রাশিয়া থেকে আর বের হচ্ছেন না পুতিন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও যোগ দিয়েছেন ভার্চুয়ালি। ভ্লাদিমির পুতিনের অবস্থা এখন জেমস বন্ডের কোনো ভিলেনের সঙ্গে তুলনা করা হলে ভুল হবে না। যেন তিনি বসে আছেন কোনো পর্বতের গুহায়, আর পৃথিবীতে একের পর এক অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছেন। হাতে থাকা রিমোটের এক বোতামে চাপ দিচ্ছেন তো বলকান অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে। আরেক বোতামে চাপ দিচ্ছেন তো মধ্যপ্রাচ্যে বিস্ফোরণ ঘটছে।
পশ্চিমারা অবশ্য এভাবে ভাবছে না। এসব শুধুই কল্পনা। এটি ক্রেমলিনের নেতার বৈশ্বিক প্রভাবকে বাড়াবাড়ি রূপে উপস্থাপন ছাড়া কিছুই নয়। বিশ্বে যেকোনো সংঘর্ষের পেছনেই পুতিনের হাত থাকবে—এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। খোদ যুক্তরাষ্ট্রও কিন্তু এমন মনে করছে না। কিন্তু তাই বলে, পৃথিবীর কোনো প্রান্তের সংঘাত থেকে সুবিধা আদায়ের সুযোগ থাকলেও হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন এমন লোক পুতিন নন।
গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধে পুতিন তথা রাশিয়ার কী কী লাভ থাকতে পারে, তার একটি অনুসন্ধান চালিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রাশিয়ার সঙ্গে হামাস ও ইরানের বেশ গভীর সম্পর্ক রয়েছে, এটা সবার জানা। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, মস্কো ও তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক এখন পূর্ণাঙ্গ প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় রূপ নিয়েছে।
তবে এর মানে এই নয় যে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পেছনে মস্কো সরাসরি সম্পৃক্ত বা আগে থেকে এ সম্পর্কে ক্রেমলিন অবহিত ছিল। আবার ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলার পেছনে ইরানের হাত আছে— এমন কথা উঠলেও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইরানের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ নেই।
মস্কোতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার বেন ভি গত সপ্তাহে রাশিয়ার দৈনিক কমেরসান্তকে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি না, এ ঘটনায় রাশিয়া কোনোভাবে যুক্ত ছিল। ইসরায়েলে হামাসের নৃশংসতার সঙ্গে রাশিয়ার যোগসূত্র আছে—এ দাবি সম্পূর্ণ অর্থহীন।’
জেমস মার্টিন সেন্টার ফর ননপ্রলিফারেশন স্টাডিজের বার্লিনভিত্তিক রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হান্না নোট বলেন, ‘আমি হামাসকে সরাসরি রাশিয়ার অস্ত্র সরবরাহ বা হামাস যোদ্ধাদের রাশিয়ার সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পক্ষে কোনো প্রমাণ পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘এটা সত্য যে হামাসের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। রাশিয়া কখনোই হামাসকে “সন্ত্রাসী গোষ্ঠী” হিসেবে উল্লেখ করেনি। গত বছর এবং চলতি বছর হামাসের প্রতিনিধিদল মস্কোতেই ছিল। তবে আমি তা থেকে অনুমান করব না যে হামাসের প্রতি মস্কোর ব্যাপক সামরিক সমর্থন রয়েছে। যদিও আমরা জানি, রাশিয়ার তৈরি রূপরেখা অনুযায়ীই তারা গাজা পার্বত্য এলাকা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিল এবং সম্ভবত এর সঙ্গে মিসরের সিনাই উপদ্বীপ কর্তৃপক্ষ ও ইরানেরও সহযোগিতা ছিল।’
সহজ কথায়, পুতিনের ইশারাতেই যে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে, এমনটা বলা যায় না।
মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে রাশিয়ার ফায়দা কী
হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে ইউক্রেন পরিস্থিতি থেকে মনোযোগ সরছে বিশ্বের। সহিংসতা বৃদ্ধির সঙ্গে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে বিশ্বের মনোযোগ সরাতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের নাটকীয় শিরোনামের ওপর ভরসা করছে মস্কো।
তবে লাভ শুধু সংবাদ শিরোনামে পরিবর্তনেই সীমাবদ্ধ নয়। রাশিয়ার প্রত্যাশা হলো, মধ্যপ্রাচ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহ ইউক্রেনের বদলে ইসরায়েলের দিকে ঘুরে যাবে।
রাশিয়ার কূটনীতিক কনস্তানতিন গাভ্রিলভ ক্রেমলিনপন্থী দৈনিক ইজভেস্তিয়াকে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এই সংকট সরাসরি ইউক্রেনে চলমান বিশেষ সামরিক অভিযানের গতিমুখকে প্রভাবিত করবে। ইসরায়েলে সংঘাতের কারণে ইউক্রেনের পৃষ্ঠপোষকদের মনোযোগ সরে যাবে। এর মানে এ নয় যে পশ্চিমারা ইউক্রেনীয়দের পরিত্যাগ করবে। তবে সামরিক সহায়তার পরিমাণ কমবে এবং চলমান এই অভিযানের গতিপথ রাশিয়ার পক্ষে ঘুরে যাবে।’
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ‘কংগ্রেস অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দ না করায় ওয়াশিংটনের পক্ষে ইউক্রেনকে আর অপরিসীম সাহায্য দেওয়া সম্ভব হবে না। নিকটবর্তী সময় বিবেচনায় আমাদের ইউক্রেন ও ইসরায়েল উভয় দেশের জন্যই তহবিল সরবরাহ করার অনুরোধ পেয়েছি।’
ন্যাটো প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি লয়েড অস্টিন বলেছেন, ‘আমরা ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াতে পারি এবং পাশে থাকব। এমনকি আমরা ইউক্রেনের পাশেও আছি।’
তবে, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে যুক্তরাষ্ট্রের একসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন যুদ্ধে দুটি মিত্র দেশকে সহযোগিতা করার সক্ষমতা পরীক্ষার মুখে পড়বে।
রাশিয়া কি মধ্যস্থতাকারী
রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য শান্তি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তার ভূমিকা জোরদার করার চেষ্টা করছে। এর আগেও রাশিয়া এই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এই অঞ্চলের সংঘাত নিরসনে অতীতের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাগুলোতে অংশ নিয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘রাশিয়া (সংঘাতের) সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে এবং রাখবে। আমরা এ সংঘাতের প্রতিটি পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছি।’
গত সপ্তাহে মস্কো সফরের সময় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাশিয়া কতটা সফল হবে
রাশিয়া নিজেই প্রতিবেশী দেশের (ইউক্রেন) ওপর আক্রমণ করেছে। প্রায় ২০ মাস ধরে চলমান এ যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ও ধ্বংসের পরিমাণ বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে।
এ ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘ভূমিকা পালন করতে পারবে এবং করবে’ বললেই যে সংঘাতে জড়িতরা রাশিয়াকে মধ্যস্থতাকারী মানবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
মস্কো দীর্ঘকাল ধরেই মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে আগ্রহী। বিশেষ করে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি করার পর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আরবের পক্ষে অবস্থান নেয়। অবশ্য পশ্চিমের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কারণে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে মিসরের মতো দেশগুলোকে অস্ত্রের জন্য সোভিয়েতের কাছে যেতে হয়েছিল।
ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ইহুদিবিদ্বেষ ছিল সোভিয়েত জীবনের একটি বৈশিষ্ট্য।
সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর রাশিয়া ও ইসরায়েলের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছিল। বিশেষ করে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র থেকে ইসরায়েলে ১০ লাখের বেশি ইহুদির আগমনের কারণে এ উন্নতি হয়। সোভিয়েতের পতনের পর আরব দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রে পরিণত হয়।
তবে সম্প্রতি রাশিয়া ইসরায়েলের শত্রুদের, বিশেষ করে ইরানের ঘনিষ্ঠ হয়েছে, যা রাশিয়া-ইসরায়েল সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা
বরাবরের মতো এ সংঘাতের জন্যও ক্রেমলিন যুক্তরাষ্ট্রকেই দোষারোপ করছে। ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে ভ্লাদিমির পুতিনের মূল বার্তাই হলো, এটি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির ব্যর্থতার একটি দৃষ্টান্ত। মস্কো এর আগেও এভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকামী মনোভাবকে’ লক্ষ্যবস্তু করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে রাশিয়ার যেমন সুবিধা আছে, তেমন কিছু অসুবিধাও রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হান্না নোট বলেন, ‘সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পিত অস্থিতিশীলতা রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করে। যদি এ সংকটের কারণে ইউক্রেন থেকে বিশ্ববাসীর মনোযোগ সরে, তবে রাশিয়া এতে স্বল্প মেয়াদে লাভবান হতে পারে।’
নোট বলেন, ‘তবে বিস্তৃত অঞ্চলে চলা যুদ্ধ থেকে রাশিয়া লাভবান হবে না। এমনকি হামাসকে অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহকারী ইরানেরও এতে বিশেষ লাভ হবে না।
হান্না নোটের মতে, রাশিয়া ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে যুদ্ধ চায় না। যদি পরিস্থিতি সেদিকে গড়ায় এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ নেয়, তবে রাশিয়ারও ইরানের পক্ষ নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
নোট বলেন, ‘আমার মনে হয়, পুতিন এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। আমার মনে হয় না, রুশ কূটনীতি এমন অবস্থানে যেতে চাইবে, যেখানে তাঁদের নির্দিষ্ট পক্ষ অবলম্বন করতে হয়। তবে যতই এ সংঘাত বাড়বে, ততই রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়বে।’
রাশিয়া থেকে আর বের হচ্ছেন না পুতিন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও যোগ দিয়েছেন ভার্চুয়ালি। ভ্লাদিমির পুতিনের অবস্থা এখন জেমস বন্ডের কোনো ভিলেনের সঙ্গে তুলনা করা হলে ভুল হবে না। যেন তিনি বসে আছেন কোনো পর্বতের গুহায়, আর পৃথিবীতে একের পর এক অশান্তি সৃষ্টি করে চলেছেন। হাতে থাকা রিমোটের এক বোতামে চাপ দিচ্ছেন তো বলকান অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে। আরেক বোতামে চাপ দিচ্ছেন তো মধ্যপ্রাচ্যে বিস্ফোরণ ঘটছে।
পশ্চিমারা অবশ্য এভাবে ভাবছে না। এসব শুধুই কল্পনা। এটি ক্রেমলিনের নেতার বৈশ্বিক প্রভাবকে বাড়াবাড়ি রূপে উপস্থাপন ছাড়া কিছুই নয়। বিশ্বে যেকোনো সংঘর্ষের পেছনেই পুতিনের হাত থাকবে—এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। খোদ যুক্তরাষ্ট্রও কিন্তু এমন মনে করছে না। কিন্তু তাই বলে, পৃথিবীর কোনো প্রান্তের সংঘাত থেকে সুবিধা আদায়ের সুযোগ থাকলেও হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন এমন লোক পুতিন নন।
গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধে পুতিন তথা রাশিয়ার কী কী লাভ থাকতে পারে, তার একটি অনুসন্ধান চালিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রাশিয়ার সঙ্গে হামাস ও ইরানের বেশ গভীর সম্পর্ক রয়েছে, এটা সবার জানা। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, মস্কো ও তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক এখন পূর্ণাঙ্গ প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় রূপ নিয়েছে।
তবে এর মানে এই নয় যে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পেছনে মস্কো সরাসরি সম্পৃক্ত বা আগে থেকে এ সম্পর্কে ক্রেমলিন অবহিত ছিল। আবার ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলার পেছনে ইরানের হাত আছে— এমন কথা উঠলেও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইরানের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ নেই।
মস্কোতে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার বেন ভি গত সপ্তাহে রাশিয়ার দৈনিক কমেরসান্তকে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি না, এ ঘটনায় রাশিয়া কোনোভাবে যুক্ত ছিল। ইসরায়েলে হামাসের নৃশংসতার সঙ্গে রাশিয়ার যোগসূত্র আছে—এ দাবি সম্পূর্ণ অর্থহীন।’
জেমস মার্টিন সেন্টার ফর ননপ্রলিফারেশন স্টাডিজের বার্লিনভিত্তিক রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হান্না নোট বলেন, ‘আমি হামাসকে সরাসরি রাশিয়ার অস্ত্র সরবরাহ বা হামাস যোদ্ধাদের রাশিয়ার সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পক্ষে কোনো প্রমাণ পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘এটা সত্য যে হামাসের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। রাশিয়া কখনোই হামাসকে “সন্ত্রাসী গোষ্ঠী” হিসেবে উল্লেখ করেনি। গত বছর এবং চলতি বছর হামাসের প্রতিনিধিদল মস্কোতেই ছিল। তবে আমি তা থেকে অনুমান করব না যে হামাসের প্রতি মস্কোর ব্যাপক সামরিক সমর্থন রয়েছে। যদিও আমরা জানি, রাশিয়ার তৈরি রূপরেখা অনুযায়ীই তারা গাজা পার্বত্য এলাকা নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিল এবং সম্ভবত এর সঙ্গে মিসরের সিনাই উপদ্বীপ কর্তৃপক্ষ ও ইরানেরও সহযোগিতা ছিল।’
সহজ কথায়, পুতিনের ইশারাতেই যে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে, এমনটা বলা যায় না।
মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতে রাশিয়ার ফায়দা কী
হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে ইউক্রেন পরিস্থিতি থেকে মনোযোগ সরছে বিশ্বের। সহিংসতা বৃদ্ধির সঙ্গে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে বিশ্বের মনোযোগ সরাতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের নাটকীয় শিরোনামের ওপর ভরসা করছে মস্কো।
তবে লাভ শুধু সংবাদ শিরোনামে পরিবর্তনেই সীমাবদ্ধ নয়। রাশিয়ার প্রত্যাশা হলো, মধ্যপ্রাচ্যে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে পশ্চিমাদের অস্ত্র সরবরাহ ইউক্রেনের বদলে ইসরায়েলের দিকে ঘুরে যাবে।
রাশিয়ার কূটনীতিক কনস্তানতিন গাভ্রিলভ ক্রেমলিনপন্থী দৈনিক ইজভেস্তিয়াকে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এই সংকট সরাসরি ইউক্রেনে চলমান বিশেষ সামরিক অভিযানের গতিমুখকে প্রভাবিত করবে। ইসরায়েলে সংঘাতের কারণে ইউক্রেনের পৃষ্ঠপোষকদের মনোযোগ সরে যাবে। এর মানে এ নয় যে পশ্চিমারা ইউক্রেনীয়দের পরিত্যাগ করবে। তবে সামরিক সহায়তার পরিমাণ কমবে এবং চলমান এই অভিযানের গতিপথ রাশিয়ার পক্ষে ঘুরে যাবে।’
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ‘কংগ্রেস অতিরিক্ত তহবিল বরাদ্দ না করায় ওয়াশিংটনের পক্ষে ইউক্রেনকে আর অপরিসীম সাহায্য দেওয়া সম্ভব হবে না। নিকটবর্তী সময় বিবেচনায় আমাদের ইউক্রেন ও ইসরায়েল উভয় দেশের জন্যই তহবিল সরবরাহ করার অনুরোধ পেয়েছি।’
ন্যাটো প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি লয়েড অস্টিন বলেছেন, ‘আমরা ইসরায়েলের পাশে দাঁড়াতে পারি এবং পাশে থাকব। এমনকি আমরা ইউক্রেনের পাশেও আছি।’
তবে, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে যুক্তরাষ্ট্রের একসঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন যুদ্ধে দুটি মিত্র দেশকে সহযোগিতা করার সক্ষমতা পরীক্ষার মুখে পড়বে।
রাশিয়া কি মধ্যস্থতাকারী
রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য শান্তি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তার ভূমিকা জোরদার করার চেষ্টা করছে। এর আগেও রাশিয়া এই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এই অঞ্চলের সংঘাত নিরসনে অতীতের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাগুলোতে অংশ নিয়েছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘রাশিয়া (সংঘাতের) সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে এবং রাখবে। আমরা এ সংঘাতের প্রতিটি পক্ষের সঙ্গেই যোগাযোগ রাখছি।’
গত সপ্তাহে মস্কো সফরের সময় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানি প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতির জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শান্তি প্রতিষ্ঠায় রাশিয়া কতটা সফল হবে
রাশিয়া নিজেই প্রতিবেশী দেশের (ইউক্রেন) ওপর আক্রমণ করেছে। প্রায় ২০ মাস ধরে চলমান এ যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ও ধ্বংসের পরিমাণ বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে।
এ ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘ভূমিকা পালন করতে পারবে এবং করবে’ বললেই যে সংঘাতে জড়িতরা রাশিয়াকে মধ্যস্থতাকারী মানবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
মস্কো দীর্ঘকাল ধরেই মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে আগ্রহী। বিশেষ করে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি করার পর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন আরবের পক্ষে অবস্থান নেয়। অবশ্য পশ্চিমের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার কারণে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে মিসরের মতো দেশগুলোকে অস্ত্রের জন্য সোভিয়েতের কাছে যেতে হয়েছিল।
ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ইহুদিবিদ্বেষ ছিল সোভিয়েত জীবনের একটি বৈশিষ্ট্য।
সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের পর রাশিয়া ও ইসরায়েলের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছিল। বিশেষ করে সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র থেকে ইসরায়েলে ১০ লাখের বেশি ইহুদির আগমনের কারণে এ উন্নতি হয়। সোভিয়েতের পতনের পর আরব দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রে পরিণত হয়।
তবে সম্প্রতি রাশিয়া ইসরায়েলের শত্রুদের, বিশেষ করে ইরানের ঘনিষ্ঠ হয়েছে, যা রাশিয়া-ইসরায়েল সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা
বরাবরের মতো এ সংঘাতের জন্যও ক্রেমলিন যুক্তরাষ্ট্রকেই দোষারোপ করছে। ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে ভ্লাদিমির পুতিনের মূল বার্তাই হলো, এটি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির ব্যর্থতার একটি দৃষ্টান্ত। মস্কো এর আগেও এভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকামী মনোভাবকে’ লক্ষ্যবস্তু করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে রাশিয়ার যেমন সুবিধা আছে, তেমন কিছু অসুবিধাও রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হান্না নোট বলেন, ‘সতর্কতার সঙ্গে পরিকল্পিত অস্থিতিশীলতা রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করে। যদি এ সংকটের কারণে ইউক্রেন থেকে বিশ্ববাসীর মনোযোগ সরে, তবে রাশিয়া এতে স্বল্প মেয়াদে লাভবান হতে পারে।’
নোট বলেন, ‘তবে বিস্তৃত অঞ্চলে চলা যুদ্ধ থেকে রাশিয়া লাভবান হবে না। এমনকি হামাসকে অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহকারী ইরানেরও এতে বিশেষ লাভ হবে না।
হান্না নোটের মতে, রাশিয়া ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে যুদ্ধ চায় না। যদি পরিস্থিতি সেদিকে গড়ায় এবং যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ নেয়, তবে রাশিয়ারও ইরানের পক্ষ নেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
নোট বলেন, ‘আমার মনে হয়, পুতিন এখনো ইসরায়েলের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। আমার মনে হয় না, রুশ কূটনীতি এমন অবস্থানে যেতে চাইবে, যেখানে তাঁদের নির্দিষ্ট পক্ষ অবলম্বন করতে হয়। তবে যতই এ সংঘাত বাড়বে, ততই রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়বে।’
এই দফায় সংঘাতের শুরু কাশ্মীরে। এই বিতর্কিত অঞ্চলটি ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই উত্তেজনাপূর্ণ এলাকা। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান ব্রিটিশ ভারতের রক্তাক্ত বিভাজনের পর পুরো কাশ্মীর নিজেদের বলে দাবি করে।
২০ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্র মূলত একটি খোলা দরজায় ধাক্কা দিয়েছে— অর্থাৎ যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া কোনো পক্ষেরই স্বার্থে ছিল না। তাই এই সমঝোতা হওয়া ছিল সময়ের ব্যাপার।
১ দিন আগেভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার পথে দুই দেশ। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর জবাবে ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসৌস’ ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ফলে ক্রমেই সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ...
২ দিন আগেইউরোপের মানুষদের কাছে বহু বছর ধরে সমর্থন পেয়ে এসেছে ইসরায়েল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নাৎসি বাহিনীর হাতে নির্বিচার ইহুদি নিধনের পর এই সমর্থন আরও বেড়েছে। তবে ইসরায়েলের প্রতি এই সমর্থনে ইউরোপের সব দেশে সমান নয়, বিশেষ করে আয়ারল্যান্ডে।
২ দিন আগে