Ajker Patrika

বরিশালে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে হত্যা: নিরাপত্তা না দিয়ে চলে যায় পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
খুন হওয়া স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা লিটন সিকদার। ছবি: সংগৃহীত
খুন হওয়া স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা লিটন সিকদার। ছবি: সংগৃহীত

বরিশালে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা লিটন সিকদারের বাড়িতে হামলার পরপরই বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। স্থানীয়রা তাঁকে বারবার লিটনকে নিরাপত্তার জন্য থানায় নিয়ে যেতে বললেও এসআই পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ফিরে যান। এরপরই ঘটে নৃশংস হত্যার ঘটনা। ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয়দের ভাষ্য এবং ভিডিও সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এদিকে লিটন হত্যার ঘটনায় ৪০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন তাঁর বোন। এ ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দরজা-জানালা ভেঙে ঘরের মধ্যে ঢুকে লিটনকে নৃশংসভাবে কোপানো হয়। তাঁর ডান হাত কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়। ঘরের আসবাবপত্র বাইরে এনে আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে এ তাণ্ডব চালানোর পর পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থল থেকে বিমানবন্দর থানার দূরত্ব ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক বিরোধের জেরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বরিশাল নগরের উপকণ্ঠ কাশীপুর ইউনিয়নের বিল্ববাড়ি গ্রামে লিটন সিকদারকে (৩৮) হত্যা করা হয়েছে। প্রায় অর্ধশত লোক তাঁর বাড়িতে হামলা করেছে।

স্থানীয়রা জানান, লিটন ওই এলাকার নজির আলী সিকদারের ছেলে এবং রড-সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। তাঁর বিরুদ্ধেও এলাকায় চাঁদাবাজি, ত্রাস সৃষ্টি করার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় আল আমিন নামের একজন জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজির অভিযোগে লিটনকে স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

লিটনের বাড়িতে হামলার সময়ের একটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, সড়কের পাশে তাঁর বাড়িতে হামলা চলছে। এসআই শহীদুল পুলিশ পিকআপে সামনের আসনে বসা। একজন লোক এসে তাঁকে বারবার অনুরোধ করছেন, তাঁকে (লিটন) গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান। না হলে কিছু একটা ঘটে যাবে। পুলিশের পিকআপ রওনা হলে ওই ব্যক্তি বারবার বলছেন, ‘আপনি এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত, এ অবস্থায় কোথায় যাচ্ছেন?’ গ্রেপ্তার করার অনুরোধ প্রসঙ্গে এসআই শহীদুল উল্টো বলেন, ‘তাঁর (লিটন) নামে কি মামলা হয়েছে?’

স্থানীয়দের তথ্যমতে, লিটনের বোন মুন্নীকে বিয়ে করেছেন একই গ্রামের জাকির গাজী। সম্প্রতি জাকির আরেকটি বিয়ে করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে লিটন ভগ্নিপতি জাকিরকে ২৩ জুলাই বাসার মধ্যে আটকে বেদম মারধর ও পুরুষাঙ্গে বিদ্যুতের শক দেন। মুন্নীর নামে ৩ শতাংশ জমির দলিলে জোর করে স্বাক্ষর করানো হয়। খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজন জাকিরকে উদ্ধার করেন। ওই ঘটনায় লিটন, মুন্নীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন জাকিরের পরিবার। এর পর থেকে আসামিরা আত্মগোপনে ছিলেন। দুদিন আগে এলাকাবাসী লিটনের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেন। বৃহস্পতিবার আদালত থেকে জামিন পেয়ে লিটন, মুন্নীসহ অন্যরা বাড়িতে যান।

খবর পেয়ে জাকিরের আত্মীয়স্বজনসহ গ্রামের লোকজন বাড়ি ঘেরাও করে হামলা করে। এসআই শহীদুলের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে পুলিশ চলে যাওয়ার পরই লিটনকে হত্যা এবং তাঁর বোন মুন্নী, মা হালিমা বেগম ও ভাই সুমন সিকদারকে কুপিয়ে জখম করা হয়। তাঁরা গুরুতর আহত হয়ে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে ঘটনাস্থল ত্যাগের কারণ জানতে চাইলে এসআই শহীদুল বলেন, তিনি পরিস্থিতি শান্ত করে ঘটনাস্থল ছাড়েন। এরপরে দ্বিতীয় দফার হামলায় লিটনকে হত্যা করা হয়। স্থানীয়দের অনুরোধের পরও কেন তাঁকে থানায় নিয়ে আসা হয়নি, জানতে চাইলে শহীদুল বলেন, ‘তাঁর নামে তো মামলা নেই। কেন তাঁকে আটক বা গ্রেপ্তার করব।’

শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গ্রেপ্তারের ভয়ে গ্রামটি অনেকটা পুরুষশূন্য। দু-একজন পথচারীর দেখা পেলেও কেউ এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। সড়কের পাশে লিটনদের বাড়ি। কয়েকজন পুলিশ সদস্য পাহারা দিচ্ছেন। বাড়িতে সদ্য নির্মিত একটি একতলা ভবন ও আরেকটি টিনের ঘর। সড়কের ওপর আগুন দেওয়া বিছানাপত্র আধা পোড়া অবস্থায় পড়ে আছে।

স্থানীয়রা জানান, লিটনদের আরেকটি বাড়ি আছে নগরীর বগুড়া সড়কে। ময়নাতদন্তের পর তাঁর মরদেহ সেখানে নেওয়া হয়। শুক্রবার আসরের নামাজের পর জানাজা শেষে বাসার অদূরে কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

বিমানবন্দর থানার ওসি জাকির সিকদার জানান, লিটন হত্যার ঘটনায় শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিহত লিটনও ৫টির বেশি মামলার আসামি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জৈন্তাপুরের লাল শাপলার বিল: কচুরিপানার আগ্রাসনে হারাচ্ছে সৌন্দর্য

জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি 
কচুরিপানার আধিপত্য বাড়ছে জৈন্তাপুর উপজেলার লাল শাপলার বিলে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কচুরিপানার আধিপত্য বাড়ছে জৈন্তাপুর উপজেলার লাল শাপলার বিলে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবির হাওর এলাকার অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ লাল শাপলার বিল এখন প্রকৃতিগত পরিবর্তনের শিকার। কচুরিপানার দ্রুত আগ্রাসনের ফলে এই বিলটি অচিরেই লাল শাপলার পরিবর্তে কচুরিপানার বিল হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে। প্রকৃতিপ্রেমীরা প্রশ্ন তুলেছেন, বিলের লাল শাপলা সুরক্ষার জন্য প্রশাসনের গঠিত সুরক্ষা কমিটি কী ভূমিকা পালন করছে?

সরেজমিনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবিরহাওরে ইয়াম-হরফকাটা-ডিবি-কেন্দ্রী—এই চারটি বিল নিয়ে গঠিত প্রায় ৯০০ একর জায়গাজুড়ে প্রকৃতিগতভাবে এই লাল শাপলার বিল সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৬ সালে সংবাদপত্রের মাধ্যমে এটি সারাদেশসহ বিশ্ববাসীর সামনে অন্যতম পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা বিলের সৌন্দর্য দেখে প্রশংসা করেন।

চলতি বছর ইয়াম বিলের (চারটি বিলের মধ্যে একটি) অর্ধেকের বেশি এলাকা জুড়ে লাল শাপলার বদলে কচুরিপানা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। কচুরিপানার কারণে লাল শাপলা দ্রুত বিলীন হচ্ছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এভাবে কচুরিপানা বাড়তে থাকলে আগামী বছরের মধ্যে পুরো বিলজুড়ে লাল শাপলার পরিবর্তে কচুরিপানার আধিপত্য দেখা যাবে। ফলে জৈন্তাপুরের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ এই লাল শাপলার বিলটি বিলীন হয়ে যাবে। সাধারণ মানুষ লাল শাপলা সুরক্ষায় উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত সুরক্ষা কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, লাল শাপলা বিলের সুরক্ষার জন্য গঠিত কমিটির প্রধান কাজ ছিল বিলের শাপলাকে ধ্বংসকারী জলজ উদ্ভিদসহ অন্যান্য সমস্যা চিহ্নিত করে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান ও পরিচর্যা করা। এ ছাড়া, পর্যটকদের বহনকারী নৌকা থেকে ১০০ টাকা হারে আদায়কৃত অর্থ বিলের বাঁধ সুরক্ষা এবং জলজ উদ্ভিদ থেকে শাপলাকে রক্ষার পরিচর্যার জন্য ব্যয় সংকুলান করার কথা ছিল।

ইয়াম বিলের প্রায় অর্ধেক অংশই এখন কচুরিপানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইয়াম বিলের প্রায় অর্ধেক অংশই এখন কচুরিপানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

তারা আরও জানান, বর্তমানে ইয়াম বিলটিতে যেভাবে লাল শাপলার চরম শত্রু কচুরিপানা গ্রাস করছে, তাতে আগামী বছরে তা পুরো বিলগুলোতে ছড়িয়ে পড়বে। ইয়াম বিলের প্রায় অর্ধেক অংশই এখন কচুরিপানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। লাল শাপলার পরিবর্তে সেখানে এখন কচুরিপানার ফুল ফুটছে। এর ফলে লাল শাপলার সৌন্দর্য মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। তাই দ্রুত পরিবেশ সমীক্ষা করে লাল শাপলাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জর্জ মিত্র চাকমা বলেন, ‘লাল শাপলা বিলে জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানার কারণে শাপলা ধ্বংস হচ্ছে, এই বিষয়টি ইতিপূর্বে কেউ আমাকে অবহিত করেনি। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে লাল শাপলা সুরক্ষায় দ্রুত কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে প্রার্থীর প্রচারে গুলি: পাসপোর্ট ব্লক থাকায় বিদেশে যেতে পারেননি সরোয়ার

  • বাকলিয়ায় দুই খুনের পর থেকে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা
  • রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে পুলিশের সংশ্লিষ্ট শাখায় তদবির
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত সরওয়ার হোসেন বাবলা। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি প্রার্থীর গণসংযোগে এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত সরওয়ার হোসেন বাবলা। ছবি: সংগৃহীত

সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে চট্টগ্রামে পরিচিতি পান ২৬ বছর আগে। তখন সরোয়ার হোসেন বাবলা, নুরনবী ম্যাক্সন, আকবর আলী ওরফে ঢাকাইয়া আকবর ও ছোট সাজ্জাদকে নিয়ে সন্ত্রাসী দল গড়েন বড় সাজ্জাদ। একসময় উল্লিখিত ব্যক্তিদের হাতেই ছিল চট্টগ্রামের অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ম্যাক্সন, সরোয়ার ও আকবর আলী বড় সাজ্জাদের সঙ্গ ছেড়ে আলাদাভাবে পথচলা শুরু করেন ১০ বছর আগে। এ অবস্থায় ২০১৫ সাল থেকে বড় সাজ্জাদের কমান্ডে ছোট সাজ্জাদ দলের হাল ধরেন। পরে ভারতে ম্যাক্সনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। সরোয়ার ও আকবর বড় ও ছোট দুই সাজ্জাদের নিশানায় পড়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে এ-সংক্রান্ত মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে গত ২৯ মার্চ নগরের বাকলিয়া অ্যাকসেস রোড এলাকায় প্রাইভেট কারে গুলি চালিয়ে সরোয়ারকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ওই সময় প্রাইভেট কারে থাকা তাঁর দুই সহযোগী বখতিয়ার হোসেন মানিক (৩০) ও মো. আবদুল্লাহ (৩৬) ঘটনাস্থলে মারা যান। সেই থেকে সরোয়ার হোসেন বাবলা বিদেশে চলে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে তদবির করে তিনি পুলিশের সংশ্লিষ্ট শাখায় তিন মাস ধরে চেষ্টা করেছেন বলে জানান বাবলার ছোট ভাই মো. আজিজ। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কাতার থেকে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হন সরোয়ার। এরপর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সরোয়ারের পাসপোর্ট ব্লক (বন্ধ) করে দেয় বলে জানান মো. আজিজ।

সরোয়ারের আরেক সহযোগী নগরের বিভিন্ন থানার হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলার আসামি আলী আকবর ওরফে ঢাকাইয়া আকবরকে গত ২৩ মে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় উপর্যুপরি গুলি চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। দুই দিন পর ঢাকাইয়া আকবর মারা যান। কারাগারে বন্দী সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ হোসেনের অনুসারীরা আকবর হত্যার পেছনে রয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। সহযোগীর এই ধরনের টার্গেটেড হত্যাকাণ্ডে বিদেশে যাওয়ার জন্য আরও ব্যাকুলতা বাড়ে সরোয়ার হোসেন বাবলার। এর মধ্যে একের পর এক প্রাণনাশের হুমকি আসতে থাকে বড় সাজ্জাদ ও রায়হানদের কাছ থেকে। কেউ সাত দিন, কেউ তিন দিনের মৃত্যুর পরোয়ানা পাঠায় সরোয়ারকে। এরই মধ্যে গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন সরোয়ার। বিয়ের পর স্ত্রীসহ পরিবারের সবাই জোর করছিল সরোয়ারকে বিদেশে চলে যেতে। জীবন বাঁচাতে সরোয়ারও বিদেশে চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাসপোর্টের ব্লক খুলতে পারছিলেন না। শেষতক মৃত্যুই সরোয়ারের জীবনের সমাধান দিল বলে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তাঁর ছোট ভাই মো. আজিজ।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (বিশেষ শাখা) মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস আজকের পত্রিকাকে বলেন, পাসপোর্ট ব্লক মূলত সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকার নির্দেশনা দিলে স্পেশাল ব্রাঞ্চ (পুলিশের বিশেষ শাখা) আবেদন করে ইমিগ্রেশন বিভাগের কাছে। এরপর পাসপোর্ট ব্লক হয়। সরোয়ার হোসেন বাবলার পাসপোর্ট ব্লকের বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে থাকার কথা নয়।’

বুধবার (৫ নভেম্বর) মাগরিবের নামাজের পরপরই চট্টগ্রামে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নিয়ে গুলিতে নিহত হন সরোয়ার হোসেন বাবলা। এ সময় চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহও গুলিবিদ্ধ হন। এরশাদ উল্লাহ বর্তমানে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলা। ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ ১৫টির বেশি মামলা রয়েছে।

এদিকে সরোয়ার হত্যায় করা মামলার এজাহারে এক নম্বরে যাঁর নাম এসেছে, সেই সাজ্জাদ আলী ওরফে বড় সাজ্জাদের। নগরের বায়েজিদ বোস্তামীর চালিতাতলী এলাকার ঠিকাদার আবদুল গণির ছেলে সাজ্জাদ আলী। ১৯৯৯ সালের ২ জুন পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর লিয়াকত আলী খান বাড়ির সামনে খুন হন। লিয়াকত হত্যায় সাজ্জাদ জড়িত ছিলেন বলে ব্যাপক প্রচার আছে। এ নিয়ে দায়ের করা মামলার আসামি ছিলেন সাজ্জাদ আলী। লিয়াকত হত্যার পর অপরাধজগতে সাজ্জাদের নাম ছড়িয়ে পড়ে।

২০০০ সালের ১২ জুলাই মাইক্রোবাসে করে একটি দলীয় সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ছাত্রলীগের ছয় নেতা-কর্মী। পথে বহদ্দারহাটে ওই মাইক্রোবাস থামিয়ে ব্রাশফায়ার করে সন্ত্রাসীরা। ঘটনাস্থলেই ছাত্রলীগের ওই ছয় নেতা-কর্মীসহ আটজন মারা যান। ‘এইট মার্ডার’ নামে পরিচিত ওই হত্যাকাণ্ডে সাজ্জাদ নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ ওঠে। ২০০০ সালের ১ অক্টোবর একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বড় সাজ্জাদ। ২০০৪ সালে জামিনে বেরিয়ে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। বর্তমানে ভারতের পাঞ্জাবে রয়েছেন বলে জানা গেছে। বড় সাজ্জাদের স্ত্রী পাঞ্জাবি হওয়ার সূত্রে তিনি পাঞ্জাবে অবস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে ১০ মাসে সাপে কেটেছে ১৭১১ জনকে

  • প্রতিষেধকের চাহিদা ৭৬০ ভায়াল, মজুত মাত্র ৩৪০
  • ১৫ উপজেলায় প্রতি মাসে গড়ে সাপে কেটেছে ১৭১ জনকে
  • মারা যাওয়ার তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট কোনো বিভাগে
  • পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম না থাকা প্রাণহানির জন্য দায়ী: বিশেষজ্ঞ
  • প্রতিষেধক কম থাকলে কোনো সমস্যা হয় না; কারণ, যেকোনো সময় প্রতিষেধক কেনা যায়: সিভিল সার্জন
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ০৬
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সাপে কাটা রোগীদের জন্য চাহিদার অর্ধেকও নেই প্রতিষেধক (অ্যান্টিভেনম)। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে রোগীদের বাঁচানো যায় না। চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সাপে কাটা রোগীদের হাসপাতালে ভর্তিসংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত (১০ মাস) ১ হাজার ৭১১ জনকে সাপে কেটেছে। সেই হিসাবে এই ১০ মাসে জেলায় গড়ে সাপে কেটেছে ১৭১ জনকে। এ সময় কতজন সাপে কাটা রোগী মারা গেছে, সেই হিসাবে কারও কাছে পাওয়া যায়নি।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৫টি উপজেলা ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অ্যান্টিভেনমের চাহিদা রয়েছে ৭৬০ ভায়াল; অথচ মজুত আছে ৩৪০। সেই হিসাবে চাহিদার মাত্র ৪৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ ভায়াল মজুত রয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় প্রতিষেধক কম থাকলেও এতে কোনো সমস্যা হয় না। কারণ, যেকোনো সময় প্রতিষেধক চাইলেই আমরা কিনতে পারি।’

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, উল্লিখিত ১০ মাসে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬৬, বাঁশখালীতে ১৬৫, বোয়ালখালীতে ২৩০, চন্দনাইশে ১৩, দোহাজারীতে ১৭, ফটিকছড়িতে ৫৭, হাটহাজারীতে ২৭, লোহাগাড়ায় ৯৩, মিরসরাইয়ে ২৮৮, পটিয়ায় ২০৮, রাঙ্গুনিয়ায় ৩৫, রাউজানে ১১১, সন্দ্বীপে ৫৬, সাতকানিয়ায় ৪৭ ও সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯৮ জন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয়।

এদিকে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনমের চাহিদা ৫০ ভায়াল। এর মধ্যে মজুত রয়েছে ২০ ভায়াল। বাঁশখালীতে ৪০টি চাহিদার জায়গায় রয়েছে ১০টি, বোয়ালখালীতে ৫০টি চাহিদার বিপরীতে ১০, চন্দনাইশে ১০ চাহিদার বিপরীতে ২০টি, দোহাজারীতে ১০টি চাহিদার স্থলে মজুত ১০টি, ফটিকছড়িতে ৫০টি চাহিদার বিপরীতে ২০টি, হাটহাজারীতে ৫০টির স্থলে ৪০, লোহাগাড়ায় ৫০টির স্থলে ২০, মিরসরাইয়ে ৫০টির বিপরীতে ২০, পটিয়ায় ১০০ চাহিদার বিপরীতে ৩০, রাঙ্গুনিয়ায় চাহিদার সব কটি রয়েছে (২০টি), রাউজানে ৫০টির স্থলে ২০, সন্দ্বীপে ৩০ এর স্থলে ২০, সাতকানিয়ায় ৫০ এর বিপরীতে ১০, সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০টির স্থলে ৩০ এবং চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ১০০ ভায়াল চাহিদার বিপরীতে রয়েছে ৪০ ভায়াল অ্যান্টিভেনম। সব মিলিয়ে উল্লিখিত এলাকাগুলোতে ৪২০ ভায়াল অ্যান্টিভেনমের ঘাটতি রয়েছে।

চমেক হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২৪ সালে সাপের দংশনে চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ২৮৩ জন রোগী। তাদের মধ্যে মারা গেছে ৩ জন। অ্যান্টিভেনম পেয়েছিল মাত্র ৫২ জন। দেশে প্রতিবছর বর্ষায় চন্দ্রবোড়া, গোখরা, কাল কেউটে, কিং কোবরা ও সবুজ বোড়ার মতো সাপের কামড়ের ঘটনা বাড়ে। চিকিৎসকের বদলে কবিরাজ বা ঝাড়ফুঁকের ওপর নির্ভরতার কারণে দেশে প্রতিবছর ছয় হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড স্ন্যাকস রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি মাহদী হিমু বলেন, ‘সাপের কামড়ে চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত ঘটছে মানুষের মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনা। আমাদের পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম না থাকাই এসব প্রাণহানির জন্য দায়ী। এর সঙ্গে মফস্বল এলাকায় স্বাস্থ্য খাতের দুর্বলতাও উল্লেখ করার মতো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কুড়িগ্রামের চিলমারী: অসম্পূর্ণ সেতুর কারণে হাঁটার রাস্তাও অকেজো

  • প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে
  • সেতুর কাজ শেষ হওয়ার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও হয়নি সংযোগ সড়ক
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৭: ২৩
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার দক্ষিণ খরখরিয়া সাব-বাঁধ এলাকায় নির্মিত সেতু ও সড়কের চিত্র। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার দক্ষিণ খরখরিয়া সাব-বাঁধ এলাকায় নির্মিত সেতু ও সড়কের চিত্র। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়কের অভাবে সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয়রা। এতে যোগাযোগ ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুল শিক্ষার্থীসহ নারী-শিশু ও বৃদ্ধরা। সেতুর কাজ শেষ হওয়ার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ ও ‍ঠিকাদারের অবহেলায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ বন্ধ থাকায় জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। সেতুর কারণে গ্রামীণ সড়কটি দিয়ে স্বাভাবিক চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে।

তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) দাবি, সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ায় সংযোগ সড়কের মাটি ভরাট করা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একদিকে সড়কের অবস্থা বেহাল। আরেক দিকে সংযোগবিহীন সেতু। সড়ক না থাকায় ওই পথে ছোট-বড় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমনকি হেঁটে কিংবা বাইসাইকেল-রিকশায় করে যাতায়াতেরও সুযোগ নেই। এতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগ বিপাকে পড়ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। যোগাযোগ ভোগান্তিতে পড়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সেতু-সংশ্লিষ্ট সড়কের সুবিধাভোগী অন্তত দেড় শ পরিবারের লোকজন।

উপজেলার পিআইওর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের দক্ষিণ খরখরিয়া সাব বাঁধ এলাকায় ৪২ লাখ ৬৩ হাজার ৯০৭ টাকা ব্যয়ে ১১ মিটার সেতুর নির্মাণকাজ করা হয়। কুড়িগ্রাম সদরের কাঁঠালবাড়ি এলাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটি নির্মাণ করে। প্রতিষ্ঠানটি চলতি বিল নিয়ে সেতু নির্মাণকাজ শেষ করলেও মাটি ভরাট ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করেই কাজ বন্ধ রাখে। চূড়ান্ত বিল না নিয়ে কাজ ফেলে রেখে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে তারা উধাও রয়েছে।

দক্ষিণ খরখরিয়া সাব বাঁধ এলাকার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন ও নুরনবী বলেন, ‘সেতুর কাজ শেষ হলেও মাটি ভরাট না করি কাজ ফেলে রাখা হইছে। সামনে গর্ত করি রাখছে। কিন্তু মাটি ভরাট না করায় আমরা চলাচল করতে পারতেছি না।’

স্থানীয় নারী বিলকিস বলেন, ‘সেতু হইছে কিন্তু সেতু দিয়ে যাতায়াত করা যায় না। সেতুর নিচ দিয়ে পারাপার হওয়া লাগে। গাড়ি তো চলে না। কেউ অসুস্থ হলে বিপদ আরও বেশি হয়। এ ছাড়া একটু বৃষ্টি হলে পানি জমে থাকে। তখন ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া-আসায় খুব সমস্যা হয়।

জানতে চাইলে চিলমারী উপজেলার পিআইও মো. সোহেল রহমান বলেন, সেতুর কাজ শেষ হওয়ার পর বর্ষা চলে আসায় মাটি পাওয়া যায়নি। ফলে এই অবস্থায় পড়ে আছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংযোগ সড়ক মেরামত করে সেতুটি যাতায়াতের উপযোগী করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত