Ajker Patrika

‘মোগো ইলিশ মোরা টাহাইদ্দাও কিন্না খাইতে পারি না’

বরগুনা প্রতিনিধি
‘মোগো ইলিশ মোরা টাহাইদ্দাও কিন্না খাইতে পারি না’

‘মণকে মণ ইলিশ মাছ মোগো ঘাড়ে ওডে, সব প্যাকেট কইর‍্যা পাইকাররা ঢাকা চিটাগাং পাডাইয়া দ্যায়। মোগো ইলিশ মোরা টাহাইদ্দাও কিন্না খাইতে পারি না।’

ইলিশ কিনতে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এসে খালি হাতে ফেরার সময় কথাগুলো বলছিলেন পাথরঘাটা কালমেঘা ইউনিয়নের বাসিন্দা দুলাল।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটা। বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের নদ–নদীতে ধরা পড়া ইলিশের বেশির ভাগই বিক্রি হয় পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে।

বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকার শেষে ঘাটে ভিড়েছে কয়েকটি ট্রলারএই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ২৪ জুলাই থেকে গত ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ২০২ টন ইলিশ অবতরণ হয়েছে। যা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ স্থানীয় বেশ কিছু বাজার ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিপুল পরিমাণ ইলিশ অবতরণ হলেও পাইকার আরতদারদের হাত ঘুরে চলে যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। খুচরা পাইকারদের হাত ঘুরে বাজারে যেসব ইলিশ আসে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ফলে বেশ চড়া দামে এসব ইলিশ কিনতে হয় স্থানীয়দের। এ কারণেই দুলালের মতো ক্রেতাদের খালি হাতে ফিরতে হয় বাজার থেকে।

একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘পাথরঘাটায় পোস্টিং হওয়ার পর ভাবছিলাম এইখানে কমদামে তাজা ইলিশ কিনে খেতে পারব। কিন্তু বাজারে পছন্দের ইলিশ তো ওঠেই না, যাও আসে, দাম ঢাকার সমান। কয়েকবার বিএফডিসি ঘাটে গিয়েছি। ট্রলার থেকে মাছ বিক্রি হয় না। পাশেই আরত, সেখানে গেলে চড়া দাম। ঘাট থেকে আরতে উঠলে কেজিপ্রতি দুশ আড়াইশ টাকা বেড়ে যায়। বাজার থেকেও দাম দেখে ফিরে এসেছি।’

পাথরঘাটার কালমেঘা বাজার সংলগ্ন বিষখালী নদীতে ইলিশ শিকারি জেলে আবু হানিফ বলেন, ‘বিষখালী নদীর তীরজুড়ে সবখানেই ছোট ছোট আড়ত আছে। এই আড়তদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জাল ও নৌকা তৈরি করেছেন জেলেরা। বিনিময়ে সারা বছরই আড়তদারদের মাছ দিতে হয়। আড়তদাররা শেডে ভরে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে নিয়ে সেখানে পাইকারদের কাছে ইলিশ বিক্রি করে। পাইকারদের কাছ থেকে দাদন নেওয়ায় স্থানীয় বাজারে কোনো জেলে ইলিশ বিক্রি করতে পারে না।’

পাথরঘাটা বিএফডিসি পাইকার সমিতির সভাপতি মাসুম আকন বলেন, ‘আমরাও বড় বড় পার্টির কাছ থেকে টাকা নিয়ে জেলেদের দাদন দিই। সাগর থেকে জেলেরা মাছ নিয়ে ফিরলে দাদন নেওয়া ট্রলার থেকে আমাদের কাছে মাছ বিক্রি করে। আমরা আবার ওই পার্টির কাছে মাছ বিক্রি করি। এভাবে নদী তীরের ছোট আড়তের মাছও এখানে চলে আসে এবং চালান হয়। এটা আসলে কারও নিয়ন্ত্রণে না। স্থানীয় বাজারে খুচরা পাইকাররা কিছু ইলিশ বিক্রির জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু বড় বড় চালান সব খুলনা যশোর ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলে চলে যায়। এ কারণে চাহিদার ঘাটতি থাকে স্থানীয় বাজারে। এতে ইলিশের দামে একটু প্রভাব পড়ে।’

ইলিশের এই চড়া দামের কারণ জানতে চাইলে বিএফডসি পাথরঘাটার সহ–বিপণন কর্মকর্তা মো. রিপন হোসেন বলেন, ‘ট্রলার মালিক, জেলে, পাইকার ও আড়তদারদের সঙ্গে দাদনের সম্পর্ক দীর্ঘ বছরের। দাদন নেওয়ার কারণে ঘাটে আসার পরই শেডে ইলিশের নিলাম তোলা হয়। নিলামের সর্বোচ্চ দামে দাদন দেওয়া নির্দিষ্ট আড়তদার ইলিশ কিনে নেন। যে কারণে অবতরণ কেন্দ্রে এসে স্থানীয় ক্রেতাদের ফিরে যেতে হয়।’ তবে সরকারি নির্দেশনা পেলে ন্যায্যমূল্যে স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে ইলিশ বিক্রির ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাদারীপুরে নতুন বাস টার্মিনালে ককটেল বিস্ফোরণ

মাদারীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০০: ৩৪
ককটেল বিস্ফোরণ। ছবি: সংগৃহীত
ককটেল বিস্ফোরণ। ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুরের পৌর বাস টার্মিনালে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

বুধবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মাদারীপুর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকার পৌর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে বাস টার্মিনালে দুর্বৃত্তরা পর পর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। তবে এই ঘটনায় কোনো হতাহত বা ক্ষতি হয়নি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তা ছাড়া, এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফেনীতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাসে আগুন

ফেনী প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০০: ৩৮
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

ফেনীর মহিপালে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে বাসের ভেতরের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বুধবার (১২ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহিপাল পল্লী বিদ্যুৎসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মহিপাল ফ্লাইওভারের দক্ষিণাংশে পল্লী বিদ্যুৎসংলগ্ন এলাকায় মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে দাঁড়িয়ে থাকা ফেনী-চট্টগ্রাম সড়কে চলাচলরত রনি-রানা পরিবহনের একটি বাসে হঠাৎ কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

মোজাম্মেল হোসেন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন সন্ধ্যায় সড়কের পাশে গাড়িগুলো পার্ক করে চালকেরা বাড়িতে চলে যান। রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে আকস্মিক আশপাশের মানুষের চিৎকারে বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখি। পরে সবার চেষ্টায় পানি এনে আগুন নেভানো হয়। গাড়ির চালকের বসার স্থানসহ সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ 

ফেনী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুল মজিদ বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই স্থানীয়রা আগুন নিভিয়েছে। আগুনে বাসের ভেতরে সামনের অংশ পুড়ে গেছে। এটি নাশকতা হতে পারে।’

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে যায়। এটি নাশকতার অংশ কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নারায়ণগঞ্জে চলন্ত অটোরিকশায় আগুন দিল দুর্বৃত্তরা

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০০: ৩২
অটোরিকশায় আগুন দুর্বৃত্তদের। ছবি: সংগৃহীত
অটোরিকশায় আগুন দুর্বৃত্তদের। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ৯ নম্বর ওয়ার্ডে একটি চলন্ত অটোরিকশায় আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

বুধবার (১২ নভেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়িতে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অফিসের সামনে এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। 

জানা গেছে, জালকুড়ি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অফিসের সামনে অজ্ঞাতনামা দুজন মোটরসাইকেল আরোহী একটি চলন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় অগ্নিসংযোগ করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। 

এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম বলেন, ‘আগুন দেওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। সিএনজিচালকও বলতে পারেননি। আমরা তদন্ত করে আইন অনুসারে পদক্ষেপ নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘আয়নাঘর থেকে নির্বাচনী মাঠে ফেরা আমার নতুন জীবন’

নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগ‌ঞ্জ উপ‌জেলার সোহাগী ইউনিয়নে বিএনপির কর্মী সম্মেলনে দলের এমপি প্রার্থী প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগ‌ঞ্জ উপ‌জেলার সোহাগী ইউনিয়নে বিএনপির কর্মী সম্মেলনে দলের এমপি প্রার্থী প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু। ছবি: আজকের পত্রিকা

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু বলেছেন, ‘যতবার এই দেশ স্বৈরাচারের কবলে পড়েছে, যতবার এই দেশের মানুষ বিপদগ্রস্ত হয়েছে; একজন মানুষ মমতা দিয়ে এই দেশকে আগলে রেখেছেন—তিনি হলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আমরা তাঁর দল করি। ১৭ বছর প্রবাসে থেকে যিনি তৃণমূলকে সংগঠিত করে এই দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আপনারা তাঁর দল করেন, দেশনায়ক তারেক রহমানের দল করেন।’

বুধবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগ‌ঞ্জ উপ‌জেলার সোহাগী ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কর্মী সম্মেলনে এসব কথা বলেন মাজেদ বাবু।

ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চেয়ে মাজেদ বলেন, ‘আমি রাজনীতিতে এসেছি আপনাদের সঙ্গে নিয়ে মানুষকে আলো জ্বালাতে। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে। সেই আস্থার প্রতিদানস্বরূপ আমরা একটি ঝোড়ো বাতাসের মোমবাতি হতে চাই, যে মোমবাতি আস্তে আস্তে জ্বালিয়ে একটি শিক্ষিত মূল্যবোধের প্রজন্ম তৈরি করতে চাই।’

মাজেদ বাবু আরও বলেন, ‘আয়নাঘর থেকে নির্বাচনী মাঠে ফেরা আমার নতুন জীবন। মামলা, হামলা ও আয়নাঘরে নির্যাতিত হয়েও শহীদ জিয়ার আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হইনি। রাজনীতি করে আমার নেওয়ার কিছু নেই। আমার লক্ষ্য একটি শিক্ষিত সমাজ গড়ে ঈশ্বরগঞ্জকে আধুনিক ও সমৃদ্ধশালী উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলা।’

উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মনির সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত