প্রমথ চৌধুরী

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমালোচক প্রমথ চৌধুরী। তাঁর অনেক অগ্রন্থিত লেখা এখানে ওখানে ছড়িয়ে থাকা লেখাপত্র বিভিন্ন পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করেছেন মলয়েন্দু দিন্দা। তাঁর সংগৃহীত লেখাগুলো মন ফকিরা থেকে, প্রথম প্রকাশ পেয়েছে প্রমথ চৌধুরীর দুটি বই অগ্রন্থিত রচনা-১, অগ্রন্থিত রচনা-২ নামে। সেখান থেকেই প্রমথ চৌধুরীর প্রয়াণ দিবসে দুষ্প্রাপ্য ৩টি লেখা আজও প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় পুনঃপাঠ হিসেবে তুলে দেওয়া হলো আজকের পত্রিকার সাহিত্য পাতায়।
আমরা যারা লিখি, আমরা সকলেই চাই, আমাদের লেখা অপরে সমালোচনা করুক। এর কারণও অতি স্পষ্ট। লেখক মাত্রেই লেখেন পাঠকের জন্য। যদি আমাদের লেখা সম্বন্ধে সকলে নীরব থাকেন তো বুঝতে পারি নে, সে লেখা কেউ পড়েছেন কি না। অপর পক্ষে তার সমালোচনার সাক্ষাৎ পেলেই আমরা এই মনে করে কতকটা স্বস্তি অনুভব করি, অন্তত একজন পাঠকও তা পড়েছেন। সমালোচনা মাত্রই যে স্তুতিবাচক হবে এমন কোনো কথা নেই, বরং অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তার ঠিক উল্টো হয়। কিন্তু সত্য কথা বলতে গেলে, তাতে লেখকদের বড় বেশি আসে যায় না।
আমরা সকলেই অবশ্য প্রশংসালোভী! এবং একজন পাঠকও যদি আমাদের রচনার সুখ্যাতি করেন, তা হলেই আমরা হাতে স্বর্গ পাই। কিন্তু সমালোচকের মুখে প্রশংসার মতো নিন্দারও একটা বিশেষ মূল্য আছে। নিন্দার প্রসাদেও আমাদের লেখা জনসমাজে সুপরিচিত হয়ে ওঠে। বিজ্ঞাপন হিসেবে কোনো বইয়ের নিন্দা ও প্রশংসার মধ্যে কোনটি বেশি মূল্যবান, বলা কঠিন। অনেক সমালোচক-নিন্দিত সাহিত্যও যে সমাজে দিব্যি চলে যায়, তার প্রমাণ দেদার আছে। একখানি সেকেলে কাব্যের নাম করলেই বুঝতে পারবেন, আমার কথা ঠিক। বিদ্যাসুন্দরকে অনেক দিন থেকেই লোকে অপাঠ্য বলে আসছে। অথচ আমার বিশ্বাস, বিদ্যাসুন্দরের প্রচলন বাঙালি সমাজে মোটেই কম নয়। ইংরেজি শিক্ষিত সমাজে ও-কাব্যের নিন্দা তো বহুকালাবধি সকল শিক্ষিত লোকের মুখেই শোনা গিয়েছে, তৎসত্ত্বেও ভারতচন্দ্রকে কবি বলতে আজকের দিনে আমরা ভয় পাইনে। যে-কারণে ভারতচন্দ্র নিন্দিত, সে কারণে আজকের দিনে যদি কোনো লেখক নিন্দিত হন, তা হলে সে নিন্দা তাঁর পক্ষে একটা মস্ত বিজ্ঞাপন হবে।
সে যা-ই হোক, এ কথা নির্ভুল যে আমরা লেখকরা চাই সমালোচকদের কাছ থেকে নিন্দা নয়–প্রশংসা। এ আমাদের জাতিধর্ম। লেখকেরা আবহমান কাল প্রশংসার ভিখারি ছিলেন, আজও আছেন। ‘গুণী গুণং বেত্তি’, ‘মধুমিচ্ছন্তি ষট্পদা’,
এ সকল সংস্কৃত বচন লেখকদের হাত থেকে বেরিয়েছে, সমালোচকদের হাত থেকে নয়।
সাহিত্যিকদের এ প্রবৃত্তির সঙ্গে ঝগড়া করে কোনো ফল নেই। এ প্রবৃত্তিকে দুর্বলতা বললেও সে দুর্বলতা আমরা ত্যাগ করতে পারব না, আর যিনি পারেন তাঁর পত্রপাঠ সমালোচকদের দলে গিয়ে ভর্তি হওয়া উচিত।
কে না জানে যে বাহবা না পেলে গাইয়ে-বাজিয়েরা আসর জমাতে পারে না। এবং যে-শ্রোতা যত বেশি বার ‘কিয়াবাৎ’ ‘কিয়াবাৎ’ বলে, ওস্তাদেরা তাকেই তত বড় সমঝদার বলে মেনে নেন। এর কারণও স্পষ্টই। সাহিত্যের ফুল অনুকূল জলবায়ু না পেলে স্ব-রূপে ফুটে উঠতে পারে না। এই প্রশংসা জিনিসটা হচ্ছে সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধির একটি প্রধান সহায়। কাব্যের রস উপভোগ করার অক্ষমতা সমালোচকদের একটা ক্ষমতার মধ্যে গণ্য নয়।
ইংল্যান্ডের সর্বাগ্রগণ্য মনীষী Bertrand Russell তাঁর শিক্ষা সম্বন্ধে নতুন বইয়ে লিখেছেন যে—‘Praise is less harmful. But it should not be given so easily as to lose its value, nor should it be used to over-stimulate a child.’ উপরিউক্ত child কথা থেকেই বুঝতে পারছেন যে এ হচ্ছে শিশুশিক্ষার ব্যবস্থা। কিন্তু আমরা সাহিত্যিকরা উকিল-মোক্তার পলিটিশিয়ান-দোকানদারদের মতে কি সব শিশু নই? অন্তত সমাজ উপরিউক্ত সেয়ানাদের তুলনায় আমাদের কি ছেলেমানুষ হিসেবে দেখেন না? অতএব Russell-এর মতানুসরণ করে সমালোচকদের আমাদের প্রশংসা করাই কর্তব্য।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে সমালোচকদের একটু বিপদ আছে। তাঁরা যদি রামের প্রশংসা করেন তো শ্যাম মনঃক্ষুণ্ণ হবে এবং এই অবস্থায় শ্যামচন্দ্রকে কিছুতেই বোঝানো যাবে না যে রামচন্দ্রের প্রশংসার অর্থ শ্যামচন্দ্রের নিন্দা নয়। একটি উদাহরণের সাহায্যে কথাটা আর একটু পরিষ্কার করছি। গত মাসের কল্লোলে শ্রীযুক্ত ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তিনখানি বইয়ের গুণ গেয়েছেন। তার মধ্যে একখানি হচ্ছে ‘গড্ডলিকা’। কিছুদিন আগেও আমিও এ বইয়ের মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করেছি।
আমার যতদূর মনে পড়ে, এ প্রশংসাসূত্রে এক জায়গায় বলেছিলাম যে বঙ্গসাহিত্যে এর তুলনা নেই। এই কথা শুনে বীরবল যদি বেজার হতেন তো ভেবে দেখুন, কী মুশকিলেই পড়তুম। তখন তাঁকে গিয়ে বলতে হতো যে ‘গড্ডলিকার হাস্যরস আর তোমার হাস্যরস এক জাতীয় নয়।’ এ কথা শুনে তিনি যদি প্রশ্ন করতেন যে ও-দুয়ের প্রভেদটা কী? তা হলে উত্তরে আলঙ্কারিকদের এই বচন আওড়াতে বাধ্য হতুম
ইক্ষুক্ষীর গুড়াদীনাং মাধুর্য্য স্যাস্তরং মহৎ।
তথাপি ন তদাখ্যাতুঃ সরস্বতাপি শক্যতে।।
বীরবলের উদাহরণ দিচ্ছি এই কারণে যে তিনি আমার ঘরের লোক, সুতরাং তাঁর নাম করায় আমার বিশেষ কোনো ভয়ের কারণ নেই। কিন্তু বীরবল না হয়ে যদি কোনো নির্বল রসিক আমার ওপর নারাজ হতেন, সেটা অবশ্য নিতান্ত আক্ষেপের কারণ হতো। শ্রীযুক্ত ধূর্জটিপ্রসাদের সমালোচনার ওপর আপনারা যে মন্তব্য প্রকাশ করেছেন, তা-ই পড়েই আমার মনে এই কথা উদয় হয়েছে যে সমালোচকের পক্ষে এ যুগে কারও প্রশংসা করা তার নিন্দা করার চাইতেও বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। এ যুগ তো আর বঙ্গদর্শনের যুগ নয়, যখন বঙ্কিমচন্দ্র সাহিত্যের রাজপদে প্রতিষ্ঠিত হয়ে লেখকদের সরাসরি বিচার করতেন ও খুশিমতো তাঁদের তিরস্কৃত ও পুরস্কৃত করতেন ও পাঠকসমাজ তাঁর কথাই বেদবাক্য বলে মেনে নিত। এ যুগ যে সাহিত্যেরও ডেমোক্রেটিক যুগ। আপনারা জানিয়ে রেখেছেন যে শ্রীযুক্ত ধূর্জটিপ্রসাদের প্রবন্ধের স্বপক্ষে-বিপক্ষে কোনো কথাই আপনারা প্রকাশ করবেন না। তবুও আমি যে এ বিষয়ে দু-চার কথা বলছি, তার কারণ উক্ত প্রবন্ধ আমার আলোচ্য বিষয় নয়, শুধু আলোচনার উপলক্ষ্য মাত্র। কোনো সমালোচকের কোনো মতামতের প্রতিবাদ কিম্বা সমর্থন করবার দিন এখন চলে গিয়েছে। কেননা এ যুগে সাহিত্য সম্বন্ধে শুধু ব্যক্তিগত মতামতেরই অর্থ ও সার্থকতা আছে।
এ যুগে নিজের মন ছাড়া অপর কোনো রকম কষ্টিপাথর লোকের হাতে নেই, যার সাহায্যে সে সাহিত্যের দর করে দেবে। ইংরেজিতে যাকে বলে cannons of critricism এ যুগে সেসব বিলকুল বাতিল হয়ে গিয়েছে। অলঙ্কারশাস্ত্রের বিধি অনুসরণ করে কেউ কস্মিনকালেও কাব্যরচনা করতে পারেননি এবং সেকালেও কবিরা সে শাস্ত্রের নিষেধও পদে-পদে লঙ্ঘন করতে বাধ্য হয়েছেন। সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্রে কাব্যদেহের দোষের একটা লম্বা ফর্দ আছে, অথচ আলঙ্কারিকরাই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে দোষ হয়ে গুণ হলো কবির বিদ্যায়। দৈব বিধান যে শাস্ত্রবিধানের চাইতে প্রবল, এ কথাও তাঁরা স্পষ্টাক্ষরে বলে গিয়েছেন।
এ যুগে আমরা এ ক্ষেত্রে কোনোরূপ শাস্ত্রবিধান গ্রাহ্য করতে পারিনে, ফলে উক্ত বিধান অনুসারে এ কাব্য, ও নয়, এমন কথাও বলতে অধিকারী নই। কারণ দেখতে পাওয়া যায় যে নিত্যনতুন সাহিত্য সৃষ্টি হচ্ছে যা কোনো পুরোনো নিয়মের অধীন নয়। ফলে সাহিত্য-সমালোচনার জন্য সমালোচকেরা নিজের রুচির ওপরই নির্ভর করতে বাধ্য। এক হিসেবে এটি দুঃখের বিষয়, কারণ প্রতি ব্যক্তি যদি কেবলমাত্র নিজের রুচির ওপর নির্ভর করেন, তা হলে সামাজিক রুচি বলে কোনো জিনিস জন্মাতে পারে না—ফলে এ ক্ষেত্রে যা জন্মায়, তারা নাম critical anarchism। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ যুগে সমালোচকদের মেনে নিতে হবে যে সমালোচনা করার অর্থ হচ্ছে আত্মপ্রকাশ করা। এতে যিনি ভয় পান, তাঁর পক্ষে সমালোচনা ত্যাগ করাই কর্তব্য। লেখকদলকে লালন-পালন শাসন-সংরক্ষণ করবার দায়িত্ব এ যুগের সমালোচকদের নেই।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমালোচক প্রমথ চৌধুরী। তাঁর অনেক অগ্রন্থিত লেখা এখানে ওখানে ছড়িয়ে থাকা লেখাপত্র বিভিন্ন পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করেছেন মলয়েন্দু দিন্দা। তাঁর সংগৃহীত লেখাগুলো মন ফকিরা থেকে, প্রথম প্রকাশ পেয়েছে প্রমথ চৌধুরীর দুটি বই অগ্রন্থিত রচনা-১, অগ্রন্থিত রচনা-২ নামে। সেখান থেকেই প্রমথ চৌধুরীর প্রয়াণ দিবসে দুষ্প্রাপ্য ৩টি লেখা আজও প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় পুনঃপাঠ হিসেবে তুলে দেওয়া হলো আজকের পত্রিকার সাহিত্য পাতায়।
আমরা যারা লিখি, আমরা সকলেই চাই, আমাদের লেখা অপরে সমালোচনা করুক। এর কারণও অতি স্পষ্ট। লেখক মাত্রেই লেখেন পাঠকের জন্য। যদি আমাদের লেখা সম্বন্ধে সকলে নীরব থাকেন তো বুঝতে পারি নে, সে লেখা কেউ পড়েছেন কি না। অপর পক্ষে তার সমালোচনার সাক্ষাৎ পেলেই আমরা এই মনে করে কতকটা স্বস্তি অনুভব করি, অন্তত একজন পাঠকও তা পড়েছেন। সমালোচনা মাত্রই যে স্তুতিবাচক হবে এমন কোনো কথা নেই, বরং অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপারটা তার ঠিক উল্টো হয়। কিন্তু সত্য কথা বলতে গেলে, তাতে লেখকদের বড় বেশি আসে যায় না।
আমরা সকলেই অবশ্য প্রশংসালোভী! এবং একজন পাঠকও যদি আমাদের রচনার সুখ্যাতি করেন, তা হলেই আমরা হাতে স্বর্গ পাই। কিন্তু সমালোচকের মুখে প্রশংসার মতো নিন্দারও একটা বিশেষ মূল্য আছে। নিন্দার প্রসাদেও আমাদের লেখা জনসমাজে সুপরিচিত হয়ে ওঠে। বিজ্ঞাপন হিসেবে কোনো বইয়ের নিন্দা ও প্রশংসার মধ্যে কোনটি বেশি মূল্যবান, বলা কঠিন। অনেক সমালোচক-নিন্দিত সাহিত্যও যে সমাজে দিব্যি চলে যায়, তার প্রমাণ দেদার আছে। একখানি সেকেলে কাব্যের নাম করলেই বুঝতে পারবেন, আমার কথা ঠিক। বিদ্যাসুন্দরকে অনেক দিন থেকেই লোকে অপাঠ্য বলে আসছে। অথচ আমার বিশ্বাস, বিদ্যাসুন্দরের প্রচলন বাঙালি সমাজে মোটেই কম নয়। ইংরেজি শিক্ষিত সমাজে ও-কাব্যের নিন্দা তো বহুকালাবধি সকল শিক্ষিত লোকের মুখেই শোনা গিয়েছে, তৎসত্ত্বেও ভারতচন্দ্রকে কবি বলতে আজকের দিনে আমরা ভয় পাইনে। যে-কারণে ভারতচন্দ্র নিন্দিত, সে কারণে আজকের দিনে যদি কোনো লেখক নিন্দিত হন, তা হলে সে নিন্দা তাঁর পক্ষে একটা মস্ত বিজ্ঞাপন হবে।
সে যা-ই হোক, এ কথা নির্ভুল যে আমরা লেখকরা চাই সমালোচকদের কাছ থেকে নিন্দা নয়–প্রশংসা। এ আমাদের জাতিধর্ম। লেখকেরা আবহমান কাল প্রশংসার ভিখারি ছিলেন, আজও আছেন। ‘গুণী গুণং বেত্তি’, ‘মধুমিচ্ছন্তি ষট্পদা’,
এ সকল সংস্কৃত বচন লেখকদের হাত থেকে বেরিয়েছে, সমালোচকদের হাত থেকে নয়।
সাহিত্যিকদের এ প্রবৃত্তির সঙ্গে ঝগড়া করে কোনো ফল নেই। এ প্রবৃত্তিকে দুর্বলতা বললেও সে দুর্বলতা আমরা ত্যাগ করতে পারব না, আর যিনি পারেন তাঁর পত্রপাঠ সমালোচকদের দলে গিয়ে ভর্তি হওয়া উচিত।
কে না জানে যে বাহবা না পেলে গাইয়ে-বাজিয়েরা আসর জমাতে পারে না। এবং যে-শ্রোতা যত বেশি বার ‘কিয়াবাৎ’ ‘কিয়াবাৎ’ বলে, ওস্তাদেরা তাকেই তত বড় সমঝদার বলে মেনে নেন। এর কারণও স্পষ্টই। সাহিত্যের ফুল অনুকূল জলবায়ু না পেলে স্ব-রূপে ফুটে উঠতে পারে না। এই প্রশংসা জিনিসটা হচ্ছে সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধির একটি প্রধান সহায়। কাব্যের রস উপভোগ করার অক্ষমতা সমালোচকদের একটা ক্ষমতার মধ্যে গণ্য নয়।
ইংল্যান্ডের সর্বাগ্রগণ্য মনীষী Bertrand Russell তাঁর শিক্ষা সম্বন্ধে নতুন বইয়ে লিখেছেন যে—‘Praise is less harmful. But it should not be given so easily as to lose its value, nor should it be used to over-stimulate a child.’ উপরিউক্ত child কথা থেকেই বুঝতে পারছেন যে এ হচ্ছে শিশুশিক্ষার ব্যবস্থা। কিন্তু আমরা সাহিত্যিকরা উকিল-মোক্তার পলিটিশিয়ান-দোকানদারদের মতে কি সব শিশু নই? অন্তত সমাজ উপরিউক্ত সেয়ানাদের তুলনায় আমাদের কি ছেলেমানুষ হিসেবে দেখেন না? অতএব Russell-এর মতানুসরণ করে সমালোচকদের আমাদের প্রশংসা করাই কর্তব্য।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে সমালোচকদের একটু বিপদ আছে। তাঁরা যদি রামের প্রশংসা করেন তো শ্যাম মনঃক্ষুণ্ণ হবে এবং এই অবস্থায় শ্যামচন্দ্রকে কিছুতেই বোঝানো যাবে না যে রামচন্দ্রের প্রশংসার অর্থ শ্যামচন্দ্রের নিন্দা নয়। একটি উদাহরণের সাহায্যে কথাটা আর একটু পরিষ্কার করছি। গত মাসের কল্লোলে শ্রীযুক্ত ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তিনখানি বইয়ের গুণ গেয়েছেন। তার মধ্যে একখানি হচ্ছে ‘গড্ডলিকা’। কিছুদিন আগেও আমিও এ বইয়ের মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করেছি।
আমার যতদূর মনে পড়ে, এ প্রশংসাসূত্রে এক জায়গায় বলেছিলাম যে বঙ্গসাহিত্যে এর তুলনা নেই। এই কথা শুনে বীরবল যদি বেজার হতেন তো ভেবে দেখুন, কী মুশকিলেই পড়তুম। তখন তাঁকে গিয়ে বলতে হতো যে ‘গড্ডলিকার হাস্যরস আর তোমার হাস্যরস এক জাতীয় নয়।’ এ কথা শুনে তিনি যদি প্রশ্ন করতেন যে ও-দুয়ের প্রভেদটা কী? তা হলে উত্তরে আলঙ্কারিকদের এই বচন আওড়াতে বাধ্য হতুম
ইক্ষুক্ষীর গুড়াদীনাং মাধুর্য্য স্যাস্তরং মহৎ।
তথাপি ন তদাখ্যাতুঃ সরস্বতাপি শক্যতে।।
বীরবলের উদাহরণ দিচ্ছি এই কারণে যে তিনি আমার ঘরের লোক, সুতরাং তাঁর নাম করায় আমার বিশেষ কোনো ভয়ের কারণ নেই। কিন্তু বীরবল না হয়ে যদি কোনো নির্বল রসিক আমার ওপর নারাজ হতেন, সেটা অবশ্য নিতান্ত আক্ষেপের কারণ হতো। শ্রীযুক্ত ধূর্জটিপ্রসাদের সমালোচনার ওপর আপনারা যে মন্তব্য প্রকাশ করেছেন, তা-ই পড়েই আমার মনে এই কথা উদয় হয়েছে যে সমালোচকের পক্ষে এ যুগে কারও প্রশংসা করা তার নিন্দা করার চাইতেও বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। এ যুগ তো আর বঙ্গদর্শনের যুগ নয়, যখন বঙ্কিমচন্দ্র সাহিত্যের রাজপদে প্রতিষ্ঠিত হয়ে লেখকদের সরাসরি বিচার করতেন ও খুশিমতো তাঁদের তিরস্কৃত ও পুরস্কৃত করতেন ও পাঠকসমাজ তাঁর কথাই বেদবাক্য বলে মেনে নিত। এ যুগ যে সাহিত্যেরও ডেমোক্রেটিক যুগ। আপনারা জানিয়ে রেখেছেন যে শ্রীযুক্ত ধূর্জটিপ্রসাদের প্রবন্ধের স্বপক্ষে-বিপক্ষে কোনো কথাই আপনারা প্রকাশ করবেন না। তবুও আমি যে এ বিষয়ে দু-চার কথা বলছি, তার কারণ উক্ত প্রবন্ধ আমার আলোচ্য বিষয় নয়, শুধু আলোচনার উপলক্ষ্য মাত্র। কোনো সমালোচকের কোনো মতামতের প্রতিবাদ কিম্বা সমর্থন করবার দিন এখন চলে গিয়েছে। কেননা এ যুগে সাহিত্য সম্বন্ধে শুধু ব্যক্তিগত মতামতেরই অর্থ ও সার্থকতা আছে।
এ যুগে নিজের মন ছাড়া অপর কোনো রকম কষ্টিপাথর লোকের হাতে নেই, যার সাহায্যে সে সাহিত্যের দর করে দেবে। ইংরেজিতে যাকে বলে cannons of critricism এ যুগে সেসব বিলকুল বাতিল হয়ে গিয়েছে। অলঙ্কারশাস্ত্রের বিধি অনুসরণ করে কেউ কস্মিনকালেও কাব্যরচনা করতে পারেননি এবং সেকালেও কবিরা সে শাস্ত্রের নিষেধও পদে-পদে লঙ্ঘন করতে বাধ্য হয়েছেন। সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্রে কাব্যদেহের দোষের একটা লম্বা ফর্দ আছে, অথচ আলঙ্কারিকরাই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে দোষ হয়ে গুণ হলো কবির বিদ্যায়। দৈব বিধান যে শাস্ত্রবিধানের চাইতে প্রবল, এ কথাও তাঁরা স্পষ্টাক্ষরে বলে গিয়েছেন।
এ যুগে আমরা এ ক্ষেত্রে কোনোরূপ শাস্ত্রবিধান গ্রাহ্য করতে পারিনে, ফলে উক্ত বিধান অনুসারে এ কাব্য, ও নয়, এমন কথাও বলতে অধিকারী নই। কারণ দেখতে পাওয়া যায় যে নিত্যনতুন সাহিত্য সৃষ্টি হচ্ছে যা কোনো পুরোনো নিয়মের অধীন নয়। ফলে সাহিত্য-সমালোচনার জন্য সমালোচকেরা নিজের রুচির ওপরই নির্ভর করতে বাধ্য। এক হিসেবে এটি দুঃখের বিষয়, কারণ প্রতি ব্যক্তি যদি কেবলমাত্র নিজের রুচির ওপর নির্ভর করেন, তা হলে সামাজিক রুচি বলে কোনো জিনিস জন্মাতে পারে না—ফলে এ ক্ষেত্রে যা জন্মায়, তারা নাম critical anarchism। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ যুগে সমালোচকদের মেনে নিতে হবে যে সমালোচনা করার অর্থ হচ্ছে আত্মপ্রকাশ করা। এতে যিনি ভয় পান, তাঁর পক্ষে সমালোচনা ত্যাগ করাই কর্তব্য। লেখকদলকে লালন-পালন শাসন-সংরক্ষণ করবার দায়িত্ব এ যুগের সমালোচকদের নেই।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

আমরা যারা লিখি, আমরা সকলেই চাই, আমাদের লেখা অপরে সমালোচনা করুক। এর কারণও অতি স্পষ্ট। লেখক মাত্রেই লেখেন পাঠকের জন্য। যদি আমাদের লেখা সম্বন্ধে সকলে নীরব থাকেন তো বুঝতে পারি নে, সে লেখা কেউ পড়েছেন কি না। অপর পক্ষে তার সমালোচনার সাক্ষাৎ পেলেই আমরা এই মনে করে কতকটা স্বস্তি অনুভব করি,
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

আমরা যারা লিখি, আমরা সকলেই চাই, আমাদের লেখা অপরে সমালোচনা করুক। এর কারণও অতি স্পষ্ট। লেখক মাত্রেই লেখেন পাঠকের জন্য। যদি আমাদের লেখা সম্বন্ধে সকলে নীরব থাকেন তো বুঝতে পারি নে, সে লেখা কেউ পড়েছেন কি না। অপর পক্ষে তার সমালোচনার সাক্ষাৎ পেলেই আমরা এই মনে করে কতকটা স্বস্তি অনুভব করি,
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

আমরা যারা লিখি, আমরা সকলেই চাই, আমাদের লেখা অপরে সমালোচনা করুক। এর কারণও অতি স্পষ্ট। লেখক মাত্রেই লেখেন পাঠকের জন্য। যদি আমাদের লেখা সম্বন্ধে সকলে নীরব থাকেন তো বুঝতে পারি নে, সে লেখা কেউ পড়েছেন কি না। অপর পক্ষে তার সমালোচনার সাক্ষাৎ পেলেই আমরা এই মনে করে কতকটা স্বস্তি অনুভব করি,
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

আমরা যারা লিখি, আমরা সকলেই চাই, আমাদের লেখা অপরে সমালোচনা করুক। এর কারণও অতি স্পষ্ট। লেখক মাত্রেই লেখেন পাঠকের জন্য। যদি আমাদের লেখা সম্বন্ধে সকলে নীরব থাকেন তো বুঝতে পারি নে, সে লেখা কেউ পড়েছেন কি না। অপর পক্ষে তার সমালোচনার সাক্ষাৎ পেলেই আমরা এই মনে করে কতকটা স্বস্তি অনুভব করি,
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫