Ajker Patrika

বরিশাল মহিলা কলেজে বাংলা বিভাগের প্রধানের বিরুদ্ধে চার অভিযোগ, তদন্তে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ওবায়দুর রহমান তালুকদারের বিরুদ্ধে অশোভন আচরণের অভিযোগ করেছেন ছাত্রীরা। বুধবার বাংলা বিভাগের কয়েকজন ছাত্রী অধ্যক্ষের কাছে লিখিতভাবে চারটি গুরুতর অভিযোগ জমা দেন।

ছাত্রীদের অভিযোগ অনুযায়ী, শিক্ষক ওবায়দুর রহমান তালুকদার—

১. পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন,

২. ধর্মীয় লেবাস নিয়ে বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করেন,

৩. বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষার্থীদের হয়রানি করেন এবং

৪. শ্রেণিকক্ষে অপ্রাসঙ্গিক ও বিব্রতকর আলোচনা করেন।

অভিযোগপত্রে ছাত্রীরা জানিয়েছেন, এসব ঘটনায় তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এবং শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। এ জন্য তারা অধ্যক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক ওবায়দুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘৩১ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এমন অভিযোগ পাইনি। এসব বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি ছাত্রীদের সন্তানের মতো দেখি।’

তিনি আরও দাবি করেন, বাংলা বিভাগের তিনজন অতিথি শিক্ষক—তানজিলা বেগম সকাল, মারিয়া বিনতে মাসুদ এবং মাহাসেতা বসু—নিয়মিত ক্লাস না নেওয়ায় তিনি তাঁদের দায়িত্ব পালনের কথা বলেন। এ কারণেই তাঁরা ছাত্রীদের দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ করছেন বলে দাবি করেন তিনি।

তবে অতিথি শিক্ষক তানজিলা বেগম সকাল পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি এ কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী ও সদ্য বিদায়ী অতিথি শিক্ষক। ওবায়দুর রহমান একজন শিক্ষক জাতির কলঙ্ক। আমাদের সঙ্গে তিনি অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় কথা বলেছেন। আমরা সম্মান রক্ষার্থে চাকরি ছেড়েছি। অধ্যক্ষকেও বিষয়টি জানিয়েছি।’

এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করে কোনো মন্তব্য করা ঠিক নয়। কারণ সামনে ভর্তি কার্যক্রম ও চলমান পরীক্ষা রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা অভিযোগের বিষয়ে কিছু জানেন না।’

তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার শৃঙ্খলা কমিটি ও উপদেষ্টা কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সুদে ১৭ লাখ নিয়ে ১৮ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি, তবুও বাড়ি দখল’

ঋণ শোধ না করে মরলে উল্টো ১০ হাজার দেব—পরদিন গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

ফজর নামাজ পড়ে বাসার ছাদে যান আওয়ামী লীগ নেতা, সিঁড়ির পাশে রক্তাক্ত লাশ

রাতে পুলিশের অভিযানের পর সকালে মিলল আসামির লাশ

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা কমিটি গঠনের কার্যক্রম বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনম রিসার্চ সেন্টার: সাপের বিষের ওষুধ দেশেই তৈরির চেষ্টা

  • বিষধর রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম তৈরি
  • ইঁদুরের শরীরে পরীক্ষায় সাফল্য মিলেছে: গবেষক
  • দেশের একমাত্র গবেষণা কেন্দ্রের যাত্রা ২০১৮ সালে
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের পরিত্যক্ত দ্বিতল একটি ভবনের নিচতলায় রয়েছে ভেনম রিসার্চ সেন্টার। বিষধর রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম তৈরির পর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে সেখানে।	ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের পরিত্যক্ত দ্বিতল একটি ভবনের নিচতলায় রয়েছে ভেনম রিসার্চ সেন্টার। বিষধর রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম তৈরির পর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে সেখানে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাপের বিষের প্রতিষেধক (অ্যান্টিভেনম) তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রামে অবস্থিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভেনম রিসার্চ সেন্টারে। এ সেন্টারে ইতিমধ্যে বিষধর রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম তৈরির পর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়েছে। এতে সাফল্যও পাওয়া গেছে বলে গবেষকেরা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ক্যাম্পাসে পরিত্যক্ত দ্বিতল একটি ভবনের নিচতলায় ‘ভেনম রিসার্চ সেন্টার’ পরিচালিত হচ্ছে। প্রায় আট বছর আগে চারটি সাপ দিয়ে শুরু হয় গবেষণা। পরে সেন্টারটিতে সাপের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেছে। সাপের সংখ্যা বেড়ে ৪০০টিতে দাঁড়িয়েছে। এগুলো ১০ প্রজাতির। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিষধর সাপ সংগ্রহ করা হয়। ভেনম রিসার্চ সেন্টারে পোষা সাপের বিষ দিয়েই সাপে কাটা রোগীর জন্য তৈরি হচ্ছে প্রতিষেধক। এই রিসার্চ সেন্টারের প্রধান গবেষক হিসেবে আছেন চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ। চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আবু সাঈদ রয়েছেন ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে। ৬ জনের এ গবেষণা দলে সহযোগী গবেষক হিসেবে রয়েছেন মিজানুর রহমান, মো. নোমান, রফিকুল ইসলাম ও আবদুল আউয়াল।

ভেনম রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে চমেক ক্যাম্পাসে ভেনম রিসার্চ সেন্টারের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অপারেশনাল প্ল্যান কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত। এ গবেষণা কেন্দ্রে ইতিমধ্যে সাপের বিষ থেকে সংগৃহীত অ্যান্টিবডি ইঁদুরের শরীরে ক্লিনিক্যালি ট্রায়াল করা হয়েছে। এতে সাফল্য এসেছে। বর্তমানে এ কেন্দ্রে বিষধর সাপের মধ্যে রয়েছে পদ্মগোখরা, খৈয়া গোখরা, কালকেউটে, শঙ্খিনী, দুই প্রজাতির সবুজ বোড়া।

দেশে প্রতিবছর বর্ষায় চন্দ্রবোড়া, গোখরা, কালকেউটে, কিং কোবরা ও সবুজ বোড়ার মতো সাপের কামড়ের ঘটনা বাড়ে। আক্রান্তদের অনেকে চিকিৎসকের বদলে কবিরাজ বা ওঝার কাছে যান। ফলে অনেককে আর বাঁচানো যায় না। এভাবে দেশে প্রতিবছর ৬ হাজারের বেশি সাপে কাটা রোগী মারা যায়।

চমেক হাসপাতালের তথ্য বলছে, এ হাসপাতালে ২০২৪ সালে সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয় ১ হাজার ২৮৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছে তিনজন। অ্যান্টিভেনম পেয়েছিল মাত্র ৫২ জন। ২০২৩ সালে ভর্তি ছিল ১ হাজার ৩৬৮ জন। এর মধ্যে মারা যায় দুজন।

ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রধান গবেষক অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, ‘রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টি ভেনম তৈরি করে ইতিমধ্যে আমরা ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করিয়েছি। পরীক্ষামূলক কাজ শেষ করে সফলও হয়েছি।’ এ নিয়ে তৈরি করা গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ হলে দেশে অ্যান্টিভেনম তৈরির একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলেও প্রত্যাশা করেন এ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

এই সেন্টারের প্রধান সমন্বয়ক সহকারী অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, সাপের কামড় একটি গ্রামীণ সমস্যা। অতীতে এর চিকিৎসা শহরকেন্দ্রিক থাকলেও এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও মিলছে চিকিৎসা। দেশে বর্তমানে ভারতের তৈরি পলিভ্যালেন্ট অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা হয় বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সুদে ১৭ লাখ নিয়ে ১৮ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি, তবুও বাড়ি দখল’

ঋণ শোধ না করে মরলে উল্টো ১০ হাজার দেব—পরদিন গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

ফজর নামাজ পড়ে বাসার ছাদে যান আওয়ামী লীগ নেতা, সিঁড়ির পাশে রক্তাক্ত লাশ

রাতে পুলিশের অভিযানের পর সকালে মিলল আসামির লাশ

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা কমিটি গঠনের কার্যক্রম বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘জাল রিপোর্টে’ কারাবাস

  • হত্যাচেষ্টার মামলায় ২৬ দিন কারাভোগ ব্যবসায়ীর
  • বাদীপক্ষ জাল সিটি স্ক্যান রিপোর্টের মাধ্যমে ‘গুরুতর আঘাতের’ সনদ জমা দেওয়ার অভিযোগ
  • চিকিৎসা সনদ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি
সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ
নজরুল ইসলাম।
নজরুল ইসলাম।

কিশোরগঞ্জে মাথায় কোপ দিয়ে হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় আদালতের আদেশে ২৬ দিন কারাভোগ করেছেন নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী। তাঁর অভিযোগ, বাদীপক্ষ সিটি স্ক্যানের জাল রিপোর্টের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সনদ নিয়ে আদালতে দাখিল করেন। যেখানে গুরুতর আঘাত উল্লেখ করা হয়েছে। ওই মিথ্যা সনদের কারণে তাঁকে ২৬ দিন কারাভোগ করতে হয়েছে।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যসচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন নজরুল ইসলাম। একই দিনে তিনি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

এর আগের দিন গত বুধবার চিকিৎসা সনদ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী নজরুল। তাঁর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

অভিযোগকারী নজরুল ইসলাম কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের উত্তর কান্দাইল কুকিমাদল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গত ২৮ মে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করলে শুনানি শেষে বিচারক আরিফুল ইসলাম তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। ২৬ দিন কারাভোগের পর গত ২৩ জুন তিনি জামিন পান।

আসামি ও বাদীপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি সকালে করিমগঞ্জের কুকিমাদল গ্রামের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম তাঁর এক সন্তানকে অপহরণের অভিযোগ তোলেন। ওই দিন দুপুরে তাঁর সন্তান উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েক দিন আদালতে মামলা করার জন্য আইনি পরামর্শ নিতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজন গত ১ মার্চ নজরুলকে মারধর, তাঁর বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট চালান।

পরদিন গত ২ মার্চ নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ আদালতে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগে মামলার আরজি করেন। ৩ মার্চ আদালতে অপহরণের অভিযোগে মামলার আরজি করেন নজরুলের স্ত্রী মোছা. রোকেয়া। একই দিন নজরুল ইসলামকে মারধরের অভিযোগেও আদালতে আরেকটি মামলা করেন রোকেয়া।

মামলার পর গত ৬ মার্চ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে করিমগঞ্জ থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন প্রতিপক্ষ জয়কা ইউনিয়নের এমদাদুল হকের স্ত্রী মোছা. হোসনা। এতে নজরুলসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ৩ মার্চ সন্ধ্যায় এমদাদুল হককে রামদা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ দিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। তাঁকে চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার চাহিদাপত্রের (রিকুইজিশন) পরিপ্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও চিকিৎসা কর্মকর্তা দিলরুবা সুলতানা শোভা রোগীকে গত ২৪ এপ্রিল মেডিকেল সনদ দেন। জখম নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি এই সনদ দেন। যেখানে সাধারণ জখমের কথা উল্লেখ করা হয়। এরপর দিন ২৫ এপ্রিল রোগীর স্বজনেরা মেডিস্ক্যান স্পেশালাইজড ইমেজিং সেন্টার থেকে সিটি স্ক্যানের আরেকটি রিপোর্ট জমা দিলে মেডিকেল বোর্ড থেকে আঘাতের ধরন ‘গুরুতর’ উল্লেখ করে সংশোধিত সনদ দেওয়া হয়; যা পরবর্তীকালে আসামিপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করে।

নজরুল ইসলাম বলেন, জাল রিপোর্টের ভিত্তিতে জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডে গুরুতর ‘আঘাত’ উল্লেখ করে পুনরায় মেডিকেল সনদ ইস্যু করা হয়। এ ছাড়া ওই সিটি স্ক্যান রিপোর্টে রোগী পুরুষ হওয়া সত্ত্বেও ‘স্ত্রী লিঙ্গ’ লেখা ছিল।

নজরুলের স্ত্রী রোকেয়া আক্তার বলেন, ‘সন্তানকে অপহরণ ও স্বামীর ওপর হামলার বিচার পাইনি, উল্টো জাল সিটি স্ক্যান রিপোর্টের ভিত্তিতে স্বামীকে জেলে যেতে হয়েছে। পুলিশও যাচাই না করে অভিযোগপত্র দিয়েছে।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতে অপহরণের মামলার আইনি পরামর্শ নেওয়ার সময় আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা করে প্রতিপক্ষ। পরে মিথ্যা মামলায় আমাকে জেলে পাঠানো হয়। এখনো পরিবার নিয়ে ভয়ে থাকতে হচ্ছে। আমাদের সন্তান ভয়ে স্কুলেও যেতে পারছে না।’

অভিযোগের বিষয়ে এমদাদুল হকের সঙ্গে কথা বলতে মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার ছোট ভাই বলতে পারবে।’

এরপর এমদাদুল হকের ছোট ভাই মোকাররমকে কল দিলে তিনি বলেন, ‘তাঁরা (আসামিপক্ষ) বলতেই পারেন, সার্টিফিকেট জাল। চিকিৎসক সার্টিফিকেট দিয়েছেন, তা জাল না সঠিক—চিকিৎসক বলতে পারবেন। আর বিষয়টি দেখার দায়িত্ব জজ সাহেবের।’

করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব মোরশেদ বলেন, ‘মেডিকেল সনদের ভিত্তিতে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

আর অপহরণ মামলায় যথাযথ তদন্তের পর আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।’

অভিযোগের বিষয়ে মেডিস্ক্যান স্পেশালাইজড ইমেজিং সেন্টারের পরিচালক এ এস এম নুরুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের কাছে রিপোর্টগুলো পাঁচ বছর পর্যন্ত সংরক্ষিত থাকে। তাঁরা রিপোর্ট নিয়ে কী করেছেন, তা আমাদের জানা নেই। যথাযথ কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলে সত্য বেরিয়ে আসবে।’

কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও মেডিকেল বোর্ডের সদস্যসচিব দেবাশীষ ভৌমিক বলেন, ‘সিটি স্ক্যান রিপোর্টটি জাল বলে আগেই সন্দেহ হয়েছিল। যাঁদের দিয়ে যাচাই করিয়েছি, তাঁরা মিথ্যা বলেছেন। প্রয়োজনে আমি আদালতে গিয়ে বলব।’

কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আমি দেখব।’

সিভিল সার্জন অভিজিৎ শর্মা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বরাবর চিঠি দিয়েছি তিন সদস্যের কমিটি করে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। প্রতিবেদন যদি ঠিক না থাকে, তাহলে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে তদন্ত করব।’

কিশোরগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. জালাল উদ্দিন বলেন, ‘কোনো চিকিৎসক যদি ভুয়া মেডিকেল রিপোর্ট ইস্যু করেন এবং বিষয়টি আদালতকে জানালে তাঁর রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সুদে ১৭ লাখ নিয়ে ১৮ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি, তবুও বাড়ি দখল’

ঋণ শোধ না করে মরলে উল্টো ১০ হাজার দেব—পরদিন গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

ফজর নামাজ পড়ে বাসার ছাদে যান আওয়ামী লীগ নেতা, সিঁড়ির পাশে রক্তাক্ত লাশ

রাতে পুলিশের অভিযানের পর সকালে মিলল আসামির লাশ

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা কমিটি গঠনের কার্যক্রম বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাটোরের লালপুর: ট্রান্সফরমার চুরি, গচ্চা কৃষকের

  • ৬ মাসে উপজেলায় অন্তত ৩০টি, গত ১০ দিনে ৯টি ট্রান্সফরমার চুরি
  • চোর চক্রের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ বা প্রশাসনের যোগসাজশ থাকতে পারে: দাবি ভুক্তভোগীদের
ইমাম হাসান মুক্তি, লালপুর (নাটোর)
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের লালপুর উপজেলায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ফলে সেচ প্রকল্পে ব্যবহৃত ট্রান্সফরমার নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত ছয় মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩০টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে, যার বাজারমূল্য ২১ লাখ টাকার বেশি।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও লালপুর থানা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি চোর চক্রের দৌরাত্ম্যে গত ১০ দিনেই উপজেলায় ৯টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে সেচব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।

স্থানীয় কৃষকেরা জানিয়েছেন, ধারাবাহিকভাবে এসব চুরির ঘটনায় তাঁরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে কয়েক গুণ বেশি খরচ করে বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করছেন। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আগামী মৌসুমে সেচ কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

উপজেলার কেশববাড়িয়া গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান (৫৫) বলেন, ‘চারপাশে ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছে শুনে পাহারা বসিয়েছিলাম। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। গত ২৫ অক্টোবর রাতে আমার নলকূপের তিনটি ট্রান্সফরমারের সব যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গেছে চোরেরা।’

এর আগে ২৪ অক্টোবর দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের গোলাম আযম, ১০ অক্টোবর ঢুষপাড়া গ্রাম থেকে লালপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু বকর সিদ্দিক পলাশ, ৭ সেপ্টেম্বর রামানন্দপুর (গোবরপুর) গ্রাম থেকে লালপুর কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক মো. শফিউল্লাহ ও ছোট বিলশলিয়া গ্রামের বাকিব উদ্দিনের গভীর নলকূপ থেকে ট্রান্সফরমার চুরি হয়। এ ছাড়া গত জুলাই ও আগস্ট মাসে আরও ৯টি ট্রান্সফরমার চুরি হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে আড়বাব ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের নাজমুল হক বলেন, ‘আমার দুই দফায় মোট ৫টি ট্রান্সফরমার চুরি গেছে। প্রতিটি নতুন করে কিনতে বিএমডিএ অফিসে ৭০ হাজার টাকা ও নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ অফিসে পরীক্ষার জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে। নতুন ট্রান্সফরমার কিনে কেন আবার পরীক্ষার নামে হয়রানি করা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।’

রামানন্দপুর গ্রামের প্রাক্তন শিক্ষক মো. শফিউল্লাহ বলেন, ‘চুরি ঠেকাতে ট্রান্সফরমারের গায়ে দোয়া লিখেছিলাম, যাতে চোরেরা আল্লাহর ভয়ে চুরি না করে। এ ছাড়া খুঁটির ফাঁকা জায়গা বন্ধ করে কাঁটাতারের বেষ্টনীও দিয়েছিলাম। তাতেও কোনো লাভ হয়নি। ৭ সেপ্টেম্বর রাতে আমার নলকূপের দুটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় ২ লাখ টাকা।’

গ্রাহকেরা অভিযোগ করে বলেন, পল্লী বিদ্যুতের নিজস্ব ট্রান্সফরমার সাধারণত চুরি হয় না। বেছে বেছে ব্যক্তিমালিকানাধীন ট্রান্সফরমারই চুরি হচ্ছে। এক্সপার্ট ছাড়া এ ধরনের চুরি সম্ভব নয়। চোর চক্রের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ বা প্রশাসনের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে তাঁদের সন্দেহ।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে নাটোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, লালপুর জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘একটি সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে এসব চুরি করছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। গ্রাহকদের সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি।’

বিএমডিএ বড়াইগ্রাম জোনের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবুল বাশার বলেন, ‘আমরা সব সময় কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করি। বুয়েট থেকে টেস্ট করে ট্রান্সফরমার ক্রয় করা হয়। তবে পল্লী বিদ্যুতের নিয়ম অনুযায়ী আবারও পরীক্ষা করাতে হয়। নিয়ম অনুসারে ট্রান্সফরমার গ্রাহকদের নিজ দায়িত্বে সংরক্ষণ করতে হয়। চুরির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা সেচ কমিটির সদস্যসচিব ও বিএডিসি বড়াইগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘সেচ প্রকল্পে ব্যবহৃত ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। লালপুর উপজেলায় বিএডিসির আওতায় ৪টি গভীর নলকূপ রয়েছে, এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো ট্রান্সফরমার চুরি হয়নি। তবে বড়াইগ্রামে

অনেক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। কৃষকদের সতর্ক থাকতে আমরা নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি।’

লালপুর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় থানায় কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। চুরি যাওয়া মালপত্র উদ্ধার ও চোর চক্রকে গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সুদে ১৭ লাখ নিয়ে ১৮ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি, তবুও বাড়ি দখল’

ঋণ শোধ না করে মরলে উল্টো ১০ হাজার দেব—পরদিন গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

ফজর নামাজ পড়ে বাসার ছাদে যান আওয়ামী লীগ নেতা, সিঁড়ির পাশে রক্তাক্ত লাশ

রাতে পুলিশের অভিযানের পর সকালে মিলল আসামির লাশ

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা কমিটি গঠনের কার্যক্রম বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর: পদ্মার দুর্গম চরে সক্রিয় ডজনখানেক বাহিনী

  • চরে সক্রিয় কাকন, মণ্ডল, টুকু, সাইদ, লালচাঁদ, রাখি, কাইগি, রাজ্জাক ও বাহান্ন বাহিনী
  • জমি দখল, ফসল কেটে নেওয়া, চাঁদাবাজি, বালু উত্তোলন, মাদক ও অস্ত্র পাচারে জড়িত এসব বাহিনী
  • অনেকে বংশপরম্পরায় ধরেছেন বাহিনীর হাল। পুলিশের অভিযান শুরু। প্রথম দিনে গ্রেপ্তার নেই
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান। গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের পদ্মার চরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনায় পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান। গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের পদ্মার চরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর দুর্গম চরাঞ্চল এবং ভারত সীমান্তঘেঁষা অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি পদ্মার চরে জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষ এবং ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলিতে তিনজন নিহতের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, শুধু কাকন কিংবা মণ্ডল বাহিনী নয়; টুকু, সাইদ, লালচাঁদ, রাখি, কাইগি, রাজ্জাক ও বাহান্ন বাহিনীও সক্রিয় এই চরাঞ্চলে।

রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসব বাহিনী জমি দখল, ফসল কেটে নেওয়া, চাঁদাবাজি, বালু উত্তোলন, মাদক, অস্ত্র পাচারসহ নানা অপরাধে জড়িত। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব বাহিনী পদ্মার এমন দুর্গম চরে ‘সাম্রাজ্য’ গড়ে তুলেছে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রবেশ সীমিত। রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলার দুর্গম চরাঞ্চলজুড়ে তাদের বিস্তার।

সম্প্রতি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদীর দুর্গম চরে কাকন বাহিনী ও মণ্ডল গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের তিনজন নিহত হন। এরপর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। এ ঘটনায় করা মামলায় ‘কাকন বাহিনীর’ প্রধান কাকনকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এরপর গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা পুলিশের একাধিক ইউনিট শতাধিক সদস্য নিয়ে পদ্মার চরে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে প্রথম দিনের অভিযানে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযান অব্যাহত থাকবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুরের পদ্মা চরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে ডজনখানেক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তবে ২০ বছর আগে দুটি সন্ত্রাসী বাহিনীর উত্থান ঘটেছিল বিস্তৃত পদ্মার দুর্গম এই চরাঞ্চলে। তাদের ভাগ না দিয়ে কেউ চরের ফসল ঘরে তুলতে পারত না। এ নিয়ে দ্বন্দ্বে তাদের হাতে ওই সময় ৪১ জন খুন হয় বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তখন চরের মাটিতে পা দিতে গা ছমছম করত। দুই বাহিনীর নাম ছিল ‘পান্না বাহিনী’ ও ‘লালচাঁদ বাহিনী’। পান্নার ওস্তাদ ছিলেন এই কাকন। সূত্র জানায়, এ বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ‘কাকন বাহিনী’র বিরুদ্ধে ঈশ্বরদী, বাঘা, লালপুর ও দৌলতপুর থানায় মোট ছয়টি মামলা হয়েছে। বাহিনীর প্রধান কাকন পাবনার ঈশ্বরদী কলেজ রোডের বাসিন্দা হলেও তাঁর পৈতৃক নিবাস কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের মাজদিয়াড় গ্রামে।

১৯৯৪ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি চাকরি করলেও ২০০৫ সালে পান্না নিহত হওয়ার পর ২০০৭ সালে সৌদি আরব থেকে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় বালুমহাল দখল ও নিয়ন্ত্রণ শুরু করেন। এর পর থেকে তিনি নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করেন। বর্তমানে তাঁর বাহিনীতে প্রায় ৪০ জন সদস্য রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নইম উদ্দিন সেন্টুকে নিজ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আলোচনায় আসে টুকু বাহিনী। বাহিনীর প্রধান তরিকুল ইসলাম ওরফে টুকু ফিলিপনগর গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর দলের সদস্য ২০ জনের বেশি। হত্যাকাণ্ডের পর টুকুসহ বেশ কয়েকজন সহযোগীর নামে মামলা হয়, যদিও আটকের পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।

চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর মণ্ডলপাড়া এলাকায় রাজু আহমেদ (১৮) নামের এক যুবককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে সাইদ বাহিনী। বাহিনীর প্রধান আবু সাঈদ মণ্ডল (৩৫) মরিচা ইউনিয়নের বৈরাগীরচর দক্ষিণ ভাঙ্গাপাড়া এলাকার ভাদু মণ্ডলের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে দৌলতপুর থানায় ৯টির বেশি মামলা রয়েছে।

২০০৯ সালে লালচাঁদ বাহিনীর প্রধান লালচাঁদ নিহত হওয়ার পর তাঁর ভাই সুখচাঁদ দায়িত্ব নেন। তাঁরা ফিলিপনগর এলাকার বাসিন্দা।

বাহিনীতে লালচাঁদের ছেলে রুবেলসহ একাধিক সদস্য সক্রিয় রয়েছেন। এ বাহিনীর বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে।

দৌলতপুর থানায় আলোচনায় থাকা আরেক বাহিনী ‘রাখি বাহিনী’র প্রধান রাকিবুল ইসলাম রাখি। তাঁর বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। তাঁর বাড়ি ফিলিপনগর ইউনিয়নের দারোগার মোড়ে। এ ছাড়া রয়েছে কাইগি বাহিনী, রাজ্জাক বাহিনী ও বাহান্ন বাহিনী।

একাধিক গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের পর দৌলতপুর সীমান্ত দিয়ে বিপুল অস্ত্র দেশে ঢোকার তথ্য রয়েছে। জানা গেছে, তিন চালানে মোট প্রায় ২ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র এসেছে দেশে।

দুর্গম চরে অভিযান

গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ ১২০ জন সদস্য নিয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে পুলিশ এই অভিযানে চরবাসী খুবই খুশি। এতে জনমনে স্বস্তি ফিরবে বলে তাঁরা আশা করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

গতকাল শুক্রবার সকালে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফয়সাল মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই অভিযান রাতেও চলবে। অভিযান শেষ হবে না। এটা যে শুধু আসামি ধরা, তা নয়। মানুষকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, সন্ত্রাসীদের আশ্রয় এই চরগুলোতে আর হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘সুদে ১৭ লাখ নিয়ে ১৮ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি, তবুও বাড়ি দখল’

ঋণ শোধ না করে মরলে উল্টো ১০ হাজার দেব—পরদিন গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ

ফজর নামাজ পড়ে বাসার ছাদে যান আওয়ামী লীগ নেতা, সিঁড়ির পাশে রক্তাক্ত লাশ

রাতে পুলিশের অভিযানের পর সকালে মিলল আসামির লাশ

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা কমিটি গঠনের কার্যক্রম বন্ধ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত