Ajker Patrika

ইসলামী ব্যাংকে লুটপাট: শুধু খাতুনগঞ্জ শাখার ক্ষতি পোষাতেই লাগবে ১৩ বছর

  • খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা তুলে নেয় এস আলম গ্রুপ
  • ঋণের বিপরীতে যোগ্য জামানত মাত্র ৫৫৬ কোটি টাকা
  • শুধু খাতুনগঞ্জেই সঞ্চিতি ঘাটতি ৪২ হাজার কোটি টাকা
ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৪ মে ২০২৫, ১৭: ৩২
ইসলামী ব্যাংকে লুটপাট: শুধু খাতুনগঞ্জ শাখার ক্ষতি পোষাতেই লাগবে ১৩ বছর

আওয়ামী লীগ আমলে ব্যাংকিং খাতে চলা লুটপাটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি হলো ইসলামী ব্যাংক। কারণ, এই ব্যাংক থেকে বিতর্কিত শিল্পগ্রুপ এস আলম একাই বের করে নিয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণের অর্ধেকেরই বেশি অর্থাৎ ৪৫ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে।

ব্যাংকটির তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ছিল ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে, খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে শুধু এস আলম যে অর্থ লুট করেছে, তা কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে ১৩ বছর সময় লাগবে। কারণ, ৪৫ হাজার কোটি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির কাছে যোগ্য জামানত রয়েছে মাত্র ৫৫৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ফলে এস আলম স্বেচ্ছায় ঋণের টাকা ফেরত না দিলে ব্যাংকের পক্ষে আইনগতভাবে এই ঋণ আদায় সহজ হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মালিকানা বা আধিপত্য শুরুর আগে থেকেই ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায় ঋণ ছিল এস আলম গ্রুপের। এরপর ২০১৭ সালে মালিকানা প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত এই শাখার সংশ্লিষ্ট কয়েক কর্মকর্তা গ্রুপটির লুটপাটে সহযোগিতা করেছেন। তাঁদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব লুটপাটে অংশ নিয়েছেন। ফলে ব্যাংকটির একটি শাখা এত বড় লুটপাটের সুযোগ হয়েছে, যা ব্যাংকিং খাতের এযাবৎকালের সব রেকর্ডকে হার মানিয়েছে।

ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খাতুনগঞ্জ শাখার বিতরণ করা এই ঋণ এখন ব্যাংকটির বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, এস আলম গ্রুপকে দেওয়া এই ঋণে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি।

শাখাটির অনিয়ম উল্লেখ করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট টিম মন্তব্য করেছে, ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় বিগত কয়েক বছর কার্যত কোনো ব্যাংকিং হয়নি; যা হয়েছে তা স্বাভাবিক ব্যাংকিং নিয়মাচারের সম্পূর্ণ বিপরীত। ব্যাংকটির শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের কয়েকজন অতি উৎসাহী, অসাধু, দুর্নীতিগ্রস্ত ও উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তা স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে এস আলমের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিনিয়োগের নামে ব্যাংকের বিপুল অর্থ আত্মসাতে কুশীলবের ভূমিকায় নিয়োজিত ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন টিমের এক কর্মকর্তা বলেন, ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির কাছে এস আলম গ্রুপের ১১ হাজার শতক জমি, ১৫ হাজার বর্গফুট ফ্লোর স্পেস, স্থাপনা, মেশিনারিজ, নগদ ও এফডিআর মিলে মোট ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সহায়ক জামানত রয়েছে। এর মধ্যে এমনও সম্পত্তি রয়েছে, যা এখনো নামজারিও হয়নি এস আলমের নামে কিংবা ইসলামী ব্যাংকের অনুকূলে আইজিপিএ (ইরিভোকেবল জেনারেল পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) সম্পাদন হয়নি। নামজারি না হওয়া সম্পত্তি ব্যাংকের পক্ষে বিক্রি তো দূরের কথা, বন্ধক রাখারও সুযোগ নেই। ফলে ঋণের টাকার প্রায় পুরোটাই ব্যাংকটিকে তাদের মুনাফা থেকে প্রভিশন করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে এস আলম ভেজিটেবল অয়েল, মেসার্স সোনালী ট্রেডার্স, ডেলটা অয়েল রিফাইনারি, মেসার্স সাদিয়া ট্রেডার্স, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন, ওজি ট্রাভেলস, এস আলম সুপার এডিবল অয়েল, এস আলম রিফাইনড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, এস আলম স্টিলস, এস আলম ট্রেডিং কোম্পানি, সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস, মেসার্স আদিল করপোরেশন, ইনফিনিয়া সিনথেটিক ফাইবার, জেনেসিস টেক্সটাইল অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড অ্যাপারেলস, চেমন ইস্পাত, এস আলম ক্লোড রোল্ড স্টিল, সাভোলা অয়েল ও ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপসের নামে এই ঋণ নেওয়া হয়েছে।

এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে রয়েছেন মোহাম্মদ সাইফুল আলম, স্ত্রী ফারজানা পারভীন, সহোদর ওসমান গণি, রাশেদুল আলম, শহিদুল আলম, আব্দুস সামাদ, ভাইয়ের স্ত্রী শাহানা ফেরদৌস ও ভাগনে মোস্তান বিল্লাহ আদিলসহ আত্মীয়স্বজন, প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও নামে-বেনামে এই ঋণ নেওয়া হয়েছে।

খাতুনগঞ্জের সঞ্চিতি ঘাটতি ৪২ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে এস আলম গ্রুপকে দেওয়া ঋণের পুরোটাই এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে। তাই ব্যাংকটির শুধু খাতুনগঞ্জ শাখাতেই প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাতুনগঞ্জ শাখার ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড ঋণের বিপরীতে ৪৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকার প্রভিশন রাখতে হবে। যেখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। ঘাটতি হয়েছে ৪১ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা।

ব্যাংকটিতে মোট ৭৭ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকার প্রভিশন রাখতে হবে। অথচ ব্যাংক সংরক্ষণ করেছে মাত্র ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। এতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৬৯ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার আমানত রয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে শাখাটির মাধ্যমে দায় সৃষ্টি হয়েছে ৫৩ হাজার ৫০১ কোটি টাকা।

গত ডিসেম্বরে ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা খেলাপি ঋণ দেখিয়েছে ৩২ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে, শাখাটির প্রকৃত খেলাপি ঋণ ঠেকেছে ৬৫ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ইসলামী ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায় বিগত কয়েক বছর যে লুটপাট হয়েছে, তা বিশ্বের ব্যাংক লুটপাটকে ছাড়িয়ে গেছে। শুধু খাতুনগঞ্জ শাখা কিংবা ইসলামী ব্যাংক নয়, দেশের বিপর্যস্ত ব্যাংকিং খাতে ঘুরে দাঁড় করাতে ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ হয়েছে। অধ্যাদেশের আলোকে ইসলামী ব্যাংকসহ পুরো ব্যাংকিং খাতকে পুনরুদ্ধার করতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

শাখাটির সার্বিক বিষয়ে খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার ব্যবস্থাপক এসভিপি জামাল উদ্দীন বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক জনগণের আস্থার প্রতীক। গ্রাহকের আস্থা ও আমানতের সুরক্ষায় আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। গত ৭-৮ বছর ব্যাংকের যে ক্ষতি হয়েছে, তা ছিল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের তত্ত্বাবধানে সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামি ব্যাংকিং ধ্বংস করার হীন চক্রান্ত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভোলায় মৎস্যজীবী লীগের নেতা আটক

ভোলা প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে আটক মো. মোশারফ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ মৎস্যজীবী লীগের এক নেতাকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে ভোলার কোস্ট গার্ডের সদস্যরা সদর উপজেলার ব্যাংকের হাট-সংলগ্ন এলাকা থেকে তাঁকে আটক করেন।

আটক ব্যক্তির নাম মো. মোশারফ হোসেন (৬০)। তিনি মৎস্যজীবী লীগের টাস্কফোর্স প্রতিনিধি বলে জানিয়েছে কোস্ট গার্ড।

কোস্ট গার্ড জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল দিবাগত রাত ১টায় ভোলার কোস্ট গার্ড বিশেষ অভিযান চালিয়ে মোশারফ হোসেনকে আটক করে।

কোস্ট গার্ড ভোলা দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, আটক ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভোলা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সূর্যের দেখা নেই, কনকনে ঠান্ডায় কাবু জনজীবন

সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও 
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা
সকালে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যাচ্ছে একটি বাস। ছবি: আজকের পত্রিকা

আকাশে সূর্যের কোনো দেখা নেই। ঘন কুয়াশায় মোড়া ঠাকুরগাঁও শহর। সড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে। কনকনে ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে সড়কের পাশে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা খুঁজছে শীতার্ত লোকজন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা ঘুরে এই দৃশ্য চোখে পড়ে।

গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ জেলায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। যদিও ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো আবহাওয়া অফিস নেই, তবে জেলার ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যমতে, সকাল ৭টার দিকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ১০টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে বাতাসের কারণে অনুভূত তাপমাত্রা ছিল প্রায় ১০ ডিগ্রির মতো।

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঠাকুরগাঁও বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানপাট তখন বন্ধ। পশ্চিম দিক থেকে আসা হিমেল বাতাস শীতের অনুভূতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্য দিনের তুলনায় সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও কম। জীবিকার তাগিদে শ্রমজীবী মানুষ বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হলেও পড়ছেন চরম দুর্ভোগে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় ফুটপাতে আশ্রয় নেওয়া দরিদ্র লোকজন আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে হতদরিদ্র মানুষ। তাদের অনেকেরই গরম কাপড় নেই। তাই ঠান্ডা থেকে বাঁচতে কাগজ, পলিথিন ও ছেঁড়া কাপড় জ্বালিয়ে রাত ও সকাল পার করছে তারা।

সকালে সদর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক হাসান রাব্বির সঙ্গে। সড়কের পাশে কাগজ ও পলিথিন জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে পোহাতে তিনি বলেন, ‘আগে সকাল ৭টায় রিকশা নিয়ে বের হতাম। কিন্তু এখন ঠান্ডা এত বেড়েছে যে আজ ১০টার আগে বের হতে পারিনি। কুয়াশা একটু কমার অপেক্ষা করছি।’ শীতের কারণে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে বলে জানান শহরের কালীবাড়ি এলাকার কলা বিক্রেতা ভূষণ রায়। তিনি বলেন, ‘সোয়েটার, টুপি, মাফলার পরেও শরীর বাঁচে না। শীত কিছুতেই মানছে না।’

এদিকে শীত মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৬ লাখ টাকা করে মোট ৩০ লাখ টাকায় ৮ হাজার ৫০০ কম্বল কেনা হয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, এ বছর ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়ে কম্বল কেনা হয়েছে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে ৭ হাজার কম্বল এবং বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে আরও দেড় হাজার কম্বল পাওয়া গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে: জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

জাবি প্রতিনিধি 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

‘আগামীকাল বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে’ এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখার সেক্রেটারি মোস্তাফিজুর রহমান।

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক ও প্রতিবাদ মিছিল করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদ মিছিল শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাকসু, শাখা ছাত্রশিবির, শাখা ছাত্রশক্তি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে ‘আগামীকালকে (শুক্রবার) বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেন মোস্তাফিজুর রহমান।

সমাবেশে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক লড়াই করে বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের লড়াই শুরু হবে শহীদ ওসমান হাদির ইনকিলাব মঞ্চের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। আগামীকালকে বাম, শাহবাগী, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। এই খুনি হাসিনার দল হাজার হাজার নিষ্পাপ বাংলাদেশের দামাল ছেলেদেরকে হত্যা করেও ওর রক্ত পিপাসা মেটেনি। বিদেশে বসে এখনো বিপ্লবীদের হত্যা করার ছক করছে। আমরা আজ এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে স্পষ্ট করে বলতে চাই শহীদ ওসমান হাদির রক্তের ওপর দিয়ে, শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। যে সমস্ত ভারতীয়রা বাংলাদেশে বৈধভাবে অবৈধভাবে বাংলাদেশে চাকরি করছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের ভারতে পুশব্যাক করতে হবে। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ওরা ওসমান হাদির খুনিকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।’

মোস্তাফিজুর রহমানের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় সমালোচনা।

এরপর আজ শুক্রবার দুপুরেও মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে একই ধরনের বক্তব্য লিখে পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, শুধু রাজনৈতিক লড়াইয়ে প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হয় না। শহীদ ওসমান হাদি ভাই ইনকিলাব মঞ্চের মাধ্যমে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও আওয়ামী প্রক্সি উদীচী, ছায়ানটের কালচারাল হেজেমনির বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু করেছিল, সেই লড়াই জারি রাখতে হবে। তাদের সকল আধিপত্যবাদী বয়ানকে তছনছ করে দিতে হবে। ইট, পাথরের দেয়াল ভেঙে আধিপত্যবাদকে মোকাবিলা করা যায় না, সেটা হাদি আমাদের শিখিয়েছে।’

অন্য আরেকটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘গতকাল শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ভাইয়ের মৃত্যু-পরবর্তী প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশে প্রদত্ত আমার বক্তব্যের কিছু শব্দ নিয়ে এই স্পষ্টীকরণ প্রদান করছি। বক্তব্যে ব্যবহৃত “তছনছ” শব্দটির মাধ্যমে ভাঙচুরকে বোঝানো হয়নি। বরং এর অর্থ ছিল শহীদ হাদির যে স্বপ্ন নিয়মতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে বিকল্প কাঠামো গড়ে তুলে, সর্বদা সচেতন থেকে ফ্যাসিবাদী বয়ানকে মোকাবিলা করা।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘এ প্রসঙ্গে আরও যুক্ত করা প্রয়োজন যে, উদীচীসহ উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের তল্পিবাহক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রেখে আসছে। তারা বাংলাদেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। তবে ফ্যাসিবাদের আদর্শিক ভিত্তিকে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবেই মোকাবিলা করব, ইনশা আল্লাহ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসে আগুন, পুড়েছে নথিপত্র

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২২
জানালা দিয়ে অফিসের ভেতর আগুন লাগানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
জানালা দিয়ে অফিসের ভেতর আগুন লাগানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসের স্টোররুমে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে নিচতলার স্টোররুমে সংরক্ষিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে গেছে।

আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, সকালে ধোঁয়া দেখে আগুন লাগার বিষয়টি স্থানীয় বাসিন্দাদের নজরে আসে। পরে নির্বাচন অফিসের প্রহরী ও স্থানীয় বাসিন্দারা আগুন নেভান।

সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ও সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু দাউদ জানান, আগুনে কিছু নথি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। স্টোররুমের পেছনের জানালার পাশ থেকে আগুন লাগানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

খবর পেয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক ইকবাল হোসেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকনুজ জামানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন মাতুব্বর বলেন, এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করা হয়েছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত