অনলাইন ডেস্ক
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত সপ্তাহে পাকিস্তানকে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা অনুমোদন করেছে। এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে ভারত। কারণ, সে সময় দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে সামরিক সংঘাত চলছিল। পরে হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।
ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও আইএমএফ বোর্ড পাকিস্তানের জন্য ৭০০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদন করেছে। আইএমএফ বলেছে, পাকিস্তান তাদের কর্মসূচি জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করছে। এর ফলে, দেশটির অর্থনীতির পুনরুদ্ধার অব্যাহত। আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি আরও বলেছে, জলবায়ু ঝুঁকি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পাকিস্তান যাতে অর্থনৈতিকভাবে আরও স্থিতিশীল হতে পারে, সে জন্যই তারা সহায়তা চালিয়ে যাবে।
আইএমএফের এই সিদ্ধান্তের ফলে, ভবিষ্যতে পাকিস্তানের জন্য সংস্থাটির কাছ থেকে আরও প্রায় ১৪০ কোটি ডলার তহবিল পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। কঠোর বিবৃতির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। দিল্লি এর পেছনে দুটি কারণ দেখিয়েছে।
দিল্লি বলেছে, সংস্কার বাস্তবায়নে পাকিস্তানের ‘বাজে ইতিহাস’ রয়েছে। তাই এই ধরনের ঋণ সহায়তার ‘কার্যকারিতা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দিল্লি। তবে এর চেয়েও বড় কথা হলো, ভারত আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এই তহবিল ‘রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদে’ ব্যবহার হতে পারে। এই অভিযোগ ইসলামাবাদ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
ভারত আরও বলেছে, এর মাধ্যমে আইএমএফ নিজেকে এবং এর দাতাদের ‘খ্যাতির ঝুঁকিতে’ ফেলছে। এটি ‘বৈশ্বিক মূল্যবোধের সঙ্গে উপহাস।’ ভারতের অবস্থান নিয়ে আইএমএফের কাছে জানতে চেয়েছিল বিবিসি। তবে আইএমএফ এ বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি।
তবে, পাকিস্তানি বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করেন যে, দিল্লির প্রথম যুক্তিতে কিছুটা সারবত্তা আছে। পাকিস্তান বারবার আইএমএফের সাহায্য চেয়েছে। ১৯৫৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২৪ বার ঋণ সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু জনপ্রশাসন উন্নত করার জন্য কোনো অর্থপূর্ণ সংস্কার করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হোসেইন হাক্কানি বিবিসিকে বলেছেন, ‘আইএমএফের কাছে যাওয়া নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) যাওয়ার মতো।’ তিনি বলেন, ‘কোনো রোগী যদি ২৪-২৫ বার আইসিইউতে যান, তাহলে বুঝতে হবে সেখানে কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। সেগুলো সমাধান করা দরকার।’
সংস্কার ছাড়াও দিল্লির কাছে পাকিস্তান ইস্যুতে কিন্তু দিল্লির আরও বড় উদ্বেগ আছে এবং সেই উদ্বেগ মোকাবিলা করা অনেক বেশি জটিল। ভারত বলেছে, আইএমএফ ‘আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের ধারাবাহিক পৃষ্ঠপোষকতাকে পুরস্কৃত’ করছে। এটি ‘বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি বিপজ্জনক বার্তা’ পাঠাচ্ছে।
এই জটিলতা সম্ভবত ব্যাখ্যা করে যে, কেন ভারত এই ঋণ সহায়তা বন্ধ করতে চাপ দিতে পারেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণের পরবর্তী কিস্তি বন্ধ করার ভারতের সিদ্ধান্ত ছিল কৌশলগত। এর পেছনে বাস্তব কোনো ‘ফল পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা’ ছিল না। ভারতের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আইএমএফে দেশটির ক্ষমতা সীমিত। এই ক্ষমতা ‘পদ্ধতিগত ও প্রযুক্তিগত আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ’ ছিল।
আইএমএফ বোর্ডের ২৫ জন সদস্যের মধ্যে ভারতও একটি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আইএমএফে ভারতের প্রভাব সীমিত। ভারত আইএমএফে চারটি দেশের একটি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। এই গোষ্ঠীর সদস্য হলো—শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং ভুটান। বিপরীতে পাকিস্তান মধ্য এশিয়া গোষ্ঠীর অংশ। এই অংশের প্রতিনিধিত্ব করে ইরান।
জাতিসংঘের মতো আইএমএফে ‘এক দেশ, এক ভোট’ পদ্ধতি নেই। আইএমএফ বোর্ডের সদস্যদের ভোটাধিকার নির্ভর করে একটি দেশের অর্থনীতির আকার এবং এর অবদানের ওপর। এই পদ্ধতি ক্রমশ সমালোচিত হচ্ছে। অভিযোগ, এটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির চেয়ে ধনী পশ্চিমা দেশগুলোকে বেশি সুবিধা দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের শেয়ার সবচেয়ে বেশি—১৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর ভারতের শেয়ার মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া, আইএমএফের নিয়ম অনুসারে কোনো প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া যায় না। বোর্ডের সদস্যরা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে পারেন বা ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। আর বোর্ডের সিদ্ধান্তগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে নেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অর্থনীতিবিদ বিবিসিকে বলেছেন, ‘এটি দেখিয়েছে যে, শক্তিশালী দেশগুলোর স্বার্থ কীভাবে সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।’ এই ভারসাম্যহীনতা দূর করতে একটি প্রস্তাবও তোল হয়েছিল। ২০২৩ সালে ভারতে জি-২০ জোটের শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্বকালে আইএমএফ ও অন্যান্য বহুপক্ষীয় ঋণদাতা সংস্থার সংস্কারের জন্য এই প্রস্তাব আনা হয়েছিল।
এই সংস্কার প্রতিবেদনে ভারতের সাবেক আমলা এনকে সিং এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ট্রেজারি সেক্রেটারি তথা অর্থমন্ত্রী লরেন্স সামার্স একটি সুপারিশ করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, আইএমএফের ভোটাধিকার ও আর্থিক অবদানের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে দেওয়া উচিত। এতে ‘গ্লোবাল নর্থ’ এবং ‘গ্লোবাল সাউথ’ উভয়ের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।
তবে এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ ছাড়া, সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোতে অর্থায়ন নিয়ে আইএমএফের নিজস্ব নিয়মের সাম্প্রতিক কিছু পরিবর্তন এই বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে। ২০২৩ সালে ইউক্রেনকে আইএমএফ ১৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল। যুদ্ধরত কোনো দেশকে আইএমএফের দেওয়া এটিই ছিল প্রথম ঋণ।
দিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) থিংক ট্যাংকের মিহির শর্মা বিবিসিকে বলেন, আইএমএফ ইউক্রেনকে বিশাল ঋণ প্যাকেজ দিতে তাদের নিজস্ব নিয়ম ভেঙেছে। এর মানে হলো, পাকিস্তানের জন্য আগে থেকেই নির্ধারিত ঋণ বন্ধ করতে এটি সেই অজুহাত ব্যবহার করতে পারবে না।
হোসেইন হাক্কানি বলেন, ভারত যদি সত্যিই তাদের তোলা অভিযোগগুলো সমাধান করতে চায়, তাহলে সেগুলো উত্থাপনের সঠিক প্ল্যাটফর্ম হবে জাতিসংঘের ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স বা এফএটিএফ। এটি সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধের বিষয়গুলো দেখভাল করে থাকে। কোনো দেশকে ‘গ্রে বা ধূসর’ বা ‘ব্ল্যাক বা কালো’ তালিকায় রাখা দরকার কিনা, সেই বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়।
জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ এই তালিকায় থাকলে আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থা থেকে তহবিল পেতে সমস্যা হয়। হোসেইন হাক্কানি বলেন, আইএমএফে বাগাড়ম্বর কাজ করতে পারে না, করেওনি। তিনি বলেন, ‘যদি কোনো দেশ এফএটিএফ-এর তালিকায় থাকে, তাহলে আইএমএফ থেকে ঋণ পেতে সমস্যার মুখে পড়বে। আগে পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে।’
তবে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, ২০২২ সালে পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সে (এফএটিএফ) ‘গ্রে বা ধূসর’ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, বিশেষজ্ঞরা আরও সতর্ক করে বলেছেন, আইএমএফের অর্থায়ন প্রক্রিয়া এবং ভেটো ক্ষমতা সংস্কারের জন্য ভারতের আহ্বান তাদের জন্য ‘দোধারী তলোয়ার’ হতে পারে।
মিহির শর্মা বলেন, ‘এই ধরনের সংস্কার অনিবার্যভাবে দিল্লির চেয়ে বেইজিংকে বেশি ক্ষমতা দেবে।’ হোসেইন হাক্কানিও এই বিষয়ে একমত। তিনি বলেন, ‘বহুপক্ষীয় ফোরামে দ্বিপক্ষীয় বিরোধ তোলার ব্যাপারে ভারতের সতর্ক থাকা উচিত। কারণ, ভারত ঐতিহাসিকভাবেই এ ধরনের জায়গায় চীনের ভেটোর শিকার হয়েছে।’
হাক্কানি উদাহরণ হিসেবে বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। যেমন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের জন্য ভারত এডিবি (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) ঋণ চেয়েছিল। কিন্তু চীন তা আটকে দিয়েছে। চীন কারণ হিসেবে ওই অঞ্চলে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধের কথা উল্লেখ করেছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত সপ্তাহে পাকিস্তানকে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা অনুমোদন করেছে। এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে ভারত। কারণ, সে সময় দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে সামরিক সংঘাত চলছিল। পরে হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।
ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও আইএমএফ বোর্ড পাকিস্তানের জন্য ৭০০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি অনুমোদন করেছে। আইএমএফ বলেছে, পাকিস্তান তাদের কর্মসূচি জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করছে। এর ফলে, দেশটির অর্থনীতির পুনরুদ্ধার অব্যাহত। আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি আরও বলেছে, জলবায়ু ঝুঁকি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পাকিস্তান যাতে অর্থনৈতিকভাবে আরও স্থিতিশীল হতে পারে, সে জন্যই তারা সহায়তা চালিয়ে যাবে।
আইএমএফের এই সিদ্ধান্তের ফলে, ভবিষ্যতে পাকিস্তানের জন্য সংস্থাটির কাছ থেকে আরও প্রায় ১৪০ কোটি ডলার তহবিল পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। কঠোর বিবৃতির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। দিল্লি এর পেছনে দুটি কারণ দেখিয়েছে।
দিল্লি বলেছে, সংস্কার বাস্তবায়নে পাকিস্তানের ‘বাজে ইতিহাস’ রয়েছে। তাই এই ধরনের ঋণ সহায়তার ‘কার্যকারিতা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দিল্লি। তবে এর চেয়েও বড় কথা হলো, ভারত আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এই তহবিল ‘রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদে’ ব্যবহার হতে পারে। এই অভিযোগ ইসলামাবাদ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
ভারত আরও বলেছে, এর মাধ্যমে আইএমএফ নিজেকে এবং এর দাতাদের ‘খ্যাতির ঝুঁকিতে’ ফেলছে। এটি ‘বৈশ্বিক মূল্যবোধের সঙ্গে উপহাস।’ ভারতের অবস্থান নিয়ে আইএমএফের কাছে জানতে চেয়েছিল বিবিসি। তবে আইএমএফ এ বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি।
তবে, পাকিস্তানি বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করেন যে, দিল্লির প্রথম যুক্তিতে কিছুটা সারবত্তা আছে। পাকিস্তান বারবার আইএমএফের সাহায্য চেয়েছে। ১৯৫৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ২৪ বার ঋণ সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু জনপ্রশাসন উন্নত করার জন্য কোনো অর্থপূর্ণ সংস্কার করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হোসেইন হাক্কানি বিবিসিকে বলেছেন, ‘আইএমএফের কাছে যাওয়া নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) যাওয়ার মতো।’ তিনি বলেন, ‘কোনো রোগী যদি ২৪-২৫ বার আইসিইউতে যান, তাহলে বুঝতে হবে সেখানে কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। সেগুলো সমাধান করা দরকার।’
সংস্কার ছাড়াও দিল্লির কাছে পাকিস্তান ইস্যুতে কিন্তু দিল্লির আরও বড় উদ্বেগ আছে এবং সেই উদ্বেগ মোকাবিলা করা অনেক বেশি জটিল। ভারত বলেছে, আইএমএফ ‘আন্তসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের ধারাবাহিক পৃষ্ঠপোষকতাকে পুরস্কৃত’ করছে। এটি ‘বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি বিপজ্জনক বার্তা’ পাঠাচ্ছে।
এই জটিলতা সম্ভবত ব্যাখ্যা করে যে, কেন ভারত এই ঋণ সহায়তা বন্ধ করতে চাপ দিতে পারেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণের পরবর্তী কিস্তি বন্ধ করার ভারতের সিদ্ধান্ত ছিল কৌশলগত। এর পেছনে বাস্তব কোনো ‘ফল পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা’ ছিল না। ভারতের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আইএমএফে দেশটির ক্ষমতা সীমিত। এই ক্ষমতা ‘পদ্ধতিগত ও প্রযুক্তিগত আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ’ ছিল।
আইএমএফ বোর্ডের ২৫ জন সদস্যের মধ্যে ভারতও একটি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আইএমএফে ভারতের প্রভাব সীমিত। ভারত আইএমএফে চারটি দেশের একটি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। এই গোষ্ঠীর সদস্য হলো—শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং ভুটান। বিপরীতে পাকিস্তান মধ্য এশিয়া গোষ্ঠীর অংশ। এই অংশের প্রতিনিধিত্ব করে ইরান।
জাতিসংঘের মতো আইএমএফে ‘এক দেশ, এক ভোট’ পদ্ধতি নেই। আইএমএফ বোর্ডের সদস্যদের ভোটাধিকার নির্ভর করে একটি দেশের অর্থনীতির আকার এবং এর অবদানের ওপর। এই পদ্ধতি ক্রমশ সমালোচিত হচ্ছে। অভিযোগ, এটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির চেয়ে ধনী পশ্চিমা দেশগুলোকে বেশি সুবিধা দেয়।
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের শেয়ার সবচেয়ে বেশি—১৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর ভারতের শেয়ার মাত্র ২ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ছাড়া, আইএমএফের নিয়ম অনুসারে কোনো প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া যায় না। বোর্ডের সদস্যরা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে পারেন বা ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। আর বোর্ডের সিদ্ধান্তগুলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে নেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অর্থনীতিবিদ বিবিসিকে বলেছেন, ‘এটি দেখিয়েছে যে, শক্তিশালী দেশগুলোর স্বার্থ কীভাবে সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।’ এই ভারসাম্যহীনতা দূর করতে একটি প্রস্তাবও তোল হয়েছিল। ২০২৩ সালে ভারতে জি-২০ জোটের শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্বকালে আইএমএফ ও অন্যান্য বহুপক্ষীয় ঋণদাতা সংস্থার সংস্কারের জন্য এই প্রস্তাব আনা হয়েছিল।
এই সংস্কার প্রতিবেদনে ভারতের সাবেক আমলা এনকে সিং এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ট্রেজারি সেক্রেটারি তথা অর্থমন্ত্রী লরেন্স সামার্স একটি সুপারিশ করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, আইএমএফের ভোটাধিকার ও আর্থিক অবদানের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে দেওয়া উচিত। এতে ‘গ্লোবাল নর্থ’ এবং ‘গ্লোবাল সাউথ’ উভয়ের ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে।
তবে এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ ছাড়া, সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোতে অর্থায়ন নিয়ে আইএমএফের নিজস্ব নিয়মের সাম্প্রতিক কিছু পরিবর্তন এই বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে। ২০২৩ সালে ইউক্রেনকে আইএমএফ ১৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছিল। যুদ্ধরত কোনো দেশকে আইএমএফের দেওয়া এটিই ছিল প্রথম ঋণ।
দিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) থিংক ট্যাংকের মিহির শর্মা বিবিসিকে বলেন, আইএমএফ ইউক্রেনকে বিশাল ঋণ প্যাকেজ দিতে তাদের নিজস্ব নিয়ম ভেঙেছে। এর মানে হলো, পাকিস্তানের জন্য আগে থেকেই নির্ধারিত ঋণ বন্ধ করতে এটি সেই অজুহাত ব্যবহার করতে পারবে না।
হোসেইন হাক্কানি বলেন, ভারত যদি সত্যিই তাদের তোলা অভিযোগগুলো সমাধান করতে চায়, তাহলে সেগুলো উত্থাপনের সঠিক প্ল্যাটফর্ম হবে জাতিসংঘের ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স বা এফএটিএফ। এটি সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধের বিষয়গুলো দেখভাল করে থাকে। কোনো দেশকে ‘গ্রে বা ধূসর’ বা ‘ব্ল্যাক বা কালো’ তালিকায় রাখা দরকার কিনা, সেই বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়।
জাতিসংঘের কোনো সদস্য দেশ এই তালিকায় থাকলে আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থা থেকে তহবিল পেতে সমস্যা হয়। হোসেইন হাক্কানি বলেন, আইএমএফে বাগাড়ম্বর কাজ করতে পারে না, করেওনি। তিনি বলেন, ‘যদি কোনো দেশ এফএটিএফ-এর তালিকায় থাকে, তাহলে আইএমএফ থেকে ঋণ পেতে সমস্যার মুখে পড়বে। আগে পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে।’
তবে বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, ২০২২ সালে পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সে (এফএটিএফ) ‘গ্রে বা ধূসর’ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, বিশেষজ্ঞরা আরও সতর্ক করে বলেছেন, আইএমএফের অর্থায়ন প্রক্রিয়া এবং ভেটো ক্ষমতা সংস্কারের জন্য ভারতের আহ্বান তাদের জন্য ‘দোধারী তলোয়ার’ হতে পারে।
মিহির শর্মা বলেন, ‘এই ধরনের সংস্কার অনিবার্যভাবে দিল্লির চেয়ে বেইজিংকে বেশি ক্ষমতা দেবে।’ হোসেইন হাক্কানিও এই বিষয়ে একমত। তিনি বলেন, ‘বহুপক্ষীয় ফোরামে দ্বিপক্ষীয় বিরোধ তোলার ব্যাপারে ভারতের সতর্ক থাকা উচিত। কারণ, ভারত ঐতিহাসিকভাবেই এ ধরনের জায়গায় চীনের ভেটোর শিকার হয়েছে।’
হাক্কানি উদাহরণ হিসেবে বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। যেমন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের জন্য ভারত এডিবি (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) ঋণ চেয়েছিল। কিন্তু চীন তা আটকে দিয়েছে। চীন কারণ হিসেবে ওই অঞ্চলে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধের কথা উল্লেখ করেছে।
রাশিয়ার দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলের স্টানিৎসিয়া শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে ট্রান্সফরমার গত ২৬ এপ্রিল উড়িয়ে দিয়েছে একদল গোপন প্রতিরোধকারী। এর আগে গত ১৬ এপ্রিল মেলিতোপোলে রেল অবকাঠামোয় আগুন লাগানো হয়।
১ দিন আগেভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা তাঁদের আগেভাগে জানানো হয়নি। এতে ভারত প্রথমে যুদ্ধবিরতির বিষয়টিকে ‘পাকিস্তানের অনুরোধে হওয়া’ বলে উপস্থাপন করতে পারছে না। যাহোক, যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতার পর ট্রাম্প ১১ মে কাশ্মীর ইস্যুতেও মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ভারত কাশ্মীর ইস্যুতে বহুদিন
১ দিন আগেসৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন একটি ‘স্বপ্ন’ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি চান রিয়াদ যেন তাদের ‘সুবিধাজনক সময়ে’ এটি করে। গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সঙ্গে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দিয়েছে।
১ দিন আগেভারত-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ১৩০ বিলিয়ন ডলার ছিল ২০২৪ সালে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। মোদির সরকার বর্তমানে শুল্ক এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। দিল্লিকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব গ্রহণ করতে দিল্লি নারাজ হবে।
২ দিন আগে