হরিপদ দত্ত

কাঁঠালিচাঁপার ঝোপের পাশে এক সন্ধ্যাকালে পিতাকে সে দেখেছিল নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে। তখন মেয়েটির চোখ থেকে ঝরছিল বিস্ময়ের বৃষ্টি। এক কি দুপলক। পরমুহূর্তেই বাড়ি ছুটে গিয়েছিল মাকে কথাটা জানাতে। মা ঘরে ছিল না। শাক কুড়াতে গিয়েছিল মাঠের ধানখেতের আলে। কার্তিকের মাঠে তখন কুয়াশা কিংবা ওস্ ঝরছিল। ওস্ ভেজা ঘেসো পথে পা ফেলে ছুটছিল আট বছরের মেয়েটি। কাকতাড়ুয়ার মতো জনশূন্য ধানের মাঠে মাকে সটান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে। মায়ের আঁচলে হেলেঞ্চা শাক। তেতো শাক।
ও আম্মা, কী করস? আব্বায় ফিরা আইছে, মেয়েটি ছুটতে গিয়ে হামলে পড়ে মায়ের ওপর। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য।
‘ক্যাডা, ক্যাডা ফিরা আইছে, তর আব্বায়নি?’ আইনুল বিবি কেঁদে ফেলে। সে বুঝতে পারে মেয়ের দৃষ্টিভ্রম ঘটেছে। নিখোঁজ কিংবা খুন হওয়া মরা মানুষ কী করে ফেরে? মেয়েকে কি জিন এসে মতিভ্রষ্ট করেছে? তবে সে এটা বিশ্বাস করে, মৃত স্বামী না ফিরলেও আদম-হাওয়া আজও অজ পাড়াগাঁয়ে ফিরে আসে। সেই কবেকার দুনিয়ার কথা আর ফেরেশতাদের কথা গীতের স্বরে বলে যায়। আরও বলে যায় পুত্র হাবিল আর কাবিলের কথা, যে একজন ভ্রাতৃঘাতক। দুনিয়ায় প্রথম খুনি।
মেয়ের নয়, মায়েরই মাঝেমধ্যে মতিভ্রম ঘটে। রাত-বিরাতে ছনের নড়বড়ে চালের ঘরের ভেতর জোনাক ঢুকলেও তা সাপের শরীরের মতো আঁকাবাঁকা হয়ে পড়ে থাকে। কেবল এক চিলতে উঠোন, পাশে যার বাতাবি লেবু বা জাম্বুরা গাছ, তার ছায়া পড়ে আর অবশিষ্ট জায়গায় লেপটে থাকে নরম ভেজাটে জোনাক। সেই গাছের জোছনার ছায়ায় এসে নির্জনে দাঁড়িয়ে থাকুক তার মৃত স্বামীর অজাগতিক শরীর, এমনটা করুণ সাধ তার। অনতি দূরে জোছনার ভেতর ঝিঁঝি কিংবা জোনাকির ওড়াউড়ি, ডাকাডাকি করলেও সেসবে মন নেই ওর।
এক রাতে যারা ওকে পড়শির পরিচয়ে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়েছিল এবং যে যাত্রা শেষে মানুষটি আর ঘরে ফেরেনি, তারা ওকে খোদার রহমতের কথা শোনায়। তাদের প্রত্যেকের চোখে সে দেখেছিল আজরাইলের মশাল। তারাই তাকে গাঙের নয়া চর জাগার কথা বারবার শোনায় এবং মেয়েকে নিয়ে নতুন ঠিকানায় চলে যাক, সে ঠিকানাও দেখায়। বাড়িটাসমেত মাত্র সাড়ে তিন বিঘের ভূমি খোদার এই অন্তহীন ফসলের আদিগন্ত জমিনের দেশে যত ক্ষুদ্রই হোক, মাটির আকালের কালে তা বড় কম নয়। সেই ভূমির অধিকার ছাড়তে রাজি ছিল না বলেই কি নিখোঁজ হয়ে গেল লোকটা? অথচ আইনুল বিবি বাড়ি ছেড়ে যেতে আজ তৈরি। আসছে মহররমের শেষে মেয়ের হাত ধরে আইনুল বিবি চলে যাবে খোদার রহমতের গাঙের সেই নয়া চরে। তার স্বামীর আঙুলের টিপসই দেওয়া গোপন জাল দলিলও ওদের হাতেই দেখেছে সে। বাড়ি-জমিন নাকি সে বিক্রি করে দিয়েছে সেই কবে। বাকি যে ছিল সেই পাঁচ হাজার টাকা তো পেয়েছে আইনুল। মা-মেয়ে ঠিক করেছে এই জোনাক পক্ষের রাত থাকতে থাকতেই ওরা চলে যাবে সোনার বাংলার সোনা ছড়ানোর ঠিকানার গাঙের চরে। কিন্তু সঙ্গী হবে কোন পুরুষ? পুরুষহীন নারী এ দেশে পাপের শক্তি।
পুরুষ জাতির দখলের এই রাজ্যে পুরুষ বিনে কী করে মা-মেয়ে অজানা ঠিকানায় পা ফেলবে? কিন্তু আতঙ্ক নেই। যাদের নামে দলিল তারাই ওদের সঙ্গী হবে। ওখানে সরকারি গুচ্ছগ্রাম আছে। খোদার অশেষ রহমত বানের পানির মতো থইথই করছে। মাঠে মাঠে সোনার ফসল। সেই নয়া দুনিয়ায় পুরাতন পৃথিবীর বাসিন্দা নানা জাতির পাখ-পাখালিরাও বসত গড়ে তুলছে। সবজির খেতে সূর্যের আলো আর রাতের জোনাক ফকফক করে। নীল আকাশ আর চরের শেষ সীমানায় বহমান গাঙ স্রোতের শব্দের ভেতর গান গায়। ছিন্নমূল ভূমিহীন মানুষের এ যেন এক মায়াবী দুনিয়া।
যাবে। নিশ্চয়ই যাবে আইনুল বিবি। দূর গাঁয়ের ভাইয়েরা আর বিচলিত হবে না অকাল বিধবা কিংবা নিরুদ্দেশ স্বামীর বোনের জন্য। পিতার ঘরে আশ্রয় নেবে না বলে তারা হয়েছে দায়মুক্ত। বোনের বোঝা বোনই নিজে বইবে বলে খোদার কাছে কৃতজ্ঞ ওরা। আইনুল বিবি ভাবে, গ্রামটি ছেড়ে পথে নামার সময় কী কী পেছনে ফেলে যাবে সে? স্বামীর সঙ্গে ঘর-সংসারের স্মৃতি, দেহমিলন, গর্ভধারণ, সন্তান জন্মদান। আর কী কী স্মৃতি? পাড়ার নজু খালা, খাতুন ফুপি, জব্বার চাচা। ভিটেবাড়ি, জোত-জমিন, না এসবে তার মায়া-মহব্বত নেই। ওরা দুশমন, ওকে তো লাথি মেরে তাড়িয়েই দিচ্ছে, তবে কোন মহব্বত? গাঁয়ের একটা মানুষও তার পক্ষে দাঁড়াল না। দু-একজন কথা বললেও শাসানিতে থুবড়ে গেছে। তবে যেখানেই থাক, বর্ষা, শীত এবং অন্য সব মৌসুমের গ্রাম, বাপের বাড়ির পথ, বিল, মাঠ সব মনে পড়বে তার। বাড়ির পাশের মোল্লাদের প্রাচীন জারুল গাছের মগডালে প্রতিবছর যে দুটো চিল বাসা বেঁধে ডিম ফোটায় তাদের কথা খুব মনে পড়বে। নিজের গর্ভধারণ তো পাখির ডিমেরই স্মৃতি।
কিন্তু নিখোঁজ লোকটা গেল কোথায়? পাশের গাঁয়ের শমসের গুনিন বলেছে, হারানো মানুষটা একদিন না একদিন ফিরে আসবে। তার পরামর্শে আইনুল বিবি দুই শুক্রবার রোজাও রেখেছে। গুনিন বলেছে, ওর স্বামী কোনো এক ফকির-দরবেশের মুরিদ হয়ে গেছে। তাই এক রাতে সে ফকিরের বেশে ফিরে আসবে আর খোদার অসীম ক্ষমতার কথা বলবে গাঁয়ের সবাইকে। তার হাতে থাকবে পাঁচ পলতের চেরাগ। বিশ্বাস করেছে আইনুল বিবি। মায়ার সংসারত্যাগী মানুষটি হয়তো তাকে আর মেয়েকে দোয়া বরকতের জন্য নিয়ে যাবে ফকির আলেমের আস্তানায়। ও হবে ভাগ্যবতী।
মা মেয়েকে প্রবোধ দিয়ে বলে, ‘তর বাপে ফিরব কোনো এক জোনাক রাইতে, লইয়া যাইব ফকিরের আস্তানায় দোয়া লইতে, তারপরে পথ চিনাইয়া হাঁটব গাঙের চরের ঠিকানায়, ফকিরি ছাইড়া মানুষটা আবার ফিকিরির দুনিয়াদারি হইব দ্যাহিস।’
‘তবে কবে আইব আব্বায়? ফকিরি কাপড় পরলে আমি নি চিনতে পারমু?’
‘পারবি না ক্যান, যে তরে পয়দা দিছে দুনিয়ার মাটিতে, মাইয়া হইয়া তারে চিনতে বুঝি ভুল করবি?’
‘যদি আব্বার লগে জিন থাহে, ডরামু না ত।’
‘চেরাগের আলো থাকব লগে, তবে আবার ডর কি?’
না। ভয় নাই। মেয়ে ভাবে। তাই রাতের প্রথম প্রহরে বাড়ি ছাড়িয়ে মোল্লাবাড়ির কারখানার ভাঁট ঝোপে জোনাকির আলো দেখতে পায় মেয়ে। পলকহীন তাকিয়ে থেকে ভাবে, ওখানে কি তার বাপ পাঁচ পলতের চেরাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে? তাই সে জোরে পিতাকে ডাকে, ‘অ আব্বা, কবরখানায় কী কর? বাড়িত আইবা না?’
মা পাশে এসে দাঁড়ায়। দূরের জোনাকির আলো একপলক দেখে নিয়ে কেঁদে ফেলে, ‘কবরখানায় কি বাপেরে দ্যাখছস? না, কিচ্ছু না, ঘরের ভিতরে যা, ডরাবি, কী না কী দেইখ্যা।’
মেয়ের হাত ধরে চালাঘরে ঢুকে যায় মা। কুপির আলো জ্বলছে। সে আলোর দিকে তাকিয়ে মা বলে, ‘গাঙের চরে নয়া বসতভিটায় গিয়া জমিনে চাষের কাম করতে পারবি না আমার লগে-পিছে? তর বাপে থাকতে আমি কি তার লগে জমিনে কাম করি নাই?’
‘হ, পারমু না ক্যান আম্মা, এই বাড়ির লাহান পাকঘরের পিছনে থাকব বারমাইসা একটা কালামরিচের গাছ, আমগাছের গোড়ায় থাকব গন্ধবাদালি লতার ঝোপ, তারপরে থাকব ফণিমনসার গাছ, সাপ আইব না বাড়িত—ঠিক না আম্মা?’
‘হ, বেবাকই ঠিক। আমি খালি তর আব্বারে কই, ক্যামন মানুষ তুমি, বাড়িঘর-সংসার ছাইড়া দরবেশের মুরিদ অইয়া পালাইলা? সংসারের দায় কি আমার একলার? খেত-জমিনের কাম কি খালি তুমি একলাই করতা? তুমার আর লাঙলের পাছে আমি মাঠে ঘুরি নাই? আমার কতা ছাড়, মাইয়া যে পয়দা দিলা তার দায় কার?’
‘আব্বারে দুইষ না আম্মা, খোদায় বেজার অইব। দ্যাখবা আব্বায় ফিরা আইব, আমার লাইগা না হইলেও তুমার লাইগা আইব।’
‘কী কইলি তুই? আমার লাইগানি ফিরা আইব? বাপ যে কী জিনিস আইজও চিনলি নারে মাইয়া। মাইয়া হইল বাপের রক্তের পয়দা, বউ পরের মাইয়া। কার টান বেশি?’
এই সংসারে কার জন্য যে কার অধিক টান তা বোঝা সহজ কথা নয়। মেয়ের টান, বউয়ের টান, বাড়িঘরের টান, মাটির টান, গ্রামের টান, কোনোটাই কম নয়। এত জটিল হিসাব অশিক্ষিত গ্রাম্য চাষির বউ যতটুকু বুঝতে পারে, তার চেয়ে অধিক টের পায় ক্ষুধা-দারিদ্র্য আর উপার্জনের একমাত্র মানুষটির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি। এ যেন অন্ধকার রাতে একাকী অচেনা পথে হাঁটতে গিয়ে দৃষ্টিভ্রমে পড়ে যাওয়া। চারদিকে কেবলই জীবন্ত চলমান নর-কঙ্কালের ভয়ংকর ছায়ামূর্তি! অট্টহাসি!
এক মধ্যরাতে আইনুল বিবির নিরুদ্দিষ্ট স্বামী বাড়ি ফিরে আসে। এই নির্মম নিষ্ঠুর দুনিয়ার কেউ না জানলেও সে জানত লোকটি তার কাছে ফিরে আসবেই। কেননা, খোদার হুকুমে তাঁকে সাক্ষী করেই বিয়ের আসরে সে কবুল উচ্চারণ করেছিল। আইনুল বিবি যা জানত না তা হচ্ছে, এই প্রত্যাগমন ঘটবে অজাগতিক। মনোলোক, দৃষ্টি এবং মস্তিষ্কের এক ভ্রম-প্রপঞ্চ হচ্ছে এই অজাগতিক পরিভ্রমণের অতিপ্রাকৃত কথা। অথচ আইনুল বিবির কাছে তা হচ্ছে পরম সত্য। মতিভ্রম নয়, বাস্তব সত্য।
আদপে সেই রাতে কোনো জোনাক ছিল না। চাঁদ অদৃশ্য। কিন্তু আকাশভরা তারা আর তারা। না জোনাক, না আঁধার অর্থাৎ কাঁই অন্ধকার। ওরা তিনজন গাঙের জেগে ওঠা নতুন বালির চরের উদ্দেশে হাঁটছে। আইনুল বিবি, তার কন্যা এবং অজাগতিক দুনিয়া থেকে ফেরা স্বামী। ওরা পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করলেও কন্যার কাছে ছিল সবই অদৃশ্য। সে তার জন্মদাতাকে দেখতে পায় না যেমনি, ঠিক তেমনি তাদের বাক্যালাপও শুনতে পায় না। নির্জন মাঠ। আলো-আঁধারির ছড়াছড়ি। কাঁই অন্ধকারে তাদের ফসলশূন্য জমিনের এক কোণে নিমগাছটির পাতায় পাতায় পানসে আঁধার। ওই দূরের বাঁশবনের জমাট ঘন অন্ধকারের ভেতর একটি প্যাঁচা ডেকে ওঠে। পরপর তিনটে ডাক।
‘আমরা যে গাঙের চরে যাইতাছি, সেহানে সরকার খালি ঘর দিছে, জমিন ত দেয় নাই, তয় খামু কী?’ স্বামীর কাছে জানতে চায় আইনুল বিবি।
‘তুই-আমি দূর গেরামে গিয়া অন্যের খেতে জন খাটমু’, উত্তর দেয় অজাগতিক দেহধারী স্বামী।
‘তুমার কি ফেলাইয়া যাওয়া বাড়ি-জমিনের লাইগ্যা মায়া নাই?’
‘দুনিয়ার ফসলখেতের মায়া করলে খোদা বেরাজি হইব।’
এখনই বাক্যালাপে পথ কাটে ওরা। আইনুল বিবির সব সংসারী সাধ আর স্বপ্নেরা সঙ্গে চলে। সে ভুলে যায়, যে মানুষটা স্বামীর রূপ ধরে সঙ্গে হাঁটছে, সে একটি গোলকধাঁধা। তাকে ছোঁয়া যায় না। অন্য শরীরী মানুষ সে। তাই এ কথা ওর মনে আসার কথা নয়, মানুষটি নিত্যদিন এবং কবরে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সুখ-দুঃখের অঙ্গীকারবদ্ধ সঙ্গী। কাঁই অন্ধকারের সঙ্গী কি মা হাওয়ার সেই বাবা আদম ছিল না। হঠাৎ এখন কেন গাঁয়ের সেসব মানুষের কথা মনে পড়ছে, যারা অসীম ক্ষমতাবান? যারা ভূমিহীন ছিন্নমূল করে তাদের দেশছাড়া করেছে, তাদের অন্তরে মমতা ছিল না কেন? কেন এত গোনাহে পূর্ণ? নাকি জাহান্নামকে পূর্ণ করার জন্য?
এসব কথা মনে হতেই হঠাৎ আইনুল বিবির দৃষ্টি চারপাশের আলো-আঁধারির দুনিয়ায় বাতাসের মতো আছড়ে পড়ে। সে তার স্বামীকে কোথাও দেখতে পায় না। অদৃশ্য দূরে নদীর রেখা। গুচ্ছগ্রামের ভৌতিক ছায়া নাচে। আকাশের কোণে মরা পশুর কঙ্কালের বুকের হাড়ের মতো বাঁকা নিষ্ঠুর চাঁদ। ঘরে ফেরা এবং তার সঙ্গী হয়ে পথচলা অদৃশ্য দূর-দিগন্তের মানুষটি কি সত্যি মিথ্যে মরীচিকা? খোদার এই দুনিয়ায় তার কি কোনো অস্তিত্বই নেই? কান্নায় ভেঙে পড়ে আইনুল বিবি কন্যাকে জড়িয়ে ধরে। এ কান্না খোদার সপ্ত আসমানভেদী।

কাঁঠালিচাঁপার ঝোপের পাশে এক সন্ধ্যাকালে পিতাকে সে দেখেছিল নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে। তখন মেয়েটির চোখ থেকে ঝরছিল বিস্ময়ের বৃষ্টি। এক কি দুপলক। পরমুহূর্তেই বাড়ি ছুটে গিয়েছিল মাকে কথাটা জানাতে। মা ঘরে ছিল না। শাক কুড়াতে গিয়েছিল মাঠের ধানখেতের আলে। কার্তিকের মাঠে তখন কুয়াশা কিংবা ওস্ ঝরছিল। ওস্ ভেজা ঘেসো পথে পা ফেলে ছুটছিল আট বছরের মেয়েটি। কাকতাড়ুয়ার মতো জনশূন্য ধানের মাঠে মাকে সটান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে। মায়ের আঁচলে হেলেঞ্চা শাক। তেতো শাক।
ও আম্মা, কী করস? আব্বায় ফিরা আইছে, মেয়েটি ছুটতে গিয়ে হামলে পড়ে মায়ের ওপর। দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য।
‘ক্যাডা, ক্যাডা ফিরা আইছে, তর আব্বায়নি?’ আইনুল বিবি কেঁদে ফেলে। সে বুঝতে পারে মেয়ের দৃষ্টিভ্রম ঘটেছে। নিখোঁজ কিংবা খুন হওয়া মরা মানুষ কী করে ফেরে? মেয়েকে কি জিন এসে মতিভ্রষ্ট করেছে? তবে সে এটা বিশ্বাস করে, মৃত স্বামী না ফিরলেও আদম-হাওয়া আজও অজ পাড়াগাঁয়ে ফিরে আসে। সেই কবেকার দুনিয়ার কথা আর ফেরেশতাদের কথা গীতের স্বরে বলে যায়। আরও বলে যায় পুত্র হাবিল আর কাবিলের কথা, যে একজন ভ্রাতৃঘাতক। দুনিয়ায় প্রথম খুনি।
মেয়ের নয়, মায়েরই মাঝেমধ্যে মতিভ্রম ঘটে। রাত-বিরাতে ছনের নড়বড়ে চালের ঘরের ভেতর জোনাক ঢুকলেও তা সাপের শরীরের মতো আঁকাবাঁকা হয়ে পড়ে থাকে। কেবল এক চিলতে উঠোন, পাশে যার বাতাবি লেবু বা জাম্বুরা গাছ, তার ছায়া পড়ে আর অবশিষ্ট জায়গায় লেপটে থাকে নরম ভেজাটে জোনাক। সেই গাছের জোছনার ছায়ায় এসে নির্জনে দাঁড়িয়ে থাকুক তার মৃত স্বামীর অজাগতিক শরীর, এমনটা করুণ সাধ তার। অনতি দূরে জোছনার ভেতর ঝিঁঝি কিংবা জোনাকির ওড়াউড়ি, ডাকাডাকি করলেও সেসবে মন নেই ওর।
এক রাতে যারা ওকে পড়শির পরিচয়ে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়েছিল এবং যে যাত্রা শেষে মানুষটি আর ঘরে ফেরেনি, তারা ওকে খোদার রহমতের কথা শোনায়। তাদের প্রত্যেকের চোখে সে দেখেছিল আজরাইলের মশাল। তারাই তাকে গাঙের নয়া চর জাগার কথা বারবার শোনায় এবং মেয়েকে নিয়ে নতুন ঠিকানায় চলে যাক, সে ঠিকানাও দেখায়। বাড়িটাসমেত মাত্র সাড়ে তিন বিঘের ভূমি খোদার এই অন্তহীন ফসলের আদিগন্ত জমিনের দেশে যত ক্ষুদ্রই হোক, মাটির আকালের কালে তা বড় কম নয়। সেই ভূমির অধিকার ছাড়তে রাজি ছিল না বলেই কি নিখোঁজ হয়ে গেল লোকটা? অথচ আইনুল বিবি বাড়ি ছেড়ে যেতে আজ তৈরি। আসছে মহররমের শেষে মেয়ের হাত ধরে আইনুল বিবি চলে যাবে খোদার রহমতের গাঙের সেই নয়া চরে। তার স্বামীর আঙুলের টিপসই দেওয়া গোপন জাল দলিলও ওদের হাতেই দেখেছে সে। বাড়ি-জমিন নাকি সে বিক্রি করে দিয়েছে সেই কবে। বাকি যে ছিল সেই পাঁচ হাজার টাকা তো পেয়েছে আইনুল। মা-মেয়ে ঠিক করেছে এই জোনাক পক্ষের রাত থাকতে থাকতেই ওরা চলে যাবে সোনার বাংলার সোনা ছড়ানোর ঠিকানার গাঙের চরে। কিন্তু সঙ্গী হবে কোন পুরুষ? পুরুষহীন নারী এ দেশে পাপের শক্তি।
পুরুষ জাতির দখলের এই রাজ্যে পুরুষ বিনে কী করে মা-মেয়ে অজানা ঠিকানায় পা ফেলবে? কিন্তু আতঙ্ক নেই। যাদের নামে দলিল তারাই ওদের সঙ্গী হবে। ওখানে সরকারি গুচ্ছগ্রাম আছে। খোদার অশেষ রহমত বানের পানির মতো থইথই করছে। মাঠে মাঠে সোনার ফসল। সেই নয়া দুনিয়ায় পুরাতন পৃথিবীর বাসিন্দা নানা জাতির পাখ-পাখালিরাও বসত গড়ে তুলছে। সবজির খেতে সূর্যের আলো আর রাতের জোনাক ফকফক করে। নীল আকাশ আর চরের শেষ সীমানায় বহমান গাঙ স্রোতের শব্দের ভেতর গান গায়। ছিন্নমূল ভূমিহীন মানুষের এ যেন এক মায়াবী দুনিয়া।
যাবে। নিশ্চয়ই যাবে আইনুল বিবি। দূর গাঁয়ের ভাইয়েরা আর বিচলিত হবে না অকাল বিধবা কিংবা নিরুদ্দেশ স্বামীর বোনের জন্য। পিতার ঘরে আশ্রয় নেবে না বলে তারা হয়েছে দায়মুক্ত। বোনের বোঝা বোনই নিজে বইবে বলে খোদার কাছে কৃতজ্ঞ ওরা। আইনুল বিবি ভাবে, গ্রামটি ছেড়ে পথে নামার সময় কী কী পেছনে ফেলে যাবে সে? স্বামীর সঙ্গে ঘর-সংসারের স্মৃতি, দেহমিলন, গর্ভধারণ, সন্তান জন্মদান। আর কী কী স্মৃতি? পাড়ার নজু খালা, খাতুন ফুপি, জব্বার চাচা। ভিটেবাড়ি, জোত-জমিন, না এসবে তার মায়া-মহব্বত নেই। ওরা দুশমন, ওকে তো লাথি মেরে তাড়িয়েই দিচ্ছে, তবে কোন মহব্বত? গাঁয়ের একটা মানুষও তার পক্ষে দাঁড়াল না। দু-একজন কথা বললেও শাসানিতে থুবড়ে গেছে। তবে যেখানেই থাক, বর্ষা, শীত এবং অন্য সব মৌসুমের গ্রাম, বাপের বাড়ির পথ, বিল, মাঠ সব মনে পড়বে তার। বাড়ির পাশের মোল্লাদের প্রাচীন জারুল গাছের মগডালে প্রতিবছর যে দুটো চিল বাসা বেঁধে ডিম ফোটায় তাদের কথা খুব মনে পড়বে। নিজের গর্ভধারণ তো পাখির ডিমেরই স্মৃতি।
কিন্তু নিখোঁজ লোকটা গেল কোথায়? পাশের গাঁয়ের শমসের গুনিন বলেছে, হারানো মানুষটা একদিন না একদিন ফিরে আসবে। তার পরামর্শে আইনুল বিবি দুই শুক্রবার রোজাও রেখেছে। গুনিন বলেছে, ওর স্বামী কোনো এক ফকির-দরবেশের মুরিদ হয়ে গেছে। তাই এক রাতে সে ফকিরের বেশে ফিরে আসবে আর খোদার অসীম ক্ষমতার কথা বলবে গাঁয়ের সবাইকে। তার হাতে থাকবে পাঁচ পলতের চেরাগ। বিশ্বাস করেছে আইনুল বিবি। মায়ার সংসারত্যাগী মানুষটি হয়তো তাকে আর মেয়েকে দোয়া বরকতের জন্য নিয়ে যাবে ফকির আলেমের আস্তানায়। ও হবে ভাগ্যবতী।
মা মেয়েকে প্রবোধ দিয়ে বলে, ‘তর বাপে ফিরব কোনো এক জোনাক রাইতে, লইয়া যাইব ফকিরের আস্তানায় দোয়া লইতে, তারপরে পথ চিনাইয়া হাঁটব গাঙের চরের ঠিকানায়, ফকিরি ছাইড়া মানুষটা আবার ফিকিরির দুনিয়াদারি হইব দ্যাহিস।’
‘তবে কবে আইব আব্বায়? ফকিরি কাপড় পরলে আমি নি চিনতে পারমু?’
‘পারবি না ক্যান, যে তরে পয়দা দিছে দুনিয়ার মাটিতে, মাইয়া হইয়া তারে চিনতে বুঝি ভুল করবি?’
‘যদি আব্বার লগে জিন থাহে, ডরামু না ত।’
‘চেরাগের আলো থাকব লগে, তবে আবার ডর কি?’
না। ভয় নাই। মেয়ে ভাবে। তাই রাতের প্রথম প্রহরে বাড়ি ছাড়িয়ে মোল্লাবাড়ির কারখানার ভাঁট ঝোপে জোনাকির আলো দেখতে পায় মেয়ে। পলকহীন তাকিয়ে থেকে ভাবে, ওখানে কি তার বাপ পাঁচ পলতের চেরাগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে? তাই সে জোরে পিতাকে ডাকে, ‘অ আব্বা, কবরখানায় কী কর? বাড়িত আইবা না?’
মা পাশে এসে দাঁড়ায়। দূরের জোনাকির আলো একপলক দেখে নিয়ে কেঁদে ফেলে, ‘কবরখানায় কি বাপেরে দ্যাখছস? না, কিচ্ছু না, ঘরের ভিতরে যা, ডরাবি, কী না কী দেইখ্যা।’
মেয়ের হাত ধরে চালাঘরে ঢুকে যায় মা। কুপির আলো জ্বলছে। সে আলোর দিকে তাকিয়ে মা বলে, ‘গাঙের চরে নয়া বসতভিটায় গিয়া জমিনে চাষের কাম করতে পারবি না আমার লগে-পিছে? তর বাপে থাকতে আমি কি তার লগে জমিনে কাম করি নাই?’
‘হ, পারমু না ক্যান আম্মা, এই বাড়ির লাহান পাকঘরের পিছনে থাকব বারমাইসা একটা কালামরিচের গাছ, আমগাছের গোড়ায় থাকব গন্ধবাদালি লতার ঝোপ, তারপরে থাকব ফণিমনসার গাছ, সাপ আইব না বাড়িত—ঠিক না আম্মা?’
‘হ, বেবাকই ঠিক। আমি খালি তর আব্বারে কই, ক্যামন মানুষ তুমি, বাড়িঘর-সংসার ছাইড়া দরবেশের মুরিদ অইয়া পালাইলা? সংসারের দায় কি আমার একলার? খেত-জমিনের কাম কি খালি তুমি একলাই করতা? তুমার আর লাঙলের পাছে আমি মাঠে ঘুরি নাই? আমার কতা ছাড়, মাইয়া যে পয়দা দিলা তার দায় কার?’
‘আব্বারে দুইষ না আম্মা, খোদায় বেজার অইব। দ্যাখবা আব্বায় ফিরা আইব, আমার লাইগা না হইলেও তুমার লাইগা আইব।’
‘কী কইলি তুই? আমার লাইগানি ফিরা আইব? বাপ যে কী জিনিস আইজও চিনলি নারে মাইয়া। মাইয়া হইল বাপের রক্তের পয়দা, বউ পরের মাইয়া। কার টান বেশি?’
এই সংসারে কার জন্য যে কার অধিক টান তা বোঝা সহজ কথা নয়। মেয়ের টান, বউয়ের টান, বাড়িঘরের টান, মাটির টান, গ্রামের টান, কোনোটাই কম নয়। এত জটিল হিসাব অশিক্ষিত গ্রাম্য চাষির বউ যতটুকু বুঝতে পারে, তার চেয়ে অধিক টের পায় ক্ষুধা-দারিদ্র্য আর উপার্জনের একমাত্র মানুষটির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি। এ যেন অন্ধকার রাতে একাকী অচেনা পথে হাঁটতে গিয়ে দৃষ্টিভ্রমে পড়ে যাওয়া। চারদিকে কেবলই জীবন্ত চলমান নর-কঙ্কালের ভয়ংকর ছায়ামূর্তি! অট্টহাসি!
এক মধ্যরাতে আইনুল বিবির নিরুদ্দিষ্ট স্বামী বাড়ি ফিরে আসে। এই নির্মম নিষ্ঠুর দুনিয়ার কেউ না জানলেও সে জানত লোকটি তার কাছে ফিরে আসবেই। কেননা, খোদার হুকুমে তাঁকে সাক্ষী করেই বিয়ের আসরে সে কবুল উচ্চারণ করেছিল। আইনুল বিবি যা জানত না তা হচ্ছে, এই প্রত্যাগমন ঘটবে অজাগতিক। মনোলোক, দৃষ্টি এবং মস্তিষ্কের এক ভ্রম-প্রপঞ্চ হচ্ছে এই অজাগতিক পরিভ্রমণের অতিপ্রাকৃত কথা। অথচ আইনুল বিবির কাছে তা হচ্ছে পরম সত্য। মতিভ্রম নয়, বাস্তব সত্য।
আদপে সেই রাতে কোনো জোনাক ছিল না। চাঁদ অদৃশ্য। কিন্তু আকাশভরা তারা আর তারা। না জোনাক, না আঁধার অর্থাৎ কাঁই অন্ধকার। ওরা তিনজন গাঙের জেগে ওঠা নতুন বালির চরের উদ্দেশে হাঁটছে। আইনুল বিবি, তার কন্যা এবং অজাগতিক দুনিয়া থেকে ফেরা স্বামী। ওরা পরস্পর দৃষ্টি বিনিময় করলেও কন্যার কাছে ছিল সবই অদৃশ্য। সে তার জন্মদাতাকে দেখতে পায় না যেমনি, ঠিক তেমনি তাদের বাক্যালাপও শুনতে পায় না। নির্জন মাঠ। আলো-আঁধারির ছড়াছড়ি। কাঁই অন্ধকারে তাদের ফসলশূন্য জমিনের এক কোণে নিমগাছটির পাতায় পাতায় পানসে আঁধার। ওই দূরের বাঁশবনের জমাট ঘন অন্ধকারের ভেতর একটি প্যাঁচা ডেকে ওঠে। পরপর তিনটে ডাক।
‘আমরা যে গাঙের চরে যাইতাছি, সেহানে সরকার খালি ঘর দিছে, জমিন ত দেয় নাই, তয় খামু কী?’ স্বামীর কাছে জানতে চায় আইনুল বিবি।
‘তুই-আমি দূর গেরামে গিয়া অন্যের খেতে জন খাটমু’, উত্তর দেয় অজাগতিক দেহধারী স্বামী।
‘তুমার কি ফেলাইয়া যাওয়া বাড়ি-জমিনের লাইগ্যা মায়া নাই?’
‘দুনিয়ার ফসলখেতের মায়া করলে খোদা বেরাজি হইব।’
এখনই বাক্যালাপে পথ কাটে ওরা। আইনুল বিবির সব সংসারী সাধ আর স্বপ্নেরা সঙ্গে চলে। সে ভুলে যায়, যে মানুষটা স্বামীর রূপ ধরে সঙ্গে হাঁটছে, সে একটি গোলকধাঁধা। তাকে ছোঁয়া যায় না। অন্য শরীরী মানুষ সে। তাই এ কথা ওর মনে আসার কথা নয়, মানুষটি নিত্যদিন এবং কবরে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সুখ-দুঃখের অঙ্গীকারবদ্ধ সঙ্গী। কাঁই অন্ধকারের সঙ্গী কি মা হাওয়ার সেই বাবা আদম ছিল না। হঠাৎ এখন কেন গাঁয়ের সেসব মানুষের কথা মনে পড়ছে, যারা অসীম ক্ষমতাবান? যারা ভূমিহীন ছিন্নমূল করে তাদের দেশছাড়া করেছে, তাদের অন্তরে মমতা ছিল না কেন? কেন এত গোনাহে পূর্ণ? নাকি জাহান্নামকে পূর্ণ করার জন্য?
এসব কথা মনে হতেই হঠাৎ আইনুল বিবির দৃষ্টি চারপাশের আলো-আঁধারির দুনিয়ায় বাতাসের মতো আছড়ে পড়ে। সে তার স্বামীকে কোথাও দেখতে পায় না। অদৃশ্য দূরে নদীর রেখা। গুচ্ছগ্রামের ভৌতিক ছায়া নাচে। আকাশের কোণে মরা পশুর কঙ্কালের বুকের হাড়ের মতো বাঁকা নিষ্ঠুর চাঁদ। ঘরে ফেরা এবং তার সঙ্গী হয়ে পথচলা অদৃশ্য দূর-দিগন্তের মানুষটি কি সত্যি মিথ্যে মরীচিকা? খোদার এই দুনিয়ায় তার কি কোনো অস্তিত্বই নেই? কান্নায় ভেঙে পড়ে আইনুল বিবি কন্যাকে জড়িয়ে ধরে। এ কান্না খোদার সপ্ত আসমানভেদী।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
২ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২১ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ অক্টোবর ২০২৫
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

কাঁঠালিচাঁপার ঝোপের পাশে এক সন্ধ্যাকালে পিতাকে সে দেখেছিল নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে। তখন মেয়েটির চোখ থেকে ঝরছিল বিস্ময়ের বৃষ্টি। এক কি দুপলক। পরমুহূর্তেই বাড়ি ছুটে গিয়েছিল মাকে কথাটা জানাতে। মা ঘরে ছিল না। শাক কুড়াতে গিয়েছিল মাঠের ধানখেতের আলে। কার্তিকের মাঠে তখন কুয়াশা কিংবা ওস্ ঝরছিল। ওস্ ভেজা ঘেসো পথ
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২১ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ অক্টোবর ২০২৫
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

কাঁঠালিচাঁপার ঝোপের পাশে এক সন্ধ্যাকালে পিতাকে সে দেখেছিল নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে। তখন মেয়েটির চোখ থেকে ঝরছিল বিস্ময়ের বৃষ্টি। এক কি দুপলক। পরমুহূর্তেই বাড়ি ছুটে গিয়েছিল মাকে কথাটা জানাতে। মা ঘরে ছিল না। শাক কুড়াতে গিয়েছিল মাঠের ধানখেতের আলে। কার্তিকের মাঠে তখন কুয়াশা কিংবা ওস্ ঝরছিল। ওস্ ভেজা ঘেসো পথ
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
২ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ অক্টোবর ২০২৫
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

কাঁঠালিচাঁপার ঝোপের পাশে এক সন্ধ্যাকালে পিতাকে সে দেখেছিল নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে। তখন মেয়েটির চোখ থেকে ঝরছিল বিস্ময়ের বৃষ্টি। এক কি দুপলক। পরমুহূর্তেই বাড়ি ছুটে গিয়েছিল মাকে কথাটা জানাতে। মা ঘরে ছিল না। শাক কুড়াতে গিয়েছিল মাঠের ধানখেতের আলে। কার্তিকের মাঠে তখন কুয়াশা কিংবা ওস্ ঝরছিল। ওস্ ভেজা ঘেসো পথ
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
২ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

কাঁঠালিচাঁপার ঝোপের পাশে এক সন্ধ্যাকালে পিতাকে সে দেখেছিল নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকতে। তখন মেয়েটির চোখ থেকে ঝরছিল বিস্ময়ের বৃষ্টি। এক কি দুপলক। পরমুহূর্তেই বাড়ি ছুটে গিয়েছিল মাকে কথাটা জানাতে। মা ঘরে ছিল না। শাক কুড়াতে গিয়েছিল মাঠের ধানখেতের আলে। কার্তিকের মাঠে তখন কুয়াশা কিংবা ওস্ ঝরছিল। ওস্ ভেজা ঘেসো পথ
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
২ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২১ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১৫ অক্টোবর ২০২৫