রেবেকা সলনিট
করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারি মৃত্যুকে সংখ্যায় পরিণত করেছে। গত ১৫ মাসে এ মহামারিতে ২৮ লাখ মানুষ মারা গেছে। কিন্তু আরেকটি সংখ্যার দিকে তাকালে এই মৃত্যুর সংখ্যাকে আর এত ভয়াবহ মনে হবে না। কারণ, একই সময়ে বায়ু দূষণে প্রায় ৮৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
আরেকটি বিষয় হলো এই মৃত্যুগুলোর বিষয়ে আমরা কতটুকু জানতে পারছি, কতটুকু গ্রহণ করছি এবং এটি নিয়ে কি প্রশ্ন তুলছি।
করোনা ভাইরাসের হুমকি মারাত্বক। এর কারণে পুরো বিশ্ব থমকে গেছে। বিশ্বের বহুদেশ এটিকে মেনে নিয়েছে। এর প্রভাবে অসুস্থ হচ্ছে এবং মৃত্যু হচ্ছে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের। চিকিৎসা কর্মীদেরও বেড়েছে কাজের চাপ ।
আমরা অন্যভাবে ধ্বংস ও মৃত্যু স্বীকার করে নেই না। এর মানে আমরা বোঝাতে যাচ্ছি যে নৈতিকতার অবক্ষয় বলে আমরা স্বাভাবিক করে দিচ্ছি। লিঙ্গ সহিংসতা থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন এরকমই সমস্যা।
কি হবে যদি বায়ূ দূষণে ৮৭ লাখ মানুষের মৃত্যুকে আমরা জরুরি অবস্থা বলে বিবেচনা করি? এছাড়া জ্বালানি পোড়ানোর ফলে কণা থেকে শ্বাসতন্ত্রের যে প্রভাব পড়ে সেটিকে আমরা ধ্বংসাত্মক প্রভাবের একটি ছোট অংশ হিসেবে বিবেচনা করি?
মহামারির জন্য আমরা বিশাল জনগোষ্ঠী স্থির করতে সফল হয়েছি। এর ফলে বিমান চলাচল হ্রাস পেয়েছে। এতে আমাদের জীবন যাত্রারও পরিবর্তন এসেছে। মহামারিতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকে সহায়তার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থও সহায়তা করা হচ্ছে। এগুলো আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য করতে পারতাম এবং অবশ্যই আমাদের করা উচিৎ। কিন্তু প্রধান বাধা হচ্ছে আমরা এটিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে পারছি না।
আমি গত ১৫ বছর ধরে দুটি বিষয়কে সামনে আনার চেষ্টা করছি। একটি হচ্ছে নারী সহিংসতা এবং আরেকটি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। মানবাধিকার এবং পরিবেশ আন্দোলন নিয়ে কাজ করার প্রথম শর্ত হলো অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করা। সেই সঙ্গে যেসব বিষয় অগ্রহণযোগ্য ছিল সেটি গ্রহণযোগ্য করতে হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলা হলেও সামগ্রিক বিষয়টি সবসময় সামনে আনা হয়না।
জলাবায়ু পরিবর্তন অদৃশ্য একটি বিষয়। আমরা শুধু এর প্রভাব দেখতে পারি। এই বছরের শুরুতে যখন জাপানের কিয়োটোতে রেকর্ড ভেঙ্গে সবচেয়ে বেশি চেরি ফুল ফুটেছে। খ্রিস্ট পূর্বাব্দ ৮১২ সাল থেকেই এই ফুলের হিসেব রাখা হয়। এই ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছে যে এটি বৃহত্তর জলবায়ু সংকটের লক্ষণ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতেও জলবায়ু সংকটের কারণে দাবানল দেখা দিচ্ছে যেটিকে অস্বীকার করার কিছু নেই।
করোনাতে বিশ্ব স্থির হয়ে যাওয়ায় বায়ুর মান বৃদ্ধি পায় এবং পাখির কলকাকলিতেও মুখরিত হয় বিশ্ববাসী। বহুদিন পর আকাশ পরিষ্কার থাকায় ভারত থেকেও হিমালয়ের দেখা মেলে। সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাতে নয়া দিল্লিতে দূষণের পরিমাণ ৬০ শতাংশ কমেছে। সিওলে এটি কমেছে ৫৪ শতাংশ।
করোনায় বায়ুর এত উন্নতি হওয়ার পরেও বায়ু দূষণে বছর ৮৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু মনে হয়েছে। তবে এই মৃত্যুগুলোকে আমাদের অস্বাভাবিক দেখাতে হবে । এ জন্য আমাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ফলাফল নিয়ে কথা বলতে হবে। আরেকটি বিষয় হল জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের নাটকীয় পরিবর্তন হচ্ছে সেটিও মানুষকে বোঝাতে হবে।
বিশ্বের জ্বালানির দৃশ্যপটেরও খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়লা শিল্প ধসে পড়েছে। তেল এবং গ্যাস শিল্পও কমে যাচ্ছে। কম দামে পাওয়া যায় বলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। প্রাণী দেহ থেকে মানুষের দেহে করোনা এসেছ কিনা তা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানির মাটির থেকে বের করতে গিয়েই পরিবেশ দূষণে ৮৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
আমার আশা করোনা পরবর্তী বিশ্ব জলবায়ু নিয়ে আর পুরানো অজুহাত দেখাবে না। তাদের হয়তো বলা উচিৎ হবে না যে বর্তমান পরিস্থিতি সমাধান করা সম্ভব নয় এবং এটি ব্যয়বহুল।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে ইংরেজি থেকে অনূদিত
রেবেকা সলনিট: দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার কলাম লেখক
করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারি মৃত্যুকে সংখ্যায় পরিণত করেছে। গত ১৫ মাসে এ মহামারিতে ২৮ লাখ মানুষ মারা গেছে। কিন্তু আরেকটি সংখ্যার দিকে তাকালে এই মৃত্যুর সংখ্যাকে আর এত ভয়াবহ মনে হবে না। কারণ, একই সময়ে বায়ু দূষণে প্রায় ৮৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
আরেকটি বিষয় হলো এই মৃত্যুগুলোর বিষয়ে আমরা কতটুকু জানতে পারছি, কতটুকু গ্রহণ করছি এবং এটি নিয়ে কি প্রশ্ন তুলছি।
করোনা ভাইরাসের হুমকি মারাত্বক। এর কারণে পুরো বিশ্ব থমকে গেছে। বিশ্বের বহুদেশ এটিকে মেনে নিয়েছে। এর প্রভাবে অসুস্থ হচ্ছে এবং মৃত্যু হচ্ছে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের। চিকিৎসা কর্মীদেরও বেড়েছে কাজের চাপ ।
আমরা অন্যভাবে ধ্বংস ও মৃত্যু স্বীকার করে নেই না। এর মানে আমরা বোঝাতে যাচ্ছি যে নৈতিকতার অবক্ষয় বলে আমরা স্বাভাবিক করে দিচ্ছি। লিঙ্গ সহিংসতা থেকে শুরু করে জলবায়ু পরিবর্তন এরকমই সমস্যা।
কি হবে যদি বায়ূ দূষণে ৮৭ লাখ মানুষের মৃত্যুকে আমরা জরুরি অবস্থা বলে বিবেচনা করি? এছাড়া জ্বালানি পোড়ানোর ফলে কণা থেকে শ্বাসতন্ত্রের যে প্রভাব পড়ে সেটিকে আমরা ধ্বংসাত্মক প্রভাবের একটি ছোট অংশ হিসেবে বিবেচনা করি?
মহামারির জন্য আমরা বিশাল জনগোষ্ঠী স্থির করতে সফল হয়েছি। এর ফলে বিমান চলাচল হ্রাস পেয়েছে। এতে আমাদের জীবন যাত্রারও পরিবর্তন এসেছে। মহামারিতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকে সহায়তার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থও সহায়তা করা হচ্ছে। এগুলো আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য করতে পারতাম এবং অবশ্যই আমাদের করা উচিৎ। কিন্তু প্রধান বাধা হচ্ছে আমরা এটিকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে পারছি না।
আমি গত ১৫ বছর ধরে দুটি বিষয়কে সামনে আনার চেষ্টা করছি। একটি হচ্ছে নারী সহিংসতা এবং আরেকটি হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। মানবাধিকার এবং পরিবেশ আন্দোলন নিয়ে কাজ করার প্রথম শর্ত হলো অদৃশ্যকে দৃশ্যমান করা। সেই সঙ্গে যেসব বিষয় অগ্রহণযোগ্য ছিল সেটি গ্রহণযোগ্য করতে হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলা হলেও সামগ্রিক বিষয়টি সবসময় সামনে আনা হয়না।
জলাবায়ু পরিবর্তন অদৃশ্য একটি বিষয়। আমরা শুধু এর প্রভাব দেখতে পারি। এই বছরের শুরুতে যখন জাপানের কিয়োটোতে রেকর্ড ভেঙ্গে সবচেয়ে বেশি চেরি ফুল ফুটেছে। খ্রিস্ট পূর্বাব্দ ৮১২ সাল থেকেই এই ফুলের হিসেব রাখা হয়। এই ফুলের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছে যে এটি বৃহত্তর জলবায়ু সংকটের লক্ষণ। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতেও জলবায়ু সংকটের কারণে দাবানল দেখা দিচ্ছে যেটিকে অস্বীকার করার কিছু নেই।
করোনাতে বিশ্ব স্থির হয়ে যাওয়ায় বায়ুর মান বৃদ্ধি পায় এবং পাখির কলকাকলিতেও মুখরিত হয় বিশ্ববাসী। বহুদিন পর আকাশ পরিষ্কার থাকায় ভারত থেকেও হিমালয়ের দেখা মেলে। সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাতে নয়া দিল্লিতে দূষণের পরিমাণ ৬০ শতাংশ কমেছে। সিওলে এটি কমেছে ৫৪ শতাংশ।
করোনায় বায়ুর এত উন্নতি হওয়ার পরেও বায়ু দূষণে বছর ৮৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু মনে হয়েছে। তবে এই মৃত্যুগুলোকে আমাদের অস্বাভাবিক দেখাতে হবে । এ জন্য আমাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ফলাফল নিয়ে কথা বলতে হবে। আরেকটি বিষয় হল জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের নাটকীয় পরিবর্তন হচ্ছে সেটিও মানুষকে বোঝাতে হবে।
বিশ্বের জ্বালানির দৃশ্যপটেরও খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কয়লা শিল্প ধসে পড়েছে। তেল এবং গ্যাস শিল্পও কমে যাচ্ছে। কম দামে পাওয়া যায় বলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। প্রাণী দেহ থেকে মানুষের দেহে করোনা এসেছ কিনা তা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানির মাটির থেকে বের করতে গিয়েই পরিবেশ দূষণে ৮৭ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
আমার আশা করোনা পরবর্তী বিশ্ব জলবায়ু নিয়ে আর পুরানো অজুহাত দেখাবে না। তাদের হয়তো বলা উচিৎ হবে না যে বর্তমান পরিস্থিতি সমাধান করা সম্ভব নয় এবং এটি ব্যয়বহুল।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে ইংরেজি থেকে অনূদিত
রেবেকা সলনিট: দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার কলাম লেখক
গত এক সপ্তাহে মোদির কাশ্মীর নীতির বড় দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। এই নীতি এখন অচলাবস্থার মুখে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমান্ত্র বোস বলেছেন, পেহেলগাম হামলা মোদির ‘নয়া কাশ্মীর’ বয়ানের (ন্যারেটিভ) বেলুন ফুটো করে দিয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগেডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, তিনিই বিশ্ব চালাচ্ছেন। তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা সীমাহীন। কিন্তু এটি বিপজ্জনক ঔদ্ধত্যেরও ইঙ্গিত দেয় এবং একটি গুরুতর প্রশ্ন তোলে—এই বিশৃঙ্খল ও প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে পৃথিবী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? দ্য আটলান্টিককে দেওয়া নতুন এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী আধিপত্য...
১ দিন আগেবড় প্রশ্ন হলো, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেবে কি না? ২০১৯ সালে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ ভারতীয় পুলিশ নিহত হয়। এরপর পেহেলগামের হামলাই ছিল কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী। এমনকি এটি ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে সেখানকার
১ দিন আগেবিশ্লেষকদের মতে, ভারত হয়তো কিছুটা সংযত আচরণই করবে। কারণ, দেশটির সামরিক বাহিনী এখনো পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে, তাদের প্রকাশ্যে এনে যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার মধ্যে ঝুঁকি আছে। ২০১৮ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টের এক প্রতিবেদনে দেশের ৬৮ শতাংশ সামরিক সরঞ্জামকে ‘পুরোনো মডেলের’, ২৪ শতাংশকে...
৩ দিন আগে