Ajker Patrika

নাহিদ ধ্রুবর একগুচ্ছ কবিতা

নাহিদ ধ্রুব
নাহিদ ধ্রুবর একগুচ্ছ কবিতা

শ্লোক
পাখিদের মনে যেন জমে আছে মেঘ
দিনে দিনে বেড়ে যায় হাওয়ার উদ্বেগ

অলৌকিক ছায়া কাঁপে ফুলেরাও জানে
প্রাণহীন পাতা ওড়ে দিন অবসানে

তারপর ভেসে আসে শিকারির মুখ
হরিণের মনে এই পুরোনো অসুখ

যায় না কখনো ভোলা, যা কিছু অমর
উদ্বাস্তু তো ভালোবাসে, পরিত্যক্ত ঘর

লতানো শরীর ছুঁয়ে ভেঙে পড়ে সিঁড়ি
পুরোনো প্রলাপ বকে, বনে বনে ঘুরি 

তাঁবু ফেলে বসে থাকি হয়ে ঘন রাত
আমার ভেতরে আমি পেতে রাখি ফাঁদ

এই ফাঁদে কোনো বাঘ, ধরা পড়ে নাই 
নিজেরে খুঁজেছি আমি যেন অযথাই 

সবশেষে বলে বন, অবোধ বালক—
মানবজীবন এক ভুলে যাওয়া শ্লোক

প্রতিদ্বন্দ্বী
ডাকটিকিটের পাখি উড়ে গেছে কবে 
হলুদ খামের গায়ে পড়ে আছে ধুলো 
মরচে পড়েছে যেন চেনা অনুভবে—
অব্যক্ত সকল কথা, এভাবে ফুরাল

তবুও অভ্যাসবশে আজও মাঝরাতে 
লেখার টেবিলে বসি এমন মাতাল—
মাঝে মাঝে মনে হয় বসে আছি চাঁদে 
তুমুল ঝড়ের মাঝে ছিঁড়ে যায় পাল 

তোমাকে ভাবার মতো ফুরসত নেই, 
জীবন কি থাকে কারো, থেমে কোনো দিন—
তোমাকে খুঁজি না তবু, বুঝি অচিরেই
আমার ভেতরে আমি, কতটা প্রাচীন 

যুদ্ধ তো নিজের সাথে, প্রতিদ্বন্দ্বী নাই—
এ জীবন চলে যায়, যেতে হবে তাই! 

আমার জগতে
দাঁড়াতে পারি না, টুটাফাটা হয়ে, পড়ে আছে শিঁড়দাড়া 
তবু কাছে ডাকে, কুহকের মাঝে, আজও অশ্বিনী তারা 
চোখের ভেতর, মহুয়ার বন, বৃষ্টিতে গেছে ভিজে—
হারায়েছি ছাতা, প্রিয় ঝরা পাতা, মেঘেদের দহলিজে 
উল্কাপাতের, স্মৃতি মনে পড়ে, ধসে যায় এই গ্রহ—
চাঁদের আলোতে যা কিছু দেখেছি, মনে হয় সব মোহ 
জল নাই তবু, নদীতে ভাসছে, ঝরে যাওয়া কত ফুল 
আমার জগতে, এসব দৃশ্য, এখনো কি নির্ভুল! 

জ্বরের মাঝে
কাঁকর বিছানো নির্জনতায় শুনতে পেলাম 
নিরক্ষর এক নদীর বুকে হাওয়ার কোরাস—
দেখতে পেলাম অন্ধকারে, 
ফুলের মতো বসন পরে গভীর রাতে, 
যাচ্ছে চলে ডাকাত দল গ্রামের পথে—
সর্বনাশা হয়তো কোন পাখির চোখে, 
ছাই ঢেলেছে নবীন মাঝি, পাল তুলে সে, যাচ্ছে চলে 
যেমন করে, পালায়ে বেড়ায় ভবের পাগল 
যেমন করে রাত্রিবেলায় চাঁদের বুড়ি বাজায় মাদল 
আমার বুকে, আমার চোখে—
হাওয়ার কোরাস, হাওয়ার কোরাস, উঠল কি ঝড়? 
আদর ছাড়া নামবে কি জ্বর? 

নামলে নামুক, না নামলে নাই, আমি বরং দুলতে থাকি 
কানের ওপর হাত রেখে শুনি সাগরের ডাক 
ঢেউয়ে ঢেউয়ে বড় উৎপাত, 
বাড়তে থাকে, মাথার পাশে দেখতে পেলাম 
হারানো মুখ, মরণ চেনা আত্মাটাকে... 
বলল ডেকে, নাবিক কবে জাহাজ ফেলে পালায়ে গেছে 
নোঙর ফেলো, নোঙর ফেলো, 
ব্যর্থ জাহাজ নিজেরে তুমি ভাবতে পারো
ভাসার আগে ডুবতে পারো—
টের পেয়েছি তখন আমি চোখের কোণে শীতল জল 
বৃষ্টি নাকি বরফকল? 

কে জানে কোন গুহায় আছি—
পাহাড়ে ওঠার মন্ত্র জপি, লাফায়ে পড়ি শূন্যে আবার 
আমার আছে ব্যক্তিগত ভুলের খামার 
বিয়োগ চিহ্ন লিখেই যাচ্ছে ভাগ্যলিপি—
নিজের তৈরি গ্যাঁড়াকলে নিজেই এখন আটকে থাকি 
হয়তো আমি এক জাদুকর, 
কে আর আমার নেবে খবর? 
মানুষ বড় ব্যস্ত থাকে, সংসার আর সঙের মাঝে 
শেকড় ছড়ায়, ঝরা পাতায় গল্প লেখে 
দাঁড়ায়ে থাকে, চলতে তাদের এমন ভয় 
গাছ তবু নয় 

আমি হয়তো গাছের মতো 
এমন ভেবে গাছের ডালে একলা একা বসেই থাকি 
নদীর পাড়ে, দেখতে থাকি, কলসি হাতে আসছে নারী 
পরনে তার রঙিন শাড়ি, প্রেম এসে যায় তখন আবার 
প্রেম চলে যায়, যেমন যাবার—
যেন এসব হওয়ার ছিল, যেন এসব হতেই পারে 
এই জগতের এমন নিয়ম 
মরার আগে মানুষ অনেক মরতে পারে, 
মরতে মরতে বুঝতে পারি, জ্বর উঠেছে অনেকখানি
পাশে শুধুই নির্জনতা, আর কিছু নাই 
থাকে না কিছুই, থাকে না কিছুই মানুষ জানে—
তবু জীবন কেটেই যায় জ্বরের মাঝে ঘোরের গানে! 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত