Ajker Patrika

রাঙামাটিতে নামের মিলে হত্যা মামলায় কৃষক হাজতে

রাঙামাটি প্রতিনিধি
রাঙামাটিতে নামের মিলে হত্যা মামলায় কৃষক হাজতে

রাঙামাটির জুরাছড়িতে নামের মিল থাকায় চিক্কা চাকমা (৫৮) নামের এক কৃষক হত্যা মামলায় হাজত বাস করছেন। গত ২২ মে একটি হত্যা মামলায় আসামি হয়ে রাঙামাটির সিজেএম আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তাঁকে গ্রেপ্তার করে হাজতে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন খোদ মামলার বাদী লোকবিদু চাকমা।

মামলার বাদী বলেন, ‘চিক্কা চাকমা আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন। চিক্কা চাকমা মামলার প্রকৃত আসামি নন মর্মে আদালতে হলফনামা দিয়ে বিনা শর্তে মামলা থেকে তাঁর অব্যাহতিসহ মুক্তির আবেদন করেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুরাছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলাটির বিষয়ে আমি অবগত নই। এটি বহু আগের মামলা। আগের দায়িত্বরতরা তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এর বাইরে এ মামলা সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালে ১০ এপ্রিল বনযোগীছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হেমন্ত চাকমাকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করে। পরে তাঁর বাবা লোকবিদু চাকমা বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে ছয়-সাতজন অজ্ঞাতপরিচয় জেএসএস সদস্য উল্লেখ করে মামলা করেন। মামলার ১৬ নম্বরে আসামি হিসেবে চিক্কা চাকমার নাম রয়েছে। তবে পিতা ও মাতা ও সাং অজ্ঞাত ছিল।

এজাহার মূলে সাক্ষী এরাইছড়ি মৌজার পানছড়ির কার্বারী রাজেশ চাকমা বলেন, ‘মামলার ১৬ নম্বরে আসামি হিসেবে চিক্কার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি এই চিক্কা চাকমা নন। গ্রেপ্তার চিক্কা খুবই সহজ সরল লোক। ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।’

চিক্কা চাকমার স্ত্রী শ্যামলিকা চাকমা বলেন, ‘পুলিশ আমাদের বাড়ি এসে আমার স্বামীকে খুঁজছিল। খবর পেয়ে আমার স্বামী মামলার বাদীকে নিয়ে আদালতে যান। সেখান থেকে তাঁকে জেলখানায় পাঠানো হয়।’

শ্যামলিকা চাকমা আরও বলেন, ‘আমরা দিনমজুর। পরের জমি চাষ করে কোনোমতে জীবনযাপন করছি। আমার স্বামী কারও ক্ষতি করেনি এ কথা এলাকার মানুষ সবাই বলবে।’

চিক্কা চাকমার ছোট ভাই পাথর চাকমা বলেন, ‘স্বামীর চিন্তায় ভাবি গত ২২ মে থেকে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। এখন শুধু কান্নাকাটি করছে।’

জুরাছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান ইমন চাকমা বলেন, ‘চিক্কা চাকমা একজন সহজ-সরল ও বোকা প্রকৃতির লোক। চিক্কাকে আসামি করে জেল হাজতে পাঠানোতে এলাকার মানুষ খুব কষ্ট পেয়েছে। আমি তার মুক্তি দাবি করছি। প্রকৃত আসামিদের ধরে বিচার করা হোক।’

রাঙামাটি পার্বত্য জলা পরিষদের সদস্য ও জুরাছড়ি আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবর্তক চাকমা বলেন, ‘চিক্কা চাকমাকে ছোটবেলা থেকেই দেখেছি। সে কখনো রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল না। সে একেবারে সহজ সরল লোক।’

জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুরেশ কান্তি চাকমা বলেন, ‘চিক্কা সহজ সরল একজন ব্যক্তি। প্রতিবন্ধী ধরনের। কানে কম শোনে। চিক্কার নামে যাকে আসামি করা হয়েছে সে এ চিক্কা নয়।’

চিক্কা চাকমার আইনজীবী বিপ্লব চাকমা বলেন, ‘মামলার বাদী লোকবিধু চাকমা এই চিক্কা হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন মর্মে একটি হলফনামা দিয়েছেন। আমি এটি আদালতে উপস্থাপন করেছি।’

রাঙামাটি সিজেএম (চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর ভবতোষ চাকমা বলেন, এজাহারে চিক্কা চাকমার বাবার নাম অজ্ঞাত থাকলেও পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে তাঁর নাম রয়েছে। সে জন্য আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে চিক্কার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন। জামিনের জন্য তাঁকে এখন উচ্চ আদালতে যেতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বৈপ্লবিক পরিবর্তন করার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে

ব্যাংকের চাকরি যায় জাল সনদে, একই নথি দিয়ে বাগালেন স্কুল সভাপতির পদ

৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডেলটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফারুকসহ ১৫ জনের নামে মামলা

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

‘মুসলিম ফ্রন্টগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করুন, ইন্টেরিম ভেঙে দিন’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত