জন্মবার্ষিকী ঘিরে বাংলা একাডেমি, প্রশাসন, মীর মশাররফ হোসেন ডিগ্রি কলেজ, মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি সংসদসহ স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো মীরের সমাধিস্থল বালিয়াকান্দির নবাবপুরের পদমদীতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মীর মশাররফ হোসেনের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের আমন্ত্রণপত্র সূত্রে জানা যায়, জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল ১০টায় মীর মশাররফ হোসেনের সমাধিতে তারা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর বেলা ১১টায় সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেমিনারে সভাপ্রধান হিসেবে থাকবেন রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার। প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলা একাডেমির সচিব (উপসচিব) ড. মো. সেলিম রেজা।  

স্বাগত বক্তব্য দেবেন বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মুস্তাফিজুর রহমান এবং প্রবন্ধকার হিসেবে থাকবেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ। বিশেষ অতিথি থাকছেন বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. সরকার আমীন ও সমীর কুমার সরকার।  

১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করলে তাঁকে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে সমাহিত করা হয়।

কবির বাস্তুভিটায় বসছে গ্রামীণ মেলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কবির বাস্তুভিটায় বসছে গ্রামীণ মেলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের লাহিনীপাড়ায় কবির বাস্তুভিটায় দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন। বিকেলে ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন। এতে সভাপতিত্ব করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন বিকেলে লাঠিখেলা ও আলোচনা শেষে মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাট্যানুষ্ঠান। এদিন মঞ্চায়িত হবে কবির লেখা নাটক ‘জমিদার দর্পণ’। পরিবেশনা করবেন উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। শুক্রবার মধ্যরাতে কবির কালজয়ী উপন্যাস ‘বিষাদ-সিন্ধু’ অবলম্বনে নাটক ‘এজিদের পরিণতি’ মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে শেষ হবে জন্মোৎসব।

এ উপলক্ষে কবির বাস্তুভিটায় বসবে গ্রামীণ মেলা। মীর মশাররফ হোসেন সাহিত্যকর্ম রচনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা ও সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। ভারতী, সংবাদ প্রভাকর, মিহির, হাফেজ, আহমদী, নবরত্ন প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন। ধর্ম, আইন, প্রবন্ধ, ইতিহাস বিষয়ে আলোচনা, নাটক, গান ও উপন্যাস রচনা করেছেন তিনি। এর মধ্যে ‘শাহনামা’, ‘গুলিস্তা’, ‘কাসাসুল আম্বিয়া’, ‘রামায়ণ-মহাভারত’, ‘বিদ্যাসুন্দর দাশরথী রায়ের পাঁচালী’, ‘বানভট্রের কাদম্বরী’ উল্লেখযোগ্য।

১৮৬৯ সালে লেখা মীর মশাররফ হোসেনের “রত্নাবতী” উপন্যাসটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এরপর তাঁর অমর সৃষ্টি ১৮৮৫ সালে লেখা ‘বিষাদ-সিন্ধু’ ছাড়াও ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’, ‘রাজিয়া খাতুন’, ‘তহমিনা’, ‘বাঁধাখাতা’, ‘বধূমাতা’ও উল্লেখ্য। তাঁর রচিত নাটক ‘বসন্ত কুমারী’ ও ‘জমিদার দর্পণ’ বাংলাসাহিত্যে এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে।

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ‘কবির ১৭৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান ও গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত