Ajker Patrika

আফ্রিকায় চীনের প্রভাবে ভাগ বসাতে মরিয়া ভারত 

আফ্রিকায় চীনের প্রভাবে ভাগ বসাতে মরিয়া ভারত 

সম্পদে সমৃদ্ধ মহাদেশ আফ্রিকা। দিনদিন চীনের প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে এই অঞ্চলে। এতে ভাগ নিতে চায় ভারতও। তাই দেশটি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশকে মোটা অঙ্কের অর্থ ঋণ দিচ্ছে। আফ্রিকায় ঋণদাতাদের মধ্যে ভারতের স্থান এখন চীনের পরেই। ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

ভারতের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হার্শা বাঙারি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিগত এক দশকে আফ্রিকার ৪২টি দেশকে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে ভারত। যা প্রতিবেশি দেশগুলোকে দেওয়া ঋণের পরিমাণের কাছাকাছি।

ব্যাংকটি ভারতের ‘অর্থনৈতিক কূটনীতির’ এক হাতিয়ার। বাঙ্গারি বলেন, গত দশকে ভারত আফ্রিকা জুড়ে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের ১৯৫টি প্রকল্পভিত্তিক ক্রেডিট লাইনও খুলেছে। যা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার চেয়ে তিনগুণ। আফ্রিকা ক্রেডিট লাইনের ভালো ব্যবহার করেছে। স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো, কৃষি এবং সেচের প্রকল্পগুলো প্রসারিত হয়েছে। 

তবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাদেশ আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ধনী প্রতিবেশী চীনের থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে ভারত। বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট পলিসি সেন্টারের তথ্য অনুসারে, আফ্রিকায় চীনের ঋণদান ২০১৬ সাল থেকে কমেছে। এরপরও সামগ্রিকভাবে ২০২০ সাল পর্যন্ত আফ্রিকার দেশগুলোকে ১৩৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যা ভারতের চেয়ে প্রায় ১১ গুণ বেশি।

চীন আফ্রিকার খনিজ সম্পদ ব্যবহার করার জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছে। লিথিয়াম সরবরাহের নতুন কেন্দ্র খুঁজছে, যা বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাতু।

গিনি থেকে বক্সাইটের সবচেয়ে বড় ক্রেতাও চীন। আর অ্যালুমিনা তৈরিতে ব্যবহৃত আকরিকের সিংহভাগই রয়েছে গিনিতে। তবে এ বিষয়ে বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি।

যাইহোক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তারে জোর দিয়েছে। অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়িয়েছে। মহাদেশটি মহামারী এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের অর্থনৈতিক মন্দা পড়েছে। এ অবস্থায় নয়াদিল্লি সম্পর্ককে গভীরে নেওয়ার সুযোগ দেখছে।

গত নয় বছরে ২৫টি নতুন ভারতীয় দূতাবাস বা কনস্যুলেটের মধ্যে ১৮টি খোলা হয়েছে আফ্রিকায়। ফেব্রুয়ারিতে ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিটে ভারত ৪৮টি আফ্রিকান দেশকে আয়োজক করেছিল। মোদি গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধি হিসাবে ভারতকে এগিয়ে নিচ্ছেন। পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঋণ সংকটে পাশে দাঁড়াতে ‘গ্রুপ-২০’ এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করছেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর গত ২৮ জুন এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমরা এখন থেকে ২৫ বছর পরে ভাবার চেষ্টা করছি। নিজেদের জিজ্ঞাসা করছি ২০৪৭ সালে অবস্থান নিয়ে এবং আমাদের কী করা উচিত? এখন এটার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

বাঙ্গারি বলেন, ‘চীনের অর্থায়নের পরিমাণ ভারতের চেয়ে বেশি। কিন্তু নয়াদিল্লি আফ্রিকার সরকারগুলোকে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে দেয়। যেখানে বেইজিং প্রায়শই সমালোচনা মুখে পড়ে। আপনি যদি দেখেন ভারত যেসব দেশের প্রকল্পে সমর্থন করেছে তাঁদের অর্থনীতিতে অনেক চাঙ্গা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত