Ajker Patrika

বরিশাল সিটির ১২ কর্মকর্তা দুদকের নজরদারিতে

  • ইতিমধ্যে বিভিন্ন দপ্তরের ১৮ কর্মকর্তার কাছে নানা তথ্য-উপাত্ত চেয়ে তলব করেছে দুদক
  • বরাদ্দের বড় অংশ প্রকৌশল শাখায় হওয়ার সুযোগে সেখানে লুটপাট চলে দেদার
খান রফিক, বরিশাল
বরিশাল সিটির ১২ কর্মকর্তা দুদকের নজরদারিতে

বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) বিভিন্ন দপ্তরে অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে এবার নড়েচড়ে বসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে পাঁচটি দপ্তরে সবচেয়ে বেশি অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে সংস্থাটি। দপ্তরগুলো হলো প্রকৌশল শাখা, সার্ভে শাখা, প্ল্যান শাখা, ট্রেড লাইসেন্স শাখা ও বাজার শাখা। এসব দপ্তরের ১৮ কর্মকর্তার নানা তথ্য-উপাত্ত চেয়ে তলব করেছে দুদক। দুদকের নোটিশ পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্তত ১২ জনকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের বরিশাল সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবুল কাইউম হাওলাদার বিষয়টি তদন্ত করছেন। দুদক সূত্রে জানা গেছে, নোটিশপ্রাপ্তদের কাছে কয়েকটি অভিযোগের তথ্য চাওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে উন্নয়নকাজের দরপত্র প্রদানে অনিয়ম, সম্পত্তি ও অর্থ বরাদ্দের তথ্য, ল্যাপটপ, ড্রোন ও ফার্নিচার ক্রয়ে অনিয়ম, ঈদ উপলক্ষে মেয়রের শুভেচ্ছা ফেস্টুন স্থাপনে ব্যয়ের হিসাবসহ নানা তথ্য। সাবেক মেয়র সাদিকের সময় চাকরিচ্যুত ব্যক্তিরা, সাবেক মেয়র আবুল খায়েরের সময় কোন পন্থায় চাকরিতে যোগদান করল—সে তথ্য চেয়েছে কমিশন।

দুদকের বরিশালের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁদের কাছে অভিযোগ রয়েছে—বিসিসিতে যত বরাদ্দ হয় তার বড় অংশ প্রকৌশল শাখায় হওয়ার সুযোগে সেখানে লুটপাট চলে দেদার। করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হুমায়ুন কবির এ শাখার দুর্নীতির মূল হোতা। তিনি সব উন্নয়নকাজে ঠিকাদারের কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিয়ে থাকেন। সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের অডিটরিয়াম নির্মাণে অনিয়মের তদন্তেও হুমায়ুন কবিরের নাম আসে। বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদের সাবেক সহসভাপতি হওয়ায় হুমায়ুন কবির সাবেক মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ এবং খোকন সেরনিয়াবাতের ঘনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। বর্তমান প্রশাসক রায়হান কাওছারেরও আস্থাভাজন তিনি।

এসব বিষয়ে জানতে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) হুমায়ুন কবিরকে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

করপোরেশনের হাট-বাজার শাখা নিয়েও নানা অভিযোগ উঠেছে। এ শাখার তত্ত্বাবধায়ক নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দোকান দখল ও ভাড়াটেদের হয়রানি করার অভিযোগ পেয়েছে দুদক। সিটি মার্কেটের দুটি দোকানের ভাড়াটিয়া ফয়সাল কবির সম্প্রতি ওই লিখিত অভিযোগ দেন। দুদকের নোটিশ পাওয়া নুরুল ইসলাম বলেন, তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় চাকরি করতে পারেননি। এখন কাজ করছেন, এ জন্য তাঁকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। দুদকের দেওয়া নোটিশের জবাব দেবেন তিনি।

এদিকে, বিসিসির সার্ভে এবং প্ল্যান শাখায়ও দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সার্ভেয়াররা প্ল্যান দেওয়ার আগে ভূমি ব্যবহারের ছাড়পত্র দিতে গিয়ে ঘুষ নেয়। আবার প্ল্যান দাখিলের সময় প্রতিবেদন দেওয়ার নামে উৎকোচ নেয় সার্ভেয়ার। এ থেকে ভাগ পান প্ল্যান শাখার কয়েকজন। প্ল্যান অনুমোদনের শর্তে মোটা অঙ্কের অর্থ নেয় প্ল্যান শাখার সহকারীরা। এর সঙ্গে করপোরেশনের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তাও জড়িত বলে জানা গেছে। দুদকের নোটিশ পাওয়া প্ল্যান শাখার প্ল্যান সহকারী কাল্টু বলেন, তিনি নোটিশ পেয়েছেন। এতে ১০ জুলাই জবাব দিতে বলা হয়েছে। তবে নোটিশে দুদক কী জানতে চেয়েছে—সে বিষয়ে জানতে চাইলে কাল্টু বলেন, এটা গোপনীয় বিষয়, তিনি বলবেন না।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সনাক) বরিশাল নগরের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, অভিযোগ যেহেতু এসেছে, সেহেতু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তবে সাধারণ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন, সেদিকেও সতর্ক থাকতে হবে দুদককে।

জানতে চাইলে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুদকের চিঠি একের পর এক আসছে। এটা নিয়মিত ঘটনা। যাঁদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা জবাব দেবেন।’

দুদকের বরিশাল সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবুল কাইউম হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘অপারেশন সিঁদুরে’ তিন শত্রুর মোকাবিলা করেছে ভারত, অন্য দেশের নাম জানালেন সেনা কর্মকর্তা

যুবলীগ নেতাকে ধরতে নয়, বাসাটি ঘেরাওয়ের নেপথ্যে অন্য কারণ

‘একটা মার্ডার করেছি, আরও ১০০টা মার্ডার করব’, ভিডিও ভাইরাল

মহাকাশে হারিয়ে গেল ৯ কোটি ডলারের স্যাটেলাইট, জলবায়ু গবেষণায় বড় ধাক্কা

জুলাই আন্দোলনের প্রথম অংশ ‘অবশ্যই মেটিকুলাসলি ডিজাইনড’: মাহফুজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত