সাদিয়া সুলতানা

মুরাদ বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে জোরে জোরে চিৎকার করছে, ‘ক-তে কুকুর...ক-তে কুকুর...।’ কুকুরের দলও সোল্লাসে চিৎকার করছে, ওউওওও...।
ছেলে ও কুকুরের কণ্ঠের সমবেত ধ্বনি কানে ঢুকতেই হামিদের শিরদাঁড়া মুচড়ে শিরশিরে একটা স্রোত ঘাড়ের দিকে উঠতে থাকে। বিছানায় উপুড় হয়ে দেহের ঊর্ধ্বাংশে বালিশ চাপা দিয়েও রক্ষা পায় না সে। কানের পর্দা ছিদ্র করে মগজের কোনায় কোনায় ছেলের ক-তে কুকুর...আর কুকুরের ওউওওও ওউওওও...ডাক ছড়িয়ে পড়ে।
বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হামিদ এবার গালাগাল করার প্রস্তুতি নেয়। যেদিন এপাড়ায় এসেছে, সেদিন থেকেই এই উৎপাত শুরু হয়েছে। এমনিতেই দশ দিক থেকে দশ উপদ্রব ধেয়ে আসছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবে শুরু হয় তার কোনো ঠিক নেই। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছে। ইউক্রেনের প্রধান প্রধান শহর লক্ষ্য করে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ওদিকে কোন দূর দেশে যুদ্ধ হচ্ছে আর এদিকে দেশে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ৫০ টাকা। শুধু কি তেলের দাম বেড়েছে? আজ হামিদ পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে মাসকাবারি বাজার করতে গিয়েছিল। শুকনো সদাইয়ে ব্যাগের অর্ধেকটা ভরতে না ভরতেই পকেটের টাকা ফুরিয়ে গেছে। সামনে রোজা, কী করে যে চারদিক সামাল দেবে, সেসব ভাবার ফুরসতও দিচ্ছে না কুকুরগুলো।
সারা জীবন শুনে এসেছে, কুকুর ডাকে ঘেউঘেউ। আর এই বজ্জাত কুকুরের দল ওউওওও ওউওওও শব্দে অবিরাম ডেকে চলে। এবার খিস্তি করতে ছাড়ে না হামিদ। ‘ওই শালা...’ বাবার কণ্ঠস্বর শুনে ছেলে চটজলদি অদৃশ্য হয়ে যায়। ওদিকে নতুন সঙ্গী পেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে চিৎকার করতে থাকে কুকুরের দল। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত আসতেই কুকুরের দলের কোরাস আরও উচ্চকিত হতে থাকে। পথচারীরা আড়ে আড়ে তাকাতে তাকাতে রাস্তা পার হয়। চেনা মানুষগুলোকে ছাড় দেয় ওরা, পাড়ায় ঢোকা আগন্তুক রিকশা থেকে নামতেই তাকে ঘিরে ধরে ‘ওউওওওও’ স্বরে চেঁচিয়ে ওঠে।
সেদিন রাতে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে, আকাশে মুহুর্মুহু বিদ্যুৎ চমকায়। আচমকা পুরো পাড়া অন্ধকারে ঢেকে যায়। কুকুরগুলো অন্ধকারের ভেতরে কিসের আভাস পায় কে জানে, মুহূর্তের জন্যও বিরাম দেয় না। রাতভর ডেকে ডেকে পাড়া মাথায় তুলে রাখে।
অস্থির হামিদের মনে হতে থাকে পাশে শুয়ে থাকা আল্পনা বিদ্রুপের হাসি হাসছে। অন্ধকারের ভেতরেই সে আল্পনার ঠোঁটে লেগে থাকা হাসির বিচ্ছুরণটুকু দেখতে পায়। যদিও অন্ধকারের সান্নিধ্যে হাসির সমান্তরালে থাকা বিদ্রুপের অভিব্যক্তি হামিদের পরিষ্কারভাবে দেখতে পাওয়ার কথা নয়; তবু সে স্পষ্টভাবেই কিছু একটা দেখতে পায়। হামিদের ইচ্ছে করে এখনই আল্পনাকে টেনে আনে, তারপর কুকুরের মতো ওর গালে-ঠোঁটে কামড়ে দেয়। স্বামীর ভাবভঙ্গি দেখে সন্ত্রস্ত আল্পনা পিঠ ফিরে শুয়ে সে যাত্রা রক্ষা পেলেও হামিদ ওউওওও ডাক থেকে সহজে রক্ষা পায় না।
পরের দিন বিপত্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। এমনিতেই ওর মনমেজাজ বিশেষ ভালো ছিল না। অফিসে কুকুরের ওউওওও ডাক কানে না এলেও বসের অবিশ্রান্ত হাঁকডাক লেগেই থাকে। ‘বিমার টার্গেট পূরণ করতে না পারলে সামনের মাস থেকে অফিসে আসার দরকার নেই’ বলে বুড়ো ভামটা আজ এক বিঘত দীর্ঘ জিব বের করে হাঁপাতে শুরু করল। দেখে হামিদের মুখ ফসকে বেরিয়ে এল, ‘ক-তে কুকুর।’
ভাগ্যিস, বুড়োটার কান অবধি পৌঁছায়নি কথাটা। ওদিকে অফিস থেকে বের হয়ে বাসা পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে বসের অশালীন কথাগুলো হামিদের কানের কাছে পুনরাবৃত্তি হচ্ছিল। খানিকটা আনমনা, বেখেয়াল হয়ে উঠেছিল সে। তখনই মোটা লেজের দামড়া একটা কালো কুকুর এসে ওর প্যান্ট খামচে ধরল। নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে হামিদের পা গিয়ে পড়ল খোলা ড্রেনের একেবারে ভেতরে।
পোড় খাওয়া মনে বাসায় ফিরে বাথরুমে ঢোকে হামিদ। পানির স্পর্শ পেতেই শরীর-মনে বেশ একটা ফুরফুরে ভাব হয়। হামিদের এই ভাব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। মুরাদ দরজার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে ভীতসন্ত্রস্ত কণ্ঠে বলে, ‘একটা নতুন স্কুলড্রেস লাগবে...।’
ছেলের কথা শেষ করতে দেয় না হামিদ। ছুটে এসে ছেলেকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। বাবার মার খেয়ে তাল সামলাতে পারে না মুরাদ, মেঝেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে অনুচ্চ স্বরে কুঁই কুঁই করে। কচিকণ্ঠের কান্নার সুর বিকৃত করে বাইরে একটা কুকুর ডেকে ওঠে, ওওওউউউ...।
হামিদ হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, ‘কেমনে ছিঁড়ল হ্যাঁ...বাপের টাকার গাছ আছে না?’
আল্পনার শরীর থরথর কাঁপছে।
‘ক্লাস ফাইভে পড়া ছেলেরে লাথি-ঘুষি মারতেছেন? আপনি কি মানুষ?’
‘না, আমি মানুষ না...’
হামিদের কণ্ঠ ছাপিয়ে বাইরে কারও প্রবল চিৎকার শোনা যায়। পাশের বাসা থেকে হইচই ভেসে আসছে। ডোর ভিউতে চোখ রেখে হামিদ দেখার চেষ্টা করে কী নিয়ে এত হইচই। পাশের বাসার রন্টুর মা ছেলেকে মারছে। হামিদ দরজার কাছ থেকে সরে আসে। যার বাচ্চা সে মারবে, আদর করবে, তাতে কার কী? হামিদও তার বাচ্চাকে মারবে, সে নিজেও তো কত মার খেয়েছে।
হেফজখানা থেকে প্রথম যেবার পালায়, সেবার বাবা ওকে টেনেহিঁচড়ে ওস্তাদজির কাছে নিয়ে গিয়ে বলেছিল, ‘হুজুর মাংসগুলা আপনার, হাড্ডিগুলা আমার।’ ওস্তাদজিও ওর মাংস খেয়েছিল একটু একটু করে। হামিদ তাই দ্বিতীয়বারের মতো হেফজখানা থেকে পালিয়েছিল।
হাফেজ হওয়া হয়নি ওর। বাবার বেহেশতে যাওয়ার পথও মসৃণ হয়নি। সেই দুঃখে বাবা হামিদকে প্রতিদিন রুটিন করে পেটাত।
হামিদের মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করে আল্পনা বলে, ‘বাচ্চাটারে একটু ছুটাই?’
আল্পনার আবদার শুনে খেঁকিয়ে ওঠে হামিদ। ‘নিজের কাজে যাও’ বলে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। সিঁড়িঘরে নিরবচ্ছিন্ন শব্দ হচ্ছে। হামিদ গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে শব্দের উৎস খোঁজার চেষ্টা করে। তখনই দৃশ্যটা চোখে পড়ে ওর। হেফজখানার ওস্তাদজি যেভাবে ওর দেহে নিজেকে ঢোকাত, সেভাবে একটা মদ্দা কুকুর মাদি কুকুরের ভেতরে ঢুকছে। সঙ্গমরত প্রাণী দুটোকে দেখে শৈশবের আতঙ্ক জেগে ওঠার বদলে হামিদের দেহে কাম জেগে ওঠে। ঘরে ঢুকে হতবিহ্বল আল্পনাকে টানতে টানতে ও বিছানায় নিয়ে যায়। আল্পনার অনিচ্ছুক দেহকে বাগে আনতে হামিদকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। রতিক্লান্ত হামিদ ঘুমে চোখ বন্ধ করার মুহূর্তে ফের কুকুরের কোরাস শুরু হয়। নিজের মাথায় বালিশ চাপা দিয়ে কানে শব্দ প্রবেশের পথ বন্ধ করতে চায় হামিদ। ব্যর্থ হয়ে বিছানা ছেড়ে ঘরময় পায়চারি করে আর সিগারেটে আগুন ধরায়।
দিন দুয়েকের মধ্যে স্বস্তি মেলে।
বাজারের ফর্দ নিয়ে আল্পনার সঙ্গে অনর্থক বাদানুবাদ শেষে হামিদ সকাল সকাল বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে টের পায় কিছু একটা নেই।
এই সময়টায় বাড়ির উল্টো দিকের ফাঁকা জায়গার পুব পাশের আবর্জনার স্তূপের পাশে এক বা একাধিক কুকুর মুখ গুঁজে থাকে। বাসি-পচা ময়লা ঘেঁটে দুর্গন্ধ ছড়াতে ছড়াতে এরা হাড়ের বখরা নিয়ে বচসা করে। অনর্গল ডাকচিৎকারে পাড়া মাথায় তোলে। আজ এসবের কিছুই নেই।
হামিদ অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে দেখে স্তূপীকৃত আবর্জনার ধারে একটা বাদামি কুকুর শুয়ে আছে। পাশে আরেকটা, এর পাশে আরেকটা, আরও একটা। ওদের শরীর নিশ্চল।
দেখতে দেখতে হামিদের আশপাশে কয়েকজন দর্শনার্থী এসে দাঁড়ায়। তাদের কথোপকথন থেকে জানা যায়, সকাল থেকে পাড়ার গলিতে গলিতে পনেরোটি কুকুরের মৃতদেহ দেখা গেছে। এ পাড়ারই একজন এদের খাবারের সঙ্গে বিষ খাইয়ে মেরেছে। দর্শনার্থী একজন
বলে, ‘উচিত কাজ।’
ঠিক এই কাজটিই হোক—মনেপ্রাণে সেটিই তো চাইছিল হামিদ। তবে কেন দৃশ্যটা দেখে ওর সর্বাঙ্গ ঘামে ভিজে উঠছে? হামিদ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই টের পায় ওর শিরদাঁড়া শিরশির করে ওঠে। শরীরের শিরা-উপশিরার পাতলা পর্দা ছিন্ন করে রক্তের স্রোত বেরিয়ে আসতে চায়। বুকের ভেতরে বাতাস নিতে গিয়ে মুখ হাঁ হয়ে যায় হামিদের। চোখের ঝলসানো মণি দুটো প্রসারিত করে সে দেখে দর্শনার্থীরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ওর দিকেই এগিয়ে আসছে সবাই। এদের প্রত্যেকের হাতে খাবার। পাউরুটি, মাংস, হাড়...।

মুরাদ বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে জোরে জোরে চিৎকার করছে, ‘ক-তে কুকুর...ক-তে কুকুর...।’ কুকুরের দলও সোল্লাসে চিৎকার করছে, ওউওওও...।
ছেলে ও কুকুরের কণ্ঠের সমবেত ধ্বনি কানে ঢুকতেই হামিদের শিরদাঁড়া মুচড়ে শিরশিরে একটা স্রোত ঘাড়ের দিকে উঠতে থাকে। বিছানায় উপুড় হয়ে দেহের ঊর্ধ্বাংশে বালিশ চাপা দিয়েও রক্ষা পায় না সে। কানের পর্দা ছিদ্র করে মগজের কোনায় কোনায় ছেলের ক-তে কুকুর...আর কুকুরের ওউওওও ওউওওও...ডাক ছড়িয়ে পড়ে।
বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হামিদ এবার গালাগাল করার প্রস্তুতি নেয়। যেদিন এপাড়ায় এসেছে, সেদিন থেকেই এই উৎপাত শুরু হয়েছে। এমনিতেই দশ দিক থেকে দশ উপদ্রব ধেয়ে আসছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কবে শুরু হয় তার কোনো ঠিক নেই। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছে। ইউক্রেনের প্রধান প্রধান শহর লক্ষ্য করে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ওদিকে কোন দূর দেশে যুদ্ধ হচ্ছে আর এদিকে দেশে সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ৫০ টাকা। শুধু কি তেলের দাম বেড়েছে? আজ হামিদ পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে মাসকাবারি বাজার করতে গিয়েছিল। শুকনো সদাইয়ে ব্যাগের অর্ধেকটা ভরতে না ভরতেই পকেটের টাকা ফুরিয়ে গেছে। সামনে রোজা, কী করে যে চারদিক সামাল দেবে, সেসব ভাবার ফুরসতও দিচ্ছে না কুকুরগুলো।
সারা জীবন শুনে এসেছে, কুকুর ডাকে ঘেউঘেউ। আর এই বজ্জাত কুকুরের দল ওউওওও ওউওওও শব্দে অবিরাম ডেকে চলে। এবার খিস্তি করতে ছাড়ে না হামিদ। ‘ওই শালা...’ বাবার কণ্ঠস্বর শুনে ছেলে চটজলদি অদৃশ্য হয়ে যায়। ওদিকে নতুন সঙ্গী পেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে চিৎকার করতে থাকে কুকুরের দল। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত আসতেই কুকুরের দলের কোরাস আরও উচ্চকিত হতে থাকে। পথচারীরা আড়ে আড়ে তাকাতে তাকাতে রাস্তা পার হয়। চেনা মানুষগুলোকে ছাড় দেয় ওরা, পাড়ায় ঢোকা আগন্তুক রিকশা থেকে নামতেই তাকে ঘিরে ধরে ‘ওউওওওও’ স্বরে চেঁচিয়ে ওঠে।
সেদিন রাতে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ে, আকাশে মুহুর্মুহু বিদ্যুৎ চমকায়। আচমকা পুরো পাড়া অন্ধকারে ঢেকে যায়। কুকুরগুলো অন্ধকারের ভেতরে কিসের আভাস পায় কে জানে, মুহূর্তের জন্যও বিরাম দেয় না। রাতভর ডেকে ডেকে পাড়া মাথায় তুলে রাখে।
অস্থির হামিদের মনে হতে থাকে পাশে শুয়ে থাকা আল্পনা বিদ্রুপের হাসি হাসছে। অন্ধকারের ভেতরেই সে আল্পনার ঠোঁটে লেগে থাকা হাসির বিচ্ছুরণটুকু দেখতে পায়। যদিও অন্ধকারের সান্নিধ্যে হাসির সমান্তরালে থাকা বিদ্রুপের অভিব্যক্তি হামিদের পরিষ্কারভাবে দেখতে পাওয়ার কথা নয়; তবু সে স্পষ্টভাবেই কিছু একটা দেখতে পায়। হামিদের ইচ্ছে করে এখনই আল্পনাকে টেনে আনে, তারপর কুকুরের মতো ওর গালে-ঠোঁটে কামড়ে দেয়। স্বামীর ভাবভঙ্গি দেখে সন্ত্রস্ত আল্পনা পিঠ ফিরে শুয়ে সে যাত্রা রক্ষা পেলেও হামিদ ওউওওও ডাক থেকে সহজে রক্ষা পায় না।
পরের দিন বিপত্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। এমনিতেই ওর মনমেজাজ বিশেষ ভালো ছিল না। অফিসে কুকুরের ওউওওও ডাক কানে না এলেও বসের অবিশ্রান্ত হাঁকডাক লেগেই থাকে। ‘বিমার টার্গেট পূরণ করতে না পারলে সামনের মাস থেকে অফিসে আসার দরকার নেই’ বলে বুড়ো ভামটা আজ এক বিঘত দীর্ঘ জিব বের করে হাঁপাতে শুরু করল। দেখে হামিদের মুখ ফসকে বেরিয়ে এল, ‘ক-তে কুকুর।’
ভাগ্যিস, বুড়োটার কান অবধি পৌঁছায়নি কথাটা। ওদিকে অফিস থেকে বের হয়ে বাসা পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে বসের অশালীন কথাগুলো হামিদের কানের কাছে পুনরাবৃত্তি হচ্ছিল। খানিকটা আনমনা, বেখেয়াল হয়ে উঠেছিল সে। তখনই মোটা লেজের দামড়া একটা কালো কুকুর এসে ওর প্যান্ট খামচে ধরল। নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে হামিদের পা গিয়ে পড়ল খোলা ড্রেনের একেবারে ভেতরে।
পোড় খাওয়া মনে বাসায় ফিরে বাথরুমে ঢোকে হামিদ। পানির স্পর্শ পেতেই শরীর-মনে বেশ একটা ফুরফুরে ভাব হয়। হামিদের এই ভাব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। মুরাদ দরজার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে ভীতসন্ত্রস্ত কণ্ঠে বলে, ‘একটা নতুন স্কুলড্রেস লাগবে...।’
ছেলের কথা শেষ করতে দেয় না হামিদ। ছুটে এসে ছেলেকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। বাবার মার খেয়ে তাল সামলাতে পারে না মুরাদ, মেঝেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে অনুচ্চ স্বরে কুঁই কুঁই করে। কচিকণ্ঠের কান্নার সুর বিকৃত করে বাইরে একটা কুকুর ডেকে ওঠে, ওওওউউউ...।
হামিদ হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, ‘কেমনে ছিঁড়ল হ্যাঁ...বাপের টাকার গাছ আছে না?’
আল্পনার শরীর থরথর কাঁপছে।
‘ক্লাস ফাইভে পড়া ছেলেরে লাথি-ঘুষি মারতেছেন? আপনি কি মানুষ?’
‘না, আমি মানুষ না...’
হামিদের কণ্ঠ ছাপিয়ে বাইরে কারও প্রবল চিৎকার শোনা যায়। পাশের বাসা থেকে হইচই ভেসে আসছে। ডোর ভিউতে চোখ রেখে হামিদ দেখার চেষ্টা করে কী নিয়ে এত হইচই। পাশের বাসার রন্টুর মা ছেলেকে মারছে। হামিদ দরজার কাছ থেকে সরে আসে। যার বাচ্চা সে মারবে, আদর করবে, তাতে কার কী? হামিদও তার বাচ্চাকে মারবে, সে নিজেও তো কত মার খেয়েছে।
হেফজখানা থেকে প্রথম যেবার পালায়, সেবার বাবা ওকে টেনেহিঁচড়ে ওস্তাদজির কাছে নিয়ে গিয়ে বলেছিল, ‘হুজুর মাংসগুলা আপনার, হাড্ডিগুলা আমার।’ ওস্তাদজিও ওর মাংস খেয়েছিল একটু একটু করে। হামিদ তাই দ্বিতীয়বারের মতো হেফজখানা থেকে পালিয়েছিল।
হাফেজ হওয়া হয়নি ওর। বাবার বেহেশতে যাওয়ার পথও মসৃণ হয়নি। সেই দুঃখে বাবা হামিদকে প্রতিদিন রুটিন করে পেটাত।
হামিদের মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করে আল্পনা বলে, ‘বাচ্চাটারে একটু ছুটাই?’
আল্পনার আবদার শুনে খেঁকিয়ে ওঠে হামিদ। ‘নিজের কাজে যাও’ বলে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। সিঁড়িঘরে নিরবচ্ছিন্ন শব্দ হচ্ছে। হামিদ গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে শব্দের উৎস খোঁজার চেষ্টা করে। তখনই দৃশ্যটা চোখে পড়ে ওর। হেফজখানার ওস্তাদজি যেভাবে ওর দেহে নিজেকে ঢোকাত, সেভাবে একটা মদ্দা কুকুর মাদি কুকুরের ভেতরে ঢুকছে। সঙ্গমরত প্রাণী দুটোকে দেখে শৈশবের আতঙ্ক জেগে ওঠার বদলে হামিদের দেহে কাম জেগে ওঠে। ঘরে ঢুকে হতবিহ্বল আল্পনাকে টানতে টানতে ও বিছানায় নিয়ে যায়। আল্পনার অনিচ্ছুক দেহকে বাগে আনতে হামিদকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। রতিক্লান্ত হামিদ ঘুমে চোখ বন্ধ করার মুহূর্তে ফের কুকুরের কোরাস শুরু হয়। নিজের মাথায় বালিশ চাপা দিয়ে কানে শব্দ প্রবেশের পথ বন্ধ করতে চায় হামিদ। ব্যর্থ হয়ে বিছানা ছেড়ে ঘরময় পায়চারি করে আর সিগারেটে আগুন ধরায়।
দিন দুয়েকের মধ্যে স্বস্তি মেলে।
বাজারের ফর্দ নিয়ে আল্পনার সঙ্গে অনর্থক বাদানুবাদ শেষে হামিদ সকাল সকাল বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে টের পায় কিছু একটা নেই।
এই সময়টায় বাড়ির উল্টো দিকের ফাঁকা জায়গার পুব পাশের আবর্জনার স্তূপের পাশে এক বা একাধিক কুকুর মুখ গুঁজে থাকে। বাসি-পচা ময়লা ঘেঁটে দুর্গন্ধ ছড়াতে ছড়াতে এরা হাড়ের বখরা নিয়ে বচসা করে। অনর্গল ডাকচিৎকারে পাড়া মাথায় তোলে। আজ এসবের কিছুই নেই।
হামিদ অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে দেখে স্তূপীকৃত আবর্জনার ধারে একটা বাদামি কুকুর শুয়ে আছে। পাশে আরেকটা, এর পাশে আরেকটা, আরও একটা। ওদের শরীর নিশ্চল।
দেখতে দেখতে হামিদের আশপাশে কয়েকজন দর্শনার্থী এসে দাঁড়ায়। তাদের কথোপকথন থেকে জানা যায়, সকাল থেকে পাড়ার গলিতে গলিতে পনেরোটি কুকুরের মৃতদেহ দেখা গেছে। এ পাড়ারই একজন এদের খাবারের সঙ্গে বিষ খাইয়ে মেরেছে। দর্শনার্থী একজন
বলে, ‘উচিত কাজ।’
ঠিক এই কাজটিই হোক—মনেপ্রাণে সেটিই তো চাইছিল হামিদ। তবে কেন দৃশ্যটা দেখে ওর সর্বাঙ্গ ঘামে ভিজে উঠছে? হামিদ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই টের পায় ওর শিরদাঁড়া শিরশির করে ওঠে। শরীরের শিরা-উপশিরার পাতলা পর্দা ছিন্ন করে রক্তের স্রোত বেরিয়ে আসতে চায়। বুকের ভেতরে বাতাস নিতে গিয়ে মুখ হাঁ হয়ে যায় হামিদের। চোখের ঝলসানো মণি দুটো প্রসারিত করে সে দেখে দর্শনার্থীরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ওর দিকেই এগিয়ে আসছে সবাই। এদের প্রত্যেকের হাতে খাবার। পাউরুটি, মাংস, হাড়...।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

মুরাদ বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে জোরে জোরে চিৎকার করছে, ‘ক-তে কুকুর...ক-তে কুকুর...।’ কুকুরের দলও সোল্লাসে চিৎকার করছে, ওউওওও...। ছেলে ও কুকুরের কণ্ঠের সমবেত ধ্বনি কানে ঢুকতেই হামিদের শিরদাঁড়া মুচড়ে শিরশিরে একটা স্রোত ঘাড়ের দিকে উঠতে থাকে।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

মুরাদ বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে জোরে জোরে চিৎকার করছে, ‘ক-তে কুকুর...ক-তে কুকুর...।’ কুকুরের দলও সোল্লাসে চিৎকার করছে, ওউওওও...। ছেলে ও কুকুরের কণ্ঠের সমবেত ধ্বনি কানে ঢুকতেই হামিদের শিরদাঁড়া মুচড়ে শিরশিরে একটা স্রোত ঘাড়ের দিকে উঠতে থাকে।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

মুরাদ বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে জোরে জোরে চিৎকার করছে, ‘ক-তে কুকুর...ক-তে কুকুর...।’ কুকুরের দলও সোল্লাসে চিৎকার করছে, ওউওওও...। ছেলে ও কুকুরের কণ্ঠের সমবেত ধ্বনি কানে ঢুকতেই হামিদের শিরদাঁড়া মুচড়ে শিরশিরে একটা স্রোত ঘাড়ের দিকে উঠতে থাকে।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

মুরাদ বারান্দার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে জোরে জোরে চিৎকার করছে, ‘ক-তে কুকুর...ক-তে কুকুর...।’ কুকুরের দলও সোল্লাসে চিৎকার করছে, ওউওওও...। ছেলে ও কুকুরের কণ্ঠের সমবেত ধ্বনি কানে ঢুকতেই হামিদের শিরদাঁড়া মুচড়ে শিরশিরে একটা স্রোত ঘাড়ের দিকে উঠতে থাকে।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
২২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
১৩ নভেম্বর ২০২৫
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫