Ajker Patrika

ফরেন অ্যাফেয়ার্সের নিবন্ধ /যুক্তরাষ্ট্র মুখ ফেরালে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত থামানোর শেষ চাবিকাঠি যাদের হাতে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, ১৫: ৩৯
যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজবাহী রণতরি ‘ইউএসএস নিমিটজ’। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজবাহী রণতরি ‘ইউএসএস নিমিটজ’। ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাসের ডিপোগুলোতে টানা বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, এই হামলার লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘দমন, ধ্বংস এবং মুছে ফেলা।’ জবাবে ইরানও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।

গত দেড় বছর ধরে ইরান-ইসরায়েলের পরোক্ষ সংঘাতে আরব দেশগুলো উদ্বিগ্ন ছিল যে, যুদ্ধ তাদের ভূখণ্ডেও ছড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু লড়াই এখন যেভাবে ছড়াচ্ছে, আর ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যেভাবে পুরো উপসাগরীয় অঞ্চল পাড়ি দিচ্ছে, তাতে আশপাশের দেশগুলো এখন ভাবছে—সংঘাত ‘কবে’ তাদের ওপর ‘কবে’ নেমে আসবে।

এখনো সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানোর সামান্য সুযোগ রয়ে গেছে। কিন্তু ওয়াশিংটন যখন কূটনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, তখন এই দায়িত্ব এসে পড়ছে এই অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর। কারণ, আরব দেশগুলো এবং তুরস্ক—দুই পক্ষই ইসরায়েল, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক রাখে। এখন এদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ গড়ে তুলতে এবং মধ্যস্থতা করতে এদের নেতৃত্বেই একটি আঞ্চলিক কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ওয়াশিংটনকে কিছুটা অন্তর্ভুক্ত করলেও, পুরোপুরি তার ওপর নির্ভর করা যাবে না।

যুক্তরাষ্ট্র যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, আরব দেশগুলো এবং তুরস্ক যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে এই যুদ্ধ গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। ইরানের পক্ষ থেকে এসব দেশের অবকাঠামোতে হামলা হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা।

বছরের পর বছর ধরে আরব সরকারগুলো ইরান ও ইসরায়েল—দুই দেশকেই ‘সমস্যা’ হিসেবে দেখে এসেছে। ইরানের মতাদর্শিক সম্প্রসারণবাদ, পারমাণবিক কার্যক্রম এবং ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন ও সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের শাসনকে সমর্থন—এসব কিছুই প্রতিবেশীদের জন্য ইরানকে এক ‘স্থায়ী’ হুমকিতে পরিণত করেছে।

২০১৯ সালে, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের তদন্ত অনুসারে, ইরান সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল। ইরান সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও প্রকাশ্যে হামলার প্রশংসাও করে। ২০২২ সালে ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীদের দূরপাল্লার হামলায় আবুধাবির একটি নির্মাণ ও তেল স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে, আরব বিশ্ব আবার আতঙ্কিত হয়। হুতিরা স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হলেও তেহরানের সহায়তায় তারা আঞ্চলিক হুমকিতে পরিণত হয়েছে।

গত কয়েক বছরে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক তুলনামূলক ভালো ছিল। কিন্তু গাজায় দীর্ঘমেয়াদি ও নির্মম যুদ্ধ, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি দমননীতি, বসতি সম্প্রসারণ এবং যুদ্ধ পরবর্তী শান্তি বা নিরাপত্তা আলোচনা থেকে ইসরায়েলের অনীহা—এসব বিষয় আরব দুনিয়ায় ইসরায়েলকেও অস্থিতিশীলতার উৎস হিসেবে ভাবতে বাধ্য করেছে।

ইসরায়েল যেভাবে হামাস ও হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব ও অবকাঠামো দুর্বল করেছে, সিরিয়ায় ইরানি উপস্থিতিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং ইরানের অভ্যন্তরেও হামলা চালিয়েছে, তা উপসাগরীয় নিরাপত্তা মহলে ‘নিঃশব্দে প্রশংসিত’ হয়েছে। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের চলমান অভিযান আরব জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের প্রক্রিয়াকে আরও বাধাগ্রস্ত করেছে। আবার, যুদ্ধপীড়িত সিরিয়াকে ঘিরে ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলা আরব বিশ্বের স্থিতিশীলতার আকাঙ্ক্ষাকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে।

সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো—ইসরায়েল-ইরানের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া। আরব দেশগুলো এই আশঙ্কাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে বলছেন না যে, তারা সংঘাত আরও বিস্তৃত করতে চান, কিন্তু তেহরানের শাহর রে রিফাইনারি ও পারস্য উপসাগরে অবস্থিত সাউথ পার্স রিফাইনারির ওপর ইসরায়েলের হামলা দেখে মনে হচ্ছে, তারা ইরানকে উসকানি দিচ্ছে—যাতে ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালায় কিংবা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়। ইরান যদি এমন কিছু করে, তাহলে আরব দেশগুলো বাধ্য হবে প্রকাশ্যে ইসরায়েলের পক্ষ নিতে—এটাই ইসরায়েলের চাওয়া।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও খুব শিগগিরই ইসরায়েলের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এমনটা হলে ইরানের পক্ষে আরব দেশগুলোর ওপর হামলার প্রলোভন আরও বেড়ে যাবে, কারণ এসব দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হবে, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে, উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামোয় কিংবা হরমুজ প্রণালির জাহাজে হামলা চালায়। এতে শুধু তেল রপ্তানিই বিপন্ন হবে না, বিনিয়োগকারীদের আস্থাও ধ্বংস হবে। কার্বননির্ভর অর্থনীতি এবং সৌদি আরবের ভিশন-২০৩০—এর মতো অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। এ ছাড়া ইয়েমেনে সংঘাত আরও বেড়ে যেতে পারে, যেখানে হুতি বিদ্রোহীরা আবার লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করতে পারে। এমনকি সরাসরি উপসাগরীয় দেশগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে। সাধারণ আরব জনগণ খাদ্য সরবরাহ বিঘ্ন, পানির উৎস বিষাক্ত হওয়া কিংবা সাইবার হামলার মতো দুর্যোগের শিকার হবে। এই ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে খুব ভালোভাবে সচেতন বলেই এই দেশগুলো মরিয়া হয়ে উঠেছে, যুদ্ধ যেন আর না ছড়ায়।

নিজেদের নিরাপদ রাখতে আরব দেশগুলো ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড থেকে স্পষ্টভাবে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রকাশ্য নিন্দা করেছে। জর্ডান শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। ওমান ও কাতার ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে জোরালো ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, তারা শঙ্কিত যে—ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার পরমাণু চুক্তির প্রচেষ্টা ধ্বংস করে দিতে চাইছে। তুরস্কও কঠোর সমালোচনা করেছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, সংঘাত যেন আর বাড়তে না পারে, তা নিশ্চিত করতে তাঁর দেশ ‘যা কিছু দরকার’ তা করতে প্রস্তুত।

এরদোয়ান আসলে কী করতে চাইছেন, সেটা স্পষ্ট নয়। তবে আঞ্চলিক দেশগুলো এখন এমন এক অবস্থানে আছে, যেখানে তারা ইরান, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র—এই তিন পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উপসাগরীয় দেশগুলোর তেহরান ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ আছে। তারা মার্কিন ঘাঁটির স্বাগতিক দেশ, গোপন বৈঠকের মধ্যস্থতাকারী এবং উভয় পক্ষের নিরাপত্তা হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। পাশাপাশি, এখন তারা ইসরায়েলের সঙ্গেও প্রকাশ্যে বা গোপনে কথা বলার পথ তৈরি করে ফেলেছে। এই সংকটময় মুহূর্তে তাদের এই সব কূটনৈতিক সম্পদ কাজে লাগাতে হবে—শুধু ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে নয় বরং যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি করতে এবং পরমাণু ও বৃহত্তর আঞ্চলিক আলোচনার ধারায় ফেরার জন্য।

এর জন্য আঞ্চলিক দেশগুলোকে একটি কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে, যা হতে পারে আরব লিগের নেতৃত্বে কিংবা একটি ছোট আকারের, উপসাগরীয় জোটের নেতৃত্বে। এই উদ্যোগে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে ইসরায়েল ও ইরানের প্রতিনিধিদের মধ্যে পরোক্ষ সংলাপের পরিবেশ গড়ে তোলা যেতে পারে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা একটি ‘কুলিং-অফ’ সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারে, যার মধ্যে দুই দেশ একে অপরের ওপর বিশেষ করে বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা বন্ধ রাখবে।

একই সঙ্গে, আরব দেশগুলো এবং তুরস্কের উচিত একটি আলাদা কূটনৈতিক চ্যানেল খোলা, যার লক্ষ্য হবে জ্বালানি ও সামুদ্রিক অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হলে যে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় ঘটতে পারে তা ঠেকানো। এমন কোনো উদ্যোগ প্রকাশ্যে আসলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বুঝতে পারবেন যে শান্তিপূর্ণ সমাধান ও আলোচনাই হলো সবচেয়ে ভালো পথ এবং সেটাই মধ্যপ্রাচ্য চায়। এভাবে একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তিচুক্তির পথ তৈরি হতে পারে।

প্রথমে এটি ভাবা কঠিন মনে হতে পারে যে, ট্রাম্প কোনো বিদেশি সরকারের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তিতে রাজি হবেন কি না। কিন্তু আরব উপসাগরীয় দেশগুলোই ছিল হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম সফরের গন্তব্য। এই সফরের মাধ্যমে উপসাগরীয় নেতারা আবারও নিশ্চিত হন যে, ওয়াশিংটন কেবল তাদের কথা শুনছে না বরং তাদের প্রধান নিরাপত্তা উদ্বেগের দিকেও সক্রিয়ভাবে সাড়া দিচ্ছে।

ট্রাম্প অতীতের মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ এবং গণতন্ত্র প্রচারের নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ‘শান্তি ও অংশীদারত্বের’ এক নতুন যুগের ডাক দেন। তিনি উপসাগরীয় দেশগুলোর ব্যবসা ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের প্রশংসা করে বলেন, তারা বিনিয়োগ করছে ‘বিশৃঙ্খলায় নয়, বাণিজ্যে; সন্ত্রাসে নয়, প্রযুক্তিতে।’ ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর দাবিকে সমর্থন জানান এবং দেশটির নতুন সরকারকে সহযোগিতা দেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, গোপন বৈঠকে ট্রাম্প উপসাগরীয় দেশগুলোর অগ্রাধিকারগুলোকে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। তাঁর সফর দেখায় যে, তিনি কেবল তাদের কথা শুনতেই নয়, বরং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতেও প্রস্তুত।

ইসরায়েল হয়তো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় হওয়া কোনো শান্তিচুক্তি গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি অনিচ্ছুক। তবে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠেছে। ইসরায়েল সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ এড়িয়ে চললেই সে পথ আরও সহজ হবে। নেতানিয়াহু হয়তো সংঘাত বাড়াতে চাইবেন, কিন্তু ইসরায়েলের অন্য নেতারা বোঝেন, যুদ্ধ বিস্তৃত হলে তা বিশ্বজুড়ে জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে—যার পরিণতি ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপরই পড়বে।

অন্যদিকে, ইরানের জন্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতায় আসা এখন অত্যন্ত লাভজনক। ইসরায়েলের টানা ও নিরলস বোমাবর্ষণে বিপর্যস্ত তেহরানের শাসকগোষ্ঠী এখন মুখরক্ষা করে সরে আসার পথ খুঁজছে। দেশটির কর্মকর্তারা এতটাই চিন্তিত যে, তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে—যদি যুদ্ধবিরতির সুযোগ থাকে, তবে তারা আবার আলোচনায় বসবে। আরব দেশগুলো ইরানের সঙ্গে কঠিন আলোচনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ২০১৯ সালে উপসাগরে ইরানের হামলা এবং ২০২২ সালে হুতিদের আক্রমণ অঞ্চলজুড়ে আতঙ্ক ছড়ালেও শেষপর্যন্ত তা উত্তেজনা প্রশমনের পথ খুলে দেয়। ওই প্রেক্ষাপটে আমিরাত ২০২২ সালে আবার ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু করে, সৌদি আরবও ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় একই পথে হাঁটে।

২০০৩ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালায়, তখন আরব রাষ্ট্র ও তুরস্ক তীব্রভাবে এর বিরোধিতা করেছিল। তারা সতর্ক করেছিল, এই আগ্রাসন অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে এবং চরমপন্থীদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে। আজ আবারও তারা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানে একসুরে কথা বলছে। কারণ তারা জানে, আরেকটি অনিয়ন্ত্রিত যুদ্ধ এই অঞ্চলে আরও ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।

তাদের জন্য ঝুঁকিটা অনেক বড়। যদি যুদ্ধ বন্ধ না হয়, তাহলে তারা জানে—এই অস্থিরতা থেকে নিজেদের রক্ষা করার ক্ষমতা তাদের নেই। সময় খুব কম, ঝুঁকি বাড়ছে। তাই এই মুহূর্তে সবার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি—একটি বড় যুদ্ধ থামাতে।

আশা করা যায়, এই দেশগুলো ইরান ও ইসরায়েলকে যুদ্ধ থেকে সরে আসতে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এতে না জড়াতে রাজি করাতে পারবে। তারা ইসরায়েলকে বলতে পারে, তার বর্তমান কার্যকলাপ সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পথকে একঘরে হওয়ার পথে ঠেলে দিচ্ছে, আর স্থিতিশীলতা নয়, বরং স্থায়ী সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করছে। তারা ইরানকে বোঝাতে পারে, পরমাণু কর্মসূচি, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও প্রক্সি কার্যক্রম আর সহ্য করা হবে না—এবং অঞ্চলভুক্তি চাইলে, তাদের আচরণ পরিবর্তন করতেই হবে।

একটি শান্তিচুক্তি অর্জন অত্যন্ত কঠিন কাজ। ইরান ও ইসরায়েল তাদের অবস্থানে দৃঢ়ভাবে অনড়। এই সংঘাত প্রশমনের বদলে আরও জোরালো রূপ নিচ্ছে। তবুও বিশ্ব এক জরুরি ও ধারাবাহিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অপেক্ষায় রয়েছে। সেই উদ্যোগে ইরান ও ইসরায়েলের অংশগ্রহণ যেমন জরুরি, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও প্রয়োজন। তবে এই নেতৃত্ব, বা অন্তত সূচনা, আসতে হবে—এই অঞ্চল থেকেই।

ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বিকাশ ও নগদ ছাড়াই দেশে আন্তএমএফএস লেনদেন চালু

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

২ শিশুকে হত্যা করে বালুচাপা: বিএনপির নেতা কারাগারে

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুদানে ‘গণহত্যা’য় আরব আমিরাতের গোপন তৎপরতা ও কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪৮
বিদ্রোহীরা আল ফাশের শহর দখল করার পর অর্ধলক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
বিদ্রোহীরা আল ফাশের শহর দখল করার পর অর্ধলক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

আফ্রিকা মহাদেশে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার এবং চলমান সংঘাতকে উসকে দেওয়ার এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর বিরুদ্ধে। সোমালিয়ার পুনটল্যান্ড রাজ্যের বোসাসো বিমানবন্দরকে একটি গোপন ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহার করে আমিরাত সুদানের বিতর্কিত আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে ব্যাপক সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। সরবরাহ করা হচ্ছে কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা।

মিডল ইস্ট আই-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা, স্যাটেলাইট চিত্র, স্থানীয় সূত্র এবং মার্কিন ও আঞ্চলিক কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে। আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।

সোমালিয়ার বোসাসো উপকূলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমানঘাঁটি। ছবি: মিডল ইস্ট আই
সোমালিয়ার বোসাসো উপকূলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমানঘাঁটি। ছবি: মিডল ইস্ট আই

ভারী কার্গো বিমানের রহস্যময় যাতায়াত

বোসাসো বিমানবন্দরে আজকাল ভারী কার্গো পরিবহনকারী আইএফ-৭৬ বিমানের ঘন ঘন অবতরণ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে অস্বাভাবিক ছিল, কিন্তু এখন নিয়মিত ঘটনা। পুনটল্যান্ড মেরিটাইম পুলিশ ফোর্সের (পিএমপিএফ) একজন কমান্ডার (আবদুল্লাহি) মিডল ইস্ট মনিটরকে জানিয়েছেন, এই বিমানগুলো ঘন ঘন আসে এবং এগুলোর মাধ্যমে আসা সামরিক সরঞ্জাম ও রসদ দ্রুত অপেক্ষমাণ অন্য বিমানে তুলে সুদানে আরএসএফ-এর জন্য পাঠানো হয়।

সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিমানগুলোর উৎস হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিমানবন্দর ব্যবহারের সময়সূচি ঘন ঘন পরিবর্তন করা হয় এবং বিমানগুলো সাধারণত বিমানবন্দরের কর্মচাঞ্চল্য কম থাকার সময় বোসাসোতে পৌঁছায়। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, এই চালানগুলোর মধ্যে চীনা-নির্মিত ড্রোনসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে।

বোসাসো বন্দরের একজন সিনিয়র ম্যানেজার প্রথমবারের মতো মিডল ইস্ট আই-কে নিশ্চিত করেছেন, গত দুই বছরে পাঁচ লাখেরও বেশি ‘বিপজ্জনক’ চিহ্নিত কন্টেইনার আমিরাত বোসাসো বন্দরের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। সাধারণ কার্গোর বিপরীতে, এই আমিরাতি চালানগুলোতে ভেতরের মালপত্র বা গন্তব্যের কোনো বিস্তারিত বিবরণ নথিভুক্ত করা হয় না। বন্দরে একটি জাহাজ ভিড়লে পিএমপিএফ বাহিনীকে মোতায়েন করে এলাকা ঘিরে ফেলা হয় এবং ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে।

কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনাদের গোপন নেটওয়ার্ক

বোসাসো বিমানবন্দরের উত্তর দিকে একটি সামরিক স্থাপনা রয়েছে, এটি কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনাদের আশ্রয়স্থল। মিডল ইস্ট আই-এর হাতে আসা ছবিতে দেখা গেছে, ব্যাকপ্যাক বহনকারী ডজন ডজন কলম্বিয়ান বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি সামরিক ক্যাম্পে যাচ্ছে। পিএমপিএফ কমান্ডার আব্দুল্লাহি নিশ্চিত করেছেন, এই এলাকায় বিপুলসংখ্যক কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনা আরএসএফ-এর পক্ষে সুদানে যুদ্ধ পরিচালনার কাজ করছে।

এই ভাড়াটে সেনারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইটে বোসাসোতে আসে এবং এরপর প্রায় প্রতিদিনই ট্রানজিট হয়ে সুদানে পাড়ি জমায়। এই ভাড়াটে সেনারা তাদের ক্যাম্পের ভেতরে একটি নতুন হাসপাতালও নির্মাণ করেছে। সেখানে সুদানে আহত হওয়া আরএসএফ সৈন্যদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। আব্দুল্লাহি রক্তমাখা বিমান দেখার কথা স্মরণ করে বলেন, এই ক্যাম্প আহত আরএসএফ যোদ্ধাদের জন্য একটি চিকিৎসা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

সোমালিয়ার বোসাসো উপকূলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমানঘাঁটি। ছবি: মিডল ইস্ট আই
সোমালিয়ার বোসাসো উপকূলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমানঘাঁটি। ছবি: মিডল ইস্ট আই

বোসাসো বিমানবন্দরকে সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সেখানে একটি ফরাসি-নির্মিত সামরিক রাডার সিস্টেমও স্থাপন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক আইনের প্রশ্ন

যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০২৩ সালেই ঘোষণা করেছিল, আরএসএফ এবং তাদের সহযোগী মিলিশিয়ারা সুদানে ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আরএসএফ-কে সোমালিয়ার মাটি ব্যবহার করে সাহায্য করার বিষয়টি স্থানীয় পিএমপিএফ সৈন্যদের মধ্যে তীব্র নৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। অনেক সেনা কর্মকর্তা মনে করেন, দীর্ঘদিনের মিত্র সুদানের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ভাড়াটে সেনাদের সহায়তা করা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।

হর্ন অব আফ্রিকার সংঘাত বিশেষজ্ঞ মার্টিন প্লট সতর্ক করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সুদানের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত করছে এবং পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এই অপরাধে সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত হতে পারে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে গৃহযুদ্ধে সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে সমর্থন করার অভিযোগে সুদান সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। খার্তুম অভিযোগ করে, আরব আমিরাত পশ্চিম দারফুরে মাসালিত সম্প্রদায়ের ‘গণহত্যায় জড়িত’, তারা আরএসএফকে সামরিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা দিয়ে এ অপরাধ সংঘটিত করছে।

যদিও ২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, আরএসএফ এবং সুদানি সেনাবাহিনী উভয়ের বিরুদ্ধেই নৃশংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মোগাদিসুর নীরবতা ও আমিরাতের কৌশলগত ঘাঁটি

সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার মোগাদিসুর আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ করলেও, তাদের বোসাসোর বন্দর ও বিমানবন্দরের ওপর কোনো কর্তৃত্ব নেই। বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকার (প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ-এর নেতৃত্বাধীন) আমিরাতের ক্রমবর্ধমান ও প্রসারমান প্রভাব মোকাবিলা করতে প্রস্তুত না থাকায় সামরিক কার্যক্রমে প্রকাশ্যে বাধা দিতে পারছে না।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমিরাতের এই কার্যকলাপের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সুদানের স্বর্ণখনি দখল এবং লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার। আমিরাত এই অঞ্চলে মায়ুন, আবদ আল-কুরি, সামহা, সোমালিল্যান্ডের বেরবেরা এবং ইয়েমেনের মোচা বন্দরে ঘাঁটি নির্মাণ বা সম্প্রসারণের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।

প্লট আরও বলেন, পুনটল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান এবং নজরদারির অভাব এটিকে আমিরাতের জন্য আদর্শ অপারেশনাল ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। কারণ এখানে তাদের কার্যক্রম নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না।

আমিরাত সরকার একাধিকবার আরএসএফকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও, এ বিষয়ে মির বা পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কেউই কখনো গণমাধ্যমে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বিকাশ ও নগদ ছাড়াই দেশে আন্তএমএফএস লেনদেন চালু

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

২ শিশুকে হত্যা করে বালুচাপা: বিএনপির নেতা কারাগারে

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের প্রতিবেদন

আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়তে ৩০ লাখের হাতে অস্ত্র, ৪৫ লাখকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন মাদুরো

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ২২: ০৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে। তাঁদের মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে তিনি আবার দাবি করেছেন, অন্তত ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ ভেনেজুয়েলান নাগরিক এরই মধ্যে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন।

২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের আগে যেমন সাদ্দাম হোসেন তাঁর ফেদাইন বাহিনী গঠন করেছিলেন, তেমনই এবার মাদুরোও আগেভাগে তাঁর মিলিশিয়াদের প্রস্তুত করছেন। তবে সাদ্দামের তুলনায় মাদুরোর বাহিনীর সদস্যসংখ্যা অনেক বেশি।

তবে সিবিএস নিউজ বলছে, মাদুরোর দাবি অতিরঞ্জিত। আসলে সক্রিয় মিলিশিয়া সদস্যসংখ্যা ৩ লাখ ৪৩ হাজারের মতো, যা সাদ্দামের অনানুষ্ঠানিক বাহিনীর চেয়ে বেশি হলেও মাদুরোর ঘোষণার তুলনায় অনেক কম।

কারাকাস জানে, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য শুধু মাদকবিরোধী অভিযান নয়, মার্কিন আক্রমণ হলে সেটি আসলে পূর্ণাঙ্গ শাসন পরিবর্তনের জন্যই হবে। এ কারণেই মাদুরো এখন রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। মস্কো ভেনেজুয়েলাকে বিপুল অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দিচ্ছে, এমনকি ওয়াগনার গ্রুপের প্রায় ২০০ ভাড়াটে সেনা দেশটিতে পাঠানো হয়েছে।

এখানে প্রশ্ন উঠেছে, এই বলিভারিয়ান মিলিশিয়ারা আদৌ মার্কিন বাহিনীর জন্য হুমকি কি না। আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণে সমৃদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হলে তাদের টিকতে পারা কঠিন। তবে গেরিলা ধাঁচের যুদ্ধ, জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা মিলিশিয়া বাহিনী এবং ভূপ্রকৃতি মার্কিন অভিযানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

অনেক ভেনেজুয়েলান অবশ্য যুদ্ধের আহ্বানে সাড়া দিতে অনাগ্রহী। ফলে মাদুরোর ‘অস্ত্র ধারণের ডাক’ কতটা বাস্তবে রূপ পাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি সহজ নয়, শাসক পরিবর্তন করতে গেলে দেশ মেরামতের দায়ভারও নিতে হবে। তাই ইরাকের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ট্রাম্পের লক্ষ্য পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি মনরো নীতির পুনরুত্থান চান, অর্থাৎ পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব নিশ্চিত করা। তাঁর মতে, চীন, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই ওয়াশিংটনের বড় মাথাব্যথা।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, মাদুরো সরকারের পতনের পর ভেনেজুয়েলা যদি চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।

ভেনেজুয়েলার জঙ্গলে যুদ্ধ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হবে। দেশটির সেনারা মূলত মরুভূমি বা ইউরোপীয় বনাঞ্চলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু বলিভিয়ার ভূপ্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই অভিযান হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব অভিজ্ঞতা দেবে, তবে তা কতটা সফল হবে, তা এখনই বলা কঠিন।

বেশির ভাগ বিশ্লেষক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সহজে মাদুরোর বাহিনীকে পরাজিত করতে পারবে; কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী গেরিলা বিদ্রোহই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—ফলে পরিস্থিতি ইরাকের মতো হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, মাদুরোর ‘যুদ্ধের আহ্বান’ জনগণের মধ্যে খুব একটা সাড়া জাগায়নি।

যাহোক, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য স্পষ্ট, আমেরিকার প্রভাব পুনরুদ্ধার করা। তবে পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এ পথে হেঁটে সত্যিই কি পশ্চিম গোলার্ধে স্থিতিশীলতা আসবে, নাকি আরও এক ‘লাতিন লিবিয়া’ তৈরি হবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বিকাশ ও নগদ ছাড়াই দেশে আন্তএমএফএস লেনদেন চালু

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

২ শিশুকে হত্যা করে বালুচাপা: বিএনপির নেতা কারাগারে

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পারমাণবিক পরীক্ষার ঘোষণা দিয়ে ফের বিশ্বকে ভয়ংকর অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ঠেলে দিচ্ছেন ট্রাম্প!

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বহু বছরের নীরবতা ভেঙে ফের যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার যুগে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
বহু বছরের নীরবতা ভেঙে ফের যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার যুগে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর দেশ আবারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষায় ফিরবে। তাঁর এই ঘোষণা দেশটির দীর্ঘদিনের নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তন। ট্রাম্প নিজ মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘যেহেতু অন্যান্য দেশগুলোও পরীক্ষা চালাচ্ছে, তাই আমিও অন্যদের সঙ্গে সমানতালে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে আমাদের যুদ্ধ দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রক্রিয়া খুব শিগগির শুরু হয়ে যাবে।’

বিশ্বে বেশ কয়েকটি দেশ আছে পারমাণবিক শক্তিধর। এই দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘নিউক্লিয়ার ক্লাবের’ সদস্য বলে বিবেচনা করা হয়। তবে এই ক্লাবের সদস্য সংখ্যা স্পষ্ট নয়। এসব দেশ নিয়মিতভাবে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে থাকে। তবে ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে এখন পর্যন্ত একমাত্র উত্তর কোরিয়াই প্রকাশ্যে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, সেটাও হয়েছে ২০১৭ সালে।

হোয়াইট হাউস এখনো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তাই এটি স্পষ্ট নয় যে, তিনি ‘পারমাণবিক পরীক্ষা’ বলতে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা বোঝাচ্ছেন, নাকি অস্ত্রগুলোরই ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণ পরীক্ষা বোঝাচ্ছেন। ট্রাম্প পরে বলেছেন, পারমাণবিক পরীক্ষার স্থান পরে নির্ধারণ করা হবে।

বিবিসি এই বিষয়ে ছয়জন নীতি বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের বেশির ভাগই বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা এখনকার উত্তেজনাপূর্ণ সময়কে আরও বিপজ্জনক করে তুলবে। তাদের মতে, বিশ্ব এমন এক অবস্থার দিকে এগোচ্ছে, যেখানে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু না হলেও, আশঙ্কা প্রবল। তবে এক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ট্রাম্পের বক্তব্য বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। আরেকজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছে করে প্রতিযোগিতা উসকে দিচ্ছে না।’ তবে সবাই একমত যে, বিশ্বে পারমাণবিক ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।

মার্কিন থিংক ট্যাংক কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের নিউক্লিয়ার পলিসি প্রোগ্রামের ফেলো জেমি কুয়াং বলেন, ‘বিগত কয়েক দশকে উত্তর কোরিয়া ছাড়া পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলো আসল পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। তাই এখন কেউ যদি শুরু করে, সেটি অন্যদেরও উসকে দিতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন এক সময়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন হয়তো নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতার দ্বারপ্রান্তে।’

লন্ডনভিত্তিক প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো দারিয়া দলজিকোভা বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্যে পরিস্থিতিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে বলে তিনি মনে করেন না। তবে তাঁর মতে, ‘বিশ্বজুড়ে এমন অনেক ঘটনা ঘটছে যা পারমাণবিক সংঘাত ও অস্ত্র বিস্তারের ঝুঁকি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় নিয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাম্পের বার্তা বিশাল এক সমস্যার সমুদ্রে এক ফোঁটা মাত্র, কিন্তু সমুদ্রটা এরই মধ্যে উপচে পড়ার উপক্রম।’

বিশেষজ্ঞরা উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংঘাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একাধিকবার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়েছেন। তা ছাড়া, ভারত-পাকিস্তানের এ বছরের সংঘাত, কিংবা ইসরায়েলের ইরান হামলার ঘটনা বৈশ্বিক অস্থিরতা বাড়িয়েছে। যদিও ইসরায়েল কখনো প্রকাশ্যে তার পারমাণবিক অস্ত্রের কথা স্বীকার করেনি। পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে ইরানের বিরুদ্ধে গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টার অভিযোগ করে আসছে। তবে তেহরান তা বারবার অস্বীকার করেছে।

কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা ও তাইওয়ান নিয়ে চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান শেষ পারমাণবিক অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তিটি আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে।

ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে বলেছেন—যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা অন্য সব দেশের চেয়ে বেশি। তবে স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) হালনাগাদ তথ্য এর সঙ্গে মেলে না। সিপ্রির তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে ৫ হাজার ৪৫৯টি। এর পরেই যুক্তরাষ্ট্র, যার ওয়ারহেড ৫ হাজার ১৭৭টি। চীন অনেক পিছিয়ে, তাদের রয়েছে ৬০০টি ওয়ারহেড। অন্য গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্যও প্রায় একই।

সম্প্রতি রাশিয়া জানিয়েছে, তারা নতুন পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। ক্রেমলিন দাবি করেছে, এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করতে সক্ষম। এ ছাড়া, তাদের এমন এক ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যা পানির নিচ দিয়ে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাশিয়ার এই ঘোষণাই ট্রাম্পের বক্তব্যের কারণ হতে পারে। যদিও রাশিয়া বলেছে, এসব পরীক্ষা ‘পারমাণবিক নয়।’ অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর গভীর নজর রাখছে।

তাদের আশঙ্কা, চীনও দ্রুত ‘সমমানের পারমাণবিক শক্তি’ অর্জনের পথে। এতে তৈরি হচ্ছে ‘দুই-প্রতিদ্বন্দ্বী পারমাণবিক ঝুঁকি।’ বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার পারমাণবিক পরীক্ষা শুরু করে, তাহলে রাশিয়া ও চীনও একই পথে যেতে পারে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র সতর্ক করে বলেছেন, ‘কেউ যদি পরীক্ষার নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে, রাশিয়া তার জবাব দেবে।’ চীন জানিয়েছে, তারা আশা করে যুক্তরাষ্ট্র ‘কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট–ব্যান ট্রিটি’র প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশই চুক্তিতে সই করেছে, কিন্তু অনুমোদন দেয়নি।

ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক ড্যারিল কিমবলের মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবার পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়, তা হবে ‘আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ইতিহাসে ভয়াবহ ভুল।’ তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি ক্রমেই বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যদি নতুন চুক্তিতে না পৌঁছায়, তাহলে তিন দিক থেকে—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন—এক বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে।’

ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টসের পারমাণবিক তথ্য প্রকল্পের পরিচালক হান্স ক্রিস্টেনসেন বলেন, গত পাঁচ বছরে প্রথমবারের মতো ওয়ারহেড সংখ্যা বেড়েছে—শীতল যুদ্ধের পর এমনটা হয়নি। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষেরও উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, ” বলেন তিনি।’

যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছিল ১৯৯২ সালে, নেভাদায়। কিমবলের মতে, সেই কেন্দ্র আবার চালু করতে কমপক্ষে ৩৬ মাস লাগবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র কম্পিউটার সিমুলেশন ও অন্যান্য অ-বিস্ফোরক পদ্ধতিতে অস্ত্র পরীক্ষা করে। তাই নতুন বিস্ফোরণমূলক পরীক্ষার বাস্তব প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই বিষয়ে কুয়াং বলেন, ভূগর্ভস্থ পরীক্ষাতেও ঝুঁকি থাকে—বিকিরণ যেন মাটির ওপর বা ভূগর্ভস্থ পানিতে ছড়ায় না, তা নিশ্চিত করতে হয়।

ট্রাম্পের এমন ঘোষণার পেছনে রাশিয়া ও চীনকে দায়ী করে হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের গবেষক রবার্ট পিটার্স বলেন, বৈজ্ঞানিক কারণ না থাকলেও, ‘রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্য’ এমন পরীক্ষা দরকার হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘বিশ্বাসযোগ্যতা দেখাতে কোনো প্রেসিডেন্টের—ট্রাম্প, বা অন্য যে কেউ—পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো প্রয়োজন হতে পারে।’ তাঁর মতে, ‘এটি অযৌক্তিক অবস্থান নয়।’

তবে অনেক বিশেষজ্ঞই এতে একমত নন। তাদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রিস ক্রিলি বলেন, ‘নতুন এক পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা যদি ইতিমধ্যেই শুরু না হয়ে থাকে, তবে আমরা তার একদম দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিনই আমি এই আশঙ্কায় থাকি যে, যেকোনো সময় পৃথিবী আবার পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।’

যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে ১৯৪৫ সালের জুলাইয়ে, নিউ মেক্সিকোর আলমাগোর্ডো মরুভূমিতে। তারপর আগস্টে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে তারা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুটি পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, যা মানব ইতিহাসে এখনো একমাত্র পারমাণবিক হামলা।

বিবিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বিকাশ ও নগদ ছাড়াই দেশে আন্তএমএফএস লেনদেন চালু

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

২ শিশুকে হত্যা করে বালুচাপা: বিএনপির নেতা কারাগারে

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্প ও পুতিনের পারমাণবিক রেষারেষি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি

বিশ্ব রাজনীতিতে আবারও পারমাণবিক যুদ্ধের আতঙ্ক ঘনীভূত হচ্ছে। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই পরাশক্তির শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক ঘোষণায় এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শীতল যুদ্ধের পর বিশ্বে যে পারমাণবিক ভারসাম্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হঠাৎ ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কর্মসূচি আবারও শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘অন্য দেশগুলো যেহেতু পরীক্ষায় ব্যস্ত, আমরাও সমানভাবে আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা করব।’ তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যে স্পষ্ট নয়—তিনি সরাসরি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার কথা বলেছেন, নাকি পরমাণু সক্ষম অস্ত্রের মহড়ার কথা বলেছেন।

এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগেই মস্কোর এক সামরিক হাসপাতালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরেকটি ‘অজেয়’ অস্ত্র পরীক্ষার দাবি করেন। তিনি জানান, রাশিয়া সফলভাবে ‘পোসাইডন’ নামের পরমাণু-চালিত টর্পেডো পরীক্ষায় সফল হয়েছে। ধারণা করা হয়, এই টর্পেডো প্রায় ৯ হাজার ৬৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত যেতে পারে এবং তা কোনোভাবেই প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। পুতিনের ভাষায়, ‘পোসাইডন’ পৃথিবীর যে কোনো আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়েও শক্তিশালী।’

তিনি আরও জানান, বহু প্রতীক্ষিত ‘সারমাত’ বা ‘স্যাটান ২’ ক্ষেপণাস্ত্রও শিগগিরই রুশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা হতে পারে।

২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা সীমিত রাখার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। আর তার আগেই দুই দেশই নতুন অস্ত্র প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

সপ্তাহখানেক আগে পুতিন ঘোষণা দিয়েছিলেন, রাশিয়া সফলভাবে ‘বুরেভেস্টনিক’ নামের পরমাণু-চালিত ক্রুজ মিসাইলের পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছে। এই মিসাইল দীর্ঘ সময় ধরে সাবসনিক গতিতে উড়তে পারে বলে দাবি রুশ সামরিক বাহিনীর। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব পরমাণু-চালিত অস্ত্র প্রযুক্তিগতভাবে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ, বাস্তবে ব্যবহারের জন্য এখনো অপ্রস্তুত।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, রাশিয়ার এই ‘পারমাণবিক ঝনঝনানি’ মূলত সামরিক নয়, কূটনৈতিক চাপের কৌশল। ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ও পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর অবস্থানের কারণে মস্কো চায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ তার দাবিগুলোর প্রতি মনোযোগী হোক।

কিন্তু পুতিনের এই প্রদর্শনের জবাবে ট্রাম্পের নির্দেশ বিশ্বকে নতুন এক অনিশ্চিত পথে ঠেলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, দুই শক্তিধর দেশের এই পাল্টাপাল্টি হুমকি পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে আবারও উসকে দেবে। এর ফলে বিশ্বে শীতল-যুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে, যেখানে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি বা অসতর্ক কোনো পদক্ষেপ মানবসভ্যতাকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে কারখানায় মিলল ৬ দিন আগে নিখোঁজ তরুণ-তরুণীর লাশ

বিকাশ ও নগদ ছাড়াই দেশে আন্তএমএফএস লেনদেন চালু

বাবার ব্যবসায়িক সমস্যায় জামায়াত প্রার্থীর সিদ্ধান্তে নাখোশ শিবির নেতার পদত্যাগ

২ শিশুকে হত্যা করে বালুচাপা: বিএনপির নেতা কারাগারে

ভিন দেশে সরকার উৎখাতের মার্কিন নীতির দিন শেষ: তুলসী গ্যাবার্ড

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত