Ajker Patrika

বরিশালে এসএসসি পরীক্ষা: গ্রামে ফল বিপর্যয়ের নেপথ্যে পাঁচ কারণ

  • এবার বোর্ডে ৮৪ হাজার ৭০২ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
  • এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ১১৪ জন।
  • গ্রামে ৪০ শতাংশের বেশি পাস করতে পারেনি।
  • গণিত ও ইংরেজিতে বেশি ফেল করেছে।
খান রফিক, বরিশাল 
শিক্ষাবোর্ড বরিশাল। ছবি: সংগৃহীত
শিক্ষাবোর্ড বরিশাল। ছবি: সংগৃহীত

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নাজমুল আলম সিদ্দিকী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এখানে আছে পাঁচতলা ভবন, বড় খেলার মাঠ ও আটজন শিক্ষক। ৪২ বছরের পুরোনো এই প্রতিষ্ঠান থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া ৯ পরীক্ষার্থীর সবাই ফেল করেছে।

গত বৃহস্পতিবার বরিশাল শিক্ষা বোর্ড ঘোষিত এসএসসির ফলে বরিশালের গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে বিপর্যয়ের চিত্র দেখা গেছে। সেখানে পাসের হার ৪০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে বলে হেড টিচার্স ফোরাম অব বরিশাল সূত্রে জানা গেছে। বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, গ্রামের স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা গণিত ও ইংরেজিতে বেশি ফেল করেছে।

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এবার বোর্ডে ৮৪ হাজার ৭০২ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত বছর তা ছিল ৮৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ১১৪ জন। অন্যদিকে ২০২৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ১৪৫ জন।

হেড টিচার্স ফোরাম অব বরিশালের শিক্ষকনেতারা বরিশাল নগরী অপেক্ষা গ্রামের স্কুলগুলোতে এসএসসির ফলাফলে বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে পাঁচটি বিষয়কে দায়ী করেছেন। এগুলো হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ওপর মোবাইল ফোন ও ফেসবুকের নেতিবাচক প্রভাব, তাদের প্রতি তদারকি না থাকা, নিয়মিত ক্লাসে না আসা, অভিভাবকদের অসচেতনতা এবং প্রাথমিক থেকে তাদের দক্ষ হিসেবে গড়ে না তোলা।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম সম্মিলনী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর আহমেদ বলেন, তাঁর স্কুলে ১১ জনের মধ্যে পাস করেছে চারজন। কীর্তনখোলা নদীর ওপারের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই ফলাফল খারাপ হয়েছে। কারণ শহর অপেক্ষা গ্রামের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে কম আসে। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে অভিভাবকদের সচেতন হতে এবং শিক্ষকদের তদারকি বাড়াতে হবে।

সংগঠনের সভাপতি ও সদর উপজেলার টুমচরের আবদুল মজিদ খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা জানান, তাঁর বিদ্যালয়ের ২৭ জনের মধ্যে পাস করেছে ১২ জন। এই অবস্থা গ্রামের অধিকাংশ স্কুলের। এখানে ছাত্রছাত্রীরা মোবাইল ফোনে আসক্ত। তারা স্কুলে গেলেও পড়াশোনা করে না। এখানে মেয়েরা তুলনামূলক মেধাবী আর ছেলেরা সাধারণত স্কুলমুখী হয় না।

আবদুল মজিদের মতে, গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ৬০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী বাংলা, ইংরেজি পড়তে পারে না। ফলে এসএসসিতে গিয়ে হোঁচট খায়। এখানে তদারকির ঘাটতি থাকায় পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ছে ছাত্রছাত্রীরা। যে কারণে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় গ্রামের স্কুলগুলোতে ৪০ শতাংশের বেশি পাস করতে পারেনি।

অন্যদিকে বরিশাল নগরের এআরএস মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, তাঁর বিদ্যালয়ের ৩০০ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাসের হার মিলেছে ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ। তিনি বলেন, নগরের স্কুলগুলো অপেক্ষাকৃত ভালো করেছে। তবে গণিত প্রশ্ন কঠিন হওয়ায় গ্রামের ফলাফল ভালো হয়নি। গ্রামে তদারকি খুব কম হয়। এ ক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষকদের নজর দেওয়া দরকার।

শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল নগরী ও সদর উপজেলায় ১০২টি বিদ্যালয় রয়েছে। এর

মধ্যে নগরীতে আছে ৩৪টি। এখন বাকি ৬৮টি গ্রামের স্কুলের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ ব্যাপারে কথা হলে বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, ‘গ্রামের স্কুলগুলোতে ইংরেজি এবং গণিতে বেশি ফেল করেছে। পরীক্ষাও হয়েছে কড়াকড়ি। তাই পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। প্রকৃত মেধাবীরাই পাস করেছে। যারা পড়াশোনা করবে, তারাই পাস করবে।’

এদিকে সব পরীক্ষার্থী ফেল করা জেলার একমাত্র প্রতিষ্ঠান নাজমুল আলম সিদ্দিকী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গাজী মশিউর রহমান মুসার সঙ্গে কথা বলার জন্য ফল প্রকাশের পর থেকে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যালয়টির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমানা আফরোজ বলেন, এ জন্য কে দায়ী বা কার দায়িত্বে অবহেলা ছিল, তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আজ বুঝলাম, সময়ের কাছে মানুষ কত অসহায়’—মৃত্যুর আগে স্ট্যাটাস স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার

পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় চারজন গ্রেপ্তার

রামদা হাতে ভাইরাল সেই সাবেক যুবদল নেতাকে গুলি ও পায়ের রগ কেটে হত্যা

হাসিনাকে হটানো র‍্যাপ-মিম বদলে দিচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি

এনআইডি প্রকল্পে দুর্নীতি: কে এই রহস্যময় ‘মিস্টার জি’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত