Ajker Patrika

টিকার বিকল্প উৎসের খোঁজে বাংলাদেশ

আজাদুল আদনান
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১৭: ৩২
টিকার বিকল্প উৎসের খোঁজে বাংলাদেশ

ঢাকা: অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে কোভিড টিকা রপ্তানি সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। এ কারণে সময়মতো সেরামের অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থার দিকে নজর দিচ্ছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ডোজের জন্য মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই টিকা পেতে চায় সরকার।

তিন কোটি ডোজ টিকা কিনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে গত বছরের নভেম্বরে চুক্তি করে বাংলাদেশ। ওই টিকা সরবরাহের দায়িত্বে আছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ পাওয়ার কথা। গত জানুয়ারিতে ৫০ লাখ ডোজ আসে। তবে ফেব্রুয়ারির চালানে বাংলাদেশ পায় ২০ লাখ ডোজ। এর বাইরে ভারত সরকার তিন দফায় ৩৩ লাখ ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা উপহার দিয়েছে।

এই ১ কোটি ৩ লাখ ডোজ টিকা ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে যে হারে টিকা প্রয়োগ হচ্ছে তাতে মে মাসের শুরুতেই টিকার সংকট দেখা দেবে। তাই, যা–ই বলি না কেন, টিকা আমাদের পেতেই হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিকা পেতে বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত চিঠি চালাচালির পাশাপাশি সরাসরি কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও চালাচ্ছে সরকার। কিন্তু এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্তে বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ দেশে পরিণত হয়েছে ভারত। মার্চেই টিকা রপ্তানি সাময়িক স্থগিত ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ফলে আপাতত ভারত থেকে টিকা পাওয়ার আশা ক্ষীণ।

এমতাবস্থায় বিকল্প ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। চীন ও রাশিয়ার টিকা পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এ নিয়ে দফায় দফায় আলোচনায় বসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ সোমবারও মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দিতে বলেছে। আগামীকাল মঙ্গলবার এ নিয়ে ফের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে সংকট মোকাবিলায় ভারত সম্প্রতি রাশিয়ার কোভিড টিকা স্পুটনিক–৫–এর জরুরি অনুমোদন দিয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশও এই টিকা নিতে বেশি আগ্রহী বলে জানা গেছে। যদিও সেরামের চেয়ে এই টিকার দাম প্রায় দ্বিগুণ হবে। তবে টিকার জন্য অর্থের কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

স্পুটনিক–৫–এর এক ডোজের দাম পড়বে প্রায় ১২ ডলার। এই টিকারও দুটি ডোজ নিতে হবে। ফলে জনপ্রতি সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ২ হাজার ৫০ টাকা। যেখানে সেরামের উৎপাদিত টিকায় গুনতে হচ্ছে ১০ ডলার।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ রোবেদ আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকার ও বেক্সিমকো সেরামের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ করছে। কিন্তু তারা এখন দিতে পারছে না। এদিকে আমাদের টিকা লাগবেই। কেননা, দ্রুত মজুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে বিকল্প ব্যবস্থা ছাড়া উপায় নেই। সে অনুযায়ী রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে অনেক দিন ধরেই যোগাযোগ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে চীনের সঙ্গে আলোচনা মোটামুটি একটি জায়গায় চলে এসেছে।

মুখপাত্র জানান, চীনের সিনোফার্ম করপোরেশন বাংলাদেশকে টিকা দিতে বেশি আগ্রহী। তবে সেটি কীভাবে পাওয়া যাবে, দাম কত হবে—এরকম আরও কিছু বিষয় রয়েছে। দু–এক দিনের মধ্যেই এর একটা বিহিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্যাভি–কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির ১ লাখ ৬১০ ডোজ এবং সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশনের উৎপাদিত ৫ লাখ ডোজ টিকা বিনামূল্যে পাওয়ার কথা জানিয়েছিল সরকার। সেটি এখনও হাতে আসেনি। কবে নাগাদ আসবে সেটিও কেউ বলতে পারছে না।

কোভ্যাক্সও চাহিদামতো টিকা পাচ্ছে না। মার্চ এবং এপ্রিলে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কোভ্যাক্সের ৯ কোটি ডোজ টিকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পেয়েছে মাত্র ২ কোটি ৮০ লাখ ডোজ। যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদক সেরাম এরই মধ্যে ৭৬টি দেশে ৬ কোটি ৫০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা রপ্তানি করেছে। তারা আর চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছে না।

এর বাইরে অবকাঠামো সংকটের কারণে বিকল্প হিসেবে ফাইজার–বায়োএনটেক এবং মডার্নার টিকার কথা ভাবতে পারছে না সরকার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এই দুই টিকা মাইনাস ৩০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। এই মানের রেফ্রিজারেটর বাংলাদেশে মাত্র কয়েকটি আছে। এছাড়া এসব টিকার মূল্য চীন ও রাশিয়ার টিকার চেয়ে অনেক বেশি।

সবকিছু মিলিয়ে সেরামের টিকা যত দিন না পাওয়া যাচ্ছে সে পর্যন্ত রাশিয়ার টিকাতেই ভরসা করছে বাংলাদেশ। এটি নিশ্চিত হলে পরবর্তী বিকল্প হিসেবে চীনের টিকা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চায় সরকারের উচ্চপর্যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত