Ajker Patrika

মেঘনায় লঞ্চে রাতভর আগুন আতঙ্ক, পরে যাত্রীদের ওপর কর্মচারীদের হামলা

বরিশাল প্রতিনিধি
মেঘনায় লঞ্চে রাতভর আগুন আতঙ্ক, পরে যাত্রীদের ওপর কর্মচারীদের হামলা

ঢাকা থেকে বরিশালে ফেরার পথে মেঘনায় রাতভর আগুন আতঙ্কে ছিলেন এমভি সুরভী-৯ লঞ্চের যাত্রীরা। লঞ্চের সাইলেন্সার অ্যাডজাস্ট দিয়ে ধোয়া বের হলে যাত্রীরা চিৎকার ও ছোটাছুটি শুরু করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সেখানে পৌঁছায়। শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে মোহনপুর ঘাটে লঞ্চটি নোঙর করতে বাধ্য করা হয়। 

এদিকে পাঁচ শতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে বরিশাল নৌবন্দরে পৌঁছালে যাত্রীদের ওপর হামলা করে স্টাফরা। এ সময় কর্তব্যরত কয়েকজন সংবাদকর্মীর ওপরও চড়াও হন তাঁরা। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে ঘটনা সবাইকে জানানোর কারণে লঞ্চের কর্মচারীরা তাঁদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা করেছেন। 

বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ঘটনায় তাঁরা লিখিতভাবে থানা পুলিশকে জানিয়েছেন। 

উল্লেখ্য, গত ২৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে রাতে ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় অর্ধশত যাত্রীর মৃত্যু হয়। এখনো কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন। দগ্ধ অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সাম্প্রতিক এ দুর্ঘটনার কারণেই এখন লঞ্চযাত্রীদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে।

লঞ্চের যাত্রী বাকেরগঞ্জের পাদ্রিশিবপুরের বাসিন্দা উম্মে হাবিবা জানান, তিনি লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় ছিলেন। হঠাৎ দেখতে পান কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো পাইপ (সাইলেন্সার অ্যাডজাস্ট) দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে। কয়েকজন স্টাফ বালতি দিয়ে পানি ঢেলে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। ফের ধোয়া বের হওয়া শুরু হলে তিনি ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে সহায়তা চান। 

যাত্রী হাবিবা আরও বলেন, সবাই লঞ্চটি তিরে নেওয়ার অনুরোধ করলেও কর্তৃপক্ষ একটি ইঞ্জিনে লঞ্চ চলাচল অব্যাহত রাখে। এরপর যাত্রীদের মধ্যে হইচই শুরু হয়। পরে কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ লঞ্চে পৌঁছে গেলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে মোহনপুরে ঘাটে লঞ্চটি থামাতে বাধ্য হয়। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এমভি সুরভী-৯ লঞ্চের সুপারভাইজার আব্দুর রব বলেন, ‘লঞ্চের সাইলেন্সার ঠান্ডা রাখার জন্য যে কাপড় পেঁচিয়ে রাখা হয় সেটি ভিজা ছিল। সেখান থেকে ধোয়া বের হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।’ 

তবে লঞ্চের মাস্টার আবুল কালাম বলেন, ‘৫ শতাধিক যাত্রী নিয়ে শনিবার রাত ৯টায় ঢাকা থেকে বরিশালে রওনা হই। রাত পৌনে ১১টার দিকে ইঞ্জিনের বাষ্প নির্গমনের সাইলেন্সার অ্যাডজাস্ট পয়েন্ট থেকে ধোয়া বেরোতে থাকে। যাত্রীদের মধ্যে আগুন আতঙ্ক দেখা দেয়। নারী যাত্রীরা কান্নাকাটি শুরু করে। লঞ্চের মধ্যে যাত্রীরা হুলুস্থুল শুরু করে, লঞ্চ তিরে ভিড়ানোর জন্য কর্মচারীদের অনুরোধ করতে থাকে। আতঙ্কিত যাত্রীরা ৯৯৯-এ কল, অনেকে ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়।’ 

মাস্টার বলেন, ‘এরপর কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস বাহিনী স্পিডবোট নিয়ে লঞ্চের দিকে এগিয়ে আসেন। তাঁদের নির্দেশে লঞ্চটি চাঁদপুরের মতলবপুর উপজেলার মোহনপুর স্টেশনে ভিড়ানো হয়। ইঞ্জিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁরা নিশ্চিত হন যে কোনো ত্রুটি নেই। রাত সাড়ে ৩টায় মোহনপুর থেকে ছেড়ে সাড়ে ৪টায় চাঁদপুর স্টেশনে ভিড়ানো হয় লঞ্চটি।’ 

বিআইডব্লিউটিএর চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা মো. কায়সারুল ইসলামসহ ৩ কর্মকর্তা লঞ্চে উঠলে তাঁদের তদারকিতে ভোর ৫টায় বরিশালের উদ্দেশে রওনা হয়। সকাল ১০টায় বরিশালে পৌঁছেছে লঞ্চটি। 

মাস্টার আবুল কালাম বলেন, ‘শুক্রবার লঞ্চটি পিকনিক ট্রিপে গিয়েছিল। পরে লঞ্চটি ধোয়ামোছা করা হয়। এতে সাইলেন্সার অ্যাডজাস্ট পয়েন্টের ভেতরের অংশে থাকা কাপড় ভিজে গিয়েছিল। শনিবার রাতে লঞ্চটি রওনা হলে ভেজা কাপড় গরম হয়ে বাষ্প বের হয়।’ 

বরিশাল বন্দরে যাত্রীদের ওপর চড়াও হয় লঞ্চের কর্মচারীরালঞ্চটি আজ সকালে বরিশালে পৌঁছালে লঞ্চের স্টাফরা যাত্রীদের ওপর চড়াও হয়। কয়েকজন সংবাদকর্মীও হামলার শিকার হন। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন দেওয়ান মোহন বলেন, সকালে তাদের কয়েকজন যাত্রী জানান, লঞ্চের মধ্যে কিছু যাত্রীকে মারধর করা হচ্ছে। তাঁরা লঞ্চের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে কর্মচারীরা তাঁদের ওপর হামলা করে। 

যাত্রীদের কেন মারধর করা হলো, এ প্রশ্নে মাস্টার আবুল কালাম বলেন, ‘লঞ্চ দেরিতে পৌঁছার অজুহাত তুলে যাত্রীরা ভাড়া দিতে অস্বীকার করে। এ সময় কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।’ 

এ প্রসঙ্গে সুরভী লঞ্চ কোম্পানির পরিচালক রেজিন উল কবির জানান, যাত্রী ও সংবাদকর্মীদের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনায় কোম্পানির ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অন্যদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এমভি সুরভী-৯ চাঁদপুর থেকে শেষ রাতের দিকে ছেড়ে সকাল ১০টায় বরিশাল বন্দরে পৌঁছায়। ইঞ্জিনে ত্রুটি থাকায় লঞ্চে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। লঞ্চে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা খতিয়ে দেখেছেন। নিরাপদে বরিশালে পৌঁছালে সকালে বন্দরে সুরভী-৯-এর স্টাফদের সঙ্গে যাত্রীদের হাতাহাতি হয়। ওই ঘটনা থানা পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে লঞ্চে ধোয়ার ঘটনায় কোনো তদন্ত হচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত